।।এক।।
ত্রিবান্দ্রম বিমান বন্দরে…..
একটু আগেই পৌঁছে গেলেন নবীন টিকাদার। মানে আমাদের নটি বাবু। বাংলা কবিতা লিখে কবি হিসাবে একটু নাম টামও করেছেন।
আজ তিনি বিকালের মধ্যেই কলেজ স্ট্রিটে যে করেই হোক পৌঁছে যেতে চান। কারণ…………?
অাচমকা, তিনি, তার লাগেজগুলো চেকিং- এ চালান করে দিয়ে, একটু পিছনের দিকে ঘুরতে এক বছর তেইশের মেয়ের সাথে চরম ধাক্কা!
শক্ত পোক্ত নটি বাবুর ষাঁড়ের মতো চেহারার ঘায়ে মেয়েটি পড়তে পড়তেও টালটা সামলে নিলো।
কিন্তু……..
মেয়েটির কাঁধের শান্তিনিকেতনী ব্যাগটি ছিটকে পড়লো সাত ফুট দূরে।
মেয়েটি কয়েকটা স্টেপ ফেলে ব্যাগটা তোলবার আগেই নটি বাবু বিদ্যুৎ গতিতে ঝোলাটা তুলে নিয়ে, মেয়েটিকে বললেন, আপনার ব্যাগ।
মেয়েটি হাত বাড়াতেই নটি বাবু চমকে উঠলেন।
বললেন, আপনি?
মেয়েটি বললে, হ্যাঁ,আমি মিস্ নন্দিনী! আাপনি কি আমায়……?
-রক্তকরবীর নন্দিনী। হয়ত চিনি কিম্বা নয়। আপনি আমাকে এক ধাক্কায় অনেক খানি পিছিয়ে দিলেন।
মেয়েটি বেশ খানিকটা হেসে বললে,
– তাই,…….আমি কিন্তু আনন্দ বাজার নই!!
।।দুই।।
ঝকঝকে অাকাশ।
নীল আাকাশের বুকে তুলোর মতো মেঘেদের আনাগোনা।জানালার পাশে একটা সীটে বসেছেন
নটি বাবু।
রোমান্টিকতা বলতে যা বোঝায়, তা কোনোদিন
নটি বাবুর ভিতর নেই।কিন্তু আজ মেয়েটিকে দেখে তার মধ্যে কি যে হলো।
তিনি তখন এম.এ-র এক উজ্জ্বল ছাত্র। হোস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরলে ঠিক ওই রকম একটি মেয়ে,
নটিকে বললে, আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবি?
-কোথায়?
-তোর যেদিকে মন চায়।
-তোর মা জানে?
-জানি না……..
সামান্য কয়েকটি কথা। কিন্তু.. কি এক অমোঘ টানে নটি, সেই অদ্ভুত সন্ধ্যায় মেয়েটিকে সাইকেলে
চাপিয়ে নিয়ে এলো, নদীর নির্জন সেই বাঁকে।
সবুজ কার্পেটের মতো ঘাস। উদ্দাম হাওয়ায় নদীর স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ।
মেয়েটি বললে, সুন্দর!
নটি বললে, তোর চেয়েও?
মেয়েটি দুটো বেনী দুলিয়ে কি এক অাবেগে বললে,
-সত্যিই আমি উদ্দাম নদী। তোকে ভাসিয়ে…….তুই
তবে সামলা আমায়…..
সত্যিই কি এক আবেশে নটির কঠিন বাহু আর
মেয়েটির নরম ঠোঁটের গরম…… নটির চোখটা বন্ধ
হয়ে এলো। দারুণ একটা গল্প!………পাইলট তখন ঘোষণা করলেন,
-সীটবেল্ট বেধে নিন, বিমান চেন্নাই-এ নামছে!!!!!!
।।তিন।।
ওখান থেকে কলকাতার বিমান ধরতে হবে। মাঝে মিনিট পয়তাল্লিশ সময়।লাউঞ্জের কফি শপে
এক কাপ কফিতে চুমুক দিতেই……..
সেই মেয়েটি ছুটতে ছুটতে এসে নটি বাবুকে বললে,
-আপনি কি সাহিত্য টাহিত্য করেন?
-মানে?
-আপনার তো কলকাতায় প্রথম গল্পের বই…..?
-অাপনি জানলেন কি করে?
-আসলে এফ বি তে দেখলাম আমার মায়ের ফ্রেন্ড লিস্টে আপনি তো……..!
কি নাম তোমার মায়ের?
-সুকল্যানী বোস, আপনার লেখার……?????
-আমার লেখার কি?
-না, আসলে আপনি, আপনার প্রোফাইলের ছবির চেয়েও হ্যান্ডসাম।
বিকেল চারটে………
দম দম এয়ারপোর্টে লাগেজ নিয়ে, ওরা দুজন বেরোতেই মেয়েটি এক মহিলাকে দেখিয়ে বললে,
-এই আমার মা……সুকল্যানী…….
কি এক আবেগে নটি বাবু বললেন, সুকি!!!!!
আর তাতেই এক তুরন্ত এ্যাকশন………
দূরন্ত বেগে নটি বাবুর দিকে তেড়ে এসে মহিলাটি,
যেন সেই নদীর প্রবল তেজে বললেন,
-তোর গল্পের নায়িকা! হাটে হাড়িটা আমার মেয়ের
সামনে না ভঙলে………….?
তখন কোথায় যেন বেজে চলেছে…….. “আমার যে
দিন ভেসে গেছে/ চোখের জলে!!!!!!!!!!!!!!