আমি নাকি বিপদে পড়তে পারি। আমার দোকানে আগুন লাগতে পারে। আমার মেয়ে নেই তাই রক্ষে, না হলে তাকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হত। রেপ এখন জলভাত। একটা বাহিনিই তৈরি করা হয়েছে ধর্ষণের জন্য। কথাটা আমাকে গোবিন্দ সিং বলেছে। আমি বহুদিন ধরে জানতাম ওর নাম গোবিন্দ কুইলা। সিং হলো কবে? মিউনিসিপাল ইলেকশনের সময় শুনলাম ও গোবিন্দ সিং। নাম এফিডেভিট করে কুইলা থেকে সিং হয়েছে। আর সিং হয়েই ওর দাপট বেড়েছে। আগে কেমন চুপচাপ ঘুরত।
সাতে পাঁচে থাকত না। ঠিক ওর বাবা চৈতন্য কুইলা যেমন ছিল। তবে রাতের দিকে একটু নেশা করে গান গাইতে গাইতে ফিরত। এবার মলে সুতো হবো, তাঁতির ঘরে জন্ম নেব…। কিছুই করে বলে জানি না। আমিও তো বলতে গেলে কিছু করতাম না। শুধু মিউনিসিপ্যালিটির মাস-মাইনের চাকরি সঙ্গে উপরি। গত পনের বছর একটা দোকান করেছি বাড়ির নিচের তলা থেকে লন্ড্রি তুলে দিয়ে। চা বিস্কুট মাখন, রুটি, কুড়মুড়, চানাচুর, কোল্ড ড্রিঙ্কস, গোপনে হুইস্কি, রাম। চালু দোকান। গোবিন্দ দুই সাগরেদ নিয়ে দোকানে এসে বলল, অনেকদিন হয়েছে, দোকান এবার তোমাকে ছাড়তে হবে মনাদা।
আমার এখন বয়স হয়েছে। বাসে বা পাতালরেলে সিনিয়র সিটিজেনের আলাদা। ট্রেনে শতকরা ৪০ টাকা ছাড়। আমার ছেলে থাকে আমার সঙ্গে, কিন্তু দোতলা বাড়ির দোতলায়। একতলায় দোকান এবং আমার বাসস্থান। বউ বেঁচে নেই। একটি বিধবা বউ আশ্রিতা। ছেলের সঙ্গে এই নিয়ে ঝুট-ঝামেলা চলছেই। বিধবা চামেলিকে সে তাড়াবেই। আমি বলি রাতে একা থাকতে আমার খুব ভয় হয়, তাড়াবি কেন?
আমি মনোরঞ্জন, আমার ছেলের নাম মনোময়। আমি মনাদা ( সিনিয়র)। সেও মনাদা ( জুনিয়র)। সে মিউনিসিপ্যালিটির ডেথ রেজিস্ট্রার। ব্রজবাবুর শ্মশানে বসে। শ্মশানের গায়ে আদি গঙ্গা। থকথকে ময়লায় ভরা কালো জল। কুকুর বেড়ালের মড়া ভেসে যায়। তার উপরে কাক ভ্রমণ করে সুখে। মনাদা সিনিয়রের সঙ্গে মনাদা জুনিয়রের ঠোকাঠুকি লেগেই আছে। এই সময়ে গোবিন্দ সিং এল।
আমি বললাম, বসো গোবিন্দ।
গোবিন্দ বলল, হামি গোবিন্দ সিং, হামার এক বাত, আমি এখানে মাংসের দোকান দিব, চৈতন্য চিকেন সেন্টার, সি সি সি।
কোথায় ? অবাক হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
কেন এখেনে ? গোবিন্দ দাঁত বের করে হাসল।
বেশ বেশ, ভালো ভালো, চন্দনের চিকেন সেদ্ধ হয় না ভালো, তুমি করো।
হামি গোবিন্দ সিং বলছি, হামার এক বাত, চিকেন সেন্টার হবেই।
তুমি তো কুইলা। আমি বলে ফেললাম আচমকা।
খামোশ। তড়পে উঠল গোবিন্দ, এখানেই হবে?
কোথায় হবে ? আমি জিজ্ঞেস করলাম উদ্বেগ নিয়ে।
এখেনে, এই সামনে। দোকানের সামনেটা দেখায় গোবিন্দ।
আমার মায়ের নামে দোকান। সেই এলোকেশী ভান্ডারের সামনেই গোবিন্দর চিকেন সেন্টার হবে তা বলল গোবিন্দ। দোকানের সামনেই গুমটি হবে। কী করে হয়? তাহলে আমার দোকানের মুখ ঢেকে যাবে। আমার দোকানে ঢুকতে পারবে না খদ্দের। গোবিন্দ বলল, এইটাই হবে।
আমি বললাম, হবে না।
গোবিন্দ বলল, হবে মনাদা, তুমি এই দোকান করতে পার না, এই দোকান ডাকুর ছিল, কুণ্ডু লন্ড্রি, তুলে দিয়েছ, এখন গরমেন্টের ফুটপাথে চিকেন সেন্টার হবে, ইয়েস করো নো করো, আমার কিছু যায় আসে না, নো করলে তুমি বিপদে পড়বে।
আমি বললাম , হতে পারে না।
হতে পারে। গোবিন্দ দাপটের সঙ্গে বলল।
আমি বললাম, থানায় যাব।
যাও থানায়, থানা পারমিশন দেওয়ায় এইটা হচ্ছে। গোবিন্দ সিগারেটের ধোঁয়া আমার মুখের উপর ভাসিয়ে দিল, ডেঞ্জার হয়ে যাবে মনাদা, তবু তোমার মেয়ে নেই, কিন্তু বিধবা চামেলি তো আছে, তুলে নিয়ে যাব, রেপ ব্রিগেডের হাতে পড়ে যাবে।
আমি চুপ করে থাকলাম। গোবিন্দ কি আমার সঙ্গে মজা মারতে এসেছে ? আমার চালু দোকানের সামনে চিকেন সেন্টার! দু বছর আমি রিটায়ার করে টাকা পয়সা নিয়ে ঘরে এসে বসেছি। দোকান চলত টিমটিম করে। দোকানের কর্মচারী নিতু টাকা ঝাড়ত। আমি এসে নিতুকে তাড়িয়ে নিজে দোকানে বসি। গোবিন্দর সঙ্গে নিতু আছে নাকি ? আমি জিজ্ঞেস করলাম, গোবিন্দ তোমার মাসি কেমন আছে ?
নিতুর কথায় কেন মাসির কথা ? গোবিন্দর মাসির নাম নীলিমা তুং। আমি নিতু বলতাম। নিতুর বিয়ে হয়েছে বজবজ। নিতুর সঙ্গে আমার ইয়ে হয়েছিল। নীলিমা তখন তার দিদির কাছে থাকত। সে কম দিনের কথা? ইতিহাস, ইতিহাস। একটা মানুষের জীবন একটা ইতিহাস। গোবিন্দ বলল, তুমি সাবধানে কথা বল মনাদা, নিতুকে তুমি হটিয়েছ, এখন ফল ভুগতে হবে।
হুঁ, নিতুকে আমি হটিয়েছিলাম। তখন আমার জমানা। নিতুকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার গিয়ে হোটেলে থেকেছি পর্যন্ত। সকালে গিয়ে বিকেলে ফেরা। দুই বউ তো থাকতে পারে না, তাই নিতুর বিয়ে হয়ে গেল বজবজ। গোবিন্দ তখন ছোট। গোবিন্দর বাবা চৈতন্য কুইলা আমাকে খুব শ্রদ্ধা করত, তাই নীলিমাকে আমার সঙ্গে ছাড়ত। গোবিন্দর মায়ের আপত্তি ছিল শুনেছি, কিন্তু কে শোনে। তখন আমার দাপট কী! চৈতন্যকে চাকরি করে দিয়েছিলাম মিউনিসিপ্যালিটিতে। মাসে মাসে মাইনে।
কাজ আর কী, আমি যেভাবে যা বলি তা করে দেওয়া। উপরি টাকা কালেকশন। নীলিমার বিয়ে হয়ে গেলে চৈতন্যের চাকরি যায় মাসিক বরাদ্দর টাকা নিতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ায়। আমার কী ? আমি কী করব চৈতন্য ? সাবধান হবে তো, মাঝখান থেকে আমার মুখ পুড়ল। আমি তোমাকে ঢুকিয়েছিলাম চৈতন্য, আমার বদনাম হলো। আসলে তখন আর একজনকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার কত ক্ষমতা। গোবিন্দ তখন বালক। তার বাবা ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। আমি তো চাকরি খাইনি।
গোবিন্দ বলল, নিতুই চালাবে চিকেন সেন্টার।
মানে তোমার…? কথা শেষ করতে পারলাম না। হঠাৎ আমার মনে কেন যে উনিশ-কুড়ির নীলিমা ভেসে এল এখন! আমি বললাম, নিতু আমার ক্যাশ ঝাড়ত, তোমার চিকেন সেন্টারের ক্যাশ কি পাবে তুমি?
একদম মিথ্যে কথা বল না মনাদা, আমার বাবাকে যেমন ফাঁসিয়ে চাকরি খেয়েছিলে, তেমনি নিতুকেও ফাসিয়েছিলে।
হুঁ। আমি নিতুকে খালাস করিয়েছিলাম জ্ঞানদাময়ী নারসিং হোমে। তারপর বজবজে বিয়ে। সে সব কথাও গোবিন্দ জানে ? চুপ করে থাকলাম। গোবিন্দ সব জানে , জেনেই এসেছে। গোবিন্দ বলল, মনাদাকে আমি বলেছি, মানে তোমার ছেলেকে, মনাদা সায় দিয়েছে, নিতু তো কিছু করবে।
আমি বললাম, মনা সায় দিয়েছে ?
ছেলেকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখো মনাদা, মনাদা বলল, সত্যিই তো নিতুর কিছু হওয়া দরকার, চৈতন্য চিকেন সেন্টার।
আমি না পেরে বললাম, মহাপ্রভু চিকেন খেতেন না, নিরিমিষি ছিলেন।
গোবিন্দ বলল, তুমিই তো প্রভুর প্রভু, মহাপ্রভু, আমার বাবার চাকরি খেয়্যেছিলে, তুমি সব খাও, নিতুকে ভি খেয়েছ, আমার বাবা চিকেন ভালবাসতেন, তাই তাঁর নামেই হবে।
গোবিন্দ আলটিমেটাম দিয়ে চলে গেল এক মোটর সাইকেলে দুই প্যাসেঞ্জার নিয়ে। কী স্পিড ! আমি রাত্তিরে উপরে উঠে গিয়ে ছেলেকে ডাকলাম, তুই সায় দিয়েছিস?
মনা বলল, হ্যাঁ, ভালই হবে, তুমি খুব খারাপ হয়ে গেছ বাবা, এরপর তোমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে ওই চামেলিকে নিয়ে।
কী যাতা বলিস, আমার বাড়ি, দরকারে তুই বেরিয়ে যাবি। আমি ক্রুদ্ধস্বরে বললাম।
মনার বউ বুলু তার স্বামীকে থামাতে চাইল, কী বলছ, বাবা আপনি নিচে যান।
মনা বলল, তুমি বুঝছ না, এরপর সব ওই বিধবাকে দিয়ে যাবে, ও কে, কেন থাকবে এবাড়ি, তিনদিন টাইম দিলাম।
নিরাশ্রয়, ওর স্বামী মিউনিসিপ্যালিটির রঙ মিস্ত্রি ছিল, পড়ে গিয়ে মরে গেছে, সবই তো জানিস মনা।
মনা বলল, গোবিন্দকে আমি ফিট করেছি, তুমি ওই বিধবাকে তাড়াও।
তা কী করে হয়, আমার বুকে ব্যথা উঠলে কে তেল মালিশ করবে।
মনা বলল, কেউ না, তুমি ফুটে যাবে, আমি কালই চিকেন সেন্টার চালু করে দেব দোকানের ভিতরেই।
বুঝলাম। নাটের গুরু আমার ছেলে পুরসভার ঘাটবাবু। ঘাট মানে শ্মশান ঘাট। ব্রজবাবুর ঘাট। নিচে এসে মিস্ত্রির ৩০ বছরের বিধবা বউ চামেলিকে বলতে সে বলল, কত্তা তুমি তো খুন হয়ে যেতে পার।
তার মানে?
বেহালায় অমনি একটা হয়েছে, ছেলে আর ছেলের বউ মিলে মেরে দিয়েছে বুড়োকে, এখন এসব খুব হচ্ছে।
আমি চুপ করে থাকলাম। চামেলির মোবাইল বেজে উঠল। চামেলি নিয়ে বাইরে গেল। এমনি ফোন প্রায়ই আসে। চামেলির বর মরেছে সাত বছর। চামেলি মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করে ‘সে লোক কী করে উপর থেকে পড়ল বলো দেখি।
আমি জানব কী করে ? ভারা থেকে ফেলে দিইনি। ক্ষতিপূরণটা অবশ্য চামেলিকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছিলাম। কিছু দিয়েছিলাম, বাকিটা নিজে নিয়েছিলাম। চামেলির বাচ্চা আছে একটা। তার মায়ের কাছে থাকে। সে সপ্তাহে একবার যায়। সানডে। টাকা দিয়ে আসে। চামেলি ফোন সেরে ফিরে এসে বলল, আমার পাশবইয়ে যে সাতলাখ টাকা দেবে বলেছ, কবে দেবে ?
দেব, ফিক্সড ডিপোজিট ম্যাচিওর করুক।
ও আর ইহ জীবনেও হবে না, কবে দেবে বলো। চামেলি চাপা গলায় হিসহিস করে বলল।
কেন তাড়া কিসের ?
তুমি মরে গেলে আমার কিছুই জোটবে না। চামেলি বলল।
মরব কেন ? আমি হাসলাম, মরার বয়স হয়েছে নাকি ?
চামেলি বলল, মরার আবার বয়স হয়, আমার সোয়ামী লোকটা পঁয়তিরিশ বছরে মরে গেল, তুমার তো বাষট্টি।
আমি বললাম, সে তো অ্যাকসিডেন্ট।
তুমারও তাই হবে, তুমার ছেলে মনাদা তুমারে রাখবে না।
গা ছমছম করে উঠল। চামেলির চুল খোলা। লাল কালো ডুরে শাড়ির আঁচলে খসে যাচ্ছে প্রায়। চামেলি সোফায় বসে মোবাইল খুঁটছে। বলছে, আমার পাওনা মিটিয়ে দাও মনাবাবু, মনাদা তোমারে ইলেকট্রি চুল্লিতে ঢুকাল বলে।
মগের মুলুক, তোরে বলেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
চামেলি বলল, বলেছে।
কবে বলেছে?
দশদিন আগে, বলেছে আমারে কাজটা করতে। চামেলি নিস্পৃহ গলায় বলল।
আমারে বলিসনি তো। জিজ্ঞেস করলাম।
বলব কেন, বললি তুমি ছাড়তে মনাদা?
এখন যে বললি ? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
মনাদা বলল, আমি যদি না পারি ঘুমের ওষুধ চল্লিশটা খাওয়াতে, আমারে চলে যেতে হবে, তখন গোবিন্দ সিং ভার নেবে।
সত্যি বলছিস? আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।
তুমি বুঝতি পার না মনাদা? চামেলি উদাসীন গলায় বলল।
কী করে বোঝব বল? আমি উদ্বিগ্ন গলায় বললাম।
চামেলি বলল, আমার লোকটাও বুঝতি পারেনি, কিন্তু মরে তো গেল।
দুর্ঘটনা। আমি নিম্নস্বরে বললাম।
এইডাও তাই হবে মনাদা। বিড়বিড় করল চামেলি। কিন্তু তার স্বামী পুরন্দর তো সত্যিই দুর্ঘটনায় মরেছিল। ক্ষতিপূরণ নিতে আসার আগে আমি চামেলিকে দেখিইনি। রঙ মিস্ত্রির বউকে দেখার কথাও নয়। চামেলি মাথা নাড়তে লাগল, না গো মনাদা, তুমিও জান আমিও জানি তার মরণ হতোই, বলো মনাদা জানি কি না?
আমি মাথা নাড়তে লাগলাম। কিন্তু চামেলি মানতে চাইল না। কথাটা সে আগে দুবার বলেছে। তিনতলার ভারা থেকে আচমকা পড়ে গিয়েছিল পুরন্দর। সামান্য তিনতলা। চামেলি বলল, আমার টাকা আমারে বুঝায়ে দাও, তুমি মরে গেলে কি তোমার ছেলে বুকে তেল মালিশ করাতে রাখবে আমারে?
আমার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। চামেলি বলল, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তোমারে মেরে দেবার কথা ছিল মনাদা, কিন্তু কাজটা আমি করিনি, তাই আমারে তাড়াবে বলছে, একেবারে পাড়া ছাড়া করে দেবে, দরকারে তুলে নিয়ে গিয়ে……। চামেলি বলল, আমার টাকা আমারে দিয়ে দাও মনাদা, আমারে তিনদিন সময় দেছে উপরের মনাদা।
আমি বললাম, চামেলি তোর স্বামীকে আমি মারিনি, দুর্ঘটনা।
তার তো মরার বয়স হয়নি।
চামেলি বরং আমি তোরে নিয়ে কাশী চলে যাই, চামেলী, ও চামেলী।
মরণ! চামেলি মুখ ঘুরিয়ে নিল, তারপর বলল, তুমি বাদু চল আমার মায়ের বাড়ি, তুমি সেখেনে থাকবা, আমার মা আয়ার কাজ করত, তুমার সেবা করতে পারবে , আমি বরং সনাতনকে বিয়ে করে পাশেই থাকব মনাদা, বাঁচতি চাও তো…।
জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারে তাকিয়েছি। সনাতন। লম্বা ঢ্যাঙা সনাতন দাস। হুঁ, আমি চিনি। আর এক রঙ মিস্ত্রি। তার সঙ্গেই তো বোরো অফিসে এসেছিল চামেলি। ঢলো ঢলো কাঁচা। সনাতনও ছিল সেদিন ভারায়। সে পড়েনি, পুরন্দর পড়েছিল। সনাতন বলেছিল, অনাথ বউ কিছু পাবে না গরমেন্টের কাছ থেকে?
আমি বলেছিলাম, তুই পড়লি না ও পড়ল কেন ?
সনাতন চুপ করে ছিল।
পুলিশ এঙ্ক্যোয়ারি করছে, বলেছি ভারায় আর কেউ ছিল না।
সনাতন মাথা নামিয়ে একেবারে চুপ।
বলেছিলাম, কিছু দেয়া যাবে, কিন্তু বউটা আমার ঘরে থাকুক, আমার কেউ নেই যে দুটো রেঁধে দেয়।
সনাতন বলেছিল, পারবে স্যার।
একা মানুষ আমি, কাজের হ্যাপা নেই, ছেলে উপরে থাকে।
ঠিক আছে স্যার। সনাতনই জবাব দিচ্ছিল চামেলির হয়ে। পুরন্দর মরতে সে-ই যেন চামেলির গার্জেন। আমি চামেলির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছি। এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল চামেলি? সনাতনের হাত ধরতে এতদিন! ইহ জগতে কোনটা সত্যি, কোনটা সত্যি নয়, তা বলবে কে? বাঁচা মরা কার হাতে, মনাদার হাতে মনাদার, নাকি সনাতনের হাতে পুরন্দরের, কিংবা সবই দুর্ঘটনা?