বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার

বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার

অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল সুমিতের। আধশোয়া অবস্থায় পিটপিট করে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল সে। চারদিক শান্ত,স্নিগ্ধ। কলকাতার কোলাহল শুরু হতে এখনও ঢের বাকি। কত মিষ্টি আজকের সকালটা। অথচ তার মনে একরাশ মনখারাপের কালো মেঘ জমে আছে। কাল সারারাত ঘুম হয়নি দিতির কথা ভেবে।

ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে দিতির প্রোফাইলে ঢুকল সে। ডিপি তে তারই তোলা গোলাপি চুড়িদার পরা একটা ছবি। তিনমাস আগে প্রিন্সেপে গিয়ে সুমিত তুলে দিয়েছিল ছবিটা।

আজকের পর দিতি আর তার বেস্টফ্রেন্ড থাকবে না। মন খারাপ হলে বা যখন তখন আড্ডা মারার জন্য ইচ্ছা হলেও ফোন করতে পারবে না দিতিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে দিতির বাড়ি যেতে হবে।

দিতিকে দেখতে আসছে ছেলের বাড়ি থেকে। ব্যাপারটা এতই আকস্মিক যে তৈরি ছিল না সুমিত।
কালকের আগে অব্দিও সপ্নে ভাবতে পারেনি এমনটা হতে পারে।কাল এলিয়ট পার্কে বসে দিতির গায়ে হেলান দিয়ে দিব্যি বাদাম খাচ্ছিল সুমিত, হটাৎ করেই দিতি বলে,” জানিস..আমি বিয়ে করব।”

সুমিত এমন ভাবে চমকে উঠেছিল যেন ক্যান্টিনের ভজাদা কে শ্রডিঞ্জারের ইকুয়েশন লেখার কথা বলা হয়েছে। বাদামের খোসাগুলো হাত থেকে ঝেড়ে উঠে বসল সে। তারপর বেশ সিরিয়াস গলায় বলল,” তারমানে?”

মুচকি হেসে দিতি বলল,” মানে কিছুই না। বাবার এক বন্ধু রমেশ কাকুর ছেলের বেশ পছন্দ আমাকে। সে ওএনজিসি তে চাকরি করে। বম্বেতে থাকে। আগের বছর আমাদের বাড়ি এসেছিল। সেবারই আমাকে দেখেছিল।

তারপর বাবাকে কিছুদিন আগে রমেশ কাকু ফোন করে বলল ছেলের পছন্দের কথা। বাবা তো এককথায় রাজি। এত ভালো ছেলে কি আর হাতছাড়া করা যায় বল?” অদ্ভুত ভঙ্গি করে বলল দিতি।
আমতা আমতা করে সুমিত বলল,” তোরও কি পছন্দ ছেলেটিকে?”

” বাবার যখন পছন্দ আমি আর কি বলি! তাছাড়া ছেলেটাকে দেখতেও ভাল। টল,ডার্ক, লম্বা। পছন্দ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

” এত কিছু হয়ে গেল অথচ আমাকে একবারও কিছু বলিসনি! তাও আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড!” অভিমানী গলায় বলে সুমিত।

” তুই নিজেকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস! এতে আমার দোষ কি বল!” মুখ বাঁকিয়ে বলে দিতি।
” মানে?”
“মানেটা বুঝে নে।”

আর কিছু বলতে পারল না সুমিত। যে দিতির সাথে তার পনের বছরের বন্ধুত্ব, যে সুখ,দুঃখ,এবং সমস্ত ব্যাক্তিগত ঘটনা খুলে বলে সুমিতকে, বিপদে পড়লে সুমিত কে ছাড়া চলেনা, বই কিনতে কলেজ স্ট্রিট,বা স্রেফ আড্ডা দিতে কফি হাউস সব ক্ষেত্রে যার সুমিতই ভরসা সেই কিনা আজ এরকম বলছে!

বাদাম গুলো আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না,আনমনে টুপটুপ করে সেগুলো জলে ছুঁড়ে ফেলছিল আবার দিতি বলল,” জানিস..কাল রমেশ কাকু,কাকিমা আর ওনাদের ছেলে আসছে বিয়ের কথা পাকা করতে। ”
অস্ফুট গলায় সুমিত বলল,”ও। ভালো।”
” তোকে যেতে হবে কিন্তু কাল”
” আমি গিয়ে কি করব?”
” কাল বাড়িতে অনেক কাজ। তুই গেলে মা এর সুবিধা হত। প্লিজ না বলিস না।”
অনেক কষ্টে নিজে সামলে সুমিত বলল,” আচ্ছে বেশ। যাব।”

স্নান সেরে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে দিতির বাড়ির দিকে পা বাড়াল সুমিত। দিতিরা যাদবপুরে থাকে। সুমিতের বালিগঞ্জ থেকে কতই বা আর টাইম লাগবে পৌঁছতে। গোলপার্ক, দক্ষিনাপন হয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল দিতির বাড়ি। গেট খুলে ঢুকে কলিং বেল দিতে সহেলী কাকিমা দরজা খুলে দিলেন।
একটু হেসে বললেন,”আয় ভেতরে আয়। কতদিন পর এলি। ”

” হ্যাঁ। অনেক দিন আসা হয়নি তোমাদের বাড়ি। ”
” তুই ভেতরের ঘরে গিয়ে বস। দিতি এখুনি চলে আসবে।”
” কাকিমা…ওরা কখন আসবে?”
” ওরা মানে?” অবাক হয়ে সুমিতের মুখের দিকে তাকালেন সহেলীদেবী।
” ওই যে ছেলের বাড়ির লোকজন?”
” ছেলের বাড়ির লোকজন মানে?”

” কাল আমাকে দিতি বলল ওকে নাকি দেখতে আসছে ছেলের বাড়ি থেকে। আমাকে বলল বাড়িতে আসতে। তোমাকে কাজে হেল্প করে দিতে।”

হো হো করে হেসে উঠলেন দিতির মা। ” উফ! দিতিটার স্বভাব বদলাল না। ও তোকে মজা করে বলল আর তুইও সেটা বিশ্বাস করে নিলি?”
” তবে আমাকে যে আসতে বলল!”
” সে তো অন্য কারণে। আমি ডেকেছি বলে।”
” তুমি ডেকেছ! কোনো দরকারে কি?”

” হ্যাঁ। শোন তবে বলি। দিতির বাবার তোকে খুব পছন্দ। উনি সেদিন বলছিলেন ওদের এত দিনের বন্ধুত্ত্ব। ওরা যদি দুজন দুজনকে পছন্দ করে তাহলে বিয়েতে ওনার আপত্তি নেই। উনি তাহলে তোর বাবা মাকে বলবেন বিয়ের কথাটা। দিতিও তোকে মনে মনে পছন্দ করে জানি আমি।”

” কিন্তু দিতি তো আমাকে শুধু বন্ধু ভাবে!”
” সেদিন দিতি আমাকে বলেছে সব। ও তোকে পছন্দ করে মনে মনে। তবে ওর আর্জি বিয়েটা দুবছর পর হোক।”
সুমিত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল এমন সময় ঘরে ঢুকল দিতি।
” এই যে। এলেন মহারানী। তোরা গল্প কর। আমি চা আনছি সুমিতের জন্য।”
মা চলে যেতেই ফিক করে হেসে উঠল দিতি।
” কিরে! কেমন লাগল সারপ্রাইজটা?”
” তোর মতোই যাচ্ছেতাই। এরকম ভয় পাওয়ানোর কোনো মানে হয়!”

মৃদু হেসে সুমিতের কাঁধে হাত রাখল দিতি। বলল, “শোন..দিতি সেনের বেস্ট ফ্রেন্ড একজনই। সে হল সুমিত চৌধুরী।”

তারপর আরো কাছে সরে কানের কাছে মুখ এনে বললো” বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার।”

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত