প্রিয় প্রাক্তন

প্রিয় প্রাক্তন

প্রিয় প্রাক্তনের মৃত্য শরীর থেকে প্রথমে বাঁ-হাত কেটে নিয়ে আমি পাশের রুমে চলে গেলাম, ঘন্টাখানিক আগে ফুল দিয়ে বিছানা সাজিয়ে রেখেছিলাম, কাটা হাতটা নিয়ে আমি বালিশে শুয়ে কয়েকটা ফুলের পাপড়ি প্রিয় প্রাক্তনের হাতের তালুতে রেখে তার ওপর চুমু খেয়ে বললাম “ফুলের সুবাসে নেই আনন্দ, তোমার জটিলতায় যতটা গন্ধ! তুমি নেই আগের মত যাকে চেয়েছিলাম অবিরত”
তার প্রিয় বাঁ-হাতে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
আমি একটু কাত হয়ে তার আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুচতে মুচতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম “একটা সময় আমার জন্য কতই না কেঁদেছো! আমার একটু মন খারাপ করলে! আমার একটু শরীর খারাপ করলে! আমি একটু অনিয়ম করলে তুমি হাহাকার করেছো! নিরব সাগরের মোহনাকেও জাগিয়ে তুলেছো কান্নার শব্দে! তবে এখন তোমার কী হলো! বলো! বলো! বলো!

উত্তেজিত হয়ে পাশের রুমে ছুটে গেলাম, তার মৃত্য শরীর থেকে চোখ দু’টো খুলে সাজানো বিছানায় আসলাম, তার বালিশে চোখ দু’টো রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, মুখের কোণে মৃদু হাসি জমিয়ে মনে মনে বললাম “কতটা মায়া ছিল তোমার এই চোখে! এতটাই মায়া ছিল যে এক দেখাতে প্রেমে পড়েছিলাম, জানো প্রথম যেদিন তোমার এই চোখ দু’টো দেখেছিলাম সেদিন ভুল-বসত রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম! হাহাহা তুমি পিছন ফিরে যখন হেসে দিয়েছিলে আমি কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলাম”
হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম “তারপরও কি করে পারলি তুই? কি করে পারলি এই চোখে অন্য কাউকে বাঁধতে? কি করে পারলি তুই?
দৌড়ে উঠে ব্যাগ থেকে সেফটিপিন নিয়ে তার দুই চোখে বারো’টা করে চব্বিশ’টা পিন কেঁথে দিয়ে বললাম “আর বাঁধবি কাউকে? অন্য প্রেমে পড়বি? এই চোখ দিয়ে তাকাবি আর অন্য কারো দিকে?

হঠাৎ মনে পড়লো তার বুকে জমে থাকা ভালবাসার কথা, রান্না ঘরে গিয়ে ধারাল চাকু নিয়ে দৌড়ে এলাম তার কাছে, তার বুকের ঠিক মাঝখানে চাকু চেপে ধরে ভেতরের সব বের করে হাতে নিলাম, আশ্চার্য দৃষ্টিতে তার কলিজা টুকু রেখে বাকি সব ছুড়ে মারলাম, কলিজা টুকু দুহাতে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম, একটা সময় আমি ভাবতাম তার কলিজাটুকু ছুঁয়ে দেখবো, ছুঁয়ে দেখবো তার ভালবাসা, সে সুযোগ কখনো হয়নি অথচ আজ সেই সৌভাগ্য’টুকু হয়েছে।
কলিজা হাতে নিয়ে আমি একটু বিরক্ত হলাম, কারণ তার কলিজার কোথাও আমার নাম লেখা নেই, “এইতো সেদিনের কথা, গভীর রাতে সে আমায় ফোন করে বলেছিলো ‘জানো আমার কলিজার প্রতিটা স্তরে শুধু তোমার নাম লেখা আছে’, তবে আমি কেন নাম দেখতে পাচ্ছি না? তবে কী নতুন মানুষের নাম লেখা আছে তার কলিজায়? এ’পিঠ ও’পিঠ কোথাও কারো নাম লেখা দেখতে পাচ্ছিলাম না, বিরক্ত হয়ে চাকু দিয়ে তার কলিজা কাটতে শুরু করেছিলাম, টুকরোটুকরো করে ফেললাম কিন্তু কোথাও কার নাম দেখতে পেলাম না। কিছুটা বিরক্ত হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলাম, সেও আমায় কিছু বলছে না।

হঠাৎ মনে পড়লো তার বলা একটি কথা “তোমার কোন যোগ্যতা নেই আমার জীবন সঙ্গি হওয়ার, আমার কপালে তুমি নেই, এই ভাগ্যে অন্য কারো নাম লেখা আছে”, আমি দ্রুত চাকুটা হাতে নিয়ে তার কপালের শক্ত চামড়া কুচানো শুরু করলাম, তার কপালের চামড়া কুচানোর সময় বার বার মনে হচ্ছিলো ‘পেঁয়াজ কাটা শিখেছি দেখেই আজ তার কপাল এত সুন্দর করে কুচাতে পারছি’

চাকু ছুড়ে মেরে আমি তার রানে মাথা রেখে একটু ক্লান্ত দূর করছিলাম, চোখ বন্ধ করতেই সেদিনের দৃশ্য আমার চোখে ভেসে উঠেছিল, রেস্টুরেন্টে বসে ও আমায় বলেছিল “আমি সম্পর্কটা এখানেই শেষ করতে চাই, আমার ফিউচার আছে, আমি আমার ফিউচার নষ্ট করতে চাই না, তোমাকে নিয়ে আমি সংসার করতে চাই না”, কথাটা শেষ করেই সে ধবধব করে হেঁটে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়, এক লাফে আমি উঠে বসে যাই, এ’রুম ও’রুম ছুটোছুটি করে স্টোর রুমে পুরানো একটা কুঠার খুঁজে পাই, দৌড়ে আবার তার কাছে এসে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকি “খুব শখ হয়েছিল তাই না? খুব শখ হয়েছিল অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করতে? শেষবার চলে আসার সময় একবারও ভাবলি না আমার কী হবে? আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো! কাকে আগলে দুঃখ গুলো ভুলবো! এই পা দিয়ে হেঁটে এসেছিলি তাই না? এই পা দিয়ে অন্য কারো হাত ধরে হেঁটেছিলি তাই না?
কথা গুলো বলতে বলতেই তার দু’পায়ে কুঠার দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করতে লাগলাম, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার মাথায় কয়েক’গা মারলাম, কুঠারের আঘাতে তার শরীর থেকে পা দু’টো আলাদা হয়ে যায়, তার মাথা দু’ভাগ হয়ে যায়। আমি হেসে উঠেছিলাম, তৃপ্তির হাসিতে হেসে উঠেছিলাম।

এইতো ঘন্টা দুয়েক আগের কথা।
তার কাছে শত অনুরোধ করেছিলাম শেষবারের মতো আরেকবার আমার বাসায় দেখা করতে, সে রাজি হয়েছিল, তার জন্য কফি বানিয়ে এগিয়ে দিলাম, সে বুঝতেই পারেনি কফিতে বিষ মিশিয়ে দিয়ে ছিলাম, কতটা সরলতার সাথে সে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।

আমি তার ডান হাত ধরে বললাম “চলো আমার সঙ্গে, আমার কষ্ট গুলো আজ দেখাবো তোমাকে”, কিন্তু সে কথা শুনলো না, কুঠার নিয়ে তার ডান হাতে আঘাত করতে লাগলাম, তার শরীর থেকে হাত’টা ভিন্ন হয়ে যায়, তার হাত তুলে নিয়ে আমি রান্না ঘরে গেলাম, তার আঙ্গুলে বিষের বতল চেপে ধরে অবশিষ্ট কফিতে ঢেলে দিলাম, তার আঙ্গুলে চামচ লাগিয়ে কফি নাড়াতে নাড়াতে বললাম “হ্যা গো প্রিয় প্রাক্তন, তোমায় খুব ভালবেসে ছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে? আমার সাথে প্রতারণা করলে, দেখ প্রিয় তুমি প্রতারণা করলেও আমি তো আর প্রতারণা করতে পারি না তাই তোমায় দেওয়া বিষটা আমিও খেয়ে নেব তাও তোমার নিজ হাতে, ওপারে যদি আবার দেখা হয় তবে অন্তত বলতে পারবো ‘দেখেছো প্রিয় প্রাক্তন? আমি জানতাম তুমি আমায় বিষ খাওয়াচ্ছো তবুও কেমন খেয়ে নিলাম তোমার সঙ্গে এক না হওয়ার শর্তে”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত