অনীতা রজতের এক ছেলে ও এক মেয়ে। রজত ভালই চাকরী করেন। ছেলে এখন ফিজিক্সে মাষ্টার্স করছে। মেয়ে আলো ক্লাস টেনে পড়ে। সামনের বার ফাইনাল।অনীতার মেয়ে আলো সত্যিই রূপে গুণে আলো করা মেয়ে। শান্ত অথচ বেশ বুদ্ধিমতী।ছেলে অলক ও পড়াশোনায় ভালও বেশ উদারমনা।মা বাবা ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক আশা রাখেন। এই বয়সেও তাদের মনে বিশেষ কোন চাহিদা নেই।
বাবা মার ওপরে তারা কোন চাপ সৃষ্টি করে না,বুঝদার।মেয়ে আলো তো ক্লাস এইট থেকে টিফিন নিয়ে যেতে চায়না।বলে,খেয়ে যাই আমার আর খিদে পায়না ছেলেও তাই।মা তাও রোজ দুজনের হাতে কুড়ি টাকা করে দিয়ে দেন। বলেন,কেক বিস্কুট যা হয় কিছু কিনে খাস। আর বাবা রজতবাবুও ওদের হাতে পকেট মানি হিসেবে কিছু টাকা দেন।কিন্তু এই নিয়ে ওদের কোন বাহুল্যতা করতে দেখেন না।এবার পয়লা বৈশাখের দিন আলোর কাকার বাড়ী ওদের সবার নেমন্তন্ন ছিল। তারপর আলোর স্কুল চলছে। পরের শনিবার আলোর স্কুল ছুটি। সেদিন অনীতা রান্না করছেন,আলো এসে বলল- মা,আজতো দাদার দুপুরে ক্লাশ শেষ। বিকেলে দাদা আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে। মা, তুমি না কোরোনা।
অনীতা অবাক হয়ে বললেন—-কোথায় রে?
আলো বলল-এই তো সামনেই।দাদা আমাকে একটু খাওয়াবে আজ। অনীতা খুশি মনেই বললেন,যা না।
বিকেল পাঁটার মধ্যেই আলো তৈরী হয়ে দোতলা থেকে নেমে এসে বলল—মা আমরা যাচ্ছি। তখন ছেলেও নেমে এসেছে। অনীতা দেখলেন আলোর হাতে একটা বড় বিগ শপারে কিছু জিনিষ।তিনি বললেন—কি রে,ব্যাগে কি আছে? কোথায় যাচ্ছিস?আলো বলল,মা আমাদের বকাবকি কোরনা।পয়লা বৈশাখের দিন তো কাকুর বাড়ী গিয়েছিলাম,তাই পারিনি। আমরা সামনের টালী বাড়ীগুলোর বাচ্চাদের কটা নতুন জামা দিতে যাচ্ছি,যাতে ওদের মুখে একটু হাসি ফোটে। আমরা তো কত পাচ্ছি মা।ওদের তো এ সময় নতুন জামা জোটে না। দাদা এ ব্যাপারে আমাকে পুরো সাথ দিয়েছে। কাল গিয়ে দাদা জামাগুলো কিনে এনেছে। অনীতা হতবাক। জিজ্ঞেস করলেন—তোরা টাকা পেলি কোথায়?
ওরা বলল—আমরা টিফিনের টাকা আর পকেটমানি থেকে জমিয়ে কিনেছি মা অনীতার চোখে জল চলে এল। এত বড় মন তাঁর ছেলেমেয়েদের! এদের মত সন্তানদের মা হওয়ার মত পাওনা তো আর কিছুতে হয় না। বললেন—আমি তোদের আশীর্বাদ করছি তোরা সারা জীবন যেন কিছুটা হলেও ওদের মুখে হাসি ফোটাতে পারিস।ওরা বলল—মা, তুমিও চলনা আমাদের সাথে। মা ভাবলেন এই মহৎ কাজের শামিল হলে আমিও ধন্য হব।বললেন চল বাবা যাই। তিনজনে এগিয়ে চলল।