সকাল সকাল বর গোপালের এবং বউ রানীর খিটপিট শুরু। ছোট ছোট ব্যাপারে ঝগড়াঝাঁটি যেন অভ্যেসে দাড়িয়ে গেছে।রানীর তরফ থেকে ঝগড়ার কারণ গুলি হয়… কখনো ভিজে টাওয়েল বিছানায় রাখা নিয়ে, কখনো জুতো রাখার সঠিক জায়গা নিয়ে,কখনো সঠিক কায়দায় ব্রেক ফাস্ট না খাওয়ার জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি।
গোপাল ই বা কম কিসের….. খাদ্য রসিক গোপালের খাওয়া দাওয়াতে কমপ্রোমাইজ একেবারে পছন্দ নয়। ব্রেকফাস্ট যখন রাজার মতো খেতে হয়, সেখানে ফুলকো লুচি,বেগুন ভাজা, সাদা আলুর তরকারি,আর ছোলার ডাল হলে তো কথাই নেই, তার সাথে খানদুয়েক মিষ্টি হলেই ভালো, তা না করতে পারলে পরেোটা আলুর তরকারি ,তাও না হলে নিদেনপক্ষে রুটি,আলুর চচ্চড়ি তো চাই। তার বদলে ব্রেকফাস্টে জ্যাম-ব্রেড,লাঞ্চে ওই একঘেয়ে তরকারি দেখলেই তার মাথা গরম হতে শুরু করে। কন্ট্রোল করতে না পারলে নানা অছিলায় তা বেড়িয়ে আসে। শুরু করেই দেয়,
“আজ তরকারিতে নুন বেশি,কাল ঝাল বেশি। একঘেয়ে রান্না, রান্না টা মন লাগিয়ে করলেই তো হয়। কাল থেকে অফিসের লাঞ্চ আর দিতে হবে না। ক্যানটিনেই খাবো।”
বলতেই রানীও জবাব
“বেশ তো! আমার ও শান্তি… বয়স হচ্ছে দুজনেরই। খাওয়াতে কন্ট্রোল করা দরকার।রোজ রোজ সকালে উঠে নটার মধ্যে রান্না করো, ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ রেডি করো,তারপর এত কথা শোনো, আমিও পারবো না আর।”
“ঠিক আছে, ঠিক আছে ….আমিও বাঁচি” বলতে বলতেই গোপাল অফিস ছোটে।
রানীও ঠিক করে আজ রাতে রান্না সে করবে না। এখন থেকে রান্নার লোকই রাখবে। সারাদিন নানা কাজের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রেখেও যেন, তার মনটা উদাস ই থাকে। সংসার সত্যিই অসার।
যথারীতি রোজকার মত অফিস ফেরত গোপাল হাঁক দেয় “কই গো,এক গ্লাস ঠান্ডা জল দাও।
যা গরম পড়েছে না, আর সহ্য করা যাচ্ছে না, এত গরমে আজ বুঝলে চিকেনের পাতলা ঝোল বানাও দেখি ,চিকেন আবার তোমার হাতে ছাড়া ভালো লাগে না….”
রানী হতভম্ব! চোখ দুটো বড় করে বরের দিকে…
শেষের লাইন দুটির কি জাদু, যে রানীর মান অভিমান একেবারে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে…
গদগদ হয়ে রান্না করতে করতে ভাবে,এবার থেকে একটু মন দিয়ে বানাতে হবে, সারা দিন কত খাটাখাটুনি যায় মানুষটার… আহা!সত্যিই তো ব্রেড-জ্যাম বা একঘেয়ে মশলার তরকারি যে খেতে পারে না।
গোপাল ফ্রেশ হয়ে ,একবার রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে নেয় সব ঠিক আছে।আর সোফায় বসে মোচার চপ সহযোগে মুড়ি খেতে খেতে ভাবে সত্যি শেষের লাইন দুটোতে জাদু আছে,নইলে রক্ষা ছিল না আজ। সত্যি সংসারের সং ই বটে আমরা।