একদিন এক মোরগ তার খাবার খুঁজছিলো। খুঁজতে খুঁজতে ঘরের কোণে সে পেয়ে গেলো একটা মটরশুটির দানা।
মটরশুটির দানা ছিলো একটা গর্তের ভেতর, সহজে নাগাল পাওয়া যাচ্ছিলো না। মোরগ তার নখ দিয়ে গর্ত আঁচড়িয়ে তারপর মটরশুটির দানা খেলো।
কিন্তু মটরশুটি আটকে গেলো তার গলার ভেতর। মোরগ এদিকে যায় তো ওদিকে গিয়ে দেয়ালে বাড়ি খায়। গলা লম্বা করে, ছোট করে, হা করে নানা ভঙ্গিমা আর চেষ্টা করেও সে মটরশুটিকে গিলতে পারলো না। এতে তার নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিলো।
তাই দেখে মিসেস মোরগ দৌড়ে এলো। বললো, ‘মিস্টার মোরগ, তুমি কী খেয়েছো? কী হয়েছে তোমার?’ ‘আর বলো না, একটা মটরশুটি পেয়ে খেয়েছিলাম’, মিস্টার মোরগ বললো।
‘তুমি তাড়াতাড়ি মিসেস গরুর কাছে যাও, কিছু মাখন নিয়ে এসো’, মিসেস মুরগিকে যেতে বললো মিস্টার মোরগ।
মিসেস মুরগি দৌড়ে এলো মিসেস গরুর কাছে। বললো, ‘মিসেস গরু, কিছু মাখন দাও। গলায় মটরশুটি আটকে মোরগ পড়ে আছে, বেচারা নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না।’
মিসেস গরু উত্তর দিলো, ‘যারা ঘাস কাটে তাদের কাছে দয়া করে যাও। কিছু ঘাস নিয়ে আসো।’
মিসেস মোরগ দৌড়ে গেলো ঘাসুড়ের কাছে, ‘ভাই, আমাকে কিছু ঘাস দাও। সে ঘাস নিয়ে যেতে হবে মিসেস গরুর জন্য। মিসেস গরু আমাকে মাখন দেবে। মাখন নিয়ে যাবো মিস্টার মোরগের জন্য। তার গলায় মটরশুটি আটকে আছে।’
ঘাসুড়ে বললো, ‘চুলোর কাছে যাও। কিছু রুটি নিয়ে এসো।’
মিসেস মোরগ দৌড়ে গেলো চুলোর কাছে, ‘ভাই, আমাকে কিছু রুটি দাও। রুটি খাবে ঘাসুড়ে। সে দেবে কিছু ঘাস। সে ঘাস নিয়ে যেতে হবে মিসেস গরুর জন্য। মিসেস গরু আমাকে মাখন দেবে। মাখন নিয়ে যাবো মিস্টার মোরগের জন্য। তার গলায় মটরশুটি আটকে আছে।’
চুলো বললো, ‘কাঠঠোকরার কাছে যাও। কিছু কাঠ নিয়ে এসো।’
মিসেস মোরগ দৌড়ে গেলো কাঠঠোকরার কাছে, ‘ভাই, আমাকে কিছু কাঠ দাও। কাঠ নেবে চুলো, দেবে রুটি। রুটি খাবে ঘাসুড়ে, দেবে কিছু ঘাস। সে ঘাস নিয়ে যেতে হবে মিসেস গরুর জন্য। মিসেস গরু আমাকে মাখন দেবে। মাখন নিয়ে যাবো মিস্টার মোরগের জন্য। তার গলায় মটরশুটি আটকে আছে।’
কাঠঠোকরা বললো, ‘কামারের কাছে গিয়ে একটা কুঠার নিয়ে এসো। আমার কাছে কাঠ কাটার কিছুই নেই।’
মিসেস মোরগ দৌড়ে গেলো কামারের কাছে, ‘ভাই, আমাকে একটা কুঠার দাও। কুঠার নেবে কাঠঠোকরা, দেবে কাঠ। কাঠ নেবে চুলো, দেবে রুটি। রুটি খাবে ঘাসুড়ে, দেবে কিছু ঘাস। সে ঘাস নিয়ে যেতে হবে মিসেস গরুর জন্য। মিসেস গরু আমাকে মাখন দেবে। মাখন নিয়ে যাবো মিস্টার মোরগের জন্য। তার গলায় মটরশুটি আটকে আছে।’
কামার বললো, ‘আমার কাছে কয়লা নেই। লোহা পোড়ানোর জন্য কিছু কয়লা নিয়ে এসো।’
মিসেস মোরগ দৌড়ে গেলো বনে, কিছু শুকনো গাছ জমালো। সেগুলো পুড়িয়ে বানালো কয়লা। তারপর কয়লা নিয়ে গেলো কামারের কাছে। কামারের কাছ থেকে কুঠার বানিয়ে নিয়ে গেলো কাঠঠোকরার কাছে। কাঠঠোকরা তাকে দিলো কাঠ।
কাঠ নিয়ে দেওয়া হলো চুলোকে। চুলো বানিয়ে দিলো রুটি। রুটি নিয়ে যাওয়া হলো ঘাসুড়ের কাছে। ঘাসুড়ে দিলো ঘাস। তারপর সে ঘাস খেলো মিসেস গরু। সে দিলো মাখন।
মিস্টার মোরগ মুখে মাখন পুরে তবেই গলায় আটকে পড়া মটরশুটি খেতে পারলো।
মিস্টার মোরগ আনন্দে লাফিয়ে উঠলো, গিয়ে বসলো দেয়ালে। কক্ উউউক কক্ কক্ করে ডাকতে লাগলো।
এবার সে মনের সুখে গান গাওয়া শুরু করলো, সুন্দর জুতো পায়ে দিয়ে বসলো দেয়ালে- ‘আমি হারিয়ে ফেলি সুঁই। কিন্তু আমি খুঁজে পেলাম একটা ছোট্ট পয়সা। সে পয়সায় কিনি একটা রুমাল। রুমাল দিলাম প্রিয়তমো তোমাকে।’
(ভেলেরি ক্যারিক এর গল্প)