সকালবেলা উঠে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে দাঁত মাজা নিশীথবাবুর বহু পুরানো অভ্যাস। সেদিনও তাই করছিলেন তিনি। হঠাৎ তাঁর নজরে আসে একটা চকচকে বস্তু। জিনিসটা বাগানের একদম শেষ প্রান্তে পড়ে আছে।
কৌতুহলবশত হয়ে এগিয়ে গিয়ে জিনিসটা হাতে তুলে নিলেন তিনি। অদ্ভুত জিনিস তো! একদম সোনার কয়েনের মতো দেখতে, কোন কিছুর ছাপ নেই, শুধু মাঝখানে একটা কালো বিন্দু। ওই বিন্দুতে হাত দিতেই যেন তীব্র এক সুঁচ ফুটল তাঁর হাতে। তারপর আর কিছু মনে নেই তাঁর। বাড়ির লোকজন এসে তাঁর জ্ঞান ফেরালে তিনি ঐ সোনালী চাকতির কথা বললেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করল না। ভাবল রিটায়ারমেনটের পর ওসব তাঁর উর্বর মস্তিষ্কর কল্পনা। আর নিশীথবাবু জিনিসটা খুঁজতে গিয়ে দেখলেন সেটাও বিলকুল গায়েব।
ট্রিট্রিয়ানা গ্রহের রোবোটিক সায়েনটিসটদের মধ্যে আজ আনন্দের জোয়ার। এবার তারা পৃথিবী দখলে সমর্থ হবেই। গত দু’বারেই পৃথিবী তাদের বুদ্ধি দিয়ে অনেকভাবে নাস্তানাবুদ করেছে । তাই টেকনোলজির দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও মগজে “বুদ্ধি” নামক বস্তুর অভাবে পরাজিত হতে হয় ট্রিট্রিয়ানদের। গত দু’বছরে অনেক প্ল্যান সাজিয়েছেন ট্রিট্রিয়ানার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী D111। তিনি দেখেছেন পৃথিবীবাসীর কৌতুহল বেশী। তাই পৃথিবীর নানা স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের জিন সংগ্রাহক ক্যাপচারিকা।
এর কালো অংশে রয়েছে একটি সূক্ষ্ম নিডল যা মানুষের শরীর থেকে একফোঁটা রক্ত সংগ্রহ করে, সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে সেই ব্যক্তির মস্তিষ্কর সব তথ্য এনে দেবে D111 এর হাতে। সেই তথ্য থেকে তিনি জেনে যাবেন ওই ব্যক্তির আই.কিউ. কত, পৃথিবীর বড় বিজ্ঞানীদের নাম। তারপর সেই বিজ্ঞানীদের থেকে জিন সংগ্রহ করে সেই জিন এর মডিফিকেশন করে তৈরি হবে ম্যানাবোট। যার একদিকে থাকবে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, অন্যদিকে তার থাকবে সবথেকে মডার্ন টেকনোলজির জ্ঞান। আর আজ তিনি খুঁজে পেয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও সবথেকে বেশী আই.কিউ. যুক্ত বিজ্ঞানী অবনীশ গাঙ্গুলীর জিনবাহী একফোঁটা রক্ত। এবার ম্যানাবোট তৈরী করে পৃথিবী দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বেশ কয়েকদিন ধরেই অবনীশের র্যাডারে বার বার ধরা পড়ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ট্রিট্রিয়ানদের উপস্থিতি। কিন্তু তারা আক্রমনের চেষ্টা না চালানোয় তিনি অবাকই হচ্ছিলেন। বুঝতে চাইছিলেন তাদের এবারের পরিকল্পনার ব্যাপারে। সেদিন কফির কাপ হাতে সকালের কাগজটার পাতা ওলটাতে গিয়ে চোখ আটকাল খবরটায়-“সকালবেলা মর্নিংওয়াকে গিয়ে অজ্ঞান”। কাপটা পাশের টেবিলে রেখে এক নিঃশ্বাসে পুরো খবরটা পড়লেন তিনি। চকচকে বস্তু – হাতে তীক্ষ্ণ অনুভূতি।
গত কয়েকদিন মাঝরাতেই তো তিনি ট্রিট্রিয়ানদের উপস্থিতির সংকেত পেয়েছেন। লাফিয়ে উঠলেন বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়। অনেক ভেবে বিকেলে আন্দাজ করতে পারলেন পৃথিবীর উপর আবার ঘনিয়ে আসা আশু বিপদের কথা। দু’দিন নিজের ল্যাব থেকে বেরলেন না তিনি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করে তিন দিন পর তৈরী করলেন এক প্রোগ্রামড্ জিন। এরপর সেই জিন দিয়ে নিজের এক ক্লোন তৈরীর কাজ শুরু করলেন তিনি। যার গ্রোথ এক মিনিটেই এক মাসের সমান হবে। দশ ঘণ্টা পর সব কাজ শেষ করে যখন কফির কাপ হাতে বারান্দায় এসে বসলেন, তাঁর বন্ধু নিশীথবাবু এসে সকালের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। অবনীশ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে ওটা তাঁর মনের ভুল। আর তাঁর মন বলতে লাগল এবার পালা তাঁর। তাই কাল থেকেই তাঁর, থুড়ি তাঁর ক্লোনের মর্নিংওয়াক শুরু হবে।
অবশেষে এল সেই দিন। একদিন হঠাৎ পৃথিবী দেখল আকাশ সূর্যের আলোয় নয়, অন্ধকারে ভরে গেছে। আকাশ ঢাকা পড়েছে ট্রিট্রিয়ানদের মহাকাশযানে আর তা থেকে পিলপিল করে নেমে আসছে লক্ষ লক্ষ ম্যানাবোট। সব দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অনবরত যোগাযোগ চললেও কেউ কাউকে সাহায্য করার অবস্থায় ছিলনা। কারন সর্বত্রই হানা দিয়েছে ওই ম্যানাবোটের দল। পৃথিবীর মানুষ তাদের অসহায়তা বুঝতে পেরে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে লাগল। কিন্তু একি! ম্যানাবোটরা ঘরে ঘরে ঢুকে হাত মিলিয়ে শুধু বন্ধুত্বের কথা বলছে কেন! অবাক হয়ে গেল মানুষের সাথে ট্রিট্রিয়ানরাও। শেষ মুহূর্তেও ল্যাবে হিংস্রতাতে AAA ডিগ্রী পেয়েছে ম্যানাবোটরা।
পৃথিবীতে এসে তাদের এই পরিবর্তন হল কীভাবে! আসলে তারা ভাবতেও পারেনি তাদের পরিকল্পনা একজন বুঝে গিয়েছিল। বিজ্ঞানী অবনীশ গাঙ্গুলীর কেরামতিতেই তারা সংগ্রহ করেছিল অবনীশের জিন নয়, তাঁর ক্লোনের প্রোগ্রামড্ জিন। যা পৃথিবীর বাইরে গেলে স্বাভাবিক আচরণ করবে, কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে কোন মডিফিকেশনই এর উপর কাজ করবে না। বরং এই জিন দিয়ে তৈরী প্রাণী শুধু শান্তির কথা প্রচার করবে। নিজের ল্যাবে বসে মাথা চাপড়াচ্ছিলেন D111। ভাবতেও পারেননি এইভাবে হেরে যাবেন তিনি। আর বিশ্বের সবথেকে বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী অবনীশ গাঙ্গুলী তখন তাঁর বারান্দায় বসে তাঁর ক্লোন ও এক ম্যানাবোটের সঙ্গে তুমুল আড্ডায় ব্যস্ত।