জয় ও আমি

জয় ও আমি

আমার বন্ধু জয়,সেই যে সেই ছেলেটা!বড়োই অদ্ভুত! অনেক দিন পর দেখা হোলো ওর সাথে! ভাবিনি এমন সময় ঘটে যাবে সেই ঘটনাটা!

সময়টা ছিলো বড়ো অদ্ভুত,আমি কলেজ শেষে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছি,তখনো রাস্তায়, আপাদ -মস্তক একটা বিরক্তি ভাব যেনো গ্রাস কোরেছে চারিদিক থেকে , এদিকে আবার “”ভালোলাগেনা ” রোগটাও রিতিমত কদিনধরে বেশ ভুগিয়েই চলেছে! এমন সময় কিছুটা এগোতে না এগোতেই সাইকেলের টায়ারটাও গেলো ফেটে! যা শালা,”একেই মা মনসা,তারপর আবার ধুনোর গন্ধ”!

বাকি পথটা মনেহয় হেঁটেই পেরোতে হবে — এই ভেবে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম! লাল আকাশ, সন্ধে প্র্রায় হব হব,রাস্তার দু পাশে যেনো ফাকা মাঠ গুলো বহু দূর দূর অব্দি গিয়ে কোথাও একটা আকশের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে,চারিদিক এক নিস্তব্ধতার ঘনঘটা,যদিও প্রতি 10 মিনিট অন্তর অন্তর একটা করে ট্রাক খুব শব্দ করে পেরিয়ে যাচ্ছে ঐ আঁকা – বাঁকা রাস্তাটা বেয়ে দূর বহু দূর আর তারপর,আবার নিস্তব্ধতা! আমি দিব্বি হাঁটছি, মাথার মধ্যে হাজারটা চিন্তা! কাল আবার কলেজ,আবার সেই একেই জীবন জালানো রুটিন! সেই একেই ঝাট জালানো আড্ডা, কতদিন আর এভাবে চলবে,একটা বিরক্তি জন্মে গেছে এই একঘেয়ে জীবনের প্রতি! এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত হয়েগেছে টের পাই নি! খনিক বাদে ঘোর কাটতে যেটা দেখলাম,হয়তো জীবনের শেষ মুহূর্তেও মনে পড়লে গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে!

তখন চারিদিক অন্ধকার, একবারে নিস্তব্ধ! এর আগে কখনো নীরবতা কে এতো সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করি নি! দু পাশ ঘিরে জঙ্গল আর ঝিরি ঝিরি ঠান্ডা বাতাস! মথার উপর এক ঝাঁক তারা যেনো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে! আমি কেমন যেনো ভাবতে ভাবতে মহাকাশ- স্পেস – মহাশুন্যে বিরাজ করেছি! এমন সময় দেখি কে যেনো একটা আমার পাশে দাড়িয়ে! বুকটা সঙ্গে সঙ্গে ধড়াস্‌ করে উঠলো! এতো জয়! কিন্তু এতো রাতে এখানে..,
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো, খুব সংশয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছিস ভাই?
প্রতিবারের মত এবারেও একরাশ ফুর্তি নিয়ে বলে সেই আছি ভাই যেমন ছিলেম! আমি লজ্জাতে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছি,একটা অপরাধবোধ যেনো গ্রাস করছে অমায়!

জয় আবার বলে মনে পড়ে সেই দিন গুলো?
এই তো সেদিনই কলেজে পড়বো বলে কতোই না স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম! একটা মুক্তো স্বাধীনতার স্বপ্ন, বড়ো হবার স্বপ্ন! জয় বুঝিয়ে ছিলো অনেক! শুনিনি! জয় তখনও সুখী ছিলো,সেই মুহুর্তে! বার বার বলতো দেখ তারা গুলো কেমন আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে,আমি দেখিনি! জয় রোজ বিকেলে নিয়ে যেতো আমায় কোনো এক জঙ্গলে,কেমন করে পাখিগুলো খুব কৌশলে মহল দারকে ফাঁকি দিয়ে খেজুর রস খেতো,সুর্য ডোবার সেই মুহূর্ত,ঝাঁক ঝাঁক পাখির বাড়ি ফিরে যাওয়ার সেই আলো আঁধারি দৃশ্য…ওসব কিছুই দেখিনি আমি! আমি তখন দেখতাম ঐ কলেজ পড়ুয়াদের!দেখতাম বড়ো হবার স্বপ্ন! জয় তখনও বুজিয়ে ছিলো আমায়! এসব ধোকা,একটা জাল,একটা নেশা.. আরো কত কী! কিচ্ছু শুনিনি আমি…

খুব হিংসে হয় জয় কে দেখে,কিন্তু লোকে তো ওকে পাগল বলে! আমি চাই না জয় হতে! তাহলে আমি কী চাই?

এমন সময় কে যেনো কানের কাছে বলে উঠলো- ভোর হয়েছে! গলাটা অবিকল জয়ের মতো শুনে খুব ব্যস্ততায় তাকিয়ে দেখি বিছানায় শুয়ে আছি! কেমন যেনো একটা স্বস্তির অনুভূতি! বাইরে বেরিয়ে দেখি খুব সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছে কাল রাতে! গাছের পাতা গুলো দিয়ে তখনও টিপ – টপ করে দু -এক ফোটা বৃষ্টি পড়ছে! চারিদিকে একটা ঝড়ো বাতাস আর সমস্ত প্রকৃতি যেনো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে! খনিক বাদে সাইকেলটার কথা মনে পড়তে মনে পড়ে গেলো আজ সাইকেলেই কলেজ যেতে হবে! কে যেনো ‘বন্ধ ‘ডেকেছে!আবার সাইকেলের আবস্থাটাও নাকি ভালো নেই! সব কালকেই বাবা বলেছে! যায় হোক আর দেরি না করে সাইকেলটা নিয়ে রাস্তায় গেলাম!

চারিদিক সবাই যেনো ব্যস্ত,একটা অশান্তি ,অস্থিরতার ভাব ! এই বুঝি সেই জাল! খনিকটা হাসি পেলো,এমন সময় চোখটা এক জোট প্রাপ্তবয়স্কের আড্ডার দিকে পড়লো! বেশ জমে উঠেছে আড্ডা.. আর ঠিক তখনি হঠাৎ দেখি কথার কোথায় কে যেনো বলে উঠলো –সেই এক খানা দিন ছিলো মাইরি বল – —
“”যখন কলেজে পড়তাম “”!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত