বাঘিনী

বাঘিনী

দক্ষিণরায়, বনবিবির পূজো সেরে – নাদিম, বিল্লা, সাধু আর লখা বেরিয়ে পড়েছে গাছ কাটতে। সেফ জোন ছেড়ে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে নিষিদ্ধ কোর এরিয়াতে। এখানেই রয়েছে ভালো ভালো গাছ আর রয়েছে সেই ‘হলুদ ডোরাকাটা’ বাঘের ভয় তার সাথে। ভেজা মাটিতে পা দিয়ে, এগিয়ে গাছ কাটতে শুরু করে ওরা সবাই। হঠাৎ ঝোপ থেকে ওদের সামনে এসে পড়ে ছোট একটা বাঘের বাচ্চা, চোখদুটো যেন খুঁজছে কাউকে। নাদিমের ইশারায়, বাঘের বাচ্চাটার মুখ কাপড়ে বেঁধে , মাটিতে একটা গর্ত করে ফেলে তাড়াতাড়ি বাকি তিনজন, গাছের ডালপালা পাতা দিয়ে ঢেকে দেয় সেই গর্ত।

নাদিম বাঘের বাচ্ছাটাকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে, হাতের কুড়ুল চালিয়ে কেটে দেয় বাচ্চাটার একটা পা। রক্ত বেরোতে শুরু করে, ছটফট করতে থাকে বাচ্চাটা। বাচ্চাটাকে ঝুলিয়ে ধীরে ধীরে নিয়ে আসে গর্তের কাছে, গর্তের ওপরে বাচ্চাটাকে রেখে নিজেরা উঠে পড়ে পাশের বড়ো অর্জুন গাছের মধ্যে।

একটু পরেই একটা বাঘিনী নদী সাঁতরে আসে , রক্তের গন্ধ পেয়ে , নিজের সন্তানের কথা ভেবে ঝড়ের মতো ছুটে আসে গর্তের কাছে। আহত বাচ্চাটাকে ডেকে গগনবিদাৰক ডাক ছাড়ে একটি , তাড়াতাড়ি বাচ্চাটার কাছে পৌঁছতে গিয়ে , মানুষের পাতা ফাঁদের মধ্যে গিয়ে পড়ে ও। হাতের তীর ধনুক ব্যবহার করে মেরে ফেলে বাঘিনীটাকে ওরা চারজন। সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কাঠের পাশাপাশি, বাঘের চামড়া ; বনবিবি মুখ তুলে চেয়েছে অনেকদিন পর। অনেকটা টাকা কামানো যাবে একসাথে।

নাদিম আর সাধু বাঘিনীটা আর বাচ্চাটাকে ওপরে তুলে নিয়ে আসে। কুড়ুলের ভোঁতা দিকটা দিয়ে মেরে মেরে বাচ্ছাটাকেও শেষ করে ফেলে ওরা। হাসি মুখে, বাঘিনীটা আর ওর বাচ্চাকে নিয়ে নৌকোর দিকে এগোতে থাকে চারজন। তাড়াতাড়ি একে লুকিয়ে ফেলতে হবে, আর যাওয়ার সময় দীনেশের কাছে নামিয়ে দিতে হবে মালটা।

নৌকোয় ওঠার আগে ভেজা মাটিতে পা দিতেই, হঠাৎ একটা খসখস শব্দে, পেছনে তাকায় চারজনেই।

আবার একটা বাঘের বাচ্চা ? ওদের পেছনে আসছে ? সাধু হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে , “ইকে তো মেরে দিয়েচি মোরা। ভালো করে দেক দিকিনি, ইটার একটা পা নেই। ” বাকিরা ভয়ে ভয়ে পেছোতে থাকে। নদীর ভেতর থেকে হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ করে উঠে আসে বাঘিনীটা। এক থাবায় লখা আর সাধুকে মাটিতে ফেলে দেয়। কামড়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলে ওদের মাথা শরীর থেকে। বিল্লা ভয়ে দৌড়ে পালাতে যায়, এক লাফে ওর ওপরে চড়ে বসে বাঘিনীটা, বুকের ওপরে প্রচন্ড জোরে এক থাবার আঘাত, হৃৎপিন্ড বেরিয়ে আসে শরীর থেকে দু টুকরো হয়ে। নাদিম ভয়ে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাটির ওপরে। কোথাও পালানোর কোনো শক্তি নেই আর ওর মধ্যে। মনে মনে বনবিবি আর দক্ষিণরায়কে স্মরণ করতে থাকে।

বাঘিনীটা আর তার বাচ্চাটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ওর দিকে , ওদের চারটে চোখে যেন জ্বলছে আগুন….

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত