শাড়ি

শাড়ি

-আপু ওই কালার টা দেখান তো..
-নিচের টা নাকি উপরের টা?
-ওই যে সবুজ রংয়ের উপরের টা!
-কফি রংয়ের?
-জ্বি
-আচ্ছা
-এই আবিদ দেখতো এটা পছন্দ হয় কিনা?
-কি হলো….আবিদ?
-না মানে…..?হ্যা ভালো তো।(সেলস ওমেন এর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম।রিমার ডাক শুনে খুব লজ্জায় পরে গেছি।সেই মেয়েটাও মুচকি মুচকি হাসছে)
-রিমা আপু আরো কিছু দেখেন(এটা বলার কারন যাতে মেয়েটাকে আরো কিছুক্ষন দেখতে পারি)

আমি আবিদ।আর আপু হচ্ছে বন্ধুর বড় বোন। বন্ধুর বিয়ের বাজার করতে এসেছি।এখন দাড়িয়ে আছি একটা বিখ্যাত শাড়ি দোকানে।আর মেয়েটা শাড়ি দেখাচ্ছে তার দিকে নজর পরেছে আমার।সত্যি  বলতে এত মায়াবি কাউকে দেখি নি। অসম্ভব ভালো লেগেছে মেয়েটিকে।নাম তার আভা।কোন বিপদে জানি পড়লাম।আপুও লক্ষ্য করছে ব্যাপার টা।না জানি বলে দেয় সবাইকে হাসি তামাশার ছলে।আল্লাহ বাঁচাও।তবে এ মেয়ের পিছু ছাড়বো না।

-আপু দেখে নিন কিছু বাকী আছে কিনা!
-না আবিদ। চল যাই।
-কিরে? কি হলো?
-এ….না কিছু না।
-তাই বুঝি।তোর বন্ধুর সাথে কি তোর টাও সেরে ফেলবো নাকি?
-কি যে বলেন না আপু?(ওই দিকে আভা তো মুচকি মুচকি হাসতেছে।

ইজ্জতের বারোটা বাজাই দিলো।বড় আপু গুলো পারেও বটে) তারপরেতে কারনে অকারনে দোকানে যেতে লাগলাম মেয়েটিকে দেখার জন্য।বান্ধবিদের কিছু লাগলেই সাথে করে চলে আসতাম দোকানে।ততদিনে মেয়েটা আমাকে বেশ চিনে গেছে। দেখলেই মিটি মিটি হাসে।আর এ দিকে আমার পরান টা জ্বলে হাসির মুগ্ধতায়! বান্ধবি গুলা কত কিউট আর সুন্দর। কিন্তু তাদের প্রতি কোনো ফিলিংস নেই। একদিন তো ইরার হাতে কিল ঘুষি খেয়ে পালিয়ে ছিলাম ভার্সিটি লাইফে। কিন্তু এখন সবাই চাকরি করলেও একসাথে থাকতে চেষ্টা করি।কেনো ইরার প্রতি আমার ফিলিংস নেই সেজন্য কি মার টা না খেয়ে ছিলাম।পরে অনেক বুঝিয়ে ইরা কে পথে এনেছি।কিন্তু মাঝ পথে এসে আভাকে এত ভালো লেগে যাবে বুঝতে পারি নি।নিশ্চয় বান্ধবিরা জানলে ক্ষ্যাপাবে।আর ইরার হাত থেকে তো রক্ষা পাবোই না।

-এই যে আবিদ সাহেব?(হাতে তুরি বাজিয়ে)
-জ্বি।কিছু বললেন?
-এমন ভাবে তাকাতে নেই।
-কি করবো আমি?চোখে যাকে ভালো লেগেছে।
-এই লাইনে কতদিন?
-মানে কি বলছেন আভা?
-ন্যাকামি বাদ দিন।মেয়ে পটানোর লাইনে কত দিন?আর কয়টা পটিয়েছেন?
-কি বলেন এসব?লজ্জায় পরে গেলাম!
-হা করে তাকিয়ে থাকার সময় লজ্জায় কোথায় যায়?
-আচ্ছা বাদ দিন।আমার সাথে এক কাপ কফি খাবেন কোন রেস্টুরেন্টে?
-খুশি হবেন তাহলে?
-জ্বি। অনেক।
-আচ্ছা সময় স্হান বলে যান
-ধন্যবাদ।

সময় স্হান বলে দোকান হতে বের হয়ে আসলাম।খুশিতে আর মন মানতেছে না। মনটা চাইতেছে এখনি নাচা শুরু করে দেই।কিন্তু তা হলে মান সম্মান থাকবে না।কারন,এটা রাস্তায়।রাস্তায় এমন করে নাচলে নিশ্চয় ভদ্রবেশি পাগল ভাববে!

সারা রাত ঘুমাতে পারি নি।কি ভাবে প্রপোজ করবো আভাকে সেই চিন্তায় ঘুম হয় নি।অনেক পদ্ধতি ঠিক করেছি।কিন্তুকোন কিছু মন মত হচ্ছে না।আর খুশিতে ঘুম মামাও চলে গেছে চাঁদের দেশে।তবে, তাকে একটু ভিন্ন ভাবেই প্রপোজ করবো। সেদিন যে জামদানি শাড়িটা কিনেছি তোর দোকান হতে সেটা দিয়ে প্রপোজ করবো ভাবছি।যাক,আপাতত ঘুমিয়ে নেই কিছু ক্ষন। রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি।ওই তো আভা আসছে।ইশ শাড়ি পরেছে।কি সুন্দর টাই না লাগতেছে।উফ!চোখে কাজলও দিয়েছে।আমি পুরাই শেষ!

-আবিদ সাহেব মুখ বন্ধ করেন।নয়তো মাছি ঢুকে যাবে।
-হা…!(দুজনেই অপ্রস্তুত ভাবে হাসলাম) তারপর কফির অর্ডার দিয়ে গল্প করতে লাগলাম নানা বিষয়ে।একসময় কফি এলো।খেতে খেতেই চেয়ে আছি তার দিকে।তৃপ্তির প্রতিটা চুমুক সে দিচ্ছে।

-আমি জানি আপনি কি চাইবেন আমার কাছে আবিদ সাহেব।
-তাহলে বুঝতেই পেরেছেন। নতুন করে বলতে হবে না। যে মাত্রই না শাড়িটা দিয়ে প্রপোজ করতে যাবো ঠিক তখন সে বলে উঠলো,

-থামুন আবিদ সাহেব।
-কেনো আভা?
-আমি বিবাহিত!

শাড়ির পেকেট টা হাতেই ছিলো।তাই নিয়ে যাত্রা দিলাম বাড়ির দিকে!আর সে মুচকি মুচকি হাসতেছে!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত