চুল

চুল

আজ ঘুমাব না কিছুতেই ঘুমের ভান করে থাকব। আজ আমাকে দেখতে হবে আবির আমাকে ঘুম পারিয়ে রিডিং রুমে কি করে। গত তিন দিন আগে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি আবির বিছানায় নেই। বাথরুমের লাইট জ্বলছে না। তাহলে কি ব্যালকনিতে, রিডিং রুমে, নাকি ড্রয়িং রুমে? আমার উঠতে ইচ্ছে করছে না অবশ্য সহজে নড়াচড়া করতে ও পারি না। আমার ভেতর আট মাসের এক জীবন। কয়েকবার ডাক দেয়ার পর দৌড়ে আসছিল।

– কোথায় ছিলে?
– রিডিং রুমে
– কি করো, এতো রাতে?
– অফিসের কিছু কাজ, অত রাত হয়নি তো। মাত্র বারোটা।
– বেশি রাত করো না, সকালে অফিস আছে তোমার।

আজ কষ্ট হলেও উঠলাম। দেখি কি করে। না কোন খারাপ সন্দেহ নেই ওর প্রতি। জানি কখনো খারাপ কাজ ওর দ্বারা হবে না। কোন খারাপ নেশা নেই। সিগারেট তো দূরের কথা চা পর্যন্ত খায় না। না, চা খায় সকালে আমার কাপের তলানি টুকু। আমার আবার চা ঠান্ডা করে খেতে হয়। ও ফ্যানের বাতাসে বা হাত পাখা দিয়ে চা ঠান্ডা করে দিবে। আমি চা খাওয়ার সময় আড়চোখে একটু দেখবে আমি কাপের কোন জায়গায় ঠোঁট লাগিয়েছি। তলায় এক বা দুই চুমুক রেখে ওকে দেই। ও ঠিক আমার ঠোঁট লাগানো অংশে ঠোঁট লাগিয়ে এক চুমুকে পান করে কাপ ধুয়ে ফেলে। এর ব্যতিক্রম হয়নি কোনদিন। সারাদিন অফিসে কখনো চা খায় না। সময় পেলে ফেসবুকিং। লেখালেখি, কবিতা, গল্প, কমেন্টের রিপ্লাই। কোন মেয়ের সাথে আলগা পিরিত করা ও ওর দ্বারা সম্ভব না। ও আল্লাহ কে ভয় করে। আর হালাল হারাম এর ব্যাপারে সতর্ক। তারপরও মনে হচ্ছে রাতে কি করে দেখি।

উঠতে কষ্ট হলেও উঃ শব্দটি না করে কোমরে হাত দিয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে দেখি ও রিডিং রুমের টেবিলে কি একটা করছে। পর্দা টা একটু ফাঁক করতেই দেখলাম ও কালো রেশমী সুতোর মতো কি কত গুলো নিয়ে কি যেন করছে। আমার কৌতুহল আরো বেড়ে গেল।

ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যেহেতু আমার কাছে লুকিয়ে করছে। হয়তো সারপ্রাইজ কিছু দিবে। তারপর ও মনের ভেতর খঁচ খঁচ করতে করতে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। পরদিন ও অফিসে গেলে রিডিং রুমে খুঁজতে খুঁজতে ওর কোম্পানির গিফট এর ফাঁকে একটা প্যাকেট পেলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে খুলে দেখে আমি থ! প্যাকেট ভর্তি আমার ঝড়ে যাওয়া চুল। একটা ক্লিপবোর্ডে লম্বা করে বিছিয়ে রাখা এক গোছা চুল। অনেক গুলো দলা পাকানো চুল।

নিজের অজান্তেই হাত চলে গেছে মাথায়। মাথায় চুল বলতে যা আছে তা হাতে গোনা যাবে। গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস পর থেকে চুল পড়া শুরু গত দু মাস থেকে গোছা গোছা চুল যাচ্ছে। এতে আমার অতটা মাথা ব্যাথা নেই যতটা ওর। আমি নতুন অতিথির লাথি গুতার স্বর্গীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যস্ত। আমার সন্তান শুধু আমার পেট জুড়েই নয় ও আমার মাথা সহ সবটাই দখল করে আছে। নিজের প্রতি ঘরের প্রতি তেমন কোন খেয়াল নেই। আমার যতো খেয়াল অপ্সরী কে নিয়ে। হ্যাঁ আমরা বিয়ের আগে থেকেই নাম ঠিক করে রেখেছিলাম অপ্সরী রাখব। আমাদের দুজনের কারো মাথাতেই আসেনি ছেলে নামের কথা।

দুজনেরই পছন্দ মেয়ে। আমি সারাক্ষণ ভাবি অপ্সরীর জন্য এটা করব ওটা করব। আর অপ্সরীর আব্বু আছে আমার সেবায়। আমার নখ-পরিচর্যা থেকে চুল আচঁড়িয়ে দেয়া সব পরম যত্ন নিয়ে করে। তাই প্রতিদিন যে চুল যাচ্ছে এতে আমার চেয়ে তার কষ্ট বেশি। সে এই চুলে মুখ গুঁজে ঘুমায়। আমার চুলে নাকি একটা অন্যরকম সুগন্ধ আছে যেটা না নিলে তার ঘুম আসে না। প্রতি রাতে বিছানায় এসে প্রথমে চুলে মুখ গুঁজে থাকবে। আমি জানি ও তখন কবিতা বুনছে। একটু পরে মুখ তোলে একেকদিন একেকটা কবিতা শুনায়।

তোমার নিদ্রা মুখে অপার্থিব সুখে চেয়ে থাকি অপলকে তোমার নিঃশ্বাস গুনে গুনে আমার নিঃশ্বাস জমা রাখি তোমার অলকে। অথবা তুমি খোঁপা দিলে খুলে ডুবে থাকি প্রিয় চুলে ডুবে থাকি মুগ্ধতায় সবখানে ডুবে থাকি তোমার ছুঁয়ায় অমলিন ভালোবাসায় ডুবে থাকি তোমার গুনগুন গানে।

এরকম হাজারো কবিতা আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি আর আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই। এমন ভালোবাসার মানুষ পেয়ে। আমি জানি ও এই চুল গুলো নিয়ে কি করবে। ওর ধারণা আমার সব চুল পড়ে গেলে ও চুলের গন্ধ পাবে কোথায় তাই প্রতিদিন ঝড়ে পড়া চুল জমিয়ে রাখছে যত্ন করে । অপ্সরীর আব্বু ও জানে এ সাময়িক চুল পড়া। হরমোন জনিত কারণে, বাচ্চা হওয়ার পর আবার চুল গঁজাবে। কিন্তু ওকে পেয়েছে সুগন্ধ হারানোর ভয়। কতক্ষণ ঠাই বসে ছিলাম জানি না। অপ্সরীর গুতো খেয়ে হুঁশ হলো। চুল গুলো যেভাবে পেয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই রেখে দিয়েছি । আমার ভাবনা মেয়েটি ঠিক ওর বাবার মতোই হোক।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত