এপ্রিল ফুল

এপ্রিল ফুল

মনীষা আমার ব্যাচমেট। অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে। মেয়েটাকে বেশ ভালো লাগে আমার। ওকে দেখলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। অনেকদিন ধরেই চিন্তা করছিলাম কিভাবে মনীষাকে আমার মনের কথা বলা যায়। কিন্তু কোনোমতেই বলতে পারছিলাম না। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলো আমার বন্ধু সাগর। সাগরকে সবকিছু খুলে বললাম।

সে সব শুনে বলল, “আসছে এপ্রিলের এক তারিখ ওকে প্রপোজ করিস। যদি ও একসেপ্ট করে তাহলে আমাকে ট্রীট দিবি। আর মনীষা রেগে গেলে এপ্রিল ফুল বলে চালিয়ে দিবি। ” অনেক ভেবে দেখলাম সাগর খারাপ বুদ্ধি দেয়নি। এটা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। এপ্রিলের এক তারিখ মনীষাকে বান্ধবীদের সাথে দেখা মাত্রই বললাম, “মনীষা তোমার সাথে কথা আছে একটু। ” মনীষা বলল, ” কি কথা বলো।”

আমি মনীষাকে বললাম, ” একটু এদিকে আসো না!” মনীষাকে একা ডেকে নিলাম। ডাকার পর থেকে ওকে বলার জন্য কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। চুপচাপ দুই মিনিট কেটে গেল। মনীষা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবে তুমি?” আস্তে আস্তে আমি বললাম, ” তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে মনীষা। ” এটা বলেই আমতা আমতা করতে লাগলাম। মুখে আর কোনো শব্দ আনতে পারছিলাম না।

মনীষা আমাকে জিজ্ঞেস করল, ” ভালো মানে? কেমন ভালো?” আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে মনীষাকে বললাম, ” আমি তো..তো…তো…মাআ…আ..আআ…কে…এবার মনীষা হঠাৎ কেমনভাবে জানি আমার দিকে তাকালো। তারপর ফিক করে হেসে দিল। বাংলা সিনেমার ইতিহাস বলে মেয়েরা যদি এই ধরনের পরিস্থিতিতে ফিক করে হাসে তবে আপনাকে সেটাকে পজিটিভ দিক হিসেবে ধরে নিতে হবে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। মনীষা আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত হয়ে আস্তে আস্তে বলল, ” আমিও এই কথাটা তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম অনেকদিন ধরে। কিন্তু সুযোগের অভাবে বলা হলো না। “মনীষার কথা শুনে আমার মনে হলো আমি যেন মহাকাশে ভাসছি। মনীষাও আমাকে তাহলে এতদিন ধরে ভালোবাসতো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্নের সাগরে সাঁতার কাটা শুরু করেছি আমি। মনীষার ডাকে আমার সাঁতার কাটা বন্ধ হলো।

মনীষা বলল, ” আগামীকাল বাবার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিব। আমি তাহলে এখন যাই? “আজকে প্রপোজ করলাম আর কালকেই বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। পৃথিবী আসলেই অনেক দ্রুত হয়ে গিয়েছে। সীম কোম্পানিগুলো আমাদের ফোর জি সেবা দিতে না পারলেও প্রেম-ভালোবাসা সত্যিই ফোর জি হয়ে গিয়েছে। আমি আবারো আমতা আমতা করে বললাম, ” এত তাড়াতাড়ি পরিচয় করিয়ে দিবে? একটু সময় নিলে ভালো হতো না? ” মনীষা বলল, ” না অভি! এতদিনে তুমি মুখ খুললে। আমি আর দেরি করতে চাই না।”

আমি আচ্ছা বলে বিদায় নিলাম। তাড়াতাড়ি সাগরকে ফোন দিয়ে সব জানালাম। সাগর এসে দেখা করল আমার সাথে। “টিউশনের বেতন পেলে তোকে দিয়ে দিব” এইকথা বলে আমার এক বন্ধুর কাছ হতে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিলাম। সাগরকে শহরের সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করালাম। এরপর তাকে নিয়ে শপিং করলাম। কারন আগামীকাল মনীষার বাবার সামনে আমার এই হকার্সীয় কাপড় চোপড়ে যাওয়া সম্ভব না। সাগরকেও ভালো ব্র্যান্ডের কাপড় চোপড় কিনে দিলাম। শপিং এর ফাঁকে ফাঁকে সাগরকে, “তুই আমার মায়ের পেটের ভাই”, “ব্রাদার ফ্রম এনাদার মাদার” ইত্যাদি বলে সম্বোধন করছিলাম।

পরদিন ভালো কাপড় চোপড় পড়ে মনীষাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আসতে হবে। মনীষা আমাকে ভার্সিটি আসতে বলল। আমি সুবোধ বালকের মতো ভার্সিটি গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর মনীষা এলো। আমাকে দেখে ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল,” কি ব্যাপার? এইভাবে সেজেগুজে এলে আজ?” এবার আমার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার পালা। আমি আস্তে করে ওকে বললাম, “গতকাল কি বলেছিলে তুমি মনে আছে?” এবার বেশ হাসলো মনীষা। তারপর বলল, ” গতকাল যে তুমি আমাকে এপ্রিল ফুল বানাতে এসেছো তা তো আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই আমিও তোমাকে এপ্রিল ফুল বানিয়ে দিলাম।”

আমি মুখে শুকনো হাসি এনে জিজ্ঞেস করলাম, “ওহ্ আচ্ছা তাই বুঝি! কে বলেছে তোমাকে?” মনীষা বলল, “কে আবার! সাগর বলেছে। তুমি তো ওকে সব বলেছো। আমাকে এডভান্স বলেছে বলে ট্রীটও নিয়েছে আমার কাছ হতে।” খানিক চুপ থেকে মনীষা আবার বলল, “তো তুমি বললে না যে সেজে এসেছো কেন?” বাপ্পারাজের মতো জ্বলন্ত হৃদয় নিয়ে চাপা স্বরে আমি বললাম, “প্রেজেন্টশন ছিল।” এটা বলেই তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে এলাম। নামার সময়ময় মনীষা জিজ্ঞেস করল, ” এত তাড়াহুড়ো করে কই যাচ্ছো? ” আস্তে করে বললাম, “কাজ আছে একটু। ” হ্যাঁ, আসলেই কাজ আছে আমার। সাগরের সাথে অনেক কাজ আছে আমার।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত