যে ভাই আমায় সাজতে দেখলে চেচাইতো সে আমারে আজ নিজ থেকে এসে বলে,ভালো ব্রান্ড এর লিপ্সটিক এর নাম বল!ভাবছি ভাই হিসেবে কিছু দেই তোকে ।আমি টাস্কি মাইরা কিছুক্ষণ তাকায়া থাকার পর ভাবলাম মহান আল্লাহ তায়ালা কখন কাকে হেদায়েত দেন বলা যায় না।খুশি খুশি হয়ে বলে ফেললাম।
নাম শুনে সেই যে গেল আর দেয়ার নাম গন্ধ নাই।সেদিন মা হঠাৎ করে এসে বলতেছে, হায় হায় ছেলে এসব কি নিয়া ঘোরে ব্যাগে।আমি আম্মার চিৎকার শুনে আতংকিত হয়ে বিছানা থেকে কোন রকম হামাগুরি দিয়া নেমে জিজ্ঞাসা করলাম,কি মা?বন্দুক পাইছো নাকি বোমা
মা: আরেহ না
আমি: তাইলে গাজা নাতো?সব ওই বাজে বন্ধুদের সাথে মেশার ফল।
আম্মা রাগী গলায় বললেন,লিপ্সটিক এর বক্স।এগুলা দিয়া ওয় কি করে? এরই মাঝে ভাই দাঁত কেলিয়ে বলতেছে,ওগুলা আপুর জন্য আনছিলাম,ভুলে গিয়েছিলাম দিতে।মায়ের চোখে পানি ছল ছল।আর আমার মনে যেন আনন্দের হাওয়া বয়ে গেল।
লিপ্সটিক খুলতে নিবো এরই মাঝে ভাই বলে খুলিস না।এত রাতে কেউ লিপ্সটিক দেয়? ওর কথা শুনে আর খুললাম না।কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা ঘটলো পরের দিন ওই লিপ্সটিক বক্স আর কোথাও পাইনাই।চুরি হইল।চোর সব রাইখা লিপ্সটিক নিল! এর পর ভাই আমায় আরো শিহরিত করে প্রশ্ন করে,মেকাপ কোনটা ভালো? ভাইয়ের অতিব আগ্রহ দেখে আমার বুঝতে বাকি নাই ভাই আমার প্রেমে পরেছে।
ইদানীং আমার অনেক কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে।ভাইয়ের প্রেম আর চুরি এর সাথে মিল পাচ্ছিনা। নতুন কানের ঝুমকা,নতুন টিপ, নেইল পলিশ, এমন কি হবু বর একটা পায়েল দিল তাও চুরি হয়ে গেছে।বাসায় তদন্ত কমিটি বসালাম,যার সদস্য আমি আর আম্মা আর আমার ভাই প্রধান।তবে আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারিনি যেদিন দেখলাম তদন্তকমিটির প্রধান স্বয়ং পা দুলিয়ে দুলিয়ে ফোনে কথা বলছে আর হেসে হেসে রোমান্টিক মুডে জিজ্ঞেস করছে তার প্রেমিকাকে,পায়েল টা পছন্দ হয়েছে?ওটা কিন্তু দেশি পায়েল না।তোমার জন্য দুলাভাইর কাছ থেকে অর্ডার দিয়েছিলাম সে এনে দিয়েছে। আমি তন্ধা মাইরা দাড়ায়া আছি।তার মানে এতদিন চোরা মাল গুলা কোথায় সাপ্লাই হয় সেটা বের হইল।
দু দিন পর র্যাপিং করা একটি উপহার টেবিল এর উপর রেখে মাকে চেঁচিয়ে বললাম,মা এটা কিন্তু রায়হান কানাডা থেকে এনেছে।লোশন অনেক দামী। তুমি দিলে দিও।এই বলে ঘুমাতে গেলাম, ব্যাস! আমার বিদেশি লোশন ও চুরি।এই চুরিতে আমি মজাই পেয়েছি যেমন মজা পায় মাছ ছিপ গিললে। কিছুই আভাষ পাচ্ছিনা।রাত ৩টায় শুনি ভাইয়ের রুম থেকে ঘূর্নিঝড় এর আওয়াজ।আমি কান পেতে শুনছি।
ভাই ফোন কানে নিয়ে বলছে, কি হারপিক দিছি?কি বলো?তুমি চিনতে পারোনি ওটা তো কানাডার লোশন।আমি অর্ডার দিয়ে আনিয়েছি।মেখে দেখো।
হে হে হে আমি যে মলাট বেঁধে হারপিক ই দিয়েছিলাম সাথে বড় করে লিখে দিয়েছি,এত উপহার দিয়ে প্রেমিকা পালা সম্ভব নয়।আগের প্রেমিকাদের ও এত উপহার দেই নাই।নেও তার চেয়ে হারপিক খেয়ে মরে যাও।
যাক ভাইয়ের ব্রেকাপ হয়েছে তার বড় প্রমান আমার জান মাল সব জায়গা মতন ই থাকছে।কোন চুরি হচ্ছেনা।এরই মাঝে রায়হান কল দিল,তার দাদি নাকি অসুস্থ।সে সেই শোকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।আমিও রায়হান কে বলে দিলাম,বাবু তুমি না খেলে আমি এক ফোঁটা পানি ও স্পর্ষ করবোনা।
তার কিছুক্ষণ পর ই ভাই মাংসের কাবাব নিয়ে এসে বললো আপু ধর নে,খেতে মন চায়না। আমিও নিয়া আলুম তালুম করে খেয়ে ফেললাম। ভাবলাম বেচারার ব্রেকাপের ফলে মুখে রুচিও চলে গেছে। কিছুক্ষণ বাদে রায়হান কল দিল,আমি কাদো কাদো গলায় বললাম বাবু,খাবা কিনা বলো!আমি কিন্তু না খেয়ে বসে আছি।সারাদিন খাইনি কিছু রায়হান: তাই খাওনি?
-হুম একফোঁটা পানিও না।
রায়হান: কি বলো?ওমন রাক্ষসের মতন কাবাব খাবার পর পানি না খেয়ে বাইচ্চা আছো?গলায় আটকায় নায়?
-কি বলো বাবু তুমি?
রায়হান: একদম চুপ করো।এত নাটক কেন করো?আমার কাছে ভিডিও আছে।এই মাত্র কিভাবে হাসিমুখে খাচ্ছিলা তা দেখাইল তোমার ভাই।সব ই দেখলাম আর বুঝলাম,এই বলে কল কেটে দিল। আমি কাদো কাদো গলায় বললাম এ জীবন আর রাখুম না আম্মা।
ভাই এক পাটি দাঁত বের করে এসে আমার পাশে এসে বসলো।আমার হাতে সেই হারপিক টা ধরিয়ে দিয়ে বললো,কানাডার হারপিক,খুব উন্নত মানের আপু।এক ডোস ই যথেষ্ট, খেয়ে মরে যা।