আমরা পাঁচ বন্ধু রাজশাহী যাচ্ছি গাছের টাটকা আম খেতে। বন্ধুর গাড়ির সিডি প্লেয়ার নষ্ট। আমি বসেছি ড্রাইভারের পাশে, গান বাজনা ছাড়া পানসে পানসে লাগছে। ড্রাইভার বয়স্ক মানুষ। আমি বললাম, চাচা, গান জানেন?
ড্রাইভার অবাক হয়ে বললো, গান্জা নেন! আসতাগ ফিরুল্লাহ! এইটা আপনে কি বললেন ভাইজান, আমি গান্জা নিমু কেন? আমারে কি নিশখোর মনে হয়? লে হালুয়া! বললাম কি,শুনলো কি?আমি আর কথা বাড়ানোর সাহস পেলাম না। ড্রাইভার বললো, আমি রাজশাহীর মানুষ,আপনাদের কে পানির দরে আম কিনে দিব!একটা আম খাইবেন,দিল ঠান্ডা!
একদিন রাজশাহী রাত কাটিয়ে পরের দিন গেলাম চাঁপাই নবাব গন্জ। আম বাগান দেখে সবাই মুগ্ধ। একেকজন প্রচুর আম কিনে ফেললাম। ড্রাইভার বলেছিল পানির দরে আম কিনে দিবে,ঢাকার চেয়েও বেশি দামে কিনতে হলো। ব্যাটাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে পাইকারি আম বিক্রেতার সাথে বোধহয় গোপনে কন্ট্রাক্ট করে ফেলেছিল। আমাদের বারবার বলছে, কেয়ামত হয়ে গেলেও ঢাকায় এই আম পাবেন না!
চাঁপাই থেকে আবার রাজশাহী শহর। এখানে তিনদিন থাকার পরিকল্পনা করলাম। শহরটা ভালো লেগেছিল। যে হোটেলে উঠেছি তার পরিবেশ ও মুগ্ধ করলো আমাদের। আসার পর থেকে আমি শুধু আম খেয়ে যাচ্ছি। যত খাই ততই মজা লাগে,ড্রাইভারের কথায়,দিল ঠান্ডা!সবাই বলছে টাটকা ফল,ঢাকায় এই আম পাবো না,তাই বেশি করে খাওয়া। দু,দিন পর থেকে আমার পেট খারাপ হয়ে গেলো। কঠিন পেট ব্যাথা শুরু হলো, সাথে বাথরুম! উঠতে বসতে পারিনা, কতক্ষণ পর পরই বাথরুমে দৌড়াতে হয়।ভয়াবহ অবস্থা!
বন্ধু লিটন বন্ধু বললো, কুত্তার পেটে ঘি সয় না,তুই এতো আম খেতে গেলি কেন রে হারামজাদা! যেভাবে ছাড়ছিস, মনে তো হচ্ছে তুই রাজশাহী শহর ডুবিয়ে দিয়ে যাবি! সে গজগজ করতে করতে চললো আমার জন্য ঔষধ আনতে। ফিরে এসে আমার হাতে ঔষধ দিয়েই বাথরুমে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো, দোস্ত আমারও মনে হয় সিগনাল দিয়ে ফেলেছে! শুয়ে শুয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছি, বড়বোন ফোন দিলো, তুই কই? আমি বললাম, বিছানায় বিছানায় কি করছিস আল্লাহ আল্লাহ করছি।
বাহ! ধর্ম কর্মে মন দিয়েছিস দেখছি। বেশ ভালো। শুনলাম রাজশাহী গেছিস? তোর দুলাভাই খুব আম পছন্দ করে, কিছু আম নিয়ে আসিস, বেশি না,আধা মন আনলেই হবে। পেটের অবস্থা বেশি খারাপ, ঔষধে কাজ হচ্ছে না।বাথরুম থেকে ফিরে আসতে না আসতেই আবার দৌড় দিতে হয়।আমি বাথরুমেই বসে রইলাম।
বন্ধু রাতুল ফোন দিয়ে বললো, দোস্ত সবাই জেনে গেছে তুই রাজশাহী গেছিস।সবাই আম খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি বললাম, আগে বেঁচে ফিরি,তারপর যত খুশি আম খাস শালা! রাতুল অবাক হয়ে বললো, কি হয়েছে, দোস্ত? মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। কোন মেশিন নষ্ট হলো আবার! আমার পাঁচন মেশিন ডাইরেক্ট হয়ে গেছে। জায়গায় বসেই আওয়াজ দিতে হচ্ছে। ভুটুর ভুটুর আওয়াজ দিচ্ছে। আমি শেষ রে দোস্ত!
রাতুলের সাথে কথা বলে বাইরে এসেছি মাত্র, আবার পেটের ভিতরে মোচড়! মনে মনে পন করলাম, যা থাকে কপালে, আজ আর টয়লেট থেকে বের হবো না! একটানা আধা ঘন্টা বদনা ধরে টয়লেটে বসে রইলাম। এদিকে আমার গার্লফ্রেন্ড একটানা ফোন দিয়েই চলেছে। রিসিভ করে কথা বলবো সেই অবস্থা নাই। নিচ দিয়ে মাঝে মাঝে দড়াম দড়াম আওয়াজ করে গ্যাস বের হচ্ছে। সাথে পুটুর পুটুর,ভুটুর ভুটুর!
টানা পন্ঞাশ মিনিট পর ফোন রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে গার্লফ্রেন্ড বললো, তুমি কই? আমি বললাম, এখন সত্য বলা যাবে না কোথায় আছি। ফাজলামো কর আমার সাথে! চড় মেরে তোমার তেত্রিশ দাঁত ফেলে দেব। ফাজিল! দুই ঘন্টা যাবৎ তোমাকে ট্রাই করছি। কুইক বল, তুমি কোথায় আছো? আমি বললাম, টয়লেটে।
ওমা! টয়লেটে তুমি কি করছো? টয়লেটে মানুষ কি করে? এক ঘন্টা যাবৎ তুমি টয়লেটে বসে আছো? হ্যা। হায় আল্লাহ! কি হয়েছে তোমার? আমার মেশিনটা নষ্ট হয়ে গেছে। একবারে ডাইরেক্ট হয়ে গেছে। উপরের মেশিনটা ভালো ছিল তাই গমন একটু বেশি হয়েছে, কিন্তু নির্গমন যন্ত্রপাতি বেঁকে বসেছে। তারা কোন কাজ না করে ডাইরেক্ট ছেড়ে দিচ্ছে! হায় আল্লাহ! কি করে হলো? আম খেয়ে।
এখন আমার কি হবে? বান্ধবীদের বলেছি তুমি রাজশাহী গেছো,সবাই আশা করে আছে আম খাবে, এখন যদি খাওয়াতে না পারি, মান সম্মান কিছু থাকবে, বলো? আমের নাম আর মুখে আনবে না,এই শালার আম আমার সর্বনাশ করেছে।দেখা গেল আম খেয়ে তোমার সব বান্ধবীর ডাইরেক্ট হয়ে গেল, ইজ্জত থাকবে? বেটিরা তো আমাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দেবে!
এই কথা বলো না,জানু।বেশি না এক মন আম আনলেই হবে। ওদের আমি কথা দিয়েছি। আমার জানু কত্তো ভালো!
বেশি গ্যাস দিওনা,এমনিতেই অনেক গ্যাস বেড়িয়ে যাচ্ছে। মরে গেলেও তোমার বান্ধবীদের আম খাওয়াতে পারবো না। গার্লফ্রেন্ড আহলাদী গলায় বললো,দেখ,ভালো হবে না বলছি! আম খাওয়াতে না পারলে আমার প্রেস্টিজ লুজ হয়ে যাবে।
আমি বললাম, লুজ মোশনের ঠেলায় টয়লেট থেকে বেরুতে পারছি না, তোমার আর কি লুজ হবে! গার্লফ্রেন্ড বললো, যদি আমার কথা না শোন, তাহলে ব্রেকআপ! আমি বললাম, ব্রেকআপ হউক,আর সেভেন আপই হউক,আম আমি তোমার বান্ধবীদের দিচ্ছি না। তুই একটা শয়তান, ইতর, বাঁদরের খালাতো ভাই। আর কোনদিন আমাকে ফোন দিবি না! বলেই ফোঁপাতে ফোঁপাতে ফোন কেটে দিল।