বসুন্ধরা সিটির লেভেল এইটে উঠবো, লিফটের জন্য অপেক্ষা করছি, একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, আপনি কি হানিফ ওয়াহিদ? আমি বললাম, জ্বি। আপনি রিমির কাজিন? হ্যা। ওয়াও! কি সৌভাগ্য আমার! আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল! আমাকে দেখে কোন মেয়ে ওয়াও করবে, এমন চেহারা নিয়ে পৃথিবীতে আসিনি। কোন সেলিব্রিটি নই।তাহলে? মেয়েটা বললো,আমি আপনার ফেবু ফ্রেন্ড। কি ফ্রেন্ড? আরে ভাই, ফেবু ফ্রেন্ড বুঝেন না! আমি আপনার ফেসবুক বন্ধু। আপনি তো ভাই মহা দামী, এক মাস আমার রিকু ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। কি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম? রিকু বুঝেন না! আশ্চর্য, রিকুয়েষ্ট। তাই বলেন! আহ ভাই! আপনি যা লিখেেন না! আমি তো আপনার বড় Fan হয়ে গেছি।ফেসবুকে ঢুকি শুধু আপনার লেখা পড়ার জন্য।
লে হালুয়া!আমি যে এতো ভালো লিখি নিজেও জানতাম না।নিজের লেখা নিজেরই পছন্দ হয় না,অন্যমেয়ে আমার লেখা পড়ে Fan হয়ে গেলো? ভাগ্য ভালো, বলে নাই আপনার লেখা পড়ে Ac হয়ে গেছি!লিফট চলে এসেছে। আমরা লিফটে উঠলাম। সিনেপ্লেক্সে একটা ভালো মুভি চলছে, সেটাদেখার জন্য আসা। কিন্তু মেয়েটা কে? রিমির কথা যেহেতু বলেছে, নিশ্চয়ই আমাকে চেনে।রিমি আমার মামাতো বোন।আমি বললাম, আপনার নাম কি? সে বললো,হায় আল্লাহ! আপনি আমার নাম জানেন না? আমি এঞ্জেল জরি।আপনার সব লেখায়,লাইক কমেন্ট করি।মেসেঞ্জারে কয়েকদিন নককরেছিলাম,আপনি রিপ্লাই দেননি।
আমি কিছু মনে করতে পারলাম না। মেয়েটাকে কাটাতে পারছি না।আমার মাথা ধরে আছে, কফি খাওয়া দরকার। আমি দুইটা কফির অর্ডার করলাম। মেয়েটা বললো, এই ভর দুপুরে কফি খাবেন? এখন তো লান্ঞের সময়।আমি খাবার অর্ডার করছি। সে ওয়েটার কে ডাকলো,আমার দিকে তাকিয়ে, বললো, কি খাবেন? আমি খাবার মুডে নেই। সে আমার তোয়াক্কা না করে একগাদা খাবার অর্ডার করে ফেললো,চিকেন ফ্রাই, চাও মিন, ফ্রেন্স ফ্রাই, পেপসি। আমি দ্রুত মেসেঞ্জারে ঢুকলাম, এন্জেল জরি কে খুজে বের করতে হবে। পেয়ে গেলাম।
সে আমাকে নক করেছিল।কিন্তু চেহারা মিলছে না,তার আইডির চেহারার মেয়েটা ডানাকাটা পরি।বাস্তবে যে বসে আছে তার নাম জরিনা হলে ভালোহতো। নাকি জরিনাই এন্জেল জরি? মেয়েটা বকবক করে চলেছে, খাবার আসতে দেরি দেখে দুইটা জুসের অর্ডার করেছে। জুস খাচ্ছি আর ভাবছি, ফেঁসে যাচ্ছি না তো! মেয়েটা জুস খেতে বললো, আইসক্রিম আমার পছন্দ। আমি বললাম, তাহলে অর্ডার দিন। মেয়েটি সাথে সাথে ম্যানিলা আইসক্রিম অর্ডার করে দিলো।
আমার মনে হলো মেয়েটা স্বাভাবিক আচরণ করছে না,ফেলে যেতেও পারছি না। আমি বললাম, ম্যাডাম আমি কি একটু ওয়াস রুমে যেতে পারি? মেয়েটা বললো, শিউর,হোয়াই নট? তারাতাড়ি আসবেন, খাবার বোধহয় হয়ে গেছে। আমি ওয়াস রুমে ঢুকে রিমিকে ফোন দিলাম, হ্যালো রিমি, জরি নামে তোর কি কোন বান্ধবী আছে? না, কেন বল তো! সে তো বলছে, সে তোর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এ নামে আমার কোন বান্ধবী নাই,কাহিনি কি বলতো? আমি কাহিনি বললাম।
রিমি বললো, তুই বোধ হয় ফেঁসে গেছিস,পালিয়ে আয়। পালিয়ে আসবো? এ ছাড়া তো কোন উপায় দেখি না। ওয়াস রুম থেকে সোজা লিফটে উঠে পড়। আমি বললাম, আমার মুভি দেখার কি হবে? আরে গাধা!মুভি আরেক দিন দেখা যাবে,পালা। আমি ওয়াস রুমের কাছের লিফট দিয়ে নীচে নেমে গেলাম। একটা রিকশা নিয়ে সোজা মোতালিব প্লাজা চলে এলাম। কিছুক্ষণ পর রিমির ফোন, হ্যালো ভাইয়া, ছোট্ট একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
আমি বললাম, কি সমস্যা? সেই মেয়েটা আমার কলেজের বান্ধবী, তবে ওর নাম জরি নয়,সুফিয়া। ওর ফেসবুক নেইম জরি। ব্যাচারী ফেঁসে গেছে, আমাকে ফোন করেছিল।আমি বললাম, কাহিনি বল। ও পরিচিত কাউকে পেলেই ফাঁসানোর ধান্দা করে,আজ নিজেই ফেঁসে গেছে। হোটেলে বসে আছে, বিল দিতে পারছে না। ও কে উদ্ধার কর। আমি বললাম, কাজটা কি ঠিক হবে? পালিয়ে এলাম যে! বেচারা আসলেই তোর লেখা পছন্দ করে।
এই একটা কারনে তুই মেয়েটির উপকার কর। আমি দ্রুত আবার বসুন্ধরা সিটিতে ফিরে এলাম।গিয়ে দেখি মেয়েটা মলিন মুখে বসে আছে। আমি বসতে বসতে বললাম, জানেন ম্যাডাম, কষা রোগটা আমাদের বংশগত।একবার বাথরুমে ঢুকলে আধা ঘন্টার আগে বেরুতে পারি না, আপনি মাইন্ড করেন নি তো, ম্যাডাম!