★# রাজকুমার___পিঁপড়া
★# ব্যাঙ___চিনি
পর্ব –১
বহু বহুকাল আগে,এক দেশে এক রাজা ছিল। তার ছিল বিরাট ঝলমলে রাজপ্রাসাদ, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। বিরাট সৈন্যবাহিনী।
দেশ জুড়ে ছড়ানো অজস্র ম্পদ। রাজার রাজত্বে প্রজারা খুবই সুখে ছিল। তারা দু’বেলা রাজার গুনগান করতো।
রাজার ছিল তিন ছেলে। ঝকমকে তিন রাজপুত্তুর। তারা শাস্ত্র ও শস্ত্রশিক্ষা করে বড়ো হয়ে উঠছিল। ছেলেরা যখন বেশ বড়ো হয়েছে,
রাজার রানী তাকে বললো, “এবার ছেলেদের বিয়ের বন্দোবস্ত করো। এরপরে তো এদের হাতেই দায়িত্ব দিয়ে আমাদের অবসর নিতে হবে প্রজাপালন থেকে।”
রাজা বললেন, “তাই হবে। তবে তার আগে তাদের একটা পরীক্ষা নেবো আমি। তাদের ধনুর্বিদ্যার পরীক্ষা।
নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তারা তিনজনে তীর ছুঁড়বে। যে মেয়ে যার তীর কুড়িয়ে পাবে, সেই মেয়েই হবে তার বৌ।”
শুনে রানী একই সঙ্গে ভারী অবাক আর শঙ্কিত হল। এ তো পুরোপুরি ভাগ্যের হাতে ছেলেদের ছেড়ে দেওয়া!
এইভাবে তাদের জন্য স্ত্রী নির্বাচিত হবে? কত কত রাজকন্যাকে দেখেশুনে ছেলেদের জন্য বৌ আনবেন ঘরে,তারা হবে রূপে
লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী,তা নয়, এ কেমন উৎপেতে ব্যপার?
তিনি রাজাকে এইধরনের অদ্ভুত্ পরিকল্পনা থেকে নিরস্ত করার অনেক চেষ্টাই করলেন, কিন্তু রাজা কিছুতেই শুনলেন না।
খুবই একগুঁয়ে আর জেদী রাজা,একথা বলতেই হবে। তখন রানী এক গোপন বন্দোবস্ত করলেন।
তিনি গোপণে বিভিন্ন রাজ্যের রাজকন্যাদের সংবাদ পাঠালেন যেন তারা ছদ্মবেশে তার মহলে আসে।
রাজপুত্রদের তীরন্দাজির প্রতিযোগিতার দিন তিনি তাদের তীরছোঁড়ার অঞ্চল থেকে বেশ খানিকটা দূরে দূরে ছদ্মবেশে দাঁড়
করিয়ে রাখলেন যাতে তীর এসে পড়লেই তারা ছুটে গিয়ে তুলে নিতে পারে। আর তাহলেই তো কেল্লাফতে।
রাজপুত্তুরের বৌ হয়ে যাবে, কম কথা? ভাগ্যে থাকলে ভবিষ্যতে কোনোদিন রানীও হয়ে যেতে পারে।
তিন রাজপুত্র প্রতিযোগিতার দিন সকালে নির্দিষ্ট স্থান থেকে তীর ছুঁড়ে মারলেন-বড়ো রাজপুত্র পুবের দিকে,মেজো পশ্চিমে আর ছোটো দক্ষিণে।
তীরে রাজকীয় চিহ্ন আঁকা ছিল আর রাজপুত্রদের নাম লেখা ছিল। এরপরে তারা বাবার নির্দেশে ঘোড়ায় চড়ে চলল তাদের তীরের কি গতি হলো দেখতে।
বাবা তাদের বলেছে,যে মেয়ে যার তীর তুলবে,সেই হবে তার স্ত্রী।
বড়ো রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে আশায় আশংকায় চললো পুবের দিকে। মাইলখানেক গিয়ে সে দেখতে পেল একজন সুন্দরী
তরুণী তার তীর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে তাকে নিজের ঘোড়ায় তুলে নিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরলো। সে ছিল পাশের রাজ্যের রাজকুমারী।
মেজো রাজপুত্র ঘোড়া নিয়ে পশ্চিমে চলতে চলতে মাইলদুয়েক গিয়ে দেখা পেল তার তীরের। এক রূপসী কন্যা তার তীর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
মেজো রাজপুত্র তাকে নিজের ঘোড়ায় তুলে নিল।রাজপ্রাসাদে ফিরতে ফিরতে সে তার কাছে জানতে পারলো যে সে চন্দ্রপত্তনের রাজকন্যা।
ছোটো রাজপুত্র ইরাবান ঘোড়ায় চলেছিল দক্ষিণে। সে চলে আর চলে আর চলে। তীরের দেখা আর পায় না।
মাইলের পর মাইল পথ পেরিয়ে তার ঘোড়া শ্রান্ত হয়ে পড়ে।সে গাছের ছায়ায় ঘোড়াকে একটু বিশ্রাম দিয়ে আবার চলে।
অনেক অনেক পথ পার হয়ে সে এসে পৌঁছয় তরাইনের জলা অঞ্চলে। এখানে সে তার তীরের দেখা পায়।একটি ব্যাঙ,তার তীর মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
রাজপুত্তুর বলে,” ওগো ব্যাঙ, আমার তীর ফেরৎ দাও, দয়া করে।”
ব্যাঙ ঠিক মানুষের গলায় বলে,”ফেরৎ দিই, যদি তুমি আমায় বিয়ে করো