গুড্ডুবুড়াকে কি তোমরা চেন?
ও একটা ছোট্ট ছেলে। ও কিছুতেই খেতে চায় না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করলে কী হয়? বুদ্ধি কমে যায়, গায়ের জোর কমে যায়।
ওর বোকামির কাণ্ড শুনলে তোমরা হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
এমনিতে কিছু খায় না। একদিন দেখা গেল, ও বসে বসে টি-ব্যাগ চিবোচ্ছে। পানে চা-পাতার ব্যাগ।
ওর মা বলল, ওই তুই কী খাস? তোর মুখে কী?
আমি? চা খাই।
দেখি দেখি মুখ খোল।
মা ওর মুখ খোলালেন। দেখা গেল, মুখের মধ্যে টি-ব্যাগ ঢুকিয়ে সে বেশ করে চিবোচ্ছে?
তুই এটা খাচ্ছিস কেন?
আমি চা খাচ্ছি।
চা খাচ্ছিস কেন?
আমি বড় হয়ে গেছি।
বড় হলেই চা খেতে হবে?
হুম।
তা চা যদি খাবি, কাপে করে ভালোভাবে বানানো চা খা। এটা খাচ্ছিস কেন?
সেটা কি আর গুড্ডুবুড়া মাকে বলবে? একদিন তাদের টেবিলে দুই কাপ চা বানিয়ে রাখা হয়েছে, মেহমান এসেছেন বাড়িতে, তাদেরকে দেওয়া হবে।
গুড্ডুবুড়া এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল, মা রান্নাঘরে। বাবা মেহমানদের সামনে। এই সুযোগ। সে চায়ের কাপে মুখ দিল। অমনি তার মুখ গেল পুড়ে। বাবা গো মা গো…কিন্তু সেই কথা তো সে মাকে বলতে পারে না।
গুড্ডুবুড়াকে একদিন দেখা গেল, মশামাছি মারার স্প্রে নিয়ে ছুটছে। কেন?
পিঁপড়া উঠেছে চিনির বয়ামে।
সে বয়ামের মধ্যে মশা মারা ওষুধ স্প্রে করতে লাগল।
মা বললেন, গুড্ডুবুড়া কী করিস?
পিঁপড়া মারি মা।
সর্বনাশ। এতো বিষ। এই চিনি খেলে আমরা তো সবাই মারা যাব।
ওদের বাড়িতে মুরগি ডিম দিল। তারপর সেই মুরগি বাচ্চা ফোটাল। ৮টা বাচ্চা।
একদিন খুব গরম পড়েছে। গুড্ডুবুড়া ঘেমে একাকার। বিকাল তিনটার মতো বাজে। স্কুল থেকে ফিরে এসে সে দুপুরের খাবার খেয়ে মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিল। মা দিব্যি ঘুমাচ্ছেন।
বিদ্যুৎ চলে গেছে। ফ্যান বন্ধ।
গুড্ডুবুড়া বিছানা ছাড়ল। উফ। কী গরম। সে গেল বারান্দায়। গিয়ে দেখে, মুরগিটা ঝিমোচ্ছে। মুরগির বাচ্চাগুলো পানি খাওয়ার জন্য বাটিতে ঠোঁট নামিয়েছে।
আহা, গরমে কষ্ট পাচ্ছ। বলে গুড্ডুবুড়া একটা মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজে রেখে দিল। আরও নেবে বলে আসতেই মা মুরগি ওর হাতে দিল ঠোকর। ও ভয়ে পালিয়ে এল।
মুরগির বাচ্চাটা মারা গেল ফ্রিজে। তাই নিয়ে গুড্ডুবুড়ার কী কান্না। সে তো ভালো করতে চেয়েছিল। খারাপ হয়ে গেল যে।
আরেকদিন তার মা শিং মাছ কিনে এনে জিয়ল রেখেছেন। দুটো মাছ মরে গেছে। তাদেরকে রাখা হয়েছে ফ্রিজে।
গুড্ডুবুড়া ভাবল, সর্বনাশ। মাছ কেন ফ্রিজে রেখেছে। মাছ তো মারা যাবে। সে মাছ নিয়ে গিয়ে পানিভরা পাতিলে ভাসিয়ে দিল।
মাছ পচে পুরো বাড়িতে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল।
তখন সে আবার হাত ডোবাল শিং মাছের হাঁড়িতে। শিং মাছের কাঁটায় ভীষণ বিষ।
গুড্ডুবুড়ার হাতে শিং মাছের কাঁটা ফুটেছে। ব্যথায় সে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
আর তো পারা যায় না। গুড্ডুবুড়াকে ওর বাবা-মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন।
বললেন, ডাক্তার সাহেব, আমার ছেলের সমস্যাটা কী?
ডাক্তার সাহেব সব দেখেশুনে বললেন, গুড্ডুবুড়ার সব ঠিক আছে। শুধু বুদ্ধিটা খুলছে না। বুদ্ধি খুলছে না, কারণ সে কিছু খায় না। ওকে ভাত খেতে হবে, রুটি খেতে হবে, মাছ খেতে হবে, মাংস খেতে হবে, দুধ খেতে হবে, ডিম খেতে হবে, শাক খেতে হবে, সবজি খেতে হবে, ফল খেতে হবে, মূল খেতে হবে।
গুড্ডুবুড়া ঠিকঠাক খাওয়া শুরু করল।
তখন ওর মাথায় বুদ্ধি এসে গেল। এখন গুড্ডুবুড়ার জোরও বেশি, সারাক্ষণ খেলাধুলা করে। পড়াশোনা করতেও ওর ভালো লাগে।
এখন ও ক্লাসে ফার্স্ট হয়।
ওদের বাড়িতে কোনো পাহারাদার নেই। ওরা একটা চারতলা বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকে।
গরমের দিন। জানালা না খুলে ঘুমোনো যায় না।
কিন্তু জানালা খুলে ঘুমালে প্রায়ই ওদের বাড়িতে চোর আসে। জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। হাতের কাছে যা পায় নিয়ে যায়। একবার তো ওর দাদিমার কানে হাত দিয়ে কানের দুল পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছিল।
কী করা যায়।
চোরটাকে তো ধরতে হবে।
গুড্ডুবুড়া একটা ইঁদুর ধরা কল জানালার কাছে টেবিলের ওপরে রেখে দিল। বাইরে থেকে দেখা যায় না। তবে এখানে যা থাকে, চোরটা প্রায়ই তাতে হাত দেয়। একবার তো মায়ের ইমিটেশনের গয়নার বাটিটা নিয়ে প্রত্যেকটা গয়না চোরটা কামড়ে কামড়ে দেখে পরখ করেছিল। তারপর সব রেখে গিয়েছিল।
রাতের বেলা ফল ফলল মারাত্মক। জানালায় চোর এসে যেই-না হাত দিয়েছে, অমনি ইঁদুরের কল তার হাত ধরল কামড়ে। চোরটা ওরে বাবা, ওরে মা বলে চিৎকার করছে। কিন্তু পালাতে পারছে না। হাত আর জানালার শিক গলে বেরোতে পারছে না। চোরটা হাত টানতেই আরও ব্যথা লাগছে।
ততক্ষণে বাড়ির সবাই জেগে উঠেছে। চিৎকার চেঁচামেচিতে রাস্তার পাহারাদারেরা ছুটে এল। ৯৯৯-এ কল করল গুড্ডুবুড়া।
অমনি পুলিশও ছুটে এল তাদের বাড়িতে।
চোরটাকে জানালাতেই পাওয়া গেল।
পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেল।
এরপর থেকে গুড্ডুবুড়াদের বাড়িতে আর চোর আসে না।