দংশন

দংশন

ফোন তুলতেই সায়ন বললো – কিরে কেমন আছিস অনিক ? ক্লাবে আসিস না কেন আজকাল? বিজি নাকি ভাই তুই?

-না রে সায়ন, কদিনের জন্য অফিসের কাজে বাইরে গেছিলাম, গত পরশু রাতে ফিরেছি। কেন রে কিছু দরকার ছিল নাকি?

-ধুস্ শালা তোর কি মনে হয়, দরকার হলে তবেই কি ফোন করি নাকি তোকে?? বেশ কিছুদিন তোর সাথে দেখা হয়নি, তাই তোর খবর নিতে ফোন করলাম, কেন রে তোকে কেন ফোন করলাম তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি এখন?
-আরে না না আমি জাস্ট এমনিই জানতে চাইলাম, তো বল তোর খবর কি? কি করছিস এখন?অফিসে নাকি তুই?
-হুমম অফিসেই শালা, অফিসেই অর্ধেক লাইফ কেটে যায় আমার। বলছি শোন না, কাল আমার ছুটি, একবার দেখা করতে পারবি? কথা আছে তোর সাথে।
ওকে ডান, সন্ধ্যে সাতটার পর আমি তোর জন্য ক্লাবের সামনে ওয়েট করবো।
-ওকে চল ভালো থাকিস, কাল দেখা হবে ,বাই।
-হুমম বাই।

কলেজেই ভর্তির সময় থেকেই পরিচয় দুজনের, অনিক কমার্সের স্টুডেন্ট আর সায়ন আর্ট্সের। কলকাতায় একই পিজি তে থাকার দরুন তাদের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়। যখন তাদের থার্ড ইয়ার তখন সেই কলেজে ভর্তি হতে আসে সিমি,সিমি রায় ।কলা বিভাগে ভর্তি হয় সে। পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে ,রুপে গুণে সমৃদ্ধা।স্বাভাবিক ভাবেই বেশীর ভাগ ছেলেদের নজর কাড়ে সে।

বেশ কিছু দিনের মধ্যে সায়ন সিমি কে প্রেমের ফাঁদে বন্দী করে ফেলে। মানে সিমি সায়নের ফাঁদে হাবুডুবু খায়। সেকথা সবার মতো অনিক ও জানতে পারে। একদিন সুযোগ বুঝে অনিক জিগ্যেস করে- সত্যি করে বলতো সায়ন তুই কি ওকে ভালো বাসিস?

-ধুসসস্ ঐসব ভালোবাসা আমার আসেনা বুঝলি, জীবনে একজনকেই ভালো বেসেছিলাম কিন্তু সে আমায় ঠকিয়েছে, শালা ঐ মেয়েছেলের জাত টাকেই আমি ঘৃণা করি। জাস্ট ঘৃণা করি।

-তো সিমি? সিমি তো তোকেই….
-ও বেটার চান্স পেলে আমার হাত ফস্কে বেরিয়ে যাবে। এই ক’দিন ওর সাথে মিশে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।
-তো তুই কি সিমির সাথে ফ্রড করছিস?
-আলবাত করছি, সুযোগ পেলে সবাই করে। মেয়ে মানুষদের আমি আর বিশ্বাস করি না। লাইফটাকে
জাস্ট এনজয় করছি ব্যাস।
-তুই কিন্তু ভুল করছিস সায়ন, এরজন্য তোকে একদিন ঠিক পস্তাতে হবে দেখিস।
সায়ন হো হো করে বলেছিলো- কাল কিসনে দেখা হ্যায় ইয়ার!
ওর বলার ভঙ্গি দেখে অনিক হেসে ফেলে।

একদিন কলেজ থেকে ফিরে রুমে এসে দেখে সায়ন আর সিমি তাদের রুমে। এর আগেও বেশ কয়েকবার সিমি ওদের রুমে এসেছে অনিককে তখন দেখেনি। তাকে দেখে সে কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

সায়ন তাকে বলে- আরে তুমি তো জানো অনিক আমার রুমমেট, তোমায় তো সেকথা আগেই বলেছি, ওকে দেখে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ও তোমার আমার ভালবাসার কথা সব জানে।

অনিক যে অপ্রস্তুত হয়নি তা নয়, সে বলে- তোরা এনজয় কর আমি একটু বাইরে কাজ সেরে আসছি।
সায়ন বলে – তোর কোনো কাজ নেই তা আমি জানি, শোন পাকামো করিস না, আজ আমাদের প্রেমের এক বছর হলো। তাই তুই ও আমাদের সাথে সেলিব্রেট করবি। কপাল গুণে আজ পিজির কাকু কাকিমা বাড়ি তে নেই।
সিমি বলে- তুমি যেওনা অনিক,আমি বাইরে থেকে অনেক খাবার এনেছি, তিনজনে মিলে একসাথে খাবো।

ব্যাস আর কি, প্রচুর খাওয়া দাওয়ার সাথে সায়নের আনা হুইস্কিও গেলে তিনজনে মিলে। হালকা সুরে ইংলিশ মিউজিক বাজতে থাকে। তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে নাচতে সিমি,একবার সায়ন একবার অনিকের গায়ে ঢলে পড়ে।

অনিক দেখে সায়ন কেমন যেন হিংস্র হয়ে উঠছে, সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সিমি তখন পুরো ওভার লোডেড।
সায়ন অনিককে বলে- টেক ইট ইজি ইয়ার,বলেছিলাম না তোকে ও শালী চান্স পেলে আমায় গুড বাই করে দেবে। সায়নের জোরাজুরি তে সে রাতে দুজনেই মত্ত অবস্থায় শরীরি খেলায় মেতে ওঠে। সিমি বাধা দিতে গিয়েও পারে না। সে শক্তি টুকু তার ছিলোনা। ভোরে সে বিছানায় সায়নের পাশে পায় নিজেকে বিবস্ত্র অবস্থায়।অনিক বারান্দার চেয়ারে ঘুমোচ্ছে অঘোরে। চোখ খুলেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে চলে এসেছিলো সেখান থেকেই।

সকালে সায়ন স্বাভাবিক আচরণ করলেও অনিক নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে না। সায়ন বলে- ওতো টেনসানের কি আছে, এসব এখনকার দিনে নরমাল ব্যাপার, রাত গ্যয়ি তো বাত গ্যয়ি,চল কলেজে যাই।

‘তুই যা আমি পরে যাবো’ বলে অনিক আবার শুয়ে পড়ে। গত রাতের জন্য আফশোষ হয়। সে চাইলে হয়তো এতটা বাড়াবাড়ি হতো না।

পর পর কয়েকদিন সিমি কলেজে আসেনা। ওরা চিন্তায় থাকলেও কেউ সিমির কথা মুখে আনে না।
ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকদিন পরে সিমি আসে কলেজে, কেমন যেন ফ্যাকাসে লাগে তাকে।

অনিক একদিন দেখে সায়নের সাথে কথা বলছে সিমি, সে সেখানে যেতে গিয়েও পারে না বিবেকের তাড়নায়।
রাতে সায়ন তাকে বলে- সিমি প্রেগন্যান্ট, আমায় জোর করছিলো বিয়ে করার জন্য ,আমি ওকে পরিষ্কার না করে দিয়েছি, বলেছি আ্যবশন করিয়ে নাও।

-তো কি বললো সে??
-কি বলবে কিছু বলার মুখ আছে তার? ওর মতো মেয়েরা…
-প্লিজ তুই চুপ কর, সেদিন রাতে আমরাই তো
-জাস্ট স্যাটাপ্, তোকে আগেই বলেছি আমি কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারবোনা, আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ওর মতোই একটা মেয়ে।

গট গট করে বেরিয়ে গেল সায়ন। অনিক বসে রইলো পাথরের মতো। নাহ্ সে রাতে সে ও তো..

মাঝে কয়েক বছর কেটে গেছে, চাকরি পেয়ে দুজনে চলে গেছে অন্য জায়গায়। সেদিন লায়ন্স ক্লাবের একটা প্রোগ্রামে দুজন দুজনকে দেখে চমকে ওঠে। সায়ন এগিয়ে এসে বলে- অনিক তুই..
জড়িয়ে ধরে তাকে।

বলে- কি করছিস তুই, কেমন আছিস? বিয়ে করেছিস?
অনিক বলে- আমি এখন পাকাপাকি ভাবে আসানসোলে থাকি, বিয়ে থা করে পুরোপুরি সংসারী মানুষ। আর তুই?
-আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করছি, দুদিন হয় এখানে এসেছি। আজ এখানে কাল এখানে করে বেড়াচ্ছি কোম্পানীর কাজে। আর বিয়ে… হা হা হা ওসব আমার জন্য নয়।

ওদিন আর বেশী কথা হয়নি, প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর আর দেখা হয়নি, তবে ফোন নাম্বার নিয়েছিলো সায়ন।
আজ দেখা হলো আবার দুজনের, অনেক কথার পর সায়ন বলে এখানে আমি দিন পনেরো আছি, তার পর আবার হেড অফিসে ফিরে যেতে হবে। একদিন তোর বাড়িতে ডাকিস, তোর মিসেসের সাথে আলাপ করা যাবে।

-হ্যাঁ শিওর, আজি চল, ডিনার সেরে ফিরবি, আর আমার প্রিন্সেস কে দেখে আসবি।
-তাই চল, কাল তো আবার ফুল চাপ।

গাড়ি গ্যারেজে রাখতে রাখতে অনিক বললো- যা বেল বাজা তুই, আমি গ্যারেজ লক করে আসছি।
কলিংবেল বাজায় সায়ন। দরজা খুলতেই বিরাট এক চমক, চমকে ওঠে দুজনেই, সিমি!
পেছন থেকে অনিক বলে- এই হলো আমার বৌ, চল ভেতরে আয়।

ভেতরে আসতেই পাপা পাপা বলে ছুটে আসে রাই, সায়ন কে দেখে থমকে দাঁড়ায় সে। তাকে কোলে তুলে নিয়ে অনিক বলে- এই হলো আমার প্রিন্সেস।

মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে সায়ন। অনিক ও সিমির জোরাজুরি তে সে রাতে সেখানেই থেকে যায় সে। রাইকে যতবারই দেখে তার মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় সে।
সারা রাত ঘুমোতে পারেনা, নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।

অনিক যদি বিয়ে না করতো তবে সিমি হয়তো মরেই যেতো। দুটো প্রাণ শেষ হয়ে যেতো ইচ্ছেকৃত ভুলের জন্য।
চোরের মতো রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় সে, অনিকের সুখের জীবনে সে নিজের কালো ছায়া কিছুতেই পড়তে দেবেনা।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত