মতি মিয়া অনলাইন বুয়া সার্ভিস চালু করেছেন কিছুদিন হল। (গেটবুয়াঅনলাইন ডট কম) নামে একটি ওয়েবসাইট চালাচ্ছেন তিনি। এখানে বিভিন্ন এলাকার পেশাদার কিংবা অপেশাদার সকল বুয়াদের তালিকা আছে। বুয়াদের তথ্যের মধ্যে আছে তার নাম, এলাকার নাম, কর্ম অভিজ্ঞতা এবং সেই অনুসারে তাদের এক্সপেক্টেড স্যালারি। সবাই যে যার পছন্দ মত এখানে বুয়া অর্ডার করছে।
যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ভালই সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু একবার ওয়েবসাইটটির নাম নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। ‘বুয়া’ সম্বোদন করে ছোট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ও তোলা হয়েছিল। সেই সাথে বুয়ার পরিবর্তে ‘খালা’ ব্যবহারের ও দাবি ওঠে। কিন্তু পরে অবশ্য মতি মিয়া সংবাদ সম্মেলন করে এর যথাযোগ্য উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘বুয়া’ সর্বজনব্যবহারযোগ্য একটি শব্দ। যদি ‘খালা’ শব্দ ব্যবহার করতে হয়, তবে মধ্যবয়স্ক কিংবা বুড়ো মানুষদের এক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। তারপর থেকে অবশ্য বেশ স্মুথলি চলছে এই অনলাইন ব্যবসা।
এদিকে মা বহুদিন ধরে ঘ্যানঘ্যান করছেন এই ওয়েবসাইট থেকে একটা বুয়া অর্ডার করতে। তো আমি মাকে নিয়ে বসলাম ল্যাপটপে। এখন অপশনে যতগুলো বুয়া এসেছে সবই মায়ের পছন্দ হচ্ছে। একেকজনের একেকরকম আকর্ষণীয় বায়ো দেয়া আছে। একজনের প্রোফাইলে দেয়া, “খেতে খাই কম ভাত, কাম করি দিন রাত”। আরেকজনের বায়োতে লেখা, “ঘরবাড়ি কোণাকোণা, কোন ময়লা থাকবেনা, কথা দিলাম আজক্ষণ, নাম আমার করিমন”। এসব আকর্ষণীয় বায়ো দেখে মা খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। অবশেষে মায়ের পছন্দমত একটা বুয়া অর্ডার করা হল। বুয়ার নাম ‘বিজলি’, তার কর্ম অভিজ্ঞতা পাঁচ বছর। তার বায়োটা বেশ সুন্দর, সেখানে লেখা “I am a simple bua. I love my work” আর এই বুয়ার পছন্দনীয় ব্যাপার হচ্ছে স্যালারি তে negotiable দেয়া। বাকিসব বুয়াদের স্যালারি দেখে মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা। তাই বিজলি কেই অর্ডার করা হল।
আমাদের ধারণা ছিল ‘বিজলি’ বিদ্যুতের গতিতেই আসবে। কিন্তু তা হল না। অর্ডারের তিনদিন পর বিজলি এলো বাড়িতে। বুয়া ডট কমের গাড়ি এসে তাকে নামিয়ে দিয়ে গেল। আমি কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলাম বুয়া ডেলিভারিতে এত দেরি কেন, কর্মচারী কিছু বলার আগেই বিজলি বলল, “অনলাইন ডেলিভারি যদি এত তাড়াতাড়ি পাইয়া যান, তাইলে কি আর গুরুত্ব থাকবো ভাই! তাই দেরি” বলেই সে ফিক করে হেসে দিল। বিজলি বুয়াকে দেখে আমার মোটেও সিম্পল আর কাজ ভালবাসা বুয়া মনে হল না।
সে ঘরে ঢুকেই সোফায় বসলো, বলল “Sir, we need to talk” বুয়ার মুখে এই ইংরেজি শুনে আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমি বসার পর বুয়া বলল, “আমার কিছু শর্ত আছে। Terms and condition এর মত আরকি। আমি বলব, আপনি শুনবেন, হুদাই শুনবেন। লাস্টে আপনারে I agree কইতে হইবো, বুঝছেন না?” আমি মুখ খোলা রেখেই হ্যাঁসূচক মাথা নাড়লাম। মা ইতিমধ্যেই তার সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা করতে শুরু করেছেন। এদিকে বিজলি তার টার্মস এন্ড কন্ডিশন শোনালো, আর আমি শেষে আই এগ্রি বললাম।
তার টার্মস এন্ড কন্ডিশন ছিল এমনঃ
১। আমি একবেলা ঝাড়ু দিবো, এরপর দ্বিতীয়বার ময়লা হলে আমি ঝাড়ু দিতে বাধ্য থাকবো না। এবং ঘর ঝাড়ু দেয়ার অর্থ শুধুই ঘর ঝাড়ু দেয়া, ঘর মোছা এর মধ্যে পড়েনা। এবং ঝাড়ু লম্বা না হলে ঝাড়ু দেয়া থেকেও ইস্তফা দিবো।
২। আমি শুধু ভাত রান্না করব, তরকারী রান্নার দায়িত্ব আমার হাতে যদি দিতে চান, তাহলে তরকারীর স্বাদ নিয়ে কোনরূপ অভিযোগ করা যাবেনা। এবং ভাতের ফ্যান ও গালতে পারবনা, আমার হাত পুড়ে যায়।
৩। আমি প্রতি সপ্তাহের শুক্র এবং শনিবার ছুটিতে থাকবো, বৃহস্পতিবার হাফছুটি অর্থাৎ সকালবেলা আসবো এবং রাতে আসবো না। এই ছুটির পরেও প্রতি মাসে আমার হাতে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি থাকবে।
৪। আমি বেতন নিব ৫০০০ টাকা। প্রতি দুমাস অন্তর বেতন বাড়াতে হবে। প্রতি অকেশনে আমাকে বোনাস সহ উপহার সামগ্রী পাঠাতে হবে। এবং প্রতি মাসে অন্তত একদিন আমার পরিবারসহ আমাকে দাওয়াত করে ভালমন্দ খাওয়াতে হবে।
৫।আমাকে কাজে আসার জন্য বারবার ফোন করে বিরক্ত করা যাবেনা, বড়জোর একটি মেসেজ দেয়া যেতে পারে।
৬। প্রতি সোম থেকে বৃহস্পতিবার ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আমার দুইটা সিরিয়াল দেখার সময়। এই সময় আমার সিরিয়াল দেখায় কোনরূপ বিঘ্ন ঘটানো যাবেনা।
বিজলি বুয়া আরো কিছু কন্ডিশন বোধহয় শোনাতে যাচ্ছিলো। আমি ধপ করে একটা আওয়াজ হওয়ায় ডানে তাকিয়ে দেখি মা মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। তখন বুয়া বলল, “আমার ৭ নম্বর কন্ডিশন হচ্ছে, কেউ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তেলে পানিতে মালিশ করতে পারবোনা”।