আমি ভূত-টুতকে ভয় পায় না,তবে সেটা দিনের বেলায় | রাতে ইয়ে মানে, স্বীকার করতে লজ্জা নেয় একটু বেশিই পায়..ঘরে একা শুলে তো কথায় নেই |সেবার মা-বাবা আর দাদা এক আত্মীয়ের বিয়েতে আসানসোল যাবে,রাতে ফিরবে না,আমি রাতে একা থাকবো বাড়িতে |ভীতু বলে বদনাম আছে, সেটা ভুল প্রমান করতে আর সাহস দেখাতে পাশের বাড়ীর বোনকেও পর্যন্ত শুতে নিলাম না |একা শোয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম,মানে বালিশের তলায় একটা গীতা,আর হাতে পেন দিয়ে রাম লিখেও নিলাম( জানিনা ভূত পড়তে পারে কিনা) |রাত 12.30 অবধি ফেসবুক,হোয়াট আপ করে নেট অফ করে চোখ বন্ধ করলাম| নিচের তলায় সোফায় আমার পপলু ( অাদরের বিড়াল ) ঘুমাচ্ছে |
ঘুমিয়ে গেছি, কিছুক্ষন পর পপলুর চিৎকার শুনতে পেলাম |ভাবলাম আমার মা এর কাছে শুতে পাইনি বলে এমনি করছে | আবার চোখ বন্ধ করলাম,এবার ওর কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো,শুয়ে আর থাকতে পারলাম না,উঠে বসলাম | মোবাইল জ্বলে দেখলাম রাত দুটো বাজে,পপলুর খিদে পাওয়ারও কথা না ,আর মা এর জন্য এমনি করবে না |মনে পড়ে গেলো কদিন আগেই ফেসবুকে পড়েছি তেঁনাদের সাথে বিড়াল এর যোগ আছে,বিড়ালরা নাকি তেঁনাদের দেখতে পায়,যদি সেই কারণে ভয়ে কাঁদে ভাবতেই বুকটা ধক করে উঠল | ভাবলাম পা থেকে মাথা অবধি চাদর ঢাকা নিয়ে ঘুমাই,কিন্তু ওর কান্না বেড়েই চললো,আর শুয়ে থাকতে পারলাম না,রাম নাম করতে করতে নিচে নেমে এলাম |
দেখি পপলু গ্রিল ঘেরা দেয়া বারান্দার জানলায় ওপর দাঁড়িয়ে,আমি গিয়ে আলো জ্বালাতেই, মিও মিও করে আমার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো,আমি ওকে কোলে নিয়ে সাহসে ভর করে বাইরে তাকালাম |পূর্ণিমা রাতে সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, যা দেখলাম ভয়ে তো আমার আত্মা রাম খাঁচা,মাথা থেকে কোমর অবধি একটি ছায়া মূর্তি দু হাত ওপর দিকে করে দাঁড়িয়ে আছে |আমি তো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার যোগাড়,ছায়া মূর্তি টা আবার হাওয়াই দুলছে,এই দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারবো না |তাই যেই পিছন ঘুরতে যাবো,হঠাৎ আমার বাঁ দিকে চোখ চলে যাই….
দেখি তারে কি একটা ঝুলছে,সাহস করে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম দাদার টুপিওয়ালা জামাটা,যেটা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য জামার দুহাতে আর টুপিতে মা ক্লিপ লাগিয়েছিল, আর ওর ছায়াটা পড়ে ওমনি লাগছিলো,উফফ !ধড়ে ,যেন প্রাণ এলো,না এর পরে পপলুকে আর একা রাখিনি,উপরে নিয়ে এলাম,বেচারা যদি আবার ভয় পায়|
সমাপ্ত