ফ্লাওয়ার ভাসে রজনী গন্ধা রাখতে রাখতে গুনগুন করে উঠলো অদিতি “ঘরে তে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে” | রান্নাঘরে তখন ব্যাটার চিকেন এর গন্ধ ম ম করছে ,ফ্রাইড রাইসটাও কমপ্লিট | শুধু মাত্র স্যালাড কাটলেই হবে | ঘড়ির দিকে তাকায় অদিতি ,আটটা বেজে গেছে এখনো রাজের দেখা নেই | আধ ঘন্টা আগে ফোন ধরে শুধু বলেছিলো
” এখনো অফিস থেকে বেরোই নি,বিজি আছি ” অবশ্য মার্চ মাস চলছে ইয়ার এন্ডিং আছে | অদিতি আর রাজের আট মাস হলো বিয়ে হয়েছে তবে অদিতি মাস দুই হলো কলকাতায় এসেছে ,আগে অদিতি বর্ধমানে শাশুড়ির কাছেই থাকতো ,আর রাজ উইক এন্ডে যেত | তারপর রেন্টে ফ্ল্যাট নেওয়ার পর শাশুড়ি এসে ওদের সংসার সাজিয়ে দিয়েছে| প্রথম প্রথম অদিতির রান্না তথৈবৎ হলেও ইদানিং ভালোই হচ্ছে | তাই এই মেনু গুলো বানিয়ে রাজ কে সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছে | নয়টা বাজে কলিং বেল বেজে উঠলো ..
.” যাচ্ছি ” বলে ছুট্টে দরজা খুললো অদিতি |
রাজের একেবারে গলদঘর্ম অবস্থা ,তাও মুখে হাসি টেনে বললো
” অনেক দেরি হয়ে গেলো বাবু,যা কাজের চাপ ”
আহা! রাজের মুখটা দেখে অদিতির খুব মায়া হলো ,বললো
” তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি কফি আনছি ”
“না আগে কফিটা বানাও,খুব মাথা ধরে আছে ….তুমি কি সারপ্রাইজের কথা বলছিলে?”
” আছে আছে ” মুচকি হেসে জবাব দিলো অদিতি |
” এক সেকেন্ড তুমি কি ফ্রাইড রাইস রান্না করেছো ,গন্ধ উঠছে ?”
” হ্যাঁ,সাথে ব্যাটার চিকেন ”
কিজানি বাবা কেমন খেতে হবে ,পূর্ব স্মৃতি তো ভালো না ‘ মনে মনে এটা বললেও মুখে বললো
” বাবু,এত কষ্ট করে রান্না করতে গেলে কেন ? তোমার ইচ্ছা করলে জোমাটো থেকে আনিয়ে নিতাম ”
” ও আমি কি তোমার জন্য নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে পারিনা?” আব্দারের সুরে বলে উঠলো অদিতি |
বৌয়ের এমন সুরকে কোন পুরুষ মানুষ উপেক্ষা করতে পারে বলুন ?রাজ ও তার ব্যাতিক্রম নয় |
” হ্যাঁ, পারো তো কেনো পারোনা ডার্লিং ,কফিটা খেয়েই স্নানে যাবো, তুমি ততক্ষনে ডিনার সার্ভ করবে”
বললেও আর ধৈর্য থাকেনা রাজের,”দেখি রান্নাটা কেমন হয়েছে বলে ” একচামচ মুখে দেয় রাজ |
হেই হেই করে ওঠে অদিতি ” হাত না ধুয়েই হাত দিলে ?”
” বুঝলে বাবু দারুন হয়েছে,শোনো না তাড়াতাড়ি খেতে দাও,খেয়ে একটা মুভি দেখবো পেনড্রাইভে এনেছি ” বলে চোখ টিপলো রাজ|
“খুব অসভ্য তুমি ,এই নাও কফি ” কপট রাগ দেখিয়ে বললো অদিতি |
রাজ বাথরুমে স্নান করছে,আর অদিতি টেবিলে খাবার সার্ভ করছে | টিং টিং শব্দে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো রাজের ফোনটা, অদিতি যেতে যেতেই কেটে গেলো,আবার বাজতে লাগলো ফোনটা …অদিতি দেখে রুমি কলিং..ফোনটা ধরতেই ওই প্রান্ত থেকে বলে উঠলো
” রাজ দা,তোমার সাথে একটা কথা ছিল ,বলছি..”
ওই মেয়েটাকে মাঝ পথে থামিয়ে অদিতি বললো ” রাজ স্নানে গেছে ” সেটা শুনে ফট করে ফোনটা কেটে দেয় রুমি নামক মেয়েটা | কি আশ্চর্য্য ওর গলা শুনে ফোন কাটার কি আছে ,মনে মনে ভাবে অদিতি | চেক করে রাজের মেসেঞ্জার, ওমা প্রায় রোজই কথা হয় | মাথাটা গরম হয়ে যায় অদিতির ,মেয়েটা ফোন কেনো কাটবে ? দিলো ওর রোমান্টিক মুডে জল ঢেলে ..না রাজ বেরোলেই আজ জানতে হবে কে রুমি? রাজ বেরোতেই জিগ্যেস করলো ” রুমি কে?”
রাজ তো হচকচিয়ে গেলো ,আমতা আমতা করে বললো ” রুমি আমার অফিস কলিগ ”
” কি ব্যাপার রাজ,শুধুই কি কলিগ না অন্য কিছু? ” অদিতির গলার পারদ চড়লো |
“কি যাতা বলছো , ফালতু ঝামেলা না করে খেতে বসো ” মেজাজের সুরে বলে উঠলো রাজ |
আরো মাথা গরম হয়ে গেলো অদিতির ..
“আগে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করো ”
” ফালতু সিনক্রিয়েট করো না,বলছি খেতে বসো ”
” খাবার দেওয়া আছে তুমি গেলো ,আমি আর খাবো না ”
” ঠিক আছে কাওকে খেতে হবেনা” বলে খাবারের প্লেটটা মাটিতে ছুড়ে দিলো রাজ | ফ্রাইড রাইস আর সাধের ব্যাটার চিকেন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে | এটা দেখে দম দম পা ফেলে বেড রুমে গিয়ে ছিটকানি বন্ধ করে দেয় অদিতি | রাজ ও আর ঘটনাস্থলে না থেকে ড্রয়িং রুমে আশ্রয় নেয় |
টপ টপ করে চোখের জল পড়ছে অদিতির ..’ ইশশ! এই জন্যই বলে arrange ভালো না, কি জানি রাজের কোনো গুপ্ত প্রেমিকা আছে কিনা? কিছু ব্যাপার না থাকলে ফোনটা কেন কাটলো ‘ ভাবে অদিতি |
ওইদিকে, মাথায় যেন আগুন জ্বলছে রাজের, এর মধ্যে দুটো সিগারেট খাওয়া হয়ে গেছে…এবার যত রাগ গিয়ে পড়লো রুমির উপর ,কি দরকার ছিল ফোনটা কেটে দেওয়ার ? হ্যাঁ মানছি রুমির প্রতি আমার ক্র্যাশ ছিল ,তবে সে তো বিয়ের আগের কথা | এখন শুধু হাই-হ্যালো আর গুডমর্নিং-গুডনাইট উইশ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় | আর সামনে নর্মাল কথাবাত্রা | কিন্তু আজ ফোন কেন করলো কি জানি ?’ ভাবে রাজ | পেট টা খিদেতে ডাকছে ,”যায় একবার অদিতির রাগ ভাঙ্গায় ” বলে বেড রুমের দিকে যায় |
তখনও রুমের দরজা বন্ধ …আবার রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে রাজের,না কিছুতেই নত হবেনা ,দোষ তো অদিতির আছে ,ও ওর কথা শুনতেই চাইলো না | কিন্তু ঘরে ঢুকতে হলেই তো অদিতিকে ডাকতে হবে ,তাছাড়া ডাকলেই যে সেই মহারানী দরজা খুলবে তারও ইয়াত্তা নেয় | না ভগবান বোধহয় সদয় হলো , অদিতি তখনি দরজা খুললো ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য | যেই অদিতি বেরিয়েছে রাজ অমনি সুড়ুৎ করে ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ে | অদিতি এসে দেখে বিছানায় রাজ শুয়ে | অদিতিও কোনো বাক্যব্যায় না করে শুয়ে পড়ে তবে মাঝে বর্ডার হিসাবে পাশ বালিশটা রেখে দেয় |
‘বাবা! মহারানীর তেজ দেখো ‘ বলে রাজও পাশ ঘুরে শুলো | দু জনে দুই পাশে শুয়ে উসখুস করতে লাগলো |
অদিতি:::
দোষ করে এত রাগ ? একবার তো বলতেই পারতো চলো অদিতি খেয়ে নি,তাহলে আমি কি যেতাম না ?এত সুন্দর রান্নাটা হয়েছিল তাও খেতে পারলাম না | খিদেই তো পেটে চিতা দৌড়াচ্ছে ,না আর কিছুক্ষন দেখবো তারপর আমাকেই খাওয়ার কথা তুলতে হবে ,আর যদি না বলে তো আমি খেয়ে নেবো | কথাতেই আছে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা….
রাজ::
ফোনের লাইট জ্বালিয়ে দেখলো সাড়ে এগারোটা,না আর খিদে সহ্য হচ্ছে না | অমন সুন্দর রান্না কিছুতেই মিস করা যায় না | না আমাকেই আগে কথা বলতে হবে ,দোষ তো আমার ছিল | ওর রাগ করা তাই স্বাভাবিক ,আহা ! মেয়েটা যে খিদে সহ্য করতে পারে না |
মনে সাহস এনে বললো ” বাবু আমার খুব খিদে পেয়েছে ,খেতে দেবে চলো ”
অদিতি তো এর অপেক্ষাতেই ছিল ,কথা না বাড়িয়ে বললো ” চলো ”
ডাইনিং এর অবস্থা তো দেখার মতো , অদিতি আগে পরিষ্কার করতে লাগলো ,সাথে রাজ ও হাত লাগলো | যদিও দুজনেই স্পিকটি নট্ | খেতে বসলো নিঃশব্দে …দজনে গপ গপ খেতে লাগলো | নিজের অজান্তে রাজ বলে উঠলো ” দারুন !দারুন!” তখন অদিতি ওর দিকে মুখ তুলে তাকাতেই ফিক্ করে হেসে উঠলো রাজ | ওর কায়দা দেখে অদিতিও আর না হেসে থাকতে পারে না |