বঙ্গোপসাগর উপকূলে ১৬২৯৭.৬০ একর আয়তন ঘিরে গড়ে ওঠা গ্রামের নাম ইছাখালী। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পশ্চিমে অবস্থিত এ গ্রামকে কৃষকের গ্রাম বললেই চলে। ধূধু চর আর সোনালী মাঠের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে বাংলার কৃষকের স্বপ্ন বুনোনের দৃশ্য সকলের প্রাণ জুড়ায়। একসময় নদী ভাঙ্গন আর জলোচ্ছাসের কবলে সহায়-সম্বল হারানো গ্রামের বাসিন্দারা এখন কালের বিবর্তনে অসীম সাহসী ও ধৈর্যশীল। যুগযুগ ধরে দুর্যোগ আর জলোচ্ছাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষগুলো এখন দারীদ্রতার সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছেন। কিন্তু কিছুতেই মুক্তি মেলছে না নিধারুণ অভাবের হাত থেকে।
স্থানীয় ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানিয়েছেন, ‘দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে এখানকার কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এ গ্রামে ১০ হাজার কৃষি পরিবারের বসবাস। উপজেলার অন্যান্য গ্রাম থেকে এ গ্রামে দশগুন বেশি কৃষক ও কৃষি জমি রয়েছে। অথচ সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য আলাদাভাবে কোন প্রণোদনা অথবা পৃষ্টপোষকতার ব্যবস্থা রাখা হয়নি।’
স্থানীয় কৃষক আব্দু রহমান, মফিজ উদ্দিন, আবুল খায়ের ও হক সাহেব আক্ষেপের সাথে অভিযোগ করে বলেন, ইছাখালী গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে। অথচ বাজারে কৃষি পণ্যের উচিৎ মূল্য না পাওয়ায় দিনদিন বেকার হয়ে পড়ছে এখানকার কৃষকরা। কৃষিখাতে সরকারী প্রণোদনা এবং অন্যান্য সহযোগীতা প্রসঙ্গে কৃষক রহিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘প্রকৃত কৃষকরা সরকারের প্রণোদনা পায় না। যাদের মামার জোর আছে তারা পায়।’ এ প্রসঙ্গে ইছাখালী গ্রামে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ‘যেখানে ১ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ার কথা সেখানে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৩২৫ জনের। সেক্ষেত্রে এ ধরণের অভিযোগ-অনুযোগ তৈরি হয়।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও ভূমি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ইছাখালী ইউনিয়নে মোট ৫০ হাজার হেক্টর চরাঞ্চলের জমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার হেক্টর কৃষি আবাদের আওতায় এসেছে। তাও উপজেলার অন্য পাঁচটি ইউনিয়নের সপরিমাণ জমি এখানে আবাদ হয়। এছাড়া প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ঘেরে মৎস্য আবাদ হয়। যা চট্টগ্রামের মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। ইছাখালী এলাকায় কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী জানান, এবারের আমন মৌসুমে ৪ হাজার ৪শ ৬৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু কৃষকের আন্তরিকতা ও সরকারী উৎসাহে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। এবার ১১ হাজার দুইশ টন ধান উৎপাদন হবে বলে আমরা আশা করছি।’ এছাড়া হুমায়ুন জানান, ‘ইছাখালীর কৃষকরা বেশ দক্ষ ও কর্মঠো। বাজারে ভাল দাম পেলে তাঁরা আরো বেশি চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবে।’ ইছাখালী গ্রামের নীলক্ষি চরে গিয়ে দেখা যায়, এখনো কৃষকরা আমন ধান কাটতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখানে মাঠের পর মাঠ সোনালী আমনে চেয়ে গেছে। এসময় কথা হয় গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, ‘এবার ভাল ফলন হয়েছে। তবে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মণ ধানে ১০ টাকার মত থাকবে। এটুকু দিয়ে সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হবে।’
এসময় আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘পানির অভাবে বোরো চাষ হবে না তাই, আগামী মৌসুমে আমাদের কষ্টের সীমা থাকবে না।’ বোরো আবাদে পানি সংকট প্রসঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী জানান, ‘৫ নম্বর ওচমানপুর ইউনিয়ন হয়ে ভয়ে আসা দেহখালী খাল সংস্কার না করার কারণে এবার বোরো আবাদ বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খালটি সংস্কার না করায় তীব্র পানির সংকট তৈরি হবে।’