সেদিন খুবই অস্বস্তিতে কাটছিলো রুদ্র’র। অফিসের কাজে মন ছিলো না তাই অশান্ত ভাবে সময় অতিবাহিত হচ্ছিলো। মন অস্বস্তিতে ভরে উঠার অনেকটা কারণ ছিল। মধ্যবিত্ত টানাপোড়ন সংসার, বেসরকারি চাকুরীতে বেতন না বৃদ্ধির দুঃশ্চিন্তা, আরও অনেকগুলো বাস্তবিক কারণ যা মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটি কর্মজীবীকেই ভোগাচ্ছে।
কিন্তু রুদ্র নিজেকে সব বাধা উপেক্ষা করে নিজের মনকে সুখী করার মন্ত্রটা খুঁজে নিতে পারদর্শী। সেদিনও রুদ্র সেই চেষ্টায় সফল হয়েছে। প্রতিদিনের মতন বিকেল ৫টায় সে অফিস থেকে বের না হয়ে একটা পরিকল্পনা করল বিকেল ৪টায়। সেই পরিকল্পনা মতে পকেট খুচরা পয়সা আর টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ৯৪টাকা নিয়ে রওনা হলো। মাত্র ৩দিনের জন্য চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে এবং আশেপাশের এলাকা জুড়ে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা (জব্বর আলি’র বলী মেলা নামে পরিচিত) বসে। পকেট ফাঁকা ছিলো তাই মেলায় গিয়ে কিছুই কিনতে পারবে না বলে ৩দিনের মধ্যে একদিনও সে মেলায় যায় নাই। তাই সে কিছু টাকা জোগাড় করার উদ্দেশ্যে তার পুরাতন একটা কাজের ক্লায়েন্ট এর নতুন কিছু কাজ করে দিতে অফিস থেকে ৪০টাকায় নিউমার্কেট পর্যন্ত রিক্সা ভাড়া করলো । ক্লায়েন্ট এর কাজ চলাকালীন ৪টি গোল্ডলিফ লাইট পেলো উপঢৌকন হিসেবে সাথে এক বাটি বুট, ১টি করে পেঁয়াজু আর বেগুণী ছিলো নাস্তার মেন্যু তে এবং এক-কাপ স্পেশাল রংচা। এরপর খুব আয়েশ করে রুদ্র’র ক্লায়েন্ট আর রুদ্র ধূমপান পর্ব সেরে নিলো। এভাবেই বিকেলটা কাজের ব্যস্ততায় কাটিয়ে ফেললো রুদ্র। কাজের শেষে ক্লায়েন্ট রুদ্র কে যাতায়তভাতা বাবদ ২০০টাকা সম্মানের সাথে বুকপকেটে গুঁজে দিলো। কাজের পারিশ্রমিক অথবা সম্মানী অন্যদিন দিবে বলে মেনে নিয়ে কিছুই বললো না রুদ্র। সে নীরবে চলে এলো। সেখান থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় একা একা ঘুরে বেড়ানোর জন্য মনস্থির করল এরপর ১০ মিনিট হেঁটে জব্বর আলী বলী খেলার মেলায় গিয়ে পৌঁছালো। মেলা ঘুরে ঘুরে বাংলার ঐতিহ্য দেখলো কিন্তু কিছুই কিনলো না টাকা কম থাকায়। মেলা দেখা শেষে উপঢৌকন এর অবশিষ্ট ১টি সিগারেট পান করতে করতে সাধু’র মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর দিকে রওনা হলো। সিগারেট আধখানা পান করার আগেই সাধু’র মিষ্টান্ন পৌঁছে গেলো। এরপরপ্রতি পিস ১০ টাকা হারে দুই পিস গরম গরম রসগোল্লা খেয়ে নিলো। তারপর লোকাল বাস ৭ং এর অপেক্ষায় ১টা গোল্ডলিফ লাইট ৮টাকায় কিনে ধূমপান সেরে নিলো। তারপর ৭টাকা এবং ১০টাকা ভাড়া মিটিয়ে ২বার লোকাল বাস পরিবর্তন করে নিজের বাসার কাছাকাছি পৌঁছালো। সারাদিন শেষে ক্লান্তি ভুলে সে তার একমাত্র আদুরে বোনটার কথা স্মরণ করলো। রুদ্র’র বোনটিও খুব সাধারণ এবং কম চাহিদায় সন্তুষ্ট একটি লক্ষী বোন। তাঁর বোনটি সান কোম্পানির চিপস পছন্দ করে তাই বোনের জন্য নিলো ১৫টাকা মূল্যের ২টা চিপস, একটি ছোট সাইজের মোজো কোলা আর ১টি গোল্ডলিফ লাইট সিগারেট নিজের জন্য নিলো। বৈশাখী গরমের মাঝে দমকা বাতাস, শীতল মোজো কোলা এবং সিগারেট পান করতে করতে বাসায় গিয়ে ঢুকলো। বোনের হাতে চিপসগুলো দিয়ে দিলো এবং বোনের মিষ্টি হাসি উপহার পেলো।
এরপর নির্জনে সারাদিনের হিসেব মিলালোঃ
রিক্সা ভাড়া – ৪০/=
মিষ্টি – ২০/=
সিগারেট – ৮/=
বাস ভাড়া – ১৭/= (৭+১০)
চিপস+মোজো কোলা+সিগারেট – ৫৩/=
—– সর্বমোট যোগফল = সুখ
সারাদিনের সব মিলিয়ে এরপর রুদ্র সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে ” সুখ আসলেই একটা সস্তা প্রাপ্তির গল্প”।