কারণ ভাইয়া যখন বাসায় থাকে , তখন কি সব একশন মুভি দেখে । এসব মুভির আগামাথা আমি কিছু বুঝি না। তাই ভাইয়া যখন বাসায় থাকে না তখন আমি আমার প্রিয় কার্টুন আর অনুষ্ঠান গুলো দেখি । যখন কার্টুন দেখছিলাম , তখনই হঠাৎ করে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে । আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি জাবেদ ভাইয়ের কল । আমি কলটা রিসিভ করলে ভাইয়া বলে, জাহেদ তুই এখন কোথায় ? আমি বললাম , ভাইয়া আমি তো বাসায় ? ভাইয়া বলে , তাড়াতাড়ি একটু কলেজের সামনে আয়, তোকে দিয়ে জরুরী একটা কাজ আছে ? আমি বললাম , ওকে ভাইয়া আমি আসতেছি। এই বলে লাইন কেটে দিলাম । আমি প্রথমে ভাবলাম যাবোনা । পরে ভেবে দেখলাম পকেটে একটা টাকাও নাই একদম খালি। তাই এখন যাওয়া উচিত ,হয়তো উনার জরুরী কাজটা করে দিলে পকেট খরচের জন্য কিছু টাকা পেয়ে যাবো । পরে আমি তাড়াতাড়ি করে কলেজের সামনে এলাম।
কলেজের সামনে এসে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়ের হাতে একটা লাভ কার্ড কিছু চকলেট আর একটা গোলাপ ফুল । আমি ভাইয়ার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলাম , কি হয়েছে ভাইয়া এমন কিজরুরী কাজ আছে যার জন্য আমাকে ডেকেআনলেন ? ভাইয়া তখন উনার হাতের ফুল চকলেট আর লাভ কার্ড টা আমার হাতে দিলো । আমি হাতে নিয়ে দেখি কার্ডের মধ্যে লেখা i love you । তা আমি দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললাম , i love you too ভাইয়া। এই সব কিছু আমার জন্য , ভাইয়া আপনি অনেক ভালো , এই বলে যখন আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম । তখনই ভাইয়ের একটা কথায় আমার মনটা ভেঙ্গে চুর-চুর হয়ে গেল । ভাইয়া বলল ,আরে গাধা এগুলো তোর জন্য না, এগুলো মুক্তার জন্য।
আমি বেকুব হয়ে জিজ্ঞাস করলাম, ভাইয়া মানে কি আমি কিছুই বুঝলাম না ? ভাইয়া তখন বলল , আচ্ছা আমি তোকে বুঝিয়ে বলছি, আমি খবর পেলাম মুক্তা কিছুক্ষণ পর রিকশায় করে এখান দিয়ে যাবে । সে তার নানার বাড়ি যাবে । তার সাথে কেউ থাকবে না, সে একলা থাকবে । তুই শুধু আমার ছোট্র একটা কাজ করে দিবি , মুক্তা এখান দিয়ে যাওয়ার সময় চকলেট ফুল আর কার্ডটা ওকে দিয়ে বলবি আমি তাকে দিয়েছি! একথা শুনার পর আমি ফুল চকলেট সবকিছু উনারহাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম , দেখেন এ কাজ আমিকরতে পারবো না , আমার পক্ষে তা সম্ভব না । আপনি মুক্তা আপুকে ভালবাসেন , আপনিআপনার ভালবাসার কথা বলেন । আমাকে কেন বলতেছেন বলার জন্য ? ভাইয়া তখন বলে , দেখ তুই তো জানিস সে অনেকরাগি ।আর আমি ওকে অনেক ভয় পাই । সেতো তোকেতার ছোট ভাইয়ের মতো জানে , তোকে অনেক আদর করে । শুধু তুই পারবি আমার কাজটা করে দিতে , না বলিস না ভাই প্লিজ ।
দেখ ভাই তুই আমার কাছে যা চাইবি আমি তোকে দিব । তুই শুধু আমার কাজটা করে দে ।? আমি মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ পকেটে খরচের কিছু টাকা নেওয়ার । তাই আমি বললাম , আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাজটা করে দিতে পারি , তবে কাজের বদলে এক হাজার টাকা দিতে হবে ? ভাইয়া তখন বলে , এই ছোট কাজটার জন্য তোকে এক হাজার টাকা দিতে হবে । এতো অনেক বেশি,আমার কাছে এত টাকা নাই , আমি তোকে ৫০০টাকা দিবো ? আমি তখন বললাম ,এক হাজার টাকা দিতে পারলে কাজটা আমি করতে পারবো , আর না দিতে পারলে পারবোনা । আপনি নিজে গিয়া বলেন আপনার ভালোবাসার কথা! এই বলে আমি হেঁটে চলে আসতে চাইলাম । ভাইয়া তখন বলে , এই দাঁড়া দাঁড়া এই নে এক হাজার টাকা ।? ভাইয়া টাকা দেওয়ার পরে, উনার হাত থেকে ফুল চকলেট আর কার্ডটা নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম , অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন মুক্তা আপু আসবে । ভাইয়া একটু দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলো ।
ভাইয়া যে মেয়েটা কে ভালবাসে তার নাম মুক্তা । দেড় বছর ধরে তার পিছনে লেগে আছে , কিন্তু এখনো ভয়ে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারল না । মুক্তা আপু আমাদের এলাকার , আমার বন্ধু সাইফুলের বড় বোন । সে অনেক রাগি অনেক জেদি , কিন্তু জেদি রাগি হলেও , উনি মেয়েটা অনেক ভালো । আমি যখনি সাইফুলের সাথে ওনাদের বাসায় গিয়েছিলাম । উনি আমাকে অনেক আদর করতেন , ডেকে নিয়ে আমাকে খেতে দিতেন । তার ছোট ভাই সাইফুলের মত আমাকে ভালবাসেন । আমাকে অনেক ভাল জানেন । আর এজন্য ভাইয়া আমাকে দিয়ে উনার ভালোবাসা শিকার করতে চাইছেন ।? কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর , একটা রিকশার আগমন হয়। আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম , কিন্তু রিক্সাটা কাছে আসলে দেখি রিক্সার মধ্যে মুক্তাআপু না । রিক্সার মধ্যে আমার রাজকন্যা নিশু । আমি একবার ভাবলাম দৌড়ে পালিয়ে যাই , পরে আবার ভেবে দেখলাম এর মাঝে যদি মুক্তা আপু চলে আসে । তা হলে ভাইয়ার কাজটা মিস হয়ে যাবে , তাই দাঁড়িয়ে থাকলাম ।
নিশু হচ্ছে আমার ছোট বোনের বান্ধবী , তারা একসাথে স্কুলে পড়াশোনা করত । ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ছয়মাস আগে আমাদের বাসায় । আমি একদিন দুপুর বেলায় বাসায় এসে আমার বোনের রুমে যাই । রুমে গিয়ে দেখি রুমে কেউ নেই , বিছানার উপর একটা ভ্যনিটি ব্যাগ পড়া । আমি ভাবলাম আমার বোনের ব্যাগ ,তাই আমি ব্যাগ চেক করে দেখি তাতে কিছু টাকা আর কিছু কাগজপত্র । তখন আমি আর লোভ সামলাতে পারলাম না , ব্যাগ থেকে দুইশত টাকা চুরি করে নিয়ে নিলাম নিজের পকেটে । টাকাটা নিয়ে চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম । আমি সব সময় এভাবে আমার ছোটবোনের টাকা চুরি করে নিতাম । পরে অবশ্যই আমার কাছে টাকা হলে আবার ফেরত দিয়ে দিতাম ।
এরপর যখন সন্ধ্যা বেলায় বাসায় গেলাম , তখন আমার বোন আমার উপর অনেক রেগে গিয়েছিলো । কারণ আমি যে ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করেছিলাম , সেই ব্যাগটা ছিলো নিশুর । ওদিন নিশু আমার বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিল । ব্যাগ টা রুমে রেখে দুজনে ছাদে বসে গল্প করছিল আর আমি এর মাঝে টাকা চুরি করে পালিয়েছি । এরপরে আমি আমার বোনের থেকে তার নাম্বার নিয়ে তাকে কল করে স্যরি বলি । আর তার টাকা টা ফেরত দেওয়ার কথা বলি , কিন্তু সে টাকা টা ফেরত নেয়নি । সেখান থেকে তার সাথে আমার পরিচয়। এরপর থেকে সবসময় তার সাথে আমার ফোনে কথাহত । আর এই ছয় মাসে আমাদের বাসায় তার ঘন ঘন আসা যাওয়া হতো । ওকে আমার অনেক ভালো লাগে , আমি হয়তো অনেক আগেই তাকে ভালোবেসে ফেলি । কিন্তু আমি তা কখনো প্রকাশ করিনি একটা ভয়ে । যদি ভালবাসার কথা বলি, সে যদি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ,অন্য দিকে আমার বোনের বান্ধবী , পরে যদি আমার বোন কে সব বলে দেয় ।
এই ভয়ের কারণে তাকে কখনো বলা হয়নি। আমি তাকে পছন্দ করি , তাকে ভালবাসি । তার কথা ভাবতে ভাবতে রিক্সা কখন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আমি খেয়ালই করিনি । আমার ধ্যান ভাঙ্গে তার কথায় , নিশু আমাকে বলল , আরে তুমি এখানে হাতে ফুল, চকলেট, কার্ড এগুলো নিয়ে কার জন্য দাড়িয়ে আছো ? আমি তখন এক মিনিট ভাবলাম , আমার হাতে ফুল চকলেট লাভ কার্ড তাও নিজের টাকায় কেনা না । সবকিছুই ভাইয়ার টাকায় কেনা। পকেটে ও এক হাজার টাকা আছে । নিশুকে ভালবাসার কথা বলার এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর কখনো পাবো না ।
না, এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না । যা হবার পরে দেখা যাবে । তাই আমি নিশু কে বললাম , এসব কিছু তোমার জন্য! নিশু অবাক হয়ে বলে , মানে কি? তখন আমি বললাম , দেখো, আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি , কিন্তু ভালোবাসার কথাটা বলার সাহস হয়নি কোনদিন। আজকে ভাবলাম যেমন করে হোক তোমাকে বলবো আমার ভালোবাসার কথা , এ জন্যই এত প্রস্তুতি । এই বলে আমি চকলেট, ফুল, কার্ডটা তার হাতে ধরিয়ে দিলাম । তারপর আমি ওকে বললাম , দেখো তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে তোমার সাথে আমাকে নিয়ে চলো । আমার অনেকদিনের ইচ্ছে তোমার হাত ধরে রিক্সা ভ্রমণ করার । আর যদি আমাকে ভালো না বাসো, তাহলে আমার জিনিস গুলো আমাকে ফেরত দিয়ে দাও । আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করার চেষ্টা করব ।
নিশু তখন চোখ বড় বড় করে আমাকে বলল , তুমি অন্য কোন মেয়ের দিকে নজর দিয়ে দেখো ।যে চোখ দিয়ে নজর দিবা সেচোখ দুটো তুলে আমি আমার ছোট ভাইকে দিবো মার্বেল খেলতে । এই বলে সে তার হাতটা বাড়িয়ে দেয় , আমিও কোন কিছু না ভেবে তার হাতটা ধরি । সে তখন আমার হাত ধরে টেনে রিকশায় আমাকে উঠিয়ে নেয় । তারপর রিক্সাওয়ালাকে বলে মামা চলেন । তারপর রিক্সা ছুটে চললো । আমি পিছন ফিরে ভাইয়ার দিকে তাকালাম । দেখি ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে , হয়তো বুঝার চেষ্টা করতেছে পুরো ব্যাপারটা, আসলে ঘটনা টা হয়েছে কি।