‘বাহ্ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে রে মা, তাড়াতাড়ি চলে আয় আমাদের বাড়িতে’।হবু শাশুড়ির কথা শুনে রাই লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।আজ রোমিতের বাবা-মা এসেছেন রাইকে দেখতে আর বিয়ের দিন স্থির করতে
রাই আর রোমিতের আলাপ রাই এর বান্ধবী ঈশার বিয়েতে।রোমিত ঈশার মাসতুতো দাদা।থাকে কলকাতায়। আসানসোলে বোনের বিয়েতে এসেই রাইকে দেখে ভালো লেগে যায় রোমিতের।পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, সুদর্শন, সপ্রতিভ রোমিত নিজেই যেচে আলাপ করেছিল রাই এর সঙ্গে।আর প্রথম আলাপেই মন ছুঁয়েছিলো রাই এর।তারপর ই দুই বাড়ির তত্বাবধানে জল বিয়ে পর্যন্ত গড়াল।
রোমিত দু মাস পরেই চলে যাবে প্রজেক্টের কাজ নিয়ে কানাডা তাই রোমিতে র বাবা-মা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চান কারণ রোমিতের ফিরতে ফিরতে ছয়মাস লাগবে।বাবা-মার একমাত্ৰ সন্তান রাই কোনোদিন বাবা-মাকে ছেড়ে এক রাত ও কোথাও থাকেনি কি করে থাকবে সে কলকাতায় গিয়ে? এই ভাবনায় অস্থির হয়ে ওঠে রাই ।
যায় হোক বিয়ে হয়ে গেল রাই আর রোমিতের।বিয়ের কুড়ি দিনের মাথায় রোমিত চলে গেল কানাডা। রাই কিছুদিন কাটিয়ে এলো আসানসোল থেকে। এখন শুধুই একাকিত্ব। রোমিতের বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেন বৌমাকে সহজ করতে কিন্তু রাই যে এখনো রোমিতের বাবা-মার সাথে সহজ হতে পারছেনা।মন থেকে তাঁদের বাবা-মা ভাবতেই পারছে না।একে তো রোমিট বিদেশে তারওপর নিজের বাবা-মা কে ছেড়ে আসার কষ্ট , ক্রমশ অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে রাই।শশুর-শাশুড়ি কথা বলতে এলেও অল্প কথা বলে এড়িয়ে যায়, কিছুই ভালো লাগেনা তার।একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে রাই।জ্বরে বেহুঁশ হয়ে যায়।রোমিতের বাবা-মা ডাক্তার ডাকেন, সারারাত জেগে বৌমার সেবা করেন, কিছুই জানতে পারেনা রাই।সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখে শাশুড়ি মা মাথার কাছে বসে ঢুলছেন, শশুরমশাই পাশে চেয়ারে বসে চিন্তিত মুখে।রাই কে জগতে দেখে বলেন–
-‘শুনছো গিন্নি, মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে, কি চিন্তায় ফেলেছিলো রে মা’।শাশুরিমা ধড়মড়িয়ে উঠে বলেন,
—‘তোর জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসি, খেয়ে নে , ভালো লাগবে’।রাই শাশুড়ির হাতটা টেনে বলে ,’এক কাপ না, তিন কাপ আনো মা, আজ আমরা একসাথে কফি খাবো আর হ্যাঁ লাঞ্চ এ কিন্তু তোমার স্পেশাল চিকেন কসা টা চাই’।শশুরমশাই বললেন ‘ গিন্নি কফির সাথে বাজারের ব্যাগটা আনতে ভুলোনা, চিকিনটা আনতে হবে তো’।
এতদিনে রাই এর বাবা-মা কে ফেলে আসার যন্ত্রণাটা কিছুটা হলেও ফিকে হলো।শশুর-শাশুড়ির মধ্যে খুঁজে পেল বাবা-মা কে নতুন করে।