ফুটপাতের রাস্তা ধরে হেটে চলেছি।গন্তব্য হোস্টেল।
ফুল ভলিউমে গান ছেরে হাটতেছি।
হঠাৎ মনে হলো পিছন থেকে কেউ শার্ট ধরে টান দিলো।
পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ছেলে শার্ট ধরে টানছে।
দেখে মনে হলো ৮-১০ বছর বয়সের হবে।
বেশভুষা দেখে বুঝে ফেললাম তথা কথিত পথ-শিশু।
ছেলেটি জিজ্ঞেস করলাম,
আমি:শার্ট ধরে টানছো কেনো?
ছেলেটি:ভাইজান ৫০ টেহা দিবেন?
:টাকা দিয়ে কি করবে?
:আইজ দুই দিন ধইরা কিছু খাই নাই।
কিছু না বলে ছেলেটিকে টাকা দিলাম।
ছেলেটির মুখ দেখে বুঝলাম অনেক খুশি হয়েছে।
পকেটে ৫০ টাকাই ছিলো।
ভেবেছিলাম একটু এগিয়ে রিক্সা নিবো।
তা আর হলো কই।হেটে গেলাম।
তবে ছেলেটি এই টাকা পেয়ে যে পরিমান খুশি হয়েছে তার তুলনায় আমার হেটে যাওয়া কিছু না।
.
কিছুদিন পরে,
টিউশনি করিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।
একটি ছেলে বললো,”কেমন আছেন ভাইজান?”
ছেলেটিকে চিনতে পারি নাই প্রথমে।
ছেলেটি আবার বললো,”ভাইজান আমারে চিনেন নাই?অই যে কিছু দিন আগে আমারে টেহা দিলেন”।
এবার মনে পরলো।ছেলেটিকে চিনতে পারলাম।
ছেলেটির মুখে অমায়িক হাসি ছিলো।
আমি বললাম,”তোমার নাম কি?”
ছেলেটি:ফাহাদ।
:থাকো কোথায়?
:অই পাশের বস্তিতে।
:তোমার পরিবারে কে কে আছে?
:কেউ নাই।আমি একা।
কথাটা শুনেই অনেক খারাপ লাগলো।
বুঝতে পারলাম ছেলেটির দুর্দশার কারন।
আমি কিছু বলার আগেই ছেলেটি বললো,”ভাইজান এখন আমি যাই।”
চলে গেলো ছেলেটি।
ইচ্ছে ছিলো ফাহাদের হাতে কিছু দেওয়ার।
কিন্তু পকেট ফাকা।
আসলে টিউশনি করিয়ে চলতে গেলে সবসময় পকেট খরচ ও থাকে না।
এর পিছনে এক প্রকার আমি ই দায়ী।
টিউশনি করাই একটা।
ইচ্ছে করলে আরো করাতে পারি।তবে আমার মতো অকর্মার ঢেকির দ্বারা কিছুই হয় না।
.
আরো কিছুদিন পরে,
ছেলেটির সাথে দেখা।এবার আমি ই আগে বললাম,
“ফাহাদ কেমন আছো?”
ফাহাদ:ভালো ভাইজান।আপনার নাম কি?
আমি:আমার নাম কে,এইচ,তুষার।
:ভাইজান আমার না খুব ক্ষিধা লাগছে।
ছেলেটির কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো।পাশেই একটি খাবারের হোটেল ছিলো ছেলেটিকে সেখানে নিয়ে গেলাম।
তবে আজ মনে হয় কপাল ভালো ছিলো কারন সকালেই এক বন্ধুর থেকে কিছু টাকা পাইতাম তা দিয়েছে।
ফাহাদ কে নিয়ে একটি পার্কে গিয়ে বসলাম।
আমি:আচ্ছা এই শহরে তো অনেক পথ শিশু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আছে।তুমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছো।
ফাহাদ:ভাইজান এক চাচায় আমারে নিয়া গেছিলো তাগো কাছে।তারা অন্য কথা বলে পাঠিয়ে দিছে।
:কেনো?
:অইখানে এক বড় চুলওয়ালা একজন আছে আমারে বলছে তাগো লগে মিছিলে যাইতে ডেইলি ১০০ টেহা কইরা দিবো আর খাওন দিবো।
আমি অনেকটা হতবাক হয়ে যাই ফাহাদের কথা শুনে।
বলে কি!এতো নামী সংঘঠন আর তারা নাকি”!!!
ভেবে দেখলাম আসল রহস্য একটু জানতে হয়।
.
আমার এক বন্ধু আছে শহরের স্থানীয়।
ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আসলে ঘটনা সত্য!!!
সবাই লেবাস নিয়ে চলে আর মুখে বুলি উড়ায় কিন্তু কাজে ঠনঠন।
তাই ভাবলাম একটু কাজ দেখে আসি কি চলে সেখানে।
বন্ধুকে নিয়ে গেলাম একটি সংঘঠনের কার্যালয়ে।
ভিতরে এক জন বসে আছেন।
তাকে কিছু টা হলেও চিনতে পারলাম।
কারন এই ব্যাক্তি ই সেই ব্যাক্তি যিনি শহরের সেরা সমাজ সেবার পুরস্কার পেয়েছেন।
তার সাথে কথা বললাম।তবে কথা বলে মনে হলো ভালোই।
কিন্তু পাশের রুমেই কিছু ছেলেকে দেখতে পেলাম।
হয়তো পথ-শিশু হবে।তাদের হাতে দেখলাম কিছু সাইনবোর্ড।মনে হচ্ছে মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
তার মানে ফাহাদের কথাই সত্যি!!!!!
না এটা কিভাবে সম্ভব!সবাই মুখোশের আড়ালে এসবের নামে ব্যাবসা করছে।
.
আজ শহরে অনেক মানুষের সমাগম।কারন বিশাল জনসভা হচ্ছে।
ব্যানারে লেখা “পথ-শিশু উন্নয়ন প্রকল্প”।
দেখলাম মঞ্চে সেই লোক টি বসে আছে।
ফাহাদ আমার পাশে দারিয়ে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে।
শুরু হলো তাদের বক্তব্য।
“আপনারা জানেন আমরা এবং আমি পথ-শিশুদের জন্য কত কাজ করে যাচ্ছি।
শহরে কোনো পথ শিশু নেই।সবাইকে স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে।কেউ খাবারের অভাবে নেই।পথ-শিশু দের আপন করে নিয়েছি”।
বক্তব্য শুনে দেখলাম ফাহাদের চোখে পানি।পানি থাকাটাই স্বাভাবিক।
কত সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলছে।
এরাই নাকি দেশের উন্নয়ন করবে।
বড় বড় এওয়ার্ড পায় সমাজ সেবার জন্য।
আর পথ-শিশুরা খাবারের অভাবে রাস্তায় ঘুরে।
.
ভাবছি পরের মাসে আরেকটা টিউশনি নেবো।ফাহাদ কে স্কুলে ভর্তি করতে হবে।
যতটুকু পারি চেষ্টা করবো।ওরাও তো আমাদের মতোই মানুষ।
কিন্তু নামের আগে যুক্ত হয়েছে পথ-শিশু।
না যুক্ত হতে দেয়া যাবে না।
ওরাও শিক্ষিত হবে দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।
থাকবে না কোন “পথ-শিশু” নামক টাইটেল।..
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প