রাজেশের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন অনিমেষ।
আর কেনই বা মনে রাখবেন? কেই বা সে ছিল অনিমেষের? কমবয়সী একটা ছেলে.. না ব্ন্ধু বা দূর সম্পর্কের কোন পরিচিত, না তেমন কোন ব্যক্তিত্ব!
এটুকুই জানতো অনিমেষ, রাজেশ ছিল তার ফেসবুক ফ্রেন্ড কাম ব্লাইন্ড ফলোয়ার। আরো দুটো জিনিস জানা ছিল রাজেশ সম্পর্কে..এক পুরুলিয়ায় তার বাড়ি, আর দুই- মহেন্দ্র সিং ধোনির মস্ত বড় ফ্যান। ..ব্যস এটুকুই।
অনিমেষ বেসরকারী অফিসের কর্মচারী। খুবই ব্যস্ত মানুষ। রোজ সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে পড়ে, বাড়ি ফিরতে সেই রাত দশটা- সাড়ে দশটা। অল্প রেস্ট নিয়ে পরদিন ঘুম থেকে ওঠে আবার অফিস।
শান্তিতে বাড়ির লোকজনের সাথেই ঠিকঠাক কথা ফুরসৎ পায়না, তায় আবার আত্মীয় স্বজন? তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার দায়িত্বটাও সব্জি মাছবাজারের দায়িত্বের সঙ্গে গিন্নীকেই গুছিয়ে দিয়েছেন।
যদিও এটাই অনিমেষের একমাত্র পরিচয় নয়। অনিমেষ টুকটাক লিখতে ভালবাসে। নিজের অতি অল্প সময়ের মধ্যেও সময় বারকরে সে এই সাধনাটুকু চালিয়ে যায়- বাসে, ট্রেনে, ফুটপাথে, হসপিটালে। যেখানে সম্ভব হয়..নিছক ভালোবেসে।
কিছু লেখা তার পত্রিকায় ছাপা হয়, কিছু বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ পায়। সেগুলো আবার তিনি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন।
এসব করে একটা সুনাম ও ফলোয়ার লিস্টও তৈরি হয়েছে অণিমেষের।
রাজেশ যে কিভাবে তার প্রোফাইল খুঁজে পেয়েছিল অনিমেষ জানে না। হয়তো কোন শেয়ার পোস্ট থেকেই!
হঠাৎই একদিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এল। রাজেশ পাল॥ আরে কোন হরিদাস পাল রে ভাই তুই?
অচেনা যার তার রিকোয়েস্টে রেসপণ্ড করে না অনিমেষ..তবে পরিচিত কেউ হতে পারে ভেবে রিমুভ করেননি..তাই পড়েই ছিল। হঠাৎই একদিন মেসেঞ্জারে ফুটে উঠল রাজেশ..রাজেশ পাল॥
সেখানে লেখা- “স্যার আপনার প্রোফাইলে এসে চোখ আটকে গেল স্যার। অসাধারন লেখেন কিন্তু আপনি। জানেন আজ গত দুদিন আপনার লেখাই পড়ে যাচ্ছি মন্ত্রমুগ্ধের মত। আমার রিকোয়েস্টটা অ্যাকসেপ্ট করুন স্যার।”
এসব শুনে মনটা গলে গিয়েছিল অণিমেষের। আর না করেননি।
এরপর থেকে অনিমেষের প্রতিটি পোস্টে একটা কমন লাইক ও কমেন্ট থাকতে লাগলো — “রাজেশ পাল”
অনিমেষ প্রায় ছয় মাস আগে অনুমান করেছেন রাজেশ আজকাল আর টার কোন পোস্টে লাইক দেয় না। দাদার ফ্যান অনিমেষ। তাহলে কিছুদিন আগে ধোনিকে হিট করে রগরগে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন বলে কি..কে জানে? এজন্যই একবার করে ভাবেন ন্যাকা প্রেমের গল্প ছাড়া কিছুই লিখবেন না.. না খেলা না রাজনীতি।
কিন্তু লিখতে গেলে আবেগ চাই। আর সেটা তো যেকোনো দিক থেকেই আসতে পারে.. তাই নয় কি?
আরে বাবা আল্টিমেটলি তিনিও তো মানুষ! তারও তো একটা নিজস্ব বিবেচনা থাকবে.. নাকি?
তাতে যদি কেউ আনফলো করে তো করুক তার কীস্যু করার নেই। ঠিক করলেন..অনিমেষ নিজের খেয়ালে লিখেছেন, আজীবন লিখবেন।
চূড়ান্ত ব্যস্ততায় রজেশের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলেন অনিমেষ। এদিকে আরো ছয়মাস কেটে গেছে। হঠাৎই গ্রামের ব্ন্ধু রাজেশকে ফেসবুকে খুঁজতে গিয়ে রাজেশ পালের প্রোফাইলটা উঠে এল।
সত্যিই একবছর হয়ে গেল ..কিন্তু রজেশের কোন রেসপন্স নেই। সামান্য ছোট্ট একটা ঘটনায় তার এতবড় একজন ফলোয়ার..
রাত তখন এগারটা। রজেশের প্রোফাইলে ঢুকলেন অনিমেষ। দেখলেন তেশরা মার্চ ছয়জন ব্ন্ধু তার জন্মদিন উইশ করেছে। কিন্তু রজেশের কোন রেসপন্স নেই।
স্ক্রল করে আরো নীচে নামলেন অনিমেষ।
দেখলেন একজন লিখেছে — “যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস।”
বুকটা ধড়পড় করে উঠল যেন অনিমেষের। অস্থির হয়ে মোবাইল আরো স্ক্রল করলেন তিনি।
দেখলেন সেখানে একজন লিখেছে
“তোর আত্মার শান্তি কামনা করি ভাই”
আর স্ক্রল করতে পারলেন না অনিমেষ। ছিটকিনি খুলে বাইরে গিয়ে এলেন। রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকালেন। দেখলেন হাজার তারার মাঝে একটা তারা যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক… ঠিক যেন রাজেশের চোখের দীপ্তিমান মনি…