—উপন্যাস পড়তে পছন্দ করো তুমি?
ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে মায়াকে ছেলে মেয়েকে আলাদা কথা বলতে দিলে অনেক্ষণ চুপ থাকার পর এরকম একটাই প্রশ্নই জিজ্ঞেস করে হিমালয় মায়াকে
—জ্বী,খুব একটা পড়া না হলেও কিছুটা পড়া হয়…
—প্রিয় লেখক?
—হুমায়ূন আহমেদ
—হু হু, ওহ আচ্ছা! চেনো তো নাকি জনপ্রিয় বলে ওনার নামটাই বলে ফেললে
এরকম একটা কথা শোনার জন্য মায়া কখনোই প্রস্তুত ছিল না এভাবে শান্ত সুরে যে কেউ কাউকে এতটা আহত করতে পারে তা মায়ার ভাবনায় ছিল না,নেহাত বাবার বন্ধুর ছেলে নয়তো এরকম একটা কথা শোনার পর মায়া কেদেই ফেলতো,মায়াতো একটুতেই কেদে ফেলে অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রেখেছে, মায়ার চোখ ছলছল করছে ইতিমধ্যে….
—আমি তোমায় রাগানোর জন্য এরকম একটা কথা বললাম তুমি কিছু বললে না যে?
মায়া চমকে এবার হিমালয়ের দিকে তাকালো,মারাত্মক স্মার্ট দেখতে ছেলেটার কন্ঠ দারুন দৃঢ় এরকম কন্ঠের তীক্ষ্ণতায় যে কাউকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা যায়
—হুমায়ূন স্যারের একটা কথা আছে জানোতো?
“ভালো মানুষের রাগ থাকে বেশী, যারা মিচকা শয়তান তারা রাগে না,পাছায় লাত্থি মারলেও লাথি খেয়ে হাসে”।
মায়া ফিক করে হেসে ফেলল ছেলেটা যে এত সহজ ভাবে এরকম একটা কথা বলে ফেলবে মায়া তা ভাবে নি,তবে এবার অবাক হওয়ার পালা হিমালয় মায়া মুখটা তুলে হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বলল,
—প্রতিটা কথা কাটার জন্য কথা থাকে জানেন তো হুমায়ুন স্যারই বলেছেন“পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষে আছে। এক ধরনের মানুষ রাগ প্রকাশ করতে পারে, খুশি প্রকাশ করতে পারে না, আরেক ধরনের মানুষ খুশি প্রকাশ করতে পারে, রাগ প্রকাশ করতে পারে না”
হিমালয় মৃদু হাসলো যতটা ভেবেছিল ততটা গোয়ার মেয়েটি নয় হয়তো হিমালয় বিলেত থেকে ডিগ্রী নিয়ে ফিরেছে তবে মায়াও যে কম নয় সেটা কিছুক্ষণেই বুঝে যাবে
—তোমার হাসিটা সুন্দর সত্যি সুন্দর
—কথা কাটাকাটি খেলাটা খারাপ লাগছে না এই হাসির প্রশংসাটা হূমায়ুন স্যারের ভাষায় বলুন তো
হিমালয় বেশ মজা পেলো চুপচাপ থাকা শান্ত মেয়ে হিমালয়ের পছন্দ নয় যে মেয়ে তাকে কথায় মাত দিবে তার সাথে জীবন কাটানোর কথা ভাবাই যায়, হিমালয় একটু হেসে বলল,
—“মানুষের মনের ভাব কখনোই মুখে প্রতিফলিত হয় না। মুখের ওপর সর্বদা পর্দা থাকে। শুধু মানুষ যখন হাসে তখন পর্দা দূরীভূত হয়। হাস্যরত একজন মানুষের মুখে তার মনের ছায়া দেখা যায়।”
—থ্যাংক ইউ,আপনিও যথেষ্ট স্মার্ট কিছুটা জ্বীনের মতো সুন্দর
—জ্বীনের মতো সুন্দর! কিভাবে?
—ছেলেরা তো পরীর মতো সুন্দর হতে পারে না তাই জ্বীনের মতো সুন্দর বললাম,
হিমালয় মায়ার যুক্তি শুনে মুচকি হাসতেই মায়া পট করে বলল,
— “যে মানুষ নিঃশব্দে হাসে তাহার বিষয়ে খুব সাবধান। দুই ধরনের মানুষ নিঃশব্দে হাসে- অতি উঁচু স্তরের সাধক এবং অতি নিম্নশ্রেণীর পিশাচ চরিত্রের মানুষ।” ― Humayun Ahmed,
—আমি কোন শ্রেনীর বলে তোমার মনে হয়?
—উঁচু স্তরের সাধক
—কেন অতি নিন্ম শ্রেনীর পিচাশ নই কেন?
—আমার মনে হলো আপনার হাসি পবিত্র,কেমন যেন ভালোলাগা কাজ করে…
—আর এটা মনে হওয়ার কারণ?
মায়া হালকা হেসে বলল
—“অনেক সময় আমাদের অনেক কিছু ভালো লাগে, কিন্ত কেন ভালো লাগে তা আমরা বুঝতে পারি না। বুঝতে চেষ্টাও করি না।”
—ভেরি স্মার্ট,আমার সম্পর্কে কিছু জানার আছে? আমার অতীত বা আমার কোনো ভালোলাগা আছে কি না?
—তেমন কৌতুহল নেই অনেক সময় সবটা জেনেও একজন শুদ্ধ মানুষকে নিয়ে সংসার শুরু করলেও ছন্দপতন ঘটে তাই এক্ষেত্রে পুরোটা বাবার সিদ্ধান্তের উপর আর আমার তকদীরের উপর ভরসা করছি….
—“কৌতুহল আমাদের সবারই আছে, কিন্ত কৌতুহল মেটানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পরিশ্রমটি আমরা করি না। করতে চাই না।”তোমার হুমায়ুন স্যারই বলেছেন,আমার মনে হচ্ছে তোমার খারাপ একটা অতীত আছে খুবই বিশ্রী যেটা জানলে আমার আর ইচ্ছে হবে না তোমার সাথে কথা বলতে….
মায়ার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো এই ২২ বছরের জীবনে ও এমন কোনো কাজ করে নি যাতে কেউ ওর দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারে,সবসময় বাবার সম্মানের কথাটা মাথায় রেখেছে,আর এই লোকটা কিনা আজ না জেনেই ওকে এভাবে বলছে! মায়া ধীরে উঠে দাড়ালো তারপর বলল,
—অনেকক্ষণ হয়েছে এবার আমাদের বাইরে যাওয়া উচিত কেউ ডাকতে আসবে সেটা খুব খারাপ দেখায় না?
—মায়া শোনো “কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা রূপবতী তরুণীদের অগ্রাহ্য করে একধরনের আনন্দ পায়। সচরাচর এরা নিঃসঙ্গ ধরনের পুরুষ হয়, এবং নারী সঙ্গের জন্যে তীব্র বাসনা বুকে পুষে রাখে।” আমিও কিন্তু সেরকমই আমি এই যে তোমায় এরকম কথা শোনালাম চাইলেই কিন্তু তুমি তীব্র কিছু কথা শোনাতে পারতে কিন্তু শোনাও নি, তুমি আমায় সম্মান দেখিয়েছো,আমি জানি কেন তবুও চাই কথাটা তুমি নিজে মুখে বলো,তোমার বলা কথা দিয়ে আমার কথাকে কেটে দেবে এটাতে কেমন যেন মায়া লাগছে…
মায়া খুব সুন্দর একটা হাসি হাসলো ওর হালকা কাজল পড়া চোখে হিমালয়ের চোখের দিকে তাকালো,ওর বাবা ভুল মানুষকে বাছেন নি তিনি তার মেয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ একজন কে বেছে এনেছেন যে স্ত্রী হিসেবে তার সমকক্ষ কাউকে চায়,মায়া খুব নরম করে বলল,
—”কখনো কখনো তোমার মুখটা বন্ধ রাখতে হবে। গর্বিত মাথাটা নত করতে হবে এবং স্বীকার করে নিতে হবে যে তুমি ভুল। এর অর্থ তুমি পরাজিত নাও, এর অর্থ তুমি পরিণত এবং শেষ বেলায় জয়ের হাসিটা হাসার জন্য ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।” হিমালয় উঠে দাঁড়ালো দু কদম সামনে এগিয়ে বলল,
—মায়া আমি খুব স্পষ্টবাদী,আমি চাই সারাজীবন তোমার সাথে এই কথার কাটাকাটির খেলাটা খেলতে তোমায় এখন কিছু বলতে হবে না তুমি তোমার কথাটা ভেবেই বলো আমি আসছি।