গল্পের মতন

গল্পের মতন

-আচ্ছা আমাদের সম্পর্কটা ঠিক কী?

-প্রেম আবার কী?

-ঠিক তো?

-মানে?

-মানে ধর, বছর পাঁচেক দেখা হলো না, ছুঁতে পারলি না, শুতে পারলি না, তাহলেও থাকবে তো প্রেম?

-হু, এই ব্যাপার, তাহলে মনীষা তোকে একটা ছোট্ট গল্প বলি, মন দিয়ে শোন, শুনবি কিন্তু, মন দিয়ে?

-বল।

আমার মেজমামা, পেশায় টিসি ছিলেন, ইস্টার্ন রেলওয়ে, বয়স হয়ে যাচ্ছিলো, ওদিকে বিয়ে করেনা লোকটা, ৩৮ বছর থেকে আবার নতুন উপদ্রব, সে সারাদিন পুজো-আচ্চা নিয়ে থাকা শুরু করলো, সকাল বেলা বাজার থেকে ঘরে ঢোকে, হাতে প্রায় এক কিলো ফুল, সে কোনো ঠাকুর বাদ নেই, দাদু-দিদা ভাবলো মেজছেলে বোধহয় সন্ন্যাস নিয়েই নেবে। এমন সময় মেজমামা যে স্কুলে পড়াতেন সেই স্কুলে একজন নতুন শিক্ষিকা এলেন, নাম শ্রাবনী মুখার্জী, উনিও বিয়ে করেননি, একাই জীবন কাটাচ্ছেন, ধীরে ধীরে..

-একটু থামাচ্ছি রাতুল!

-হ্যাঁ, কিন্তু কেন?

-অনেকেই অনেক কারণে বিয়ে করেননা, সেটা শারীরিক বা মানসিক দুটো কারণই হতে পারে, তারমানে এই না..

-ঠিক, শোন তো পুরোটা, যাই হোক..

মামার সাথে ওঁর আলাপ বাড়ে, ক্লাসের শেষে দুজনে হেঁটে বাড়ি ফেরে, দুবার বোধহয় যাত্রা দেখতেও একসাথে গেছিলো, মামা জানিস ধোসা খেতে খুব ভালোবাসত, বাঙালিরা চট করে ধোসা খুব একটা পছন্দ করেনা, ওদিকে উনিও মামার জন্যে প্রতি শনিবার আমাদের দেশের বাড়ির পুলিশ স্টেশনের কাছে একটা সাউথ-ইন্ডিয়ান দোকানে যাওয়া শুরু করলো মামার সাথে, কিন্তু খেতেন না, সাম্বারের গন্ধে বমি এসে যেত ওঁর।

বাড়িতে সব জানাজানির পরে, কেউ আর দেরি করলো না, একেই ছেলে বিয়ে করতে চায়না, ওদিকে প্রেম করছে বুড়ো বয়সে, দাদু-দিদা, বড় মামা, আমার মা, সবাই মিলে চার-হাত এক করতে কথা বলতে গেলো। মামাও সুপাত্র, তাই ওরাও রাজি হলেন।

-বাঃ, বিয়ে হয়ে গেলো?

-বিয়ের দিন আমরা পৌঁছে গেছি, বরের গাড়ি ঢুকছে না, বিয়েবাড়িতে টেনশন, সবাই চিন্তায়, হঠাৎ..

-এক্সিডেন্ট?

-হু,খবর এলো, মামার গাড়িটা একটা লড়ির..

-ইসসস, কী খারাপ লাগে এইগুলো শুনলে!

-এই গল্পটা আমার না, কিন্তু আমার একটা ছোট্ট জায়গা আছে গল্পে, সেটা শোন আর সেটাই তোর প্রশ্নের উত্তর হবে আশা করি..

-বল!

-মামা তখনও বেঁচে, মা আমাকে কোলে নিয়ে মামার বেডের কাছে গিয়ে নীচে নামিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, ডাক্তার বারণ করছে, ধরতে মানা করছে পেশেন্ট কে, তখন আট বছর বয়স তাই যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার ঠিক সামনে বেড়ে মামার মাথাটা। হঠাৎ ছুটে শ্রাবনী মুখার্জী ঢুকলেন, কাঁদছেন না,চুপ করে আছেন, শুধু এসে শক্ত করে মামার হাতটা ধরলেন, মামা কী একটা বলতে কাছে ডাকলেন ওনাকে, উনিও মাথাটা নিচু করে শুনতে চাইলেন, আমি মামার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি, কাঁপাকাঁপা গলায় মামা বললো,

-কী বললো?

-শ্রাবনী আসলাম আমি, তোমাকে কোনোদিন ছুঁয়েও দেখিনি, আমার জন্যে নিজের…ব্যস এইটুকু বলার সাথে সাথে উনি নিজের হাতটা মামার ঠোঁটে চেপে ধরলেন..মামা সেদিন রাতেই

-এখন শ্রাবনী মানে তোর সেই মামী?

– মামী আর কোথায়? বিয়ে তো হয়নি, তাও মামার বাড়িতেই থাকে, রোজ পুজো করেন আর শনিবার করে ধোসা খেতে যায়, জানিস?যে মহিলাটা সাম্বারের গন্ধে…

– এটাই তো প্রেম রে, ছোঁয়া নেই, চাওয়া পাওয়া নেই, শুধু ভালোবাসা আছে..

-তাহলে, একবার জড়িয়ে ধর আমাকে, প্লিজ!

-আয়, কাছে আয়! সোনাটা আমার! আচ্ছা তোর এই মামার নাম কী?

-কোন মামা?

-আরে এই মেজ-মামা!

-আমার মেজমামা কোথায়? মা আর মাসি, দাদুর খালি দুই মেয়ে।

-মানে?

-মানে, আজকে এসব না বললে জড়িয়ে ধরতিস নাকি? ২৫০ টাকা খরচ করে এলাম, চুমু না খেয়ে চলে যাবো? এটা অন্যায় না?

-তুই খুব হারামি ছেলে!

-আমার সেজমাসির একটা গল্প শুনবি?

-বজ্জাত কোথাকার।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত