সেরা উপহার

সেরা উপহার

রিং রিং করে এলার্মটা বাজতেই ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো সুনন্দা।একটু ফ্রেশ হয়েই দৌড়ালো রান্নাঘরে।শুরু করলো রান্নার তোড়জোড়।ছটা বাজলেই তো ওরা উঠে পড়বে।ওরা মানে সুনন্দার ছেলে জয়,বৌমা রিমা আর ওদের ছোট্ট ছেলে ঋজু।জয়, রিমার অফিস আর রিজুর স্কুল।যদিও রিমা রোজ সকালেই আসে শাশুড়ি মাকে রান্নায় সাহায্য করতে কিন্তু সুনন্দা বিশেষ কিছু করতে দেয় না।বলে তুমি বরং ঋজুকে রেডি করে দাও আমি এদিকটা সামলে নেব।আসলে রান্নাঘরটা সুনন্দার বড় আপন।রান্না করতেও তার খুব ভালো লাগে।আর নািটাও হয়েছে তেমন আম্মার বানানো টিফিন ছাড়া অন্য কিছু মুখেই তুলবেনা।রিমা আর জয় ও যে মার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আসলে কোন ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে এইবাড়িতে এসেছিল সুনন্দা তারপর কখন যে এই সংসারটা তার আত্মার সাথে জড়িয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।স্বামীর কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে সে।আর ভোজনরসিক স্বামীর রসনাতৃপ্তি করতে শিখেছে নানান ধরনের রান্না।অবশ্য সেগুলো ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করতে ভোলেনি কখনো।আজ সবই স্মৃতি।সে মানুষটা তো কবেই ছেড়ে চলে গেছে সুনন্দা কে রয়ে গেছে শুধু ডায়েরিখানা। যাতে প্রতি রবিবার ভাগ বসায় রিমা।ওই ডায়রি দেখে অনেক রান্না শিখেছে সে।আসলে জয় রিমা আর ঋজু বেরিয়ে গেলে তার অখন্ড অবসর।বাকি সব ঝামেলা সামলায় কাজের মেয়ে মালতি।তাই ইচ্ছে হলেই বানিয়ে ফেলে নিত্যনতুন রান্নার পদ।

সেদিন যথারিতি যে যার মত বেরিয়ে গেল।কিন্তু আজ যে একটা বিশেষ দিন সেকথা কি কারোর মনে নেই।কই কোনোবার তো এরকম হয়না।মন খারাপ হল সুনন্দার।নিজের মনকে সান্তনা দেওয়ার জন্য রান্নাঘরের দিকে গেল সুনন্দা।কিন্তু কি রান্না করবে ভেবে পেলোনা।তাই রান্নার ডাইরিটা আনতে গেল।কিন্তু চারিদিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও তো ডাইরিটা পাওয়া গেলোনা।আরো মন খারাপ হয়ে গেল সুনন্দার।ওই ডাইরিটা যে তার প্রাণ, কোথায় হারালো সে ডাইরিটা? কেমন যেন নিঃস্ব লাগছে নিজেকে।কি আর করা যাবে।জয়-রিমা সেদিন একটু আগেই ফিরে এলো।ঋজু স্কুল থেকে ফিরে বায়না ধরল পার্কে যাওয়ার।অগত্যা সুনন্দাই নিয়ে গেল ভাবলো পার্কে গেলে যদি মনটা একটু ভালো লাগে।

ঘন্টাখানেক পর ফিরে এলো সুনন্দা ঋজুকে নিয়ে।আরে একি সন্ধে হয়ে গেছে এখনো কেউ আলো জালায়নি।একটু বিরক্ত হয়েই সুনন্দা ডাকল,”মালতি আলো” হঠাৎই সব আলো জ্বলে উঠলো আর সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো,”হ্যাপি বার্থডে তো ইউ”।

সারা ঘর ফুল আর বেলুনে সাজানো।সামনের টেবিলে রাখা একটা চকলেট কেক।ঋজু বলল,”আম্মা কেমন surprise দিলাম বলো”।জয় মার হাত ধরে টেবিলের সামনে নিয়ে গেল কেক কাটার জন্য।এক টুকরো কেক মার মুখে তুলে দিয়ে বলল,”খেয়ে বলো কেমন হয়েছে আমি আর তোমার বৌমা মিলে তোমার রসিপি দেখে বানিয়েছি কাল রাতে যখন তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে”।

রিমা সুনন্দার হাতে তুলে দিল একটা লাল কাগজের মোড়কে সাজান একটা বই।এবার সুনন্দার আরো অবাক হওয়ার পালা।বই এর ওপরে লেখা “সুনন্দার রান্নাঘর”।আর তার লেখা রেসিপিগুলো চাপার অক্ষরে।চোখে জল চলে এলো সুনন্দার।সে তো জীবনেও ভাবতে পারেনি তার জন্মদিনে এমন একটা উপহার সে পাবে।এ যে তার জীবনের সেরা উপহার।জয় বলল,”এসব ই রিমার কীর্তি”।রিমা ডায়রি তা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,”এই নাও তোমার ডায়রি এটা এতদিন প্রকাশকের কাছে ছিল। আর হ্যাঁ আজ কিন্তু নারীদিবস ও।তাই মা এই বইটা একজন নারীকে আমার তরফ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ।”মাকে প্রনাম করতেই সুনন্দা বুকে টেনে নিল জয়, রিমা আর ঋজুকে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত