আমি নু্হার বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। নুহার আজ বিয়ে। এ যে সে বিয়ে নয়। একেবারে আলিশানি বিয়ে। নুহা আমার গার্লফ্রেন্ড। আচ্ছা যার আজ বিয়ে তাকে কি গার্লফ্রেন্ড বলা যায়? কি জানি বলা যায় কিনা। কিন্তু আমি বলছি। আমি নিজে নুহা কে বলেছি, “নুহা তুমি বিয়ে করে ফেলো। ” নুহা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।” অন্য লোক কে বিয়ে করার জন্য বুঝি তোমার সাথে এতদিন প্রেম করেছি?” আমি উত্তর দিতে পারিনি। পরে নুহা কে আমি কঠিন গলায় বললাম,” তোমাকে বিয়ে করে নিজের করে রাখার সামর্থ্য আমার নেই। আমি বেকার মানুষ প্রেম করা আমার হয়ত বা সাজে কিন্তু তোমার মতন আদরের মেয়েকে বিয়ে করে তোমার সারাটা জীবন নষ্ট করাটা আমার সাজে নাগো। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।”
এই কথা ই ছিলো নুহার সাথে শেষ কথা। এরপর আমি গা ঢাকা দেই। গ্রামে মামার বাড়ি যাই মাস তিনেক এর জন্য নুহার কাছ থেকে পালিয়ে। মোবাইল নাম্বার বদলিয়ে ফেলি। কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ রাখি না যাদের মাধ্যমে নুহা আমার খোঁজ পাবে। আমি সফল হয়েছি। নুহা আমাকে তন্য তন্য করে খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। আমি খুব খুশি। খুব বড় ঘরে নুহার বিয়ে হচ্ছে। ও অনেক সুখে থাকবে। আমার সাথে টোনাটুনির সংসার করার স্বপ্ন ওকে সত্যি করতে দিই নি আমি। মেয়েটা বড্ড বেশি স্বপ্নালু। বাস্তবতা বোঝে না। আমার সাথে বিয়ে করলে যে তার জীবন কত দুঃসহ হয়ে যেত তাকে আমি তা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। প্রতিবার ই আমার কাঁধে মাথা রেখে আস্তে আস্তে বলতো, ” সৌম্য শুধু তোমাকে চাই। এই অট্টালিকা, টাকা, সম্পদ, গহনা কিছুই না। শুধু তোমার শ্বাসে শ্বাস নিতে, তোমার গায়ের গন্ধে আমি বাঁচতে চাই। আর কিচ্ছু টি না।”
আমাকে তাই পালাতে হলো। এই মেয়ে বাস্তবতা বুঝে না, প্রেম বুঝে। কিন্তু আমাকে আবার ফিরতে হলো। লোভে পড়ে। নুহা কে কণে সাজে একবার দেখার লোভ আমাকে টেনে নিয়ে আসলো নুহার বাড়ির সামনে। ওর বাড়ির সামনে একশ জোনাক বাতির আলো। আলোয় উদ্ভাসিত চারপাশ। আমি উঁকিঝুঁকি মারছি। কখন আসে আমার নুহা। আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমার বুকের পাঁজর। হোক না সে অন্যের বউ। কিন্তু সে যে শুধু আমার মনের রাজ্যের রানী।
ঘন্টা খানেক হলো আমি বসে বসে মশার কামড় খাচ্ছি। কিন্তু নুহার কোনো খবর নেই। কিন্তু বরপক্ষ চলে এসেছে। নুহার বর যেনো স্বয়ং রাজপুত্র। নুহার কপালে কত সুন্দর বর আর নুহা কিনা প্রেম করেছে আমার মতন কপালপোড়া কে। পাগলী মেয়ে একটা। বসতে বসতে একটু ঝিমুনির মতন আসছে আমার। তখন কে যেনো চিৎকার দিয়ে উঠলো, ” ওরে নুহা রে বলে।” সাথে সাথে আরো অনেক মানুষের চিৎকার। আমি কিছু বুঝে উঠার আগে ই দেখি কত গুলো মানুষ নুহা কে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে আর্ত চিৎকার।
” আমার মেয়ের কি হলো রে? কিসের দুঃখে ও বিষ খেলো রে?” আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। আমার মাথা ঘুরাতে লাগলো। পায়ের তলার মাটি সরে গেলো যেনো। কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটলাম নুহার পিছু। হাসপাতালে নুহা শুয়ে আছে। আমি অপরাধী র মতন ওর সামনে দাঁড়িয়ে। নুহা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। কথা বলছে না। আমি সাহস নিয়ে ওর হাত টা চেপে ধরতেই বাঘিনী র মতন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি ভয় পেয়ে পিছু হটতে যেতে চেয়ে ও আর পারলাম না। তার আগে ই নুহা ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
একটু শান্ত হতে ই আমি বললাম,
” আমি এমন করেছি বলে তোমার বিষ খেতে হবে? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত? আমি তো মরে যেতাম।”
নুহা আমার কান টা তার মুখের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” আমি বিষ খাইনি বেশি অল্প একটু খালি মুখে পুরেছি যাতে গন্ধ পেয়ে সবাই বুঝে আমি বিষ খেয়েছি।” আমার চোখ কপালে।
” কিন্তু কেনো এমন করলে?”
” আমি জানতাম আমার বিয়ের দিন তুমি আশেপাশে ই থাকবা আমাকে কণে সাজে দেখার জন্য। আমাকে কণে সাজে দেখার জন্য তো পাগল ছিলা তুমি। তাই একটু বিষ মুখে দিয়ে বিয়ে ও ভাঙলাম আর তোমাকে ও পেলাম সারাজীবন এর জন্য। এবার আর কোনো কথা হবে না। টোনাটুনির সংসার হবে শুধু।