বিয়ের দিন রাতেই বউকে বলেছিলাম, ” তোমাকে আমি রাণীর মতো রাখবো।“ নীলু জিগ্যেস করলো, ” এই রাজ্যে কার কথা চলবে? রাজার না রাণীর? আমি উত্তর দিলাম-” অবশ্যই রাণীর কথায় চলবে।“ নীলু সাথে, সাথেই তার বাবাকে ফোন দিয়ে বলে, ” বাবা, তুমি না বলেছিলে বিয়ের পর মেয়েদের আসল ঠিকানা রান্নাঘর হয়? তুমি ভুল ছিলে বাবা আমার বেলায় এই কথাটা ভিন্ন। আপনার জামাই কথা দিয়েছেযে উনি আমাকে রাণীর মতো রাখবে।“
পরেরদিন সকালে উঠতেই দেখি নীলু রাণীদের মতো একটা লম্বা করে শাড়ি পড়েছে, আর গলায় অনেকরকমের লম্বা,লম্বা স্বর্ণের হার দিয়েছে, নাকে ইয়া বড় একটা নোলকও দিয়েছে।
আমাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখেই নীলু বলে, ” আপনার জন্যেই অপেক্ষা করতেছি জাহাপনা! আসুন, হাতমুখ দিয়ে নাস্তার টেবিলে আসুন।“ নীলুর কথামতো হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে যেতেই আম্মু এসে আমাকে জিগ্যেস করে, কি হয়েছেরে বউমার? সকাল থেকে কেমন টিভি সিরিয়ালের রাণীদের মতো করছে।
নীলু আমাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে আমাদের বাসার কাজের মেয়ে তারাকে বলে, ” মহারাজাকে নাস্তা পরিবেশন করো।” তারা নাস্তা আনার সময় ভুলে হাত থেকে নাস্তার প্লেট ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলে। নীলু প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলে, ” কাজের মেয়ে হয়ে তোমার এতো বড় স্পর্দা? তুমি মহারাজার খাবার ফেলে দিয়েছো? এর জন্য তোমাকে প্রচন্ড শাস্তি ভোগ করতে হবে।“
অনেক কষ্ট করে নীলুকে বোঝায় যে ভুলে হয়ে গেছে, এই প্রথম ওকে মাফ করে দাও। নীলু তারার দিকে তাকিয়ে বলে, ” মহারাজার কথায় আজ মাফ করে দিলাম। পরেরবার কিন্তু আর মাফ হবেনা, এই কথা মনে থাকে যেনো।“
নীলু সারাঘর ঘুরে,ঘুরে দেখে সবাই কি করছে! কেউ ভুল কিছু করে থাকলে রাণীর মতো চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। রাণীর মতো একটা চেয়ারে বসে,বসে তারাকে অর্ডার করে,এইটা করো, ওইটা করো।
মহারাণী নীলু একদিন রাতে ঘরে সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখার সময় মাকে রাত জেগে টিভি দেখতে দেখলো। মায়ের কাছে গিয়ে নীলু বলে, ” আম্মা, এইটা খারাপ অভ্যাস! রাত জেগে টিভি দেখবেন না। আগামীকাল থেকে রাত ৮টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাবেন। এই বয়সে রাত ৮টায় ঘুমানোই শ্রেয়। “ এর পরেরদিন রাত থেকেই নীলু টিভির রিমিট লুকিয়ে ফেলে, আর মাকে রাত ৮টার মধ্যে খাইয়ে জোর করে ঘুম যেতে পাঠিয়ে দেয়।
অন্য একদিন ঘরে সব ঠিক আছে কিনা দেখতে গিয়ে নীলু দেখতে পেলোযে আমার ছোট বোন রাত্রী রাত জেগে মোবাইল টিপতেছে। রাত্রীর হাত থেকে নীলু মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে বলে, ” অনেকদিন ধরে দেখছি তুমি মোবাইল বেশিই টিপাটিপি করো। কিন্তু আজ তুমি সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো এতোরাতে মোবাইল টিপে। এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে, তুমি আজ থেকে মোবাইল ধরতে পারবেনা, তোমার মোবাইলটা আমার কাছেই থাকবে। আর এইটাই তোমার শাস্তি। “
রাত্রী কলেজ থেকে লেইট করে আসলে মহারাণী নীলুর কাছে হাজার রকমের জবাবদিহি করতে হয়, লেইট কেন হলো? কলেজে এমন কি হয়েছেযে লেইট হলো? এইরকম নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো রাত্রীকে।
রাত্রী একদিন কলেজ থেকে একটু বেশিই দেরি করে আসায় নীলু প্রচন্ড রেগে যায়। নীলু রাত্রিকে বললো, ” এইটাই তোমার শেষ ক্ষমা! আর কোনদিন যদি এইরকম দেরি হয় তাহলে তোমার কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিবো। “
রাত্রী আমার দিকে সহানুভূতির চেহারা নিয়ে বলে, ” রাস্তায় জ্যাম ছিলো, এইটাও কি আমার দোষ? “
নীলুর বাবা নীলুকে দেখতে আসবে। নীলু আমার কাছে এসে বলে, ” বিয়ের পর এই প্রথমবার রাণীর বাবা রাজপ্রাসাদে আসবে। উনার ওয়েলকামটা অনেক বড় করে আয়োজন করা চাই। “
রাণীর বাবা আসবে তাই ঘর ভালোভাবে সাজানো হলো! রাণীর বাবা গাড়ি থেকে নামতেই উনাকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে এবং ফুল মেরে ঘরে আনা হলো। ঘরে আসতেই রাণীর বসে থাকে চেয়ারে রাণীর বাবা গিয়ে বসলো। এ যেন সত্যিকারের রাণী আর উনার বাবা! শুধুমাত্র আমিই পার্ফেক্ট রাজা হতে পারলাম না, রাজার বদলে আমাকে কাজের ছেলের মতই কাজ করতে হয়।
রাণীর বাবা এসেছে তাই অনেক রকমের খাবারের আয়োজন করা হলো। উনাকে খেতে বসানো হলো, উনার সাথে আমিও খেতে বসেছি। এইটাই নাকি নিয়ম! জামাই ও শ্বশুর নাকি একসাথেই খেতে হয়। রাণীর বাবা খাওয়ার সময় দেখলাম উনার মুখে একটি মশা বসেছে! ওইযে আমার পুরানো সমস্যা, কারো গালে মশা বসলে আমি শুধু মশাটাকেই দেখতে পাই, মানুষের গালকে না।
আমি হাত উঠিয়ে টাশ করে মশাটিকে মারি। মশাকে আমি মারি ঠিক কিন্তু মশা কখনোই মরেনা, এইবারও অল্পের জন্য টার্গেট মিস! আমি বললাম, ” উফ অল্পের জন্যে টার্গেট মিস। “ নীলু তখনই চিৎকার করে বলে, ” মহারাজ! এ আপনি কি করলেন? আমার বাবার গায়ে হাত তুললেন? এর শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। এই কেউ আমার চাবুকটা নিয়ে আয়। “
নীলুর এই রাণীর মতো মেজাজ দেখে আমি খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে দৌড়ে উপরে গিয়ে আলমারির ভিতর ঢুকে পডি। নীলু হাতে চাবুক নিয়ে, নিয়ে আমাকে আমাকে খুঁজতেছে আর বলছে, ” এ আপনি অনেক বড় অন্যায় করেছেন মহারাজ! এই রাজ্যে রাণীর কথায় শেষ কথা। আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে, চাবুকের ১০০টা মারই আপনার শাস্তি। কোথায় আছেন এখনি বের হোন।