প্রতিদিনের মত আজও ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি । গত ৬ মাস ধরে এই একই সময়ে দাড়িয়ে থাকে সে ব্যালকনিতে, উদ্দেশ্য নাম নাজানা সেই পথিককে একটুখানি দেখা । নাম নাজানা পথিকের একটা নামও দিয়েছে মেয়েটি – “স্বপ্ন” । পথিকটি স্বপ্ন নয়তো আর কি! রোজ সকাল ৭ঃ৩০ থেকে ৭ঃ৪৫ এর মধ্য বাসার পাশের মেইন রাস্তা ধরে যায় সে । সে যে কখন ফেরে বা কোন রাস্তা দিয়ে ফেরে সেটা আল্লাহই জানেন । একদি্ন তো সকাল ৭ঃ৩০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ব্যালকনিতে বসে ছিল মেয়েটি খাওয়া-গোসল ভুলে, তবুও পথিকের পদচিনহ পড়েনি এই রাস্তায় ।
সেই প্রতিদিনের মত পথিকটি যথারীতি একইসময়ে মেয়েটির বাসার সামনে দিয়ে চলেছে । সাদা সার্ট এ তাকে দারুণ লাগলেও আজ খুবই রাগ লাগছে মেয়েটির, কারণ জ্যামে আটকে থাকা একটি রিকশাই বসা দু’টি মেয়ে তাকিয়েই আছে তার স্বপ্নের দিকে। রাগ বেশি ওই মেয়ে দু’টির উপর নয় বরং পথিকের উপরই লাগছে । আজ কি হল তার? অন্যদিন্ তো রকেট গতিতে চলে, আজ এতো ধীরে কেন? কি হয়েছে পায়ে? আবার মেয়ে দুইটাকে দেখা হচ্ছে! তার দিকেতো কখন তাকাইনা । চোখে সমস্যা, না উপরে তাকালে চোখ ঝলসে যাবে! ভালোবাসার গল্প
আজ এক সপ্তাহ মেয়েটি তার স্বপ্নকে দেখেনি । কি হল পথিকের? ৮দিন আগে দেখেছিল রিকশা করে যেতে যদিও সে হেঁটেই যায় সবসময় । সেদিন বড় বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তাকে । তারপর এক সপ্তাহ চলে গেল তবুও দেখা নেই তার । রোজই ভাবে মেয়েটি যাবেনা আর ব্যালকনিতে, শুধু শুধু সময় নষ্ট করার কি অর্থ? তবুও যথা সময়ে সে ব্যালকনিতেই থাকে । এক অজানা আশঙ্কা ঘিরে রাখে তাকে সবসময় । ঠিক আছেতো পথিক? শেষের দিন এতো বিমর্ষ কেন দেখাচ্ছিল? কেনই বা দেখা নেই তার? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই খুজে ফেরে সে সারাক্ষণ ।
১০দিন পার হয়ে গেল তবু স্বপ্ন অদেখাই রয়ে গেল । কেন মেয়েটি নাম জানেনা তার? নাম জানলে তো ফেবুতে সার্চ দিতে পারত । কেনই বা দূর থেকে দেখে গেছে তাকে । কেন সামনে যায়নি । নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগে তার । আর ধৈর্য রাখতে পারছেনা সে । কিন্তু কিভাবে খুজবে সে তার পথিককে, নামটাও যে জানে না ।
আরো ৫দিন কেটে গেল । পথিককে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল মেয়েটি । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল । উঃ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কেন ? জানালা খোলা তবু রুমটাকে এত বদ্ধ কেন লাগছে । মেয়েটি দ্রুত রুম থেকে ব্যালকনিতে আসলো । এ কি! রাস্তায় এত রাতেও জ্যাম কেন ? এখানে এত মানুষ ভিড় করে আছে কেন ?
কিছুতেই আর ঘুম আসছেনা তার । পথিকের ভাবনা তাকে অস্থির করে তুলছে ।
অবশেষে রাতের আধার কেটে সকালের সূর্যের উদয় । বাসার কেউ জাগেনি এখনও । ভোরের সূর্যকে বড় ভয় লাগছে তার । দিনটাকে অচেনা মনে হচ্ছে ।
দারোয়ান এতক্ষণে হয়তো পেপার রেখে গেছে দরজায় । সংবাদপত্রে আগ্রহ না থাকলেও আজ পড়তে ইচ্ছা করছে খুব । বিছানা থেকে উঠে এসে পত্রিকা হাতে তুলে নিল………
মাথা ঘুরছে মেয়েটির, চোখ যেন অন্ধকার বালুচরের দিকে তাকিয়ে,
এখানে তার স্বপ্নের ছবি কেন! তাও রক্তমাখা সার্টে রাস্তাতে শুয়ে । দ্রুত হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো । কাপা কাপা চোখ নিয়ে সে শিরোনামের দিকে তাকালো –
“এক বেকার যুবকের আত্মহত্যা”