-শালা।আর ভালো লাগে না।একে রামে রক্ষা নেই, তার ওপর সুগ্ৰীব দোসর। লাইফটা হেল হয়ে গেল মাইরি। বিয়ের পর বউয়ের সাথে শাশুড়ি ফ্রি জানলে বিয়ে করতামই না। আরো একটু ভালো করে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখা উচিত ছিল, তখন তো ভীষণ প্রেম জেগেছিল না।
কথাগুলো বলেই সামনে রাখা তরল পানীয়টি এক ঢোকে গিলে ফেলল ঋষি। অনেকদিন পর সুমন আর ঋষি একসাথে, সেই ব্যাচেলার লাইফ এর মত রাত্রি যাপন করছে।সুমনের বউ বাপেরবাড়িতে তাই সেখানেই গুছিয়ে বসেছে দুজন।
এবার সুমন বলল – আরে সবারই এক অবস্থা তুই চাপ নিচ্ছিস কেন এই শাশুড়ি গুলো সব এক-একটা জায়েন্ট সাইজ্ প্রবলেম।আমার বউটা তো দু’দিন অন্তর অন্তর বাপের বাড়ি চলে যায়। কি না মায়ের জন্য মন কেমন করছে। যখনি অফিস থেকে ফোন কর না কেন, ফোন এনগেজড্ কি না ম্যাডাম বাপের বাড়িতে গল্প করে চলেছেন।
-আসলে নীলা যে একমাত্র মেয়ে সে আমি জানতাম।কিন্ত নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যেতাম বিশ্বাস কর।বাবা চলে যাবার পর, মাকে যখন নিজের কাছে নিয়ে আসে, আমি কিন্তু কোন আপত্তি করিনি। কিন্তু এখন আমাদের প্রতিটি বিষয়ে উনি যেভাবে ঢুকে পড়ছেন এবার তো আর মুখ বন্ধ করা যায় না।নিজের বাড়িতে নিজে কিরকম পর হয়ে গেছি। এভাবে বসবে না, ওটা করবে না, চেঁচিয়ে কথা বলবেনা, বাথরুমে ফোন নিয়ে যাবেনা, তরকারিতে নুন বেশি হলে বলা যাবে না। এভাবে একটা মানুষ থাকতে পারে?
-তুই নীলাকে আলাদা করে কোথাও দুদিন ঘুরতে নিয়ে গিয়ে সব ব্যাপারটা পরিস্কার করে বল।
-সে চেষ্টা করিনি নাকি??নীলা মাকে রেখে যেতে চায়না। উনি একা থাকতে পারবেন না।বলবে “তোদের ছাড়া আমার আর কে আছে আমিও যাব তোদের সাথে।”কি বলবি বল।
– যা কচু।।।
– বাড়িটা আর আমার বাড়ি নেই।একটা ম্যাচ দেখতে পারবোনা।সন্ধ্যে থেকেই বাড়িতে রিমোট পুরো হাইজ্যাক হয়ে যায়।মাঝে মাঝে তো নীলাও এমন ব্যবহার করে, যে মনে হয় আমি ওদের বাড়ির পেয়িং গেস্ট হিসেবে রয়েছি। দেশের বাড়ি পালিয়ে যাব শালা আমার বাবা মায়ের কাছে।
-হ্যাঁ সেটা তো ভালো আইডিয়া। তোর বাবা মাকে এখানে তোদের ফ্লাটে নিয়ে আয়। ফ্ল্যাটটা তো বেশ বড়।অসুবিধে কি?
-সেদিকেও সেগুড়ে বালি। আমার বাবা-মা নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে নড়বে না।।আমিও ভেবেছিলাম যে আমার মা বাবাকে এনে রাখবো, তারপর ওরা দুজনে যেরকম টিম হয়েছে, আমরা তিনজন মিলে আর একটা টিম হবো তারপরে হবে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।কিন্তু আমার কপালে সে সুখ নেই।
-ছাড়্ উনি ওনার মতো থাক। তুই তোর মতো।
-সে আর ইহজন্মে হলনা।ওনাকে ওনার মত ছাড়লেও উনি আর আমাকে ছাড়ছেন কই??
নিকুচি করছে সংসার।এখন আর আমি চুপ করে থাকিনা। আমিও দু একটা কথা শুনিয়ে দি।আর তাই নিয়ে নীলার সাথে আমার ফাটাফাটি লেগে যায়। এই নিয়ে রোজ সংসারে অশান্তি।
-ভাই একটা কাজ করনা তোর শাশুড়িকে পাশাপাশি কোন বাড়িতে সিফ্ট করে দে। তোরা রোজ আসা যাওয়া করতে পারবি এমন কোথাও। উনিও ভালো থাকবেন তুইও ভালো থাকবি।
-এই প্রস্তাবটা না ভালই বলেছিস।ভাবছি নীলার কাছে একবার কথাটা পারবো।
-তাই কর।
-সারাক্ষণ কানের কাছে অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি আর পারছি না। নীলা যদি আট বলে, উনি আশি বলবেন। সারা জীবন শাশুড়ি বৌমা লড়াই শুনেছি। একমাত্র জামাই এর জীবনেও যে শাশুড়ি এরকম বিভীষিকার সৃষ্টি করতে পারে আমার জানা ছিল না।
-এই শোনো তোমার সাথে আমার নাম কিছু কথা আছে।
অফিস থেকে ফিরে বেডরুমে ঢুকে নীলাকে বলল ঋষি।।
-ও তাই।আমারও খুব ইম্পরট্যান্ট কথা আছে তোমার সাথে।দাঁড়াও আগে চা জলখাবার নিয়ে আসি।বলল নীলা।
-না না আগে বল তো কি হয়েছে কি বলবে??
-কি করে বলি লজ্জা করছে।
-এই ন্যাকামো না করে বলতো কি বলবে?
-উফ আবার রেগে যাচ্ছো এই তোমার এক দোষ।মা ঠিকই বলে, চন্ডালের রাগ তোমার।
-সে কি? উনি আমাকে চন্ডাল বলেন নাকি? খাঁটি ব্রাহ্মনের ছেলে আমি
-উফফ্ ছাড়োনা।
-আচ্ছা ছাড়ছি। তাড়াতাড়ি বল এবার কি বলবে।
– আমরা না…আমরা না…. দুই থেকে তিন জন হতে চলেছি।
-সেতো যবে থেকে তোমার মা এসেছে আমরা তিনজনই হয়ে গেছি।
-উফফ্। মাথামোটা। মা নয়। আমাদের মধ্যে আরও একজন আসছে, বুঝলে মশাই।
-সর্বনাশ। আবার তোমার মাসি আসছে নাকি?? সে তো আবার আরেক কাঠি উপরে।
-উফ্ এই নির্বোধ লোকটাকে যে কি করে বোঝাই?? তুমি বাবা হতে চলেছ।।।এবার বুঝেছো।।??
-আ্যাঁ কি?? কি বললে??
আনন্দে নীলাকে কোলে তুলে নিল ঋষি।।ঠিক সেই সময়ই শাশুড়ির আগমন- ঘরে ঢুকে পড়লেন নীলার মা।। “এই কি করছ কি করছ ।।নীলাকে নীচে নামাও শিগগির। এই সময় কত সাবধানে থাকতে হয়।”
-উফফ্ এখানেও আপনি।যাক আজ আর কিছু বললাম না।ঋষি বলল।
নয় মাস পরে ঋষির ফ্ল্যাট গমগম করছে।ঋষির বাবা-মা গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন। নীলা আর নীলার মা তো আছেই। সবাই ভীষণ ব্যস্ত
বাড়িতে, ছোট্ট তুয়াকে নিয়ে। আর ওই একরত্তি মেয়ে সবাইকে রীতিমত চড়কি নাচাচ্ছে।ঋষি অফিস থেকে ফিরেই চেচাঁচ্ছে
-কি করো তোমরা সারাদিন? বাড়িতে এত গুলো লোক।কি করে মেয়েকে মশা কামড়ায়??নিশ্চয় তোমরা সব ঘুমেচ্ছিলে?
-আচ্ছা এক কাজ কর।কাল থেকে অফিস না গিয়ে মেয়েকে বরং পাহাড়া দাও। নীলা বলল।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাই করব দরকার হলে তাই করতে হবে।
-বেশি বাড়াবাড়ি করো না তো। উনি একাই বাবা হয়েছেন।আর কারো বাড়িতে বাচ্চা হয় না?? তুমি যা করছো।। মেয়েকে মশা কামড়াবে না কোনদিন?? এভাবে আগলে রাখতে পারবেন সারা জীবন?? মেয়েকে এত ভালবাসতে পারবে সারা জীবন??
-কেন পারবোনা।আমার মেয়ে, আমি ভালোবাসবোনা তো কে বাসবে ??
-কিছুদিন পরে তো মেয়ে বড় হয়ে যাবে তখন তো অন্য লোকের ঘরে পাঠিয়ে দিতে হবে বিয়ে দিয়ে। তখন কি করবে?
-শোনো আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো না আমি। এখানেই থাকবে।
-ওরকম সব বাবারাই বলে। আমার বাবাও বলতো।তুমি বরং মশা মারার লোক হিসেবে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যৌতুক হয়ে চলে যেও।
-হ্যাঁ হ্যা্ঁ যাবই তো।।আমার অধিকার।আমার মেয়ে যেখানে থাকবে আমিও সেখানেই যাবো।
-তাহলে মানছো তো। বিয়ের পরেও মা-বাবার অধিকার অস্বীকার করা যায় না।
-হ্যাঁ। আলবাত।
-এটা যেমন তোমার মেয়ে, তেমন আমিও তো আমার মায়ের মেয়ে।
ঘরটা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চায়ি করছে।
-কি আমি ভুল কিছু বললাম। আমি জানি আমার মা এখানে থাকে বলে তোমার অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।একটু মানিয়ে নিতে হয়, পরিবারের সবাই তো সমান নয়।নীলা বলল।
-সে আমি জানি।। আচ্ছা আমি রেগে গিয়ে দুটো কথা বললে উনিই বা এতো খারাপ মনে করেন কেন??উনি আমার সাথে এরকম পর পর ব্যবহার করলে আমি কি করব? আমাকে জামাই না ভেবে, নিজের ছেলে মনে করলেই তো লেটা চুকে যায়।
ঋষির বাবা এবার বললেন – “তাহলে বেয়ান মনে থাকে যেন।এবার থেকে এই গর্দভটার মঙ্গলকামনায় জামাইষষ্ঠী তুলে দিয়ে নীলষষ্ঠী করবেন। আর কিছু বেয়াদবি করলেই শাষন করবেন। ওকে শাষন করার অধিকার আমাদের মতো আপনারও রয়েছে।”