বছর আটেক পর

বছর আটেক পর

কেটে গেছে বছর আটেক। তবুও বেনামী প্রোফাইল থেকে সৌরভের প্রোফাইলটা নিয়ম করে চেক করার অভ্যাসটা এখনো যায়নি মোহনার।

অপলক দৃষ্টিতে মোহনা “মন পাখি” থেকে ঘেঁটে চলেছে সৌরভের প্রোফাইল। কত ছবি, তাতে আবার সাজিয়ে সুন্দর করে ক্যাপশন দেওয়া “ছবি তুলেছে-মনের মানুষ”।
চোখটা জলে ভরে যাচ্ছে। চেষ্টা চলছে নিজেকে আটকানোর। তবু পারছে না। গলার কাছে কি যেন একটা পাকিয়ে আসছে।

-“খাবি আয় মা..রাত হয়েছে। আর তুই তো অফিস থেকে ফিরেও কিছু খেলি না।” ডাক পড়লো মোহনার মায়ের।

মোহনা মা বাপির একমাত্র সন্তান। আদরের “মনি”। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো। স্কুলে এক নামে সবাই চেনে “মোহনা সরকার”কে। মাসকমিউনিকেশন নিয়ে পড়ে আজ বেসরকারি চ্যানেলের রিপোর্টার মোহনা। কিছুরই খামতি নেই। তবুও মোহনা নিজের কাছে নিজেকেই দোষী করে তোলে।

-“মনি আয় মা..বাপি অপেক্ষা করছে তোর জন্য “।
-“আসছি মা”।

চোখের কোনের জলটা মুছতে মুছতে চেয়ারটা টেনে বসলো মনি। মনি খেয়ালই করেনি তার প্লেটে রুটি ছাড়া তরকারি এখনো পড়েনি।
আজ গল্প করেনি মনি তার বাপির সাথে। সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে দিন শেষে এই টুকুই সময় তার বাপির সাথে গল্প করার। তার ক্লান্তি দুর করার একমাত্র ওষুধ।

-“মনি একটা রুটি নিবি?”
-“না মা। খিদে নেই আজ সেরম। তোমরা খাও। আমি উঠলাম।”

বলেই উঠে গিয়ে মনি সজোরে নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলো। মনির আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে সৌরভের কথা। বছর আটেক আগে আজকের দিনেই সৌরভ তাকে প্রপোস করেছিলো।
ট্রাম লাইনের ধারে, মেরুন গেঞ্জি আর ব্লু জিন্স, হাতে একগুচ্ছ চকোলেট আর জুঁই ফুল নিয়ে বলেছিলো “আজ থেকে আমায় নিজের করে নেবে মোহনা?”
মোহনা ঠিক চিরাচরিত “I love you” বলাতে বিশ্বাসী নয় সেটা জানতো সৌরভ। তাই কখনো সৌরভ “ভালোবাসি” ছাড়া অন্য কিছু বলেনি।
সেদিন মোহনা কোনো উত্তর দেয়নি। শুধু দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো সৌরভকে। সেদিনও মোহনার চোখের কোনে জল এসেছিলো। হয়ত সেটা আনন্দ অশ্রু। তবুও কেন সেদিন চোখটা জলে ভরে গেছিলো মোহনা নিজেও জানে না।

তখন মোহনা কলেজের প্রথম বর্ষ আর সৌরভ তৃতীয় বর্ষ। হাতে গুনে গুনে মোটে দু’বছরের বড় ছিলো সৌরভ।

প্রথম দিন ময়ূর পেখম রঙা চুড়িদারেই চোখ আটকে ছিলো সৌরভের। তারপর সাত মাস লেগেছিলো মোহনাকে নিজের অনুভুতিটা বোঝাতে। আসলে সৌরভ উত্তর কলকাতার চ্যাটার্জি বাড়ির ছেলে। বেশ বনেদিয়ানা আছে। তাই সৌরভ বরাবরই আর পাঁচটা ছেলের থেকে আলাদা স্বভাবের। বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা সব কিছু থাকলেও তবুও কোথাও একটা আলাদা ছিলো সৌরভ।

মোহনা যখন তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েছে,তখন সৌরভ কলেজ পাশ করে ব্যাঙ্গালোরে চাকরীতে জয়েন করে।
দিনটা ছিলো 15th সেপ্টেম্বর। সৌরভের ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার দিন। এয়ারপোর্টে মোহনা এলো ঠিক দুপুর তিনটে। সৌরভ দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যাগের ট্রলিটা নিয়ে। দূর থেকে দেখছে মোহনা আসছে লাল রঙের চুড়িদার, খোলা চুল, কপালে কালো টিপ।

-“তোমার চোখ মুখের এই হাল করেছো কেনো?” প্রশ্ন সৌরভের।

-“সৌর তুমি যেও না..” বলেই হাত দুটো চেপে ধরলো সৌরভের। চোখ থেকে জল পড়ছে মনির।

-“আগে চোখের জল মোছো..নাও জলটা খাও একটু..তারপর সব কথা শুনবো..”
নিজের ব্যাগ থেকে জলটা বার করে দিলো সৌরভ।

-“দেখো মোহনা, চাকরিটা না করলে আমি আমার শশুরকে কি করে বলবো আমি ওনার আদরের মনিকে নিজের করতে চাই?”

-“কলকাতায় তো এত চাকরি..তুমি কি পেতে না”?

-“ব্যাঙ্গালোরের স্যালারিটা বেশি..”

-“হোক না কম স্যালারি..আমিও চাকরি করবো তো পাশ করে..দুজনের রোজগার করলে ঠিকই তো চলে যাবে সৌর..প্লিস থেকে যাও..”

-“আমি তো আসবো.. চার মাস পরেই আসবো”…

-“ইম্পসিবল!”

অনর্গল বুঝিয়ে চলেছে সৌরভ মোহনাকে। তবুও মোহনার মন মানছে না। চাইছে না তার “সৌর” তার থেকে দূরে যাক। মোহনা ভাবতেই পারছে না তার সাথে সৌরর দেখা হবে আবার চার মাস পর। কলেজ থেকে ফেরার সময় রোজ আনতে যাবে না তার সৌর। মন খারাপ করলেই আর বলতে পারবে না “সৌর দেখা করতে হবে..মিসিং ইউ..”। তাকিয়ে আছি সৌরর মুখের দিকে। চোখ লাল হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে সামলাতে পারছে না মোহনা।

-“মোহনা তুমি ট্যাক্সি ধরে নাও..বোর্ডিং পাসের টাইম হয়েছে।”

-“এসো.. সাবধানে যেও..অপেক্ষায় থাকবো..”

ট্যাক্সি ধরে বাড়ি ফিরেছিলো মোহনা।ভালোই কাটছিলো দিন গুলো। সৌরভ কখনো বুঝতেই দেয়নি ওদের মধ্যে রোজ দেখা হয়না। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও নিয়ম করে মোহনার কলেজ যাওয়ার সময় ফোন করে গল্প করা, মোহনা খেয়েছে কিনা, চাকরির ইন্টারভিটা কেমন হলো, পরের ইন্টারভিউটা কবে আছে, সব কিছুই নিজের নখদর্পনে রাখতো সৌরভ।

কলেজ শেষ করেই নতুন চাকরিতে জয়েন করলো মোহনা। নামকরা চ্যানেলের রিপোর্টার।

-“সৌরভ আমার তো চাকরিটা হয়ে গেছে..এবার তুমি কলকাতা চলে এসো..” হঠাৎ করেই মোহনার বায়না।

-“যাবো তো..আগে জয়েন করো..টাকা জমাও..আমার দায়িত্ব নিতে পারবে কিনা দেখো..তারপর তো..”

-“উফফ! সৌর! তোমার খালি মজা সবকিছু নিয়ে!”

-“রাখছি ফোনটা আমি..”

কেটেছে বেশ কয়েকমাস। দুজনের মধ্যে এখন আর আগের মতো কথা হয়না। দিন শেষে ফোন টুকুই ভরসা। সৌরভ বুঝতে পারছিলো কোথাও যেন তার মোহনা তার থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে বার বার বুঝিয়েছে মোহনা আর আগের মতো কলেজে পড়ে না, চাকরি করে সে। তাই এইটুকু তো মানিয়ে নিতেই হবে!

মোহনার বিদেশে ট্রান্সফার লেটার দিয়েছে। ঠিক ট্রান্সফার নয়। বছর দুয়েক থাকতে হবে। মোহনা জানতো সৌর খুশি হবে না। তাকে যেতে দেবে না। তবুও সৌরকে তো বলতেই হবে। সন্ধ্যে থেকে অনেক বার কল করেও বলতে পারেনি কথাটা।
আবারও ফোনটা করেছে..নাহ! এবার বলতেই হবে..

-“ব্যস্ত সৌর তুমি?”
-“কি ব্যাপার বলতো? এত বার ফোন করছো আজকে.. কিছু হয়েছে?”
-“না কিছু না..আসলে..”
-“ওহ ! বুঝেছি..আবার মনখারাপ লাগছে তো! ঠিক আছে..চেষ্টা করছি..নেক্সট মানথে আসার..”
-“সৌর..একটা কথা বলার ছিলো..”
-“কি বলো..”
-“আমাকে আসলে দুবছরের জন্য থাইল্যান্ড যেতে হবে..”

-“হোয়াট?”
-“হ্যাঁ.. অফিস থেকে লেটার দিয়ে দিয়েছে।”
-“আর তুমি এতে রাজি হয়ে গেলে মোহনা?”
-“হ্যাঁ.. আসলে এটা হলে প্রমোশনও হবে..”

-“আমি ব্যাঙ্গালোর আসার সময় তোমাকে ছেড়ে আসতে আমার ইচ্ছা করছিলো না..আর তুমি কিনা..বিদেশে!”

-“কেন সৌর! তুমি তোমার দিকটা বজায় রাখতে পারো.. আর আমি রাখলেই দোষ!”

-“তুমি তো চাকরি করছো! যা স্যালারি পাচ্ছ ইটস এনাফ ফর ইউ। ইভেন আমি একাই পারি তোমার দায়িত্ব টুকু নিতে। তাহলে কিসের দরকার!”

-“না..আমি পড়াশোনা করেছি বড় হবে বলে। আর সুযোগ পেয়েছি আমি যাবো না!”

-“তুমি বুঝতে পারছো না! আমাদের সম্পর্কটা অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট!”

-“আমার চাকরিতে প্রমোশনটাও ইম্পর্টেন্ট সৌর!”

-“তাহলে তুমি যাও.. আমার সাথে আর যোগযোগ করার চেষ্টাও করো না। বাই।”

-“হ্যাঁ.. প্লিস করো না..”

বলেই সেদিন দুজনেই ফোনটা রেখে দিয়েছিলো। কেউ কাউকে ফোন করেনি এত গুলো বছর। দুজনেই রাগ আর জেদ নিয়ে গুমরে গুমরে মরেছে।

ভাবনা গুলো বার বার চেপে ধরছে মোহনাকে। নিজের ঘরের লাগোয়া ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে সবকিছু। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না কেন সৌরভের সাথে সম্পর্কটা নিজের হাতে শেষ করেছিলো। কেন সেদিন ওই ভাবে কথা গুলো বলেছিলো সৌরকে! পারতো না কি একবার ফোন করতে! নিজের করেছিলো তো! তাহলে নিজের মানুষের কাছে কিসের জন্য এত ইগো রেখেছে এত গুলো বছর!
রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। পূর্ণিমার চাঁদের হলদে আভা মোহনার মুখের উপর চিক চিক করছে।
একবার কি ফোন করবে?
নাম্বারটা কি এখনো এক আছে? এত গুলো বছর পরে ফোন করে কি-ই বা বলবে ও সৌরকে! চিনতে পারবে সৌর!
দিক বিদিক শুন্য হয়ে আসছে মোহনার। ভাবতে ভাবতে মাথার শিরা উপশিরা গুলো জট পাকিয়ে আসছে।

নম্বরটা ডায়ল করেছে..রিং হচ্ছে.. “লাগ যা গালে..”

একি!! এটা তো মোহনার প্রিয় গান! কলেজে থেকে সৌরর গলায় মোহনা এই গানটা শুনতেই পছন্দ করতো। আর সৌর এখনো সেটা মনে রেখেছ! তাও আবার কলার টিউন! হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মোহনার..

-“হ্যালো..”
-“হ্যালো..”
-“হ্যাঁ বলুন কে বলছেন..”
-“এটা কি সৌরভ চ্যাটার্জীর নম্বর?”

-“হ্যাঁ.. কিন্তু আপনি কে?”
-“আমি ওর এক বান্ধবী বলছি..মোহনা..একটু ফোনটা দেওয়া যাবে?”
-“না..উনি এখন হাসপাতালে..”
-“মানে! কি হয়েছে সৌরভের?” আঁতকে উঠেছে মোহনা।

-“গত পরশু একটা খবর কভার করতে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে..জ্ঞান ফেরেনি এখনো..আই. সি.ইউ তে আছে। আমি ওর ভাই বলছি।”

-“আমাকে একটু হাসপাতালের ঠিকানাটা দেবেন প্লিস? রুম নম্বর?”

ঠিকানাটা শুনেই তড়িঘড়ি ফোনটা রেখে কাঁধের ব্যাগটা নিয়েই ভোর পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লো মোহনা। নিজের কাছে নিজেকে আজ বড্ডো বেশি দোষী মনে হচ্ছে। গলা বুজে আসছে।

-“দিদি এসে গেছে..”
-“ধরুন..” বলেই টাকাটা দিয়েই দৌড়ে গেছে হাসপাতালের ভিতরে।

-“আরে দিদি টাকাটা ফেরত নিন..ওও দিদি..”

নাঃ! কোনো কথাই কানে পৌঁছায়নি মোহনার। সামনেই একজন নার্সকে দেখতে পেয়েছে।
-“এক্সকিউস মি..সৌরভ চ্যাটার্জি কোথায় আছেন?”

-“আপনি?”
-“আমি ওর বন্ধু।”
-“কার্ড এনেছেন?”
-“কিসের কার্ড?”
-“ভিসিটিং কার্ড না দেখলে আমরা যেতে দিতে পারি না..আর তা ছাড়া আই. সি.ইউর ভিতরে ঢোকা যাবে না।বাইরে থেকে দেখতে হলেও কার্ড চাই।”
-“আপনি যা করতে বলবেন করবো..একবার শুধু দেখতে দিন আমায়..”

দৌড়ে গেছে আই. সি.ইউর দিকে। সিকিউইরিটি, নার্স কেউই পারছে না মোহনাকে আটকাতে।

-“ওকে যেতে দিন..ও আমার পরিচিত” পিছন থেকে গম্ভীরস্বরে বললেন সৌরভের বাবা। সৌরভের ফোনে রাখা মোহনার ফটোতে দু একবার চোখ গেছিলো ওনার। তাই মুখটা হালকা হালকা ভেসে উঠতেই চিনতে পেরেছেন মোহনাকে।

-“আঙ্কেল আপনি?”
-“নিচে অপেক্ষা করতে হয় বাড়ির কাউকে..চিৎকার শুনে ছুটে এলাম..”

হাউ হাউ করে কাঁদছে মোহনা।

-“আঙ্কেল আজ থেকে আমি থাকবো..”
-“বেশ..কিন্তু সৌরভে জ্ঞান ফেরার আগে চলে যেও..জ্ঞান ফিরলে তো চলে যাবেই! সেটা হয়তো ও নিতে পারবে না।”

মোহনার কোনো ভাষা নেই উত্তর দেওয়ার। শুধু দুচোখ থেকে জল পড়ছে।

কেটেছে আরও দুদিন। মোহনা ফোনটা বন্ধ রেখেছে। চাইছে না কেউ ফোন করে মোহনার খোঁজ নিক। প্রার্থনা শুধু একটাই, সৌর যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।

কেটেছে আরো দুটো রাত। দিন রাত এক করে মোহনা বসে রয়েছে আই. সি.ইউর কেবিনে।
রাত দুটো। মোহনার চোখে একটু তন্দ্রা লেগেছে।
-“একটু জ…ল..”
অস্পষ্ট স্বরে জল চাইছে সৌরভ।

“জল খাবে..” মোহনা জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়েছে।
চোখ মেলেছে সৌর। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মোহনা। মোহনা নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না সৌরর জ্ঞান ফিরেছে।

-“সৌর চিনতে পারছো!”
-“আপনি?”
-“আমি..আমি মোহনা..আচ্ছা জল খাও একটু..”

জলটা খাইয়ে দিয়েছে সৌরকে। মোহনা তাকিয়ে রয়েছে। কতো পরিবর্তন হয়েছে সৌরর। কতো পরিবর্তন।

-“মোহনা…” ডেকেছে সৌর।
-“চিনতে পেরেছো আমায়!”
-“তুমি কোথা থেকে এলে! কি ভাবে!”
“আমি সব বলছি..আগে শান্ত হও সৌর..”

বলেই মোহনা সবটুকু বললো সৌরকে। সৌর শুনলো।

অদ্ভুত রকমের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে পাঁচতলার আই.সি.ইউর রুমটা। এতবছর কোনো যোগাযোগ নেই। কি বলবে ভেবেই পাচ্ছে না সৌর। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এত বছর পর মোহনা! এখানে! জানলোই বা কি করে!

একটাই প্রশ্ন সৌরর
-“কেমন চলছে তোমার চাকরি? বিদেশেই তো?”
-“সৌর..আমায় ক্ষমা করা যায়না?”
-“ক্ষমা! কিসের ক্ষমা! তুমি তোমার ক্যারিয়ার দেখেছিলে মোহনা..এটাই হওয়া উচিত মানুষের..”

-“তুমি শান্ত হও সৌর..কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তোমার..”

-“আসলে তুমি আমার সব চিলে মোহনা, তাই তোমায় অত দূর যেতে দিতে চাইনি..”

-“আমি জানি সৌর..আমি চাকরিটা ছেড়ে দেবো। আমি চাইনা সৌর তোমায় হারাতে। চাইনা আমার ক্যারিয়ার, চাইনা কিচ্ছু..”

-“চোখের জলটা মোছো.. সেদিন এয়ারপোর্টে তোমার চোখে জল দেখে যে কষ্টটা হয়েছিলো, আজও একইরকম খারাপ লাগে, কষ্ট হয়..”

-“সৌর তুমি আমায় ক্ষমা করে দাওনা প্লিস..”

-“আমার পাগলিটা এখনো একইরকম ভাবে কাঁদে।
সুস্থ হয়ে বিয়ের কথাটা বলবো বাড়িতে..চুপ! একদম চুপ। নিজের মানুষের কাছে কখনো ক্ষমা চাইতে আছে! তুমি বুঝেছো এই টুকুই আমাদের জন্য অনেক। আর হ্যাঁ চাকরিটা ছাড়া চলবে না। দুজনেই কলকাতায় চাকরি করবো। ট্রাম লাইনের রাস্তা দিয়ে ছুটির দিনে দুজনে হাত ধরে হাঁটবো।”

-“প্রমিস সৌর..
কিন্তু তোমার মনের মানুষটা কে সৌর? ছবি গুলো কে তুলে দিত?”

-“আমি জানতাম তুমি আমায় খেয়াল রাখবে। তাই ওটা লিখতাম”। একটা আলতো হাসি হেসেছে সৌরভ।

-“খুব বাজে কাজ এটা..ওগুলো সব ডিলিট করতে হবে।”

-“এখনও এতটা ভয় পাও আমায় নিয়ে?”

-“পাই…”

-“কেন! থাক না! ফিরে এসেছে তো আমার “মনের মোহনা”।

অক্সিজেন মাস্কটার আর প্রয়োজন নেই। প্রাণ ভোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সৌর। নিজের দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে তার সৌরকে। ফিরে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া মোহনাকে। ভোর হচ্ছে, পাখির কলরব ভেসে আসছে। নতুন ভোরে নতুন করে শুরু হয়েছে সম্পর্কটা। সূর্যের আলোর সোনালী আভা আস্থেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে ওদের। একরাশ লজ্জা মেখেছে দুটো মুখ। জয় হয়েছে “ইগো” আর “জেদের” আড়ালে লুকিয়ে থাকা ওদের নিখাদ ভালোবাসার।

এই ভাবেই জিতে যাক সহস্র কোটি ভালোবাসা। ভালো থাকুক সম্পর্কেরা।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত