-আপনি কি সবসময় এমন ভাবেই থাকেন?
মায়ার কথাটা শুনে ওর মুখের দিকে তাকালাম। বেশ অবাকই হলাম। একটু সময় লাগলো নিজেকে কথা বলার মত তৈরি করতে। বাম হাত দিয়ে নিজেই নিজের নাকটা হালকা টিপে দিয়ে বললাম,
-অ্যা,, এমন ভাবে মানে? ঠিক বুঝলাম না তোমার কথা।
-না মানে এই যে, শার্টের হাতাটা লাগিয়ে রাখেন সবসময়?
মায়ার কথায় মৃদু হাসলাম। তারপর ডান হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,
-না মানে হয়েছে কী…
-দেখুন, ভদ্র সাজার ইচ্ছা থাকলে সাজতেই পারেন। কিন্তু শার্টের হাতাটা উপরের দিকে গুজে রাখলে ভালো লাগবে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি আর কার কেমন লাগবে জানি না তবে আমার খুব ভালো লাগবে।
আমাকে পুরো কথাটা শেষ করতে না দিয়েই কথাগুলো বলল মায়া।
প্রথম দেখা।
আমি অবশ্য সব সময় শার্টের হাতাটা উপরের দিকে গুজিয়েই রাখি। প্রথম দেখা তাই এমনটা করা। পরে আবার কি না কি ভেবে বসে সেই ভয়ে। মায়ার কথায় হাতের বোতামগুলো খুলে দিলাম। সুন্দর করে উপরের দিকে গুজিয়ে রাখতেই মায়া বলল,,
-এবার সুন্দর লাগছে।
কথাটা বলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমিও চুপ। আজ বুঝলাম কথা কম বলতে পারাটা কত টা কষ্টের। যে কিনা সারাক্ষণ বকবক করেই চলে, তার মুখে ১০-১৫ মিনিটে দুই একটা কথা বলা মানায় না।
-ওম আমি যতটুকু জানি আপনি এতটাও কম কথা বলেন না, তো আজ চুপ কেন?
হঠাৎ করেই মায়া প্রশ্ন করল।
– না মানে হয়েছে কী….
-আমি কিছু মনে করবো না, বরং আমার ভালোই লাগবে।
মৃদু হেসে কথাটা বলল মায়া।
-আচ্ছা, মায়া শোন….
-চিপস্ খাবেন? আমার খুব পছন্দের।
আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে মায়া প্রশ্ন করল।
-ভালোবাসি…
এতক্ষন ধরে বলবো বলবো করে শেষ পযর্ন্ত বলেই ফেললাম। কথাটা শুনে মায়া বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর মায়ার ঠোটের কোণে একটা হাসি দেখতে পেলাম।
-চিৎকার দিবেন না খবরদার।
হঠাতই মায়ার মুখে এমন একটা কথা শুনে বেশ অবাক হলাম।
কিছু বুঝে উঠার আগেই…
-অ্যা অ্যা অ্যা অ্যা…
-এই আপনাকে না বললাম চিৎকার না দিতে। তবুও কেন দিলেন হু?
মায়ার মুখে দুষ্টু হাসি আর কৃত্রিম রাগ উঠে উঠেছে। সে আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই যে এমন ভাবে চিমটি দিয়ে বসবে কে জানতো? চোখটা সরিয়ে নিলাম। তারপর আবার তাকালাম। মায়া মুছকি মুছকি হাসছে।
-কী ব্যথা লেগেছে?
-না ছোয়া পেয়েছি।
-পিশাচ একটা।
বলেই মুখ বাকা করলো।
-সত্যিই ব্যথা লাগেনি?
-আবার প্রশ্ন করলো মায়া।
-কই না তো।
আমার উত্তর পেয়ে মায়া বেশ হতাশ হয়ে উঠলো। তারপর বলল,,
-কিন্তু ব্যথা তো লাগার কথা, এতটা জোরে দিলাম।
-ঐ যে বললাম ছোয়া পেয়েছি। একটা কথা বলবো?
-বলুন…
-হাতের আঙ্গুলের মাঝে যে তিলটা স্থান পেয়েছে, খুব সুন্দর।
কথাটা শুনেই মায়ার মুখটা লজ্জয় লাল হয়ে গেল।
-আঙ্গুলের মাঝে তিলটাই শুধু চোখে পড়লো বুঝি? আপনার আর আমার কণ্ঠনালীর একই জায়গায় যে একটা তিল আছে সেটা চোখে পড়েনি বুঝি?
-পড়েছে বলিনি।
-দেখেন আপনাকে এতটা ভদ্ররুপে বড্ড বেমানান লাগে। এটা কি জানেন?
-নাহ্, আগে কেউ বলেনি।
-চুলগুলো হালকা করে ছেটে নিবেন। এই কপাল বরাবর। তাইলে আরও সুন্দর লাগবে।
মায়া কপালটা ছুয়ে দিয়ে কথাটা বলল।
-হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিতে অসুবিধে হবে না তো?
কথাটা বলেই আবার অন্যদিকে তাকালো।
-একদমই না।
জবাবে বললাম।
-তবে দাড়িয়ে আছেন কেন হু? হাতটা ধরা যায় না?
বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিল। কাঁপাকাপা হাত বাড়িয়ে দিলাম মায়ার দিকে। হাতটা ধরতেই কেঁপে উঠল।
-ভালোবাসি নীল সাহেব। একটু বেশিই ভালোবাসি।
হাতটা ধরতেই কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল মায়া।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। তারমানে বিদায়! মেয়েটা এক পলকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাজল দেওয়া চোখটা হালকা ভিজে উঠেছে। অন্যদিকে ঘুরেই হালকা ভাবে নাক টানলো। তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
-সাবধানে যাবেন কেমন। আর হ্যাঁ, আসবেন তো আবার?
বেশ নরম কণ্ঠে কথাটা বলল মায়া।
-হুমম আসবো, খুব তাড়াতাড়ি আসবো। কারণ তোমার সাথে একটা বিকাল কাটানোর অনুভুতিগুলো মিস করতে চাই না।
মায়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার চলে যাওয়া দেখছে.. আমিও বারবার ফিরে তাকাচ্ছি…! একটু পর দুরত্ব বাড়লো,দুরত্বটা মায়াকে চোখের আড়াল করে দিল, মেয়েটা মিলিয়ে গেল দুর অজানায়…!
বাসটাও জানান দিচ্ছে ছাড়তে হবে এই শহর। কিন্তু এই একটুখানি সময়ে রেখে যাচ্ছি হাজারো স্মৃতি। মনে হাজারো রকম অনুভুতিরা জমা…! তাকে হটাৎ কাছে পাওয়ার আনন্দ আবার বিচ্ছেদের বেদনা..! দুটোই একসাথে কাজ করছে..! বিচ্ছেদ না হলে তো আবার মিলনের আশা থাকে না..! সেই আশা নিয়েই ফিরছি আর মনে মনে বলছি আসবো ঠিক আবার এসে পাড়ি জমাবো তোমার শহরে তুমি দেখে নিও!