আমার নাম রাইহান, মা বলেছে এই রাইহান নামটি নাকি আমার বাবা দিয়েছে। আমার এই সুন্দর নামটি বাবা রাখলেও উনি আমার এই নাম ধরে কখন ডেকেছে প্রায়ই আমি ভুলেই গেছি।
বাবা আমাকে ‘ গাধা ‘ বলে ডাকে। এই গাধা ডাকার পিছনেও অবশ্য কারণ আছে! এসএসসিতে ২বার ফেইল করে ৩য় বারে পাস করেছি, এইচএসসিতে ১বার কমে ২বারে পাস করেছি! এখন অনার্সে ২বার ফেইল করেছি, সামনে ৩য় বার পরীক্ষা দিবো। আমার ২য় নামকরণ গাধা তখনই রাখা হয় যখন আমি ২য় বার এসএসসিতে ফেইল যায়। বাবা আমাকে আদর করে গাধা ডাকে তাই এরপর থেকে আমি বাবাকে গাধা না ডাকার আর একটিবারও সুযোগ দিইনি।
একদিন ঘরে মেহমান এসেছিলো, সেইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবা আমাকে গাধা ডেকেছে। “এই গাধা এইটা নিয়ে আয়, এই গাধা ওইটা নিয়ে আয়, এই গাধা এইটা কর, এই গাধা ওইটা কর!“ বিকালে মেহমানরা যাওয়ার পর বাবা আমাকে এসে বলে, “ এই গাধা, সারাদিন খালি পেটে অনেক কাজ করেছিস এখন গিয়ে কিছু খেয়ে নে।“
বাবার মুখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাধা নাম শুনতে, শুনতে আমি ভুলেই গেছিযে আমিও একটা মানুষ! আব্বু যখন আমাকে গিয়ে কিছু খেতে বলে আমি তখন বিলে গিয়ে এক বস্তা ঘাস কেটে নিয়ে আসি, ঘরে এসে ঘাসগুলো টেবিলের উপর রেখে একটু,একটু গালে দিয়ে চিবুতে লাগলাম। কারণ গাধার প্রিয় খাবার ঘাস! আব্বু আমার এই কান্ড দেখে আম্মুকে ডেকে বলে, “ দেখো, দেখো, এইজন্যই তোমার ছেলেকে গাধা ডাকি।“
বাবার একথা শুনেই আমার হঠাৎ মনে পড়েযে আমিও মানুষ ।
বোন এসএসসিতে এ+ পাওয়ার খুশিতে পরিবারের সবাই মিলে চিড়িয়াখানা গিয়েছিলাম। চিড়িয়াখানায় প্রকৃত গাধা থাকা সত্তেও বাবা আমাকেই গাধা ডাকছে।
প্রকৃত গাধাগুলোর সামনে গিয়ে আমি তাদের ভালোভাবে দেখে বুঝতে চাইলাম আমার আর ওদের মধ্যে মিল কি! তখনই পিছন থেকে বাবা আমাকে ডাকে “ এই গাধা, এদিকে আয়তো।“ পুরো চিড়িয়াখানার মানুষ আব্বুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে! বাবা আমাকে আবার ডাকলো “ আরে এই গাধা, এদিকে আয় বলছি।“ তখন বাবাকে এক মেয়ে এসে বললো, “ আংকেল, গাধাগুলোতো ঝুড়ির ভিতরে বন্ধী! তাছাড়া গাধারা মানুষের ভাষা বুঝেনা, কেমনে আসবে বলেন?“
বাবা হেসে বলে, “ আসবে,আসবে। গাধাও মানুষের কথা বুঝে! আরে এই গাধা, তোকেই বলছি, তারাতারি এদিকে আয়।“
আমি তারাতারি দৌড় দিয়ে বাবার কাছে আসলাম। বাবা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে “ দেখেছো মা, গাধাও মানুষের ভাষা বুঝে।“ আশেপাশের সকল মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। সেইদিন সবার সামনে কি লজ্জাই না পেলাম
তো এইবার আমি ৩য় বারের মতো অনার্স পরীক্ষা দিলাম। বাবা বলেছে এইবার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলে আমাকে একটা রিক্সা কিনে দিবে, আর ওই রিক্সা চালিয়ে আমাকে টাকা ইনকাম করতে হবে। অটো হলে তারপরও সারা যেতো, কিন্তু রিক্সা চালায় কেমনে?
পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো, আর মাত্র ৪বিষয়ের জন্যে আমি পাস করতে পারিনি। প্রত্যেকবার আমি পরীক্ষায় পাস না করলে বাবা দরজা বন্ধ করে রুমে বসে থাকে, কিন্তু এইবার ঘটলো ভিন্ন এক ঘটনা। আমি ফেইল যাওয়ার খুশিতে বাবা সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো, আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে আমার গালেও ৪-৫টা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো বাবা।
সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানোর পর বাবা ঘরে এসে আমাকে একটা পাঞ্জাবি দিয়ে ওইটা পড়ে রেডি হতে বলে। বাবার কথামতো আমিও পাঞ্জাবিটা পড়ে বের হই, বাবার আগ থেকে কিনা রিক্সাটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা রিক্সায় উঠে আমাকে বলে, “ চল, পাশের মহল্লায় চল।“ আমিও বাবার কথামতো প্রথমবারের মতো রিক্সা চালিয়ে পাশের মহল্লায় যাই।
বাবা আমার হাত ধরে ওই এলাকার সবচাইতে নামকরা পুলিশ অফিসারটির বাসায় নিয়ে যায়। পুলিশ অফিসারটিকে দেখা মাত্রই বাবা জড়িয়ে ধরে “ অভিনন্দন, অভিনন্দন ” বলতে থাকে। ওই পুলিশ অফিসারটি অবাক হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “ অভিনন্দন কেন? আপনার ছেলে পরীক্ষায় পাস হয়েছে নাকি?“ বাবা হেসে বলে উঠে, “ আরে না, আপনার মেয়ের বিয়েতো তাই অভিনন্দন দিলাম।“
পুলিশ অফিসারটি একটু রেগে, “ আমার মেয়ের বিয়ে? এইসব কি বলছেন আপনি? “
বাবা বললো, “ সেইদিন আপনার বাসায় যখন এসেছিলাম সেইদিন আপনি আপনার মেয়েকে বলেছিলেন যে, এইবার পরীক্ষায় সে এ+ না পেলে আপনি তার বিয়ে একটা গাধা বা রিক্সাওয়ালার সাথে দিবেন। ওই কথাটি আমি চুপিচুপি শুনেছিলাম, আপনার মেয়ের রেজাল্ট দেখলাম ওর পয়েন্ট ৪.৯৮ এসেছে, মানে এ+ পায়নি। তাই আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আসলাম, গাধা সে অনেক আগে থেকেই আর আজই রিক্সাওয়ালা হলো। একসাথে গাধারিক্সাওয়ালা! আপনি আপনার মেয়ের জন্যে যে পাত্রের খুঁজে আছেন সে আপনার চোখের সামনেই। এইবার কাজী ডেকে শুভ কাজটি তারাতারি সেরে ফেলুন।“
বাবার কথা বলা শেষ হওয়ার পর,পরই ওই ঘরে তখন বাংলা মুভির মারামারির আওয়াজের মতো কিছুক্ষন ডিসুম,ডিসুম আওয়াজ হলো। তার কিছুক্ষন পরই মানহানীর দায়ে বাবা এবং আমাকে আহত অবস্থায় জেলে দেওয়া হয়।