রোবট পরী

রোবট পরী

পরীটির বয়স অনেক বছর হবে। সেই পরীটির কথা জয়ী জানে না । গল্পে শুনেছে । নানুর কাছ থেকে। নানু রোজ রোজ একটি করে গল্প বলে। জয়ী গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরে। গল্পগুলি খুবই আনন্দের। গল্পগুলোতে আদর্শ, নীতি ও বুদ্ধি এই সবকিছু জয়ী শিখেছে। জয়ী কখন যে বড় হতে শুরু করেছে নানু টের পেল না। কিছুদিন পরেই প্রাইমারী সমাপনী পরীক্ষা শেষ করবে। জয়ী বিদ্যালয়ের যাবে হাতে বই ব্যাগ কোনটাই নেই। এগুলো পরিবর্তন হয়ে জয়ীর হাতে এখন সুপার ট্যাবপিসি, ফ্রিওয়াইফাই ডিভাইস, প্রজেক্টর, ডিজাইন ও মসেজ ইনডিকেটঁর মেশিন, ইত্যাদি। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানের ভান্ডার তার হাতে মুঠোয়। যখন কোন সমস্যা তাৎক্ষনিক তার সমাধান সে বলে দিতে পারে। নানুর চক্ষু অপারেশন হয়েছে তাই দীর্ঘদিন জয়ী নানুর কাছ থেকে গল্প শুনতে পারে নাই । আজ নানু সুস্থ । চোখে তেমন পরিস্কার দেখতে পায় না। বয়সে ভারে নুয়ে পড়েছে। জয়ী ইদানিং পুরোনো গল্প আর শুনতে চায় না। সে নতুন পৃথিবীর গল্প শুনতে চায়। বিজ্ঞানের গল্প শুনবে।

নানুর কাছে জোর অনুরোধ করলে একটি বিজ্ঞানে গল্প শেনার জন্য। নানু হা হা করে হেসে উঠে বলে.. “কি বলো নানু ভাই, আমি বিজ্ঞানের গল্প জানি না। আমি মোবাইলই চালাতে জানি না। তোমাদের বিজ্ঞানে গল্প কিভাবে শোনাবো। জয়ী নানুর কথা বিশ^াস করলো না। রাগ করেছে। ভাবছে নানু মিথ্যা বলছে । নানু এত এত গল্প জানে অথচ বিজ্ঞানে গল্প জানে না। জয়ী রাগে-দুঃখে সে নানুর কাছ দৌড়ে অন্য রুমে চলে যায়। যাওয়ার সময় নানুকে বলে ‘‘নানু তুমি মিথ্যে। মিথ্যে পরীদের গল্প শুনিয়েছো। কিন্তু কোনো দিনও পরীদের দেখাতে পারো নি। আমি সব পরীদের নিয়ে আসবো। তোমার সাথে চ্যালেঞ্জ। জয়ী এবার সে নানুকেই গল্প শোনাবে কিন্তু বাস্তব গল্প। সে তার হাতে ট্যাবলেট পিসিতে বিভিন্ন সাইড নেটে সার্চ করতে লাগলো।নানুর কাছে অশিরীরী পরীদের গল্প শুনেছে। যে পরীরা দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু মহুর্তের মধ্যেই অর্দৃশ্য হতে পারে। জয়ী ফ্লাশ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে একটি পরী তৈরী করে এবং তা এনিমেশন রূপ দেয়। ডিজাইন ইনডিকেটর মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে। তাদের কিছু মজার মজার সাউন্ড এডজাষ্ট করে। যাতে জয়ী পরীকে যা বলবে পরীটি তা ঠিক ঠিক জবাব দিবে। জয়ী ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পৃথিবীর কল্পকাহীনির পরীদের ছবিগুলো সংগ্রহ করতে লাগলো ।

সে পরীদের ইতিহাস জীনতত্ব ও গঠন তথ্য উপাত্ত সম্পুর্ন ডাটা সংগ্রহ করতে লাগলো। এবং সেই অনুপাতে সফট্যওয়ারে ডাটা ইনপুট করতে লাগলো। জয়ী কাজের সাথে সময় গননা করে ধরে নিলো সম্পুর্ন কাজটি শেষ করতে মাত্র ৬মাস সময় লাগবে। জয়ী তার নানুকে চমক দেখাবে । সে সত্যি সত্যি পরী হাজীর করবে নানুর সামনে । নানু কথাটি বিশ^াসই করতে পারছে না। কিভাবে সম্ভব। জয়ী মনে মনে হাসে। নানু শুধু শুধু এতদিন আমাকে পরীদের গল্প শুনিয়েছে। নীল পরী, লাল পরী, রাজকুমারী পরী, হলদে পরী । সে সব পরীরা কত সুন্দর আর ভালো। তারা অসহায় মানুষদের কত উপকার করে। শিশুদের কত্ত ভালোবাসে। আর সেই গল্প শুনতে শুনতে জয়ী পরীদের খুব ভালোবেসে ফেলেছে। তাদের কাছ থেকে জয়ী শিখেছে “ কিভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাড়াঁতে হয়। কিভাবে অন্যায়ের সাজা দিতে হয়। আর কত্ত কি। জয়ী সেই সব পরীদের দেখতে চায় । কিন্তু নানু কখনও পরীদের দেখাতে পারে নাই। সে থেকে জয়ী মনে মনে ভীষন জেদ ধরেছে। সেই জেদ থেকেই প্রস্তুতি। বাড়ীর সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে জয়ী তখন একা একা সেই প্রেগ্রাামগুলো তৈরী করতে থাকে। বাবা মার চোখকে ফাকিঁ দিয়ে এই কাজগুলো করতে থাকে। বাবা কিছুটা টের পেলেও । মনে মনে জয়ীর বাবা খুব খুশি। জয়ী কিছু একটা তৈরী করতে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার আগেই সম্পূর্ন প্রজেক্ট তৈরী হয়ে যায়।

তাই আজ নানুকে সে চমকে দিবে। পরীদের হাজির করবে। পরীদের তৈরী করতেখুবধৌয্য ও মনোযোগ কোনটাই কম ছিলো না। ডিজাইন তৈরী করেছিলো সেরা সেরা জিজাইন সফ্যটওয়ার দিয়ে। আই.সি সেন্সরগুলোতে কমান্ড সেভ করেছে খুব সাবধানে। সেগুলো এনিমেশন রুপ দিয়েছে। সাউন্ড এড করে বুদ্ধিমাত্তার সাথে। ডিজাইন ডায়াগ্রামে ইন্ডিকেঁটর গুলো সক্রিয় করতে তাকে চোখের পানি পর্যন্ত ফেলতে হয়েছে। কেননা নানুর সামনে সে পরীদের সাথে কথা বলবে। পরীদের যা বলবে পরীরা ঠিক ঠিক সে রকম উত্তর দিবে । অবশেষে ঘটনাটি ঘটলো খুবই মজার ।

রাত ১১ টা বাজে, জয়ী তার বাবা-মা, নানু সহ বাড়ীর সবাইকে ডাকলো একটি মজার ঘঁটনা দেখানোর জন্য। জয়ীর হাতের সুপার ট্যাবটি ছিলো খুবই পাওয়ার ফুল । ট্যাবের সাথেই এস.টি.এম.এম এবং ওয়াইফাই ইন্টারনেট, প্রজেকটর ওয়ারলেস সাউন্ড সহ , ওয়ারলেস ব্লুটুথ ও রাউটারের একশন বাটন সহ নানা বিধ সুযোগ সুবিধা। থাউজেন পাওয়ার সমৃদ্ধ প্রজেকটর আলো। সকলে বাড়ীর ড্রইং রুমে বসে আছে জয়ী তাদের কি দেখাবে। অপেক্ষা করছে। নানু তে অস্থির বিশ^াস করতে পারছে না । কিভাবে সম্ভব । ১১.২০মিনিট বাড়ীর সমস্ত লাইট বন্ধ হয়ে যায়। জয়ী বাড়ীর ভেতরে এক ভ’তুরে পরীবেশ সৃষ্টি করেছে। জয়ী নানু ভাবছে তাইতো পরীরা তে অন্ধকারের মাঝেই আসে। তাদের শরীর থেকে আলোর রশ্মি ছড়াতে থাকে। তাহলে সত্যি সত্যি পরী আসবে। ভাবতে না ভাবতে ড্রাইং রুমের উত্তর পাশর দেয়ালে হাজীর হলো তিন তিনটে পরী । সম্পুন্ন বাড়ী আলেক উজ্জ্বল বর্ণ ছড়াচ্ছে। জয়ীর সেন্সর আলোকরশ্মীবিহীন প্রেজেক্টর কেউ টের পাচ্ছে না। সত্যি সত্যি জলজ্যন্ত পরী। জয়ীর নানু চমকে যায়। ভয়ে দোয়া ও দুরুদ শরীফ পরতে থাকে। জয়ী নানু ভাবছে অন্যকথা । যদি এইসব পরীরা ভালো হয়, তবে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি খারাপ হয়, তাহলে মহাবিপদ আমাদের জন্য। যদি পরীরা আমার নানুভাইকে নিয়ে যায়। সে জয়ীকে জোর করে ধরে বসে, আর হাউ মাউ করে কাদঁতে থাকে। নানুর এই আদ্ভুদ কান্ড দেখে জয়ী তার নানুকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। নানু এগুলো আমার বানানো পরী । আমি এগুলো তৈরী করেছি। নানু জয়ী কথা শুনে আরও ভয় পেয়ে যায় । বলে ‘‘ আস্তাকুরাল্লা কি বলো, তওবা কর, জয়ী তওবা কর। জয়ী হাসতে থাকে। দেখ ! নানু আমি তাদের সাথে কথা বলছি। নানু মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তো ।
জয়ী পরীদের সাথে কথা বলছে
পরীদের জিজ্ঞাস করছে
তোমার নাম কি ?
নীল ডানার পরীটি মিষ্টি হেসে বলে দিলো : আমি নীল পরী। ( নীল পরীটির ডানার ঝাপটাতেই আলোর রশ্মি ছড়াচ্ছে পুরো বাড়ী জুড়ে )। জানো তোমাদের মতো আমাদেরও একটি পৃথিবী আছে। আমাদের পৃথিবীর নাম আনন্দরাজ্য । তবে সেটা তোমাদের সৌরজগৎ এর মধ্যেই রয়েছে। এখনও তোমরা সেই আনন্দরাজ্য নামের গ্রহটি আবিস্কার করতে পারোনি। আমাদের গ্রহে সবাই এক। সবাই ধনী, সবাই গরীব। তুমি চাইলে একটি এক বস্তা গম দিয়ে এক বস্তা চাউল নিতে পারবে। তাইতো সেখানে কোন ভেজালও নেই সবাই সুস্থ ও সুন্দর । খেয়ে-দেয়ে আরাম আয়েসে জীবন-যাপন করছে।
জয়ী বিজ্ঞের মতো মাথা নেরে সায় দিয়ে একটু হেসে দ্বিতীয় পরীটিকে জিজ্ঞাস করলো
তোমার নাম কি ?

সবুজ ডানার পরীটি একটু মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো । আমি সবুজ পরী । আমার রাজ্যের নাম সবুজস্বর্গ । সেখানে সবকিছুই প্রকৃতির মতো সৃজনশীল । সেখানে মানুষ জানেইনা গরীব কাকে বলে। অভাব কাকে বলে। সেখানে আমাদের বসতবাড়ী সবকিছুই প্রকৃতিরমতো সুন্দর । তোমাদের মতো ইটপাথরের হাবিজাবি অট্টালিকা করি না।দেখবে ভুমিকম্পে তোমাদের এই প্রজন্ম আট্টালিকায় ধ্বংসস্তুুপে বিলীন হয়ে যাবে। তোমরা বড় বোকা তাই নয় কি ? তোমরা নিশ্চিত মৃত্যুকুপ তোমরা নিজেরাই বানিয়ে রেখেছো।

জয়ী এবারও বিজ্ঞের মতো মাথা নেরে সায় দেয় কিন্তু মনে তার অন্য চিন্তাতবে অ.এস.টা.মে. মে ( অটো সুপার টাইমার মেসেঞ্জার মেশিন) এর মাধ্যমে এই তথ্যগুলো এমন হওয়ার কথাছিলো না । সম্ভবত পরীদের কথাগুলো বা তর্থ্যগুলো ভীন গ্রহে থেকে এসেছে।

( জয়ী আব্বু আম্মু ব্যপারটা বুঝতে পেরেছে। জয়ীর নানু কিছুই বুঝতে পারছে না। জয়ীর নানুর ভেতরে ভয় আর অস্থিরতা কাজ করছে । ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে। দোয়া দুরুদ -জিকির করছে। মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া এই মুহুর্তে কোন কিছু করার নাই। সে জানে পরীদের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করা যাবে না। তাহলে পরীরা ধরে নিয়ে আকাশের উপর থেকে ধপাস করে ফেলে দিবে। অথবা তালগাছের উপরে উঠিয়ে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট কান ধরে দাড়ঁ করিয়ে রাখবে )

এবার জয়ী ভাব নিয়ে তৃতীয় পরীটির নাম জিজ্ঞাসা করলে …
তোমার নাম কি ?
তৃতীয় পরীটি প্রজেক্ট স্কীন পর্দা থেকে খানিকটা সড়ে আসলো । ফ্লাশ ব্যাগ যে থ্রিডি এনিমেশন দিয়েছিলো সেটা নয় এই পরীটি।জয়ী চোখে সেটা ধরা পরে যায়। এই পরীটি গম্ভীর গলায় রোবট যন্ত্রের মতো উত্তর দিলো “ আমি রোবট পরী ” । বলতে বলতেই স্কীন পর্দাটা কেপেঁ উঠে। এবং সমস্তবাড়ীর দেয়াল থেকে ভুতের আওয়াজের মতো প্রতিধ্বনী আসে। আমার গ্রাহের নাম বায়ে-মেমরী।

( জয়ীর সবকিছুই যেনো কেমন এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে । এই ধরনরে রোবট এর নাম তো সে সফটওয়ারে ইনপুট করে না। তা ছাড়া এই ধরনের সাউন্ডও এডজাষ্ট রেকডিং, সেন্সর ইন্ডিকেঁটর ইনপুর করা হয় নাই । তাহলে এটা আবার কি হতে যাচ্ছে )। জয়ীর হাত পা ভয়ে কাপঁছে। গলার আওয়াজ শুকিয়ে যাচ্ছে। জয়ী এবার নিজেই ভয়ে জরসর । নানুও জয়ীকে ধরে রেখেছে। জয়ী ও নানুকে জড়িয়ে ধরে বসে। জয়ীর ভয় দেখে নানুর চিৎকার শুরু হয়।

কি ঘটতে যাচ্ছে………………………
জয়ী তরিঘরি করে তার হাতের ট্যাবটি বন্ধ করে দেয় । প্রজেক্ট স্কীনের সেভেন-জি পর্দাও বন্ধ হয়ে যায়। তখনও সেই রোবটটি জলছায়া বিদ্ধমান। জয়ী সেই জলছায়াটিকে দেখে অনুমান করছে এটা সেই তৃতীয় রোবট পরীটির জলছায়া । এটা আসলো কোথায় থেকে । সম্পুর্ণ ঘরের বাতি বন্ধ এই ছায়াটা বিদ্যমান। যেহেতু জয়ী সবকিছু তৈরী করেছে। তাকে এই মুহুর্তে ভয় পেলে চলবে না। জয়ীকে সাহসী হতে হবে। জয়ী সেটা অনুভব করলো। জয়ী বুকে সাহস নিয়ে সেই জলছায়ার রোবট পরীটিকে প্রশ্ন করলো। তুমি যা্েচছা না কেন ? এবার স্কীন পর্দা নয়। রোবট পরীটি জলছায়া কেঁপে উঠে। বাড়ীর সবাই ভয়ে খানিকটা চমকে গেলো। স্পষ্ট রোবটটি উত্তর দিলো। আমার সময় হলে আমি চলে যাবো। জয়ী ভয়ে গাঁ শিউরে উঠলো। তড়িঘড়ি করে ঘরের সবগুলো বাতি জ¦ালিয়ে দিলো । ঘর আলোকিত হলো। রোবট পরীটির জলছায়া আর দেখা যাচ্ছে না। তাহলে রোবট পরীটি চলে গেছে। কিন্তু জয়ী মনে প্রশ্ন এটা কোথায় থেকে এলো । এই ধরনের পরী সে কম্পিউটারে তৈরী করে নাই। তবে এই তৃতীয় পরীটির জ্বীনআইসির পার্সওয়ার্ড আটো মজেঞ্জার এর মাধ্যমে নিয়েছিলাম। তাহলে অন্য কোথাও থেকে । ব্যপারটা অদ্ভুদ ভুতুরে কান্ড ঘটতে যাচ্ছে। জয়ী তার হাতের ট্যাবলেট পিসি ও কম্পিউটারটি আবার ভালো করে সাচঁ করতে লাগলে ।

কিভাবে আসলো এই রোবট পরীটি। সার্চিং রোজাল্ট জিরো। জয়ী আসল ব্যাপার তার বাবা মায়ের কাছ বলতে চাইছে। কিন্তু তার বাবা মা তো বুঝবে না। জয়ী তার বন্ধুদের কাছে সম্পুর্ন ঘটনাটি বললো। বন্ধুরা জয়ীর কথায় কর্নপাত করলো না। কেউ কেউ বললো ব্যাপারটা একটা উদ্ভট ঘটনা । কেউ কেউ আবার বললো তুই জেগে স্বপ্ন দেখেছিস মনে হয়। কম্পিউটারে ফ্লাশ গেইম বানাতে বানাতে তুই নিজেই ফ্লাশ গেইম হয়ে গেছিস। কেউ কেউ হো. . . হাহা. হা করে হেসে উড়িঁয়ে দিলো। ব্যাপারটা নিয়ে জয়ী খুবই চিন্তিত । ভেতরে ভেতরে একটা ভয় ও কাজ করছে। পরেরদিন বিদ্যালয় থেকে বাসা ফিরছিলো। প্রচন্ড রোদ আর গরম । পথ হাটছিলো জয়ী হঠাৎ রোদ্রউজ্জ্বল আকাশটাকে অন্ধকার করে ধমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হলো । জয়ী একা একা পথ চলছে কিন্তু কোন বৃষ্টির পানি তার গায়ে পরছে না। বাতাসের ঝাপটাও তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। কোন একটা অদৃশ্য অবরন তাকে জাড়িয়ে রেখেছে। জয়ী সাহসী একটি মেয়ে। সে সবকিছুতেই একটি বিজ্ঞানের ব্যখ্যা খোজেঁ। তাছাড়া সেতো বৃষ্টি ঝড় এগুলো থেকে রক্ষা পাচ্ছে। ব্যপারটা সে ভয় না পেয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। ইন্টারনেটে সার্জ ইঞ্জিনে এই ধরনের ঘটঁনার ব্যখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে । কিন্তু এবারও ফলাফল জিরো। সার্চিং রেজাল্ট জিরো ।

জয়ী বুঝে যায়। এটা সত্যি একটা রহস্য ঘটনা। ভয় পেলে চলবে না। এর মুল রহস্য উদঘাটন করতে হবে। ড্রইং রুমে বসে বসে বই পড়ছে। জয়ী আম্মু হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে জয়ী কে বলতে থাকে ‘‘একটা মজার ঘটনা, পুলিশের গোলাবরুদ সব ডেমেজ হয়ে গেছে। পুলিশের বন্ধুক থেকে গোলাবারুদ বের হচ্ছে না। সন্ত্রাসীদের তৈরী করা বোমা গোলাবারদও সব ডেমেজ হয়ে গেছে। জয়ী এসে দেখে যাও টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। জয়ী কাছে ব্যাপারটা রিতিমত অবাক করা। তাই দ্রুত টিভি চ্যালেনগুলোতে দেখতে লাগলো। সার্কিট সিটিতে পুলিশ আর সন্ত্রাসীদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে । পুলিশ আর সন্ত্রাসী গোলাবারুদ বোমা রাইফেল ফেলে তারা খালি হাতে কুস্তি করছে। রিতিমত রেসলিং হচ্ছে। জয়ী হো. হো.. করে হেসে উঠে । কি দারুন !কি দারুন ! বলে হাত তালি দিয়ে নাচতে থাকে। পুরো পৃথিবীর বোমা আর গোলাবারুদ গুলো ডেমেজ করা যেতো। তাহলে কি মজা হতে। মানুষ এর উপকার হতো। বলতে না বলতে আবার সেই অষ্পষ্ট শব্দ এবং জলদৃশ্যেরমতো রোবট পরী হাজির হয়ে বলে “জঁয়ী তুঁমি যঁদি বঁেল তাহঁলে পৃথিঁবীর সমঁস্ত গোলাঁবারদ ডেঁেমজ কঁের ফেলঁবে।” জয় আনন্দ কিছুক্ষনের জন্য আবার স্তব্দ হয়ে পরে। ভয়ে আতকে উঠে। কি বলবে, বুঝতে পারছে না। তাই কোন কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে। সার্কিট সিটির সব গোলাবারদ ডেমেজ তাহলে সেই করেছে। কাজটা খুবই ভালো হয়েছে কেননা প্রতিদিন ঔ শহড়ে বোমার আঘাতে শতশত লোকের প্রাণহানী হতো। আর পুলিশের গুলিতেও শতশত সন্ত্রাসীদের প্রাণ যেতো। এখন আর প্রাণহানী ঘটবে না। ব্যপারটা খুবই ভালো। তবুও জয়ী সেই জলছাপ অদৃশ্য রোবট পরীটিকে কিছু বলছে না। ভয়ে তার দিকে তাকাচ্ছেও না। চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে। হয়ত জয়ীর একটা হ্যাঁ শব্দে বদলে যেতে পরে সমস্ত পৃথিবীর নিয়ম-কানুন। ন্যায়-অন্যায় অত্যাচার-অবিচার। এক দেশ আরেক দেশের প্রতি আধিপত্তর বিস্তার । ধনী দেশ, গরীব দেশ সবকিছু বদলে যাবে। পৃথিবীতে যারা গরীব খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের অধিকারগুলো ফিরে পাবে। কিন্তু অশুভশক্তি বলতে পৃথিবীতে একটা শক্তি আছে সেটা দূর করতে গোলাবারুদ লাগবে। জয়ী তাই কিছু বলছে না পরী রোবটকে। রোবট আবারও ঘ্যান ঘ্যান করে উঠে বলে “তুমিঁ যদিঁ বলোঁ তাহঁলে বিঁেশ্বর সেঁরা ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা টাকাগুলো খেটে- খাওয়া, অনাহারী, দুঃখীর মাঁঝে ভাঁগ কঁরে দিঁতে পাঁরি ।” জয়ী এবার খানিকটা বিরক্ত হলো রোবট এর ঘ্যান ঘ্যান শব্দে, তাছাড়া জয়ীর বাবা জয়ীর জন্য ব্যাংকে কিছু টাকা জমিয়েছে । সে গুলো যদি রোবট টা নিয়ে যায়। ভাবতে ভাবতেই । রোবট পরীটার আবারও ঘ্যান ঘ্যান করে বলে উঠে ‘‘ আঁমি এখানে বেশিক্ষন সমঁয় দিঁতে পারঁেবা না তারাঁতারি উত্তঁর দাঁও।” জয়ী রোবট পরীর উপর রাগে-দুখে হাতের ট্যাবটি ছুরে মারলো দেয়ালে। মুহুুর্তে ট্যাবটি ভেংগে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এবং চলন্ত ট্যাবটি থেকে ধোওয়াঁ বের হতে থাকে । রোবট পরীটিও উধাও। কিছুক্ষন পরে সেই অ.এস.টা.মে. মে ( অটো সুপার টাইমার মেসেঞ্জার মেশিন) এ এক মেসেজ আসে “ তাতে লেখা তুমি এটা কি করলে তোমার ট্যাবেই রয়েছে রোড ম্যাপ এবং বায়ো মোমরির নম্বর এই পরী রোবটটির। তোমাদের পৃথিবীর মঙ্গল এর জন্য পাঠানো হয়েছিলো । ভুল করলে । এই উগ্র রাগের কারনে তোমরা মানুষ এত মারামারি হানাহানি হিংসা, বিবেদ করো । তোমরা বড্ড বেশী যুদ্ধবাজ । নিজেরাই যুদ্ধ করতে করতে শেষে হয়ে যাবে। তোমরা আসলে অসভ্যজাতী ।

ইতিমধ্যে জয়ী তার ভূলগুলো বুঝতে পারে এবং হাউমাও করে কেদেঁ উঠে বলে ‘‘ এ আমি কি করলাম ” নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য এ আমি কি করলাম। বাড়ীর সবাই ছুটে আসে কাউকে কিছু বলতে পারছে না জয়ী । শুধু কান্না .. . .. আর কান্না ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত