আর সম্ভব নয়। আমি আসছি। তুমি থাকো তোমার মতো। তোমার মতো মেয়ের সঙ্গে থাকার চেয়ে একা থাকা ভালো। কী ভুল যে করেছি তোমায় বিয়ে করে, এখন বুঝতে পারছি। শুনে রাখো বৃষ্টি ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। যত সব এসে জোটে আমার কপালে। কথা গুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে গেল অভিক।
যার ওপর এই বাক্যবাণ এতক্ষন বর্ষিত হচ্ছিল, সেই বৃষ্টি সব শুনে ধপ করে বসে পড়ল। হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল।ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, এটা ওর অভিক। এই কী সেই অভিক, যার সাথে ওর বিয়ের আগে ৫ বছর সম্পর্ক ছিল। এই ৫ বছরে কখন ও একবারও কষ্ট দেয়নি বৃষ্টি কে। তাই তো সবার অমতে বিয়ে করতে ও দুবার ভাবেওনি। এই তো এক বছর ও হলো বিয়ে হয়নি, তার মধ্যে এত পরিবর্তন? কী এমন বলেছিল ও অভিক কে ? শুধু বলেছিল ওর প্রিয় বন্ধু রিয়ার বিয়েতে যাবে। অভিক কেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু অভিক হঠাৎ বেঁকে বসে। ওর এখন কোনো কিছুতেই বৃষ্টির জন্য সময় নেই। সব এ তেই বিরক্ত যেন। এই তো শুধু বিয়ে বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলতেই এত অপমান করে চলে গেল। কি ভুল তা সত্যি খুঁজে পাচ্ছে না বৃষ্টি।
অসহ্য লাগে বৃষ্টিটাকে। আজব একটা। দেখলে এখন মাথা গরম হয়ে যায়। সারাদিন ঘরে বসে থাকবে, আর আমাকে ওনার কথা শুনতে হবে। জুটে ও যায় সব। এটা করো, ওটা কোরো না, এখানে নিয়ে চলো, বিয়ে করে শেষ করে দিল মেয়েটা। অসহ্য!
‘তুই সত্যি খুব বাড়াবাড়ি করিস আজকাল’ বলে ওঠে দীপ্ত ,অভিক এর ছেলেবেলার বন্ধু। ‘প্লিজ ভাই, তুই ওর হয়ে আর কথা বলিস না।’ এই রুদ্রমূর্তি দেখে দীপ্ত ও চুপ করে যায়।
আচ্ছা ,আমি কি খুব বাড়াবাড়ি করছি?? আমার কাজের চাপ এর দায় ওর ওপর চাপাচ্ছি ?? ও তো সারাদিন বাড়িতে কাজ করে, কই কখনো তো কিছু বলেনি ?? আজ আমি তবে কেন এমন করছি? ছিঃ ছিঃ, নিজের ওপর এখন নিজেরই রাগ হচ্ছে। সত্যি তো, ওর মতো মেয়ে তো হয় না। আজ পর্যন্ত একটা জিনিষ ও মুখ ফুটে আবদার করেনি, বাড়ীর অমতে অনেক লড়াই করে অভিক কে বিয়ে করেছিল। এখন ও খুব বেশি সচ্ছলতা আসেনি ওদের সংসারে, তাও তো কখনো বৃষ্টি কোনো অভিযোগ করেনি। আর ও, উঠতে বসতে কথা শুনিয়েছে , অপমান করেছে। না, আর এমন করা যাবে না। এখুনি ফোন করতে হবে বৃষ্টি কে।
কী ব্যাপার , ফোন কেন ধরছে না বৃষ্টি? এমন তো করে না কখনও। ১৭ বার ফোন হয়ে গেল, একবারও ধরছে না। অদ্ভুত মেয়ে তো। যাই একবার বাড়ী, হচ্ছে ওর। এমন careless মেয়ে, ঠিক দেখো বন্ধুর বিয়েতে গেছে। এতক্ষণ শুধু শুধু ভালো ভাবছিলাম দীপ্ত র কথা শুনে, ঠিক ই বলি ও একটা worthless।
বৃষ্টি ! ওই বৃষ্টি দরজা খোলো। কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি। এ কী!! দরজা তো খোলাই। গেল কোথায়?? গোটা ঘর ফাঁকা। এমন তো করে না। এটা কি কাগজ ? দেখি তো।
প্রিয়
অভিক,
ধন্যবাদ, আজ সত্যি টা জানানোর জন্য। আজ এত দিনে তুমি যে বুঝেছ, এই অনেক। তোমার জীবনের অনেক বড় ভুল আমি। আজ তুমি প্রতিষ্ঠিত, তোমার আজ ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। কিন্তু সব মেয়ে যে এক হয় না অভিক। আমি তোমার জীবনের ভালোবাসা হতে চেয়েছিলাম, কোনো কাক হতে চাইনি। আমি কিন্তু ভাতের আশায় আসিনি তোমার জীবনে, তোমার কিছু নেই জেনেই এসেছিলাম। যদি ওই ভাতের আশা থাকত, তবে বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতাম। কিন্তু তুমি হয়তো কখনো আমায় সে চোখে ভাবোনি। তুমি তো দয়া করে গেলে আমায়, আর আজ তাই তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে আমি তোমার জীবনের ভুল। গত এক বছরে বার বার বোঝাতে চেয়েছ এটা, কিন্তু কখনও সেভাবে ভাবিনি। আজ ভেবেছি, আর তাই বুঝতে পারছি আমি ফুরিয়ে গেছি। আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করেছি?
হ্যাঁ, জানি খুব বিরক্ত করেছি। আর তাই চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো।
দমকা হাওয়ায় চিঠি টা উড়ে গেল। ধপ করে বসে পড়ল অভিক। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না চিঠির কথা গুলো। আজ অভিক বুঝলো ভাত ছড়ালে ও মাঝে মাঝে কাকের অভাব হয়।