সাবধানে যাস বাবা (মা)
> আচ্ছা (আমি)
> পৌছেই ফোন দিবি
> হুম
> নিজের খেয়াল রাখিস
> মা, আমি ছোট নেই
> মার কাছে ছেলে বড় হয়না কখনো
> হুম
> রাস্তায় কারো দেওয়া কিছু খাবিনা
> ok, ok. আর কিছু?
মা আর কিছু আমার মাথায় হাত বুলালেন একটু ৷ আর কিছু না বলে রওনা দিলাম ৷ পিছে পিছে অনেকদূর আসলো মা ৷ যতদূর দেখতে পেলো তাকিয়েই ছিল ৷ এই প্রথম মাকে ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম ৷ অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি ৷ মোটেও মন চাইছে না মাকে একা রেখে যেতে ৷ কিন্তু মায়ের স্বপ্ন আমি পড়াশুনা করে অনেক বড় হবো ৷ আমিও চাই মায়ের স্বপ্ন পুরন করতে ৷
ভালই কাটছিল নতুন জীবনটা ৷ পড়াশুনা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময়টা কেটে যেত ৷ দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষের পরিক্ষা দিলাম ৷ ভালই ফলাফল করলাম ৷ এদিকে মায়ের শরীরটা কয়েকদিন ধরে খুব খারাপ যাচ্ছে ৷ তাই টাকা পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে ৷ বন্ধুদের ধরে একটা টিউশন যোগাড় করলাম ৷ টিউশনের টাকায় মাসের খরচের অর্ধেকটা হয়ে যাবে ৷ ছাত্রীর মেধাও ভাল, অল্পতেই বুঝে যায় ৷ রেজাল্ট ভাল করায় আমার উপর ছাত্রীর পরিবারে একটা আস্তা চলে আসে ৷ একদিন হটাৎ বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে বলে মায়ের শরীর খুব খারাপ, এখনি যেন বাড়ি যাই ৷ মনের ভিতর কেমন যেন লাগলো ৷ যে অবস্থায় ছিলাম সেভাবেই রওনা দিলাম ৷ বাড়ি পৌছে যা শুনলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না ৷ মাথার উপর শেষ ছায়াটাও হারালাম ৷ চারিদিকে অন্ধকার মনেহলো ৷ নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দিলাম, ভালভাবে মায়ের শেষ কার্যটা করতে হবে, শেষও হলো ৷ আবার মেসে আসলাম, সবকিছু নিয়ে একেবারে বাড়ি ফিরে যেতে হবে ৷ টিউশনির কিছু টাকা পাবো, তাই গেলাম ৷ দরজা নক করতেই ছাত্রী দরজা খুলল,
> স্যার, কেমন আছেন?(ছাত্রী)
> এইতো, তোমার বাবা কোথায়?(আমি)
> বাবা তো বাসায় নাই, মা আছে ৷ আপনি এ কদিন কোথায় ছিলেন? ফোনটাও অফ ৷ আপনাকে এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?
> তোমার মাকে একটু ডাকো বলে মাথা নিচু করে বসে পড়লাম ৷ কিছুক্ষণ পর ছাত্রীর মা অসলো ৷ আমি দাড়ালাম ৷
> আজ এসময় আসলে যে বাবা (আন্টি)আন্টি আমায় বাবা বলেই ডাকে ৷ কিন্তু আজ বাবা ডাকটা শুনে মাকে খুব মনে পড়তে লাগলো ৷
> আন্টি আমি আর আসতে পারবো না
> কেন?
> আমায় বাড়ি চলে যেতে হবে
> কি হয়েছে বলবা তো, তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন? আমি সব খুলে বললাম, নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে আসলো ৷ আন্টি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
> তুমি আজ থেকে এখানেই থাকো ৷ তোমার মায়ের স্বপ্নটা পুরন করবে না?
> (মাথা দোলালাম)
হয়তো মা সহায় ছিল, তাই একটা ব্যবস্থা হয়ে গেল ৷ জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলো ৷ দ্বিতীয় বর্ষের পরিক্ষাও চলে আসলো ৷ ফরম ফিলাপের জন্য ৫০০০ টাকা লাগবে ৷ আন্টিকে বললে হয়তো দিত, কিন্তু সেটা উচিত হবে না ৷ ওনারা আমার জন্য অনেক করেছেন ৷ আমি ভাগ্যবান, তাই এমন মানুষ পেয়েছি ৷ কিন্তু কিভাবে যোগাড় করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না ৷ এদিকে ফরম ফিলাপের আর দুইদিন বাকি ৷ অবশেষে প্রিয় মোবাইলটা বিক্রি করে টাকাটা যোগাড় করলাম ৷ কিন্তু টাকা দিতে গিয়ে শুনি কেউ আমার নামে টাকা জমা করে গেছে, আমায় শুধু ফরমটা ফিলাপ করলেই হবে ৷ কলেজের কাজ শেষ করে বাসায় আসলাম ৷ মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ৷ কে দিল আমার টাকা? হটাৎ মাথা তুলে দেখি দরজার সামনে ছাত্রী দাড়িয়ে,
> কিছু বলবে? (আমি)
> আপনার ফোন বন্ধ কেন?(ছাত্রী)
> এমনি
> ফোনটা দেখি
> বিক্রি করে দিয়েছি
> কেন?
> ফরম ফিলাপের টাকা দরকার ছিল তাই
> ওহ
অনেকদিন বন্ধুবান্ধবের খোজ নেওয়া হয় না ৷ সামনে পরিক্ষা, তাই ক্লাসও হয়না ৷ ছাদে দাড়িয়ে আছি, পেছনে কারো গলা খাকনি শুনে ফিরে তাকালাম ৷
> কি ভাবছিলেন স্যার
> কিছু না, একটা কথা বলবো?
> জি, বলেন
> তোমার ফোনটা কিছুক্ষনের জন্য দেবে?
> কেন?
> অনেকদিন বন্ধুবান্ধবের খোজ নেওয়া হয় না ৷ আমার সিমটা ঢুকিয়ে একটু কথা বলবো ৷
> ও, আচ্ছা দিচ্ছি
সিমটা ঢোকানোর সাথে সাথে একটা মেসেজ আসলো, ভালভাবে পড়াশুনা করো, পরিক্ষা খারাপ হলে খবর আছে (শাকচুন্নি) ফোন দিলাম, কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ ৷ তবে এই কি সে, যে আমার ফরম ফিলাপের টাকা দিয়েছিল? বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ছাত্রীকে ফোনটা গিয়ে রুমে এসে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম ৷ দুই দিন পর হটাৎ আমার নামে একটা পার্সেল আসলো ৷ খুলেই অবাক হয়ে গেলাম ৷ একটা মোবাইল, আর সাথে একটা চিরকুট ৷ প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলবে না ৷ মেয়েদের সাথে মোটেও না ৷ (শাকচুন্নি)
কে এই শাকচুন্নি? আমার সব সমস্যা সে কিভাবে জানে? প্রেরকের কোন নাম ঠিকানাও দেওয়া নেই ৷ অনেক চেষ্টা করেও তার কোন খোজ পেলাম না ৷ এভাবেই চলতে থাকলো ৷ যখনই কোন সমস্যায় পড়ি তখনই এভাবে সমাধান আর সাথে একটা মেসেজ অথবা চিরকুট ৷ এই শাকচুন্নি যেন আমার জীবনের একটা অংশে পরিনত হলো ৷ জানিনা সে কে, তবু তার প্রতি হাজার অনুভূতির জন্ম হয়েছে মনের মধ্যে ৷ যেকোনভাবে তাকে আমার জীবনে পাওয়ার আকাঙ্খা দৃঢ় হয়েছে ৷ আমার পড়াশুনা শেষ হয়েছে ৷ একটা ভাল চাকরিও পেয়ে গেছি ৷ একটা বাসা নিয়েছি, আজই উঠবো ৷ সবাই এখানে থেকে যেতে বলছিল, কিন্তু মনে সায় দিল না ৷ বের হওয়ার আগে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম ৷ সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখি ছাত্রী দাড়িয়ে আছে,
> চলে যাচ্ছেন? (ছাত্রী)
> হুম (আমি)
> একা?
> একাই তো আমি
> আমাকে নিবেন না?
> মানে?
> একটা মেয়ের পক্ষে এর চেয়ে ভালকরে বোঝানো সম্ভব না কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললাম,
> আমার জীবনে অন্য কেউ আছে ৷ আমায় মাফ করো
মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসলাম ৷ হটাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসলো ৷ আমাকে সাথে নাই নেন, শাকচুন্নিকেও রেখে যাবেন? নাম্বারটা পরিচিত, হ্যা, সেই নাম্বার ৷ সাথে আবার ফিরে গেলাম ৷ কিন্তু মেয়েটাকে দেখতে না পেয়ে আন্টির কাছে গোলাম ৷
> আন্টি একটা কথা বলার ছিল (আমি)
> বলো (আন্টি)
> আন্টি মেঘার ব্যাপারে (মেঘা আমার ছাত্রীর নাম)
> জানি বাবা, মেঘা আমায় সব বলেছে
> মেঘা কোথায়
> ওর মনখারাপ হলে একটাই যায়গা, ছাদ এক দৌড়ে ছাদে গেলাম ৷
এককোণে দাড়িয়ে আছে মেঘা ৷ আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম ৷ মেয়েটা সেভাবেই দাড়িয়ে আছে ৷ আমি আস্তে করে হাতটা ধরলাম ৷ কিছু বলল না ৷ সন্ধ্যা নেমে আসছে ৷ হটাৎ হাতে একটু চাপ অনুভব করলাম ৷ হুম, আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো মেঘা