মানত কন‍্যা

মানত কন‍্যা

লাহা বাড়িতে আজ খুব হৈ হুল্লোর হচ্ছে, বাড়িতে শ‍্যামা মা এর পুজোর প্রস্তুতি চলছে,সারা বাড়ি খুব লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে, একদম একটা মেয়ের বিয়েতে যেরকম খরচা হয় আর যেরকম আয়োজন হয় সেইরকম করা হয়েছে কারন এ বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ উমার বেশ অনেক দিন হয়ে গেল বাচ্চা হয়না, শাশুড়ির কাছে এই নিয়ে কম মুখ ঝামটা সে শোনেনি, চোখের জল ফেলেছে দিনরাত, উমার স্বামী ছিল অত্যন্ত ভালোমানুষ, স্ত্রীকে বোঝাতেন ভগবানের উপর ভরসা রাখো দেখো ঠিক তিনি কোন না কোনো উপায় বের করে দেবেন, এই শ‍্যামা মা এর কাছেই উমা মানত করেছিল যদি মা এর কৃপায় সে সন্তান সম্ভবা হয় তাহলে সে মাকে নিজের ঘরের মেয়ে করে রাখবে সারাজীবন।

আজ উমা সন্তান সম্ভবা তাই শ‍্যামা মা এর পুজো হচ্ছে বাড়িতে,রাতে লোকজন ও খাওয়া দাওয়া করবে।

উমা সন্তান সম্ভবা হওয়ায় ঠাকুরের কোনো কাজ করতে পারছিল না,পাড়ার কয়েকজন বউ আর ননদ মিলে পুজোর জোগাড় করছে।ঠাকুর এর পাশেই বসেছিল সে,সবাই কেমন জোগাড় করছে দেখছিল তখনই শাশুড়ি কথা শোনাতে ছাড়লেন না,”আমাদের যেন বাচ্চা হয়নি? আর আমরা এ অবস্থায় যেন কোনো কাজ ও করিনি,ওনার একার বাচ্চা হচ্ছে, হমমহহ,বলে মুখ ঝামটা দিল উমাকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল উমা ওখান থেকে উঠেই চলে গেল।

উমার ননদ বলল আহহ মা কেন বৌদিকে এ অবস্থায় এসব কথা শোনাচ্ছো,জানো এসময় কাদাতে নেই।আজ আমার শাশুড়ি যদি আমার সাথে এরম ব‍্যবহার করে তুমি মেনে নিতে পারবে?

উমা চুপ করে যা করছিস কর, বেশি কপচাস না,বলেই উনি নিজের ঘরে গেলেন।
রাত তখন বারোটা ছুই ছুই জোর কদমে মা এর পুজো চলছে,উমা তারপর আর নীচের ঠাকুরঘরে আসেনি, কাদতে কাদতে সে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিল।উমার বর তমাল ঠাকুর মশাইয়ের সাথে পুজোয় বসেছে,উমা র বাচ্চার মানতের জন‍্য যখন যজ্ঞ শুরু হল,যজ্ঞের আগুন যেন সেই গগন চুম্বি,সারা বাড়ি সেই যজ্ঞের ধোয়ায় ভরে গেছে।
ওদিকে উমার ঘরে কে যেন এসছে, মা ও মা ওঠ, কোলে নে,তোর এতবছরের সাধ যে পূর্ণ হল রে,আমি আসছি বাড়ির মেয়ে হয়ে তোর কোলে, তোকে আর কেউ কষ্ট দিতে পারবে না,উমার সারা শরীর যেন ভার হয়ে আছে,উঠে বসার শক্তি নেই তাও কোনোমতে উঠে বসে উমা, ঘরভর্তি ধোয়ার মধ্যে সে শুধু নূপুরের আওয়াজ শুনতে পেল যেটা ধীরে ধীরে যেন হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত