একজন অভাগী মায়ের নাম রাহেলা বেগম। দু’মেয়ে জন্ম দেওয়ার পর আরেক সন্তান যখন গর্ভে তখন তাঁর স্বামী মারা যান। বিয়ে হওয়ার পর থেকেই দুঃখ-কষ্ট ঘিরে ধরেছে রাহেলা বেগমকে। তাঁর বাবা-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাঁকে বিয়ে দিয়েছিলেন রশিদ আহমেদের সাথে। বিয়ের কিছুদিন পরেই রাহেলা বেগম বুঝতে পারেন এই সংসারে সারাজীবন হয়তো দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে তাঁকে। রাহেলা বেগমের স্বামী রশিদ আহমেদ তেমন কোনো কাজ করতেন না। সামান্য কাজ করে যেই টাকা উপার্জন করতেন তা তিনি জুয়া খেলে, মদ পান করে শেষ করতেন। যখন জুয়া খেলা এবং মদ পান করার টাকা থাকতো না তখন তিনি নিজের স্ত্রী রাহেলা বেগমের প্রতি অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন। নির্যাতনের কারণে নিজের কাছে থাকা সামান্য টাকা তাঁর স্বামীকে দিয়ে দিতেন রাহেলা বেগম। প্রত্যেক রাতে মদ পান করে এসে নানারকম অজুহাতে লাঠি দ্বারা রাহেলা বেগমের শরীরে আঘাত করতেন রশিদ আহমেদ। নির্যাতনের যন্ত্রণায় চিৎকার করতেন রাহেলা বেগম।
নির্যাতনের পাশাপাশি শুনতে হতো অশ্রাব্য সব গালি।
নিগূঢ় নিশিতে যখন চারপাশের পরিবেশ স্তব্ধ, মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন এই একটি বাড়ি থেকে শোনা যায় নির্যাতনের করুণ আর্তনাদ।
রাহেলা বেগমের মেয়ে দু’টি পাশের রুম থেকে নির্যাতনের সেই করুণ দৃশ্য দেখতো এবং নীরবে চোখের পানি ফেলতো।
রাহেলা বেগমের মেয়ে রোজিনা এবং শিখা দু’জন-ই বয়সে বেশ ছোট ছিল, তাই তারা তাদের বাবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না।
রাহেলার স্বামী রশিদ আহমেদ সব কাজ-কর্ম ছেড়ে দিলেন। মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে জুয়া খেলতেন এবং নেশাদ্রব্য সেবন করতেন। সংসারের প্রতি কোনো খেয়াল রাখতেন না তিনি। ধার-দেনা করে নিজে ঠিক-ই চলতেন, কিন্তু মেয়েদের এবং স্ত্রীর প্রতি কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতেন না। পুরোপুরি দায়িত্বহীন হয়ে গেলেন। চরম দুঃখ-কষ্ট গ্রাস করলো অসহায় পরিবারটিকে। কখনো দু’বেলা আবার কখনো না খেয়েই দিনযাপন করতে হচ্ছে অসহায় মা এবং মেয়েদের। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নীরবে কাঁদতো রাহেলার মেয়ে দু’টি।
মায়ের মন সাগরের মতো বিশাল। তাই তিনি এদিক-সেদিক ছুটতে লাগলেন মেয়েদের মুখে একটুখানি খাবার তুলে দিতে। যেই দায়িত্বটা পালন করা উচিৎ ছিল বাবার, সেই দায়িত্ব পালনে একজন অসহায় মা ছুটে চলেছেন সবখানে।
রোজিনা এবং শিখার অনেক স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে নিজের পা-এ দাঁড়াবে। কিন্তু সেটা শুধু স্বপ্ন-ই রয়ে যাবে, হয়তো কখনো পূরণ হবে না।
নেশাদ্রব্যের বিষাক্ত পদার্থ আস্তে আস্তে মানুষের শরীরকে ধ্বংস করে দেয়।
যার ফলশ্রুতিতে নেশাদ্রব্যের বিষে দূর্বল হয়ে পড়লেন রশিদ আহমেদ। এখন তিনি আর হাঁটতে পারেন না, উঠতে পারেন না বিছানা হতে। স্বামীর নির্যাতন হতে রক্ষা পেলেন রাহেলা বেগম। কিন্তু, কোনো এক নতুন কষ্ট ঘিরে ধরলো তাঁকে। তাঁর স্বামী অসুস্থ, এটি-ই এখন তাঁর বড় কষ্ট। আমাদের বাংলার মায়েদের মন হাজারো মমতায় ভরা। চরিত্র খারাপ হলেও রশিদ আহমেদ তো তাঁর-ই স্বামী, এটাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন রাহেলা বেগম। নির্যাতনের কষ্টগুলোর চেয়ে এটাই যেন তাঁর কাছে অসহ্য কষ্ট। যেই মানুষটা দিনের পর দিন নির্যাতন করতেন আজ সেই মানুষটার-ই সেবায় নিয়োজিত রাহেলা বেগম। রাহেলা বেগম যখন তাঁর স্বামী রশিদ আহমেদের সেবা করতেন, তখন তিনি স্পষ্ট দেখতে পেতেন তাঁর স্বামীর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। হয়তো হৃদয়হীন মানুষটা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু, তখন বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেছে। ভুলগুলো শুধরে নতুনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ এখন আর নেই।
রাহেলা বেগমের দায়িত্ব যেন আরও বেড়ে গেল। একদিকে স্বামীর সেবা অন্যদিকে সংসার খরচ, দু’টি দায়িত্ব একলা পালন করতে হবে তাঁকে। রোজিনা এবং শিখা, দু’বোন তাদের বাবার সেবা করতো এবং রাহেলা বেগম মানুষের বাড়িতে বিভিন্ন কাজ করতেন। অন্যের বাসা থেকে কখনো চাল-ডাল, আবার কখনো ভাত-তরকারি নিয়ে আসতেন।
যখন পরিবারের এই দুর্দশা তখন রাহেলা বেগমের গর্ভে আসলো আরেক সন্তান। সন্তান গর্ভে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে লাগলেন তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি ইট ভাঙার কাজ করতেন রাহেলা বেগম।
এই মা-ই এখন পরিবারের ভরসা। তাই হাজারো কষ্ট সহ্য করে বাবার দায়িত্ব পালন করতে ব্যস্ত অসহায় মা।
কয়েকমাস পর রাহেলা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর গর্ভের সন্তানের দুনিয়াতে আসার সময় হতে চলেছে। আবারও অসহ্য কষ্ট নেমে এল রশিদ আহমেদের পরিবারে। রাহেলা বেগম আর কাজ করতে পারেন না। না খেয়ে থাকতে হচ্ছে মেয়েদের। অসুস্থ মানুষটার ঔষধ ফুরিয়ে গেছে। কেনা হচ্ছে না টাকার অভাবে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদে তাঁর মেয়ে দু’টি। সবকিছু বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন রাহেলা বেগম এবং রশিদ আহমেদ, কিন্তু তারা এখন নিরুপায়। শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাঁদের কাছে। গ্রামের বিভিন্ন মানুষ দেখতে আসতেন অসুস্থ দম্পতিকে। সমাজের মানুষগুলো বড় স্বার্থপর। কোনো মানুষ-ই এগিয়ে আসেননি তাঁদের দুর্দশার সময়ে। সবাই শুধু চোখ দিয়ে দেখে গেছে এবং শুনিয়ে দিয়েছে লোক দেখানো কিছু বাণী।
খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে গেল রোজিনা এবং শিখা। আর সহ্য করতে না পেরে অসহায় মেয়ে দু’টি হাত পাতলো মানুষের কাছে। যাকে বর্তমান সমাজের মানুষ ভিক্ষা নামে চেনে। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া বাকি সবাই খালি হাতে ফিরিয়ে দিলো অসহায় মেয়ে দু’টিকে।
যন্ত্রণা যখন অসহ্য হয়ে যাচ্ছিল তখন আত্মহত্যা করে ফেললো রাহেলা বেগমের ছোট মেয়ে শিখা। দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো একটি অসহায় প্রাণ। নীরবে মৃত্যুবরণ করলো আরেকটা স্বপ্ন।
পরিবারের শোকের ছায়া মুছে যেতে না যেতেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন রশিদ আহমেদ। চারজনের পরিবারটি পরিণত হলো দু’জনের পরিবারে। গ্রামের কিছু মানুষ রশিদ আহমেদের মৃতদেহ দাফন করলেন।
কিছু মানুষ আছে যারা শুধু লোক দেখানো দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে থাকেন। মূল দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো কখনোই পালন করে না সমাজের এইরকম মানুষগুলো।
দুঃখ-কষ্টের সাথে যুদ্ধ করে সময় অতিবাহিত হতে লাগলো অসহায় পরিবারটির।
সময়ের নিকশ কালো আঁধারে ঢাকা পরিবার আলোকিত করে দুনিয়াতে এল রাহেলা বেগমের ছোট্ট ছেলে সন্তান। কষ্টের মাঝে জন্ম নেওয়ায় সব কষ্ট ভুলে রাহেলা বেগম ছেলের নাম রাখলেন আনন্দ আহমেদ। ছোট্ট আনন্দকে রোজিনার কাছে রেখে আবারও মানুষের বাড়িতে কাজ করতে যেতে শুরু করলেন রাহেলা বেগম। সারাদিন কাজ করে, পরিশ্রম করে বাড়িতে ফিরে যখন সন্তানের সুন্দর মুখটা দেখতেন তখন সব কষ্ট ভুলে যেতেন রাহেলা বেগম।
কিছুদিন পর গ্রামে একজন সরকারি লোক আসলেন। তিনি গ্রামের মহিলাদের সেলাইয়ের কাজ শেখাবেন। রাহেলা বেগম সেই লোকটিকে অনুরোধ করে সেলাই প্রশিক্ষণ দলে যোগ দিলেন।প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেলাইয়ের কাজ পুরোপুরি শিখলেন তিনি। কোনো এক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কিনলেন রাহেলা। তিনি মহিলা এবং ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের পোশাক তৈরি করেন। কাপড় সেলাই করে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে বেশ ভাল-ই চলতে লাগলো রাহেলার সংসার। অসহ্য কষ্টগুলো ঢেকে গেল সময়ের কালো আঁধারে। ফিরে এল কিছুটা সুখ। সময়ের কালো আঁধারে যেন দেখা মিললো কিছুটা আলোর রেখা। মানুষের বাড়িতে কাজ করা ছেড়ে দিলেন রাহেলা বেগম। সেলাইয়ের কাজে তাঁর হাত বেশ ভাল। তাঁর সেলাইয়ের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়লো পুরো গ্রামে। গ্রামের বাহিরে থেকেও বিভিন্ন মানুষ আসতে লাগলো পোশাক বানিয়ে নিতে। কাজের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। তিনি একা আর পারছিলেন না। রাহেলা বেগম তাঁর মেয়ে রোজিনাকে সেলাইয়ের কাজ শেখাতে লাগলেন। রোজিনা বেশ ভালোভাবে সেলাইয়ের কাজ শিখে গেল। মা-মেয়ে মিলে কাপড় সেলাই করতে লাগলেন। রাহেলা বেগম ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুললেন টাকা জমানোর জন্য। সেই একাউন্টে তিনি প্রতিমাসে টাকা জমা রাখতে লাগলেন ছেলের ভবিষ্যতের জন্য। রাহেলার ছেলের বয়স যখন ছ’বছর তখন তিনি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালেন।
সমাজের প্রত্যেকটা মায়ের মতো রাহেলা বেগমের স্বপ্ন ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন।
রোজিনার বিয়ে দিয়ে দিলেন পাশের গ্রামে। এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর।
রাহেলা বেগম কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
তবুও থেমে যাননি তিনি। অসুস্থ অবস্থায় কাজ করে যেতে লাগলেন। ছেলেকে শহরে রেখে পড়ালেখা করাতে লাগলেন। পড়ালেখার খরচ কতটা কষ্ট করে যোগাতেন তা একমাত্র আল্লাহ আর রাহেলা বেগম-ই জানেন। তিনি নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলের জন্য টাকা পাঠাতেন। ছেলে যখন যা চাইতো তা তিনি দিয়ে দিতেন। ছেলেকে কখনও বুঝতে দিতেন না তিনি নিজে কতটা কষ্ট করে যাচ্ছেন। পরনের একটা ছেঁড়া কাপড় কিছুদিন পর-পর সেলাই করে পরিধান করতেন, তবুও নতুন কাপড় কিনতেন না। দিনের পর দিন অসুস্থ থাকতেন, তবুও কয়েকটা টাকার ঔষধ কিনতেন না। তাঁর মনে হতো যদি ঔষধ না কিনে সেই টাকা ছেলেকে পাঠিয়ে দেন তাহলে ছেলের হয়তো কোনো কাজে আসবে।
কয়েক বছর পরিশ্রম করার পর কিছুটা থেমে যান রাহেলা বেগম। তিনি চোখে কম দেখতে লাগলেন। সেলাইয়ের কাজটা আর করতে পারেন না।
কোনো উপায় না থাকায় মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে টাকা নিয়ে ছেলের কাছে পাঠাতে লাগলেন রাহেলা বেগম। অসুস্থতা বেড়ে গেল রাহেলা বেগমের। বিছানা ছেড়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয় তাঁর। দু’বছর পর রাহেলার ছেলে আনন্দ পড়ালেখা শেষ করে গ্রামে ফিরে আসে। সাথে নিয়ে আসে নিজের স্ত্রীকে। মাকে না জানিয়ে শহরে বিয়ে করেছিল আনন্দ।
ছেলের বউকে দেখে হতবাক হয়ে গেলেন রাহেলা বেগম! মনে অনেক কষ্ট পেলেন তিনি। ভাবতে লাগলেন, যেই ছেলেকে এত কষ্ট করে গড়ে তুললেন সেই ছেলে তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললো।
কে জানতো কষ্ট সবে শুরু মাত্র। ছেলে আর ছেলের বউকে মেনে নিলেন রাহেলা বেগম। গ্রামের-ই একটা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলো আনন্দ।
কিছুদিন পর বেরিয়ে আসলো আনন্দ এবং আনন্দের বউয়ের আসল রূপ। বিভিন্ন অজুহাতে রাহেলা বেগমকে অশ্রাব্য সব গালি দিতো আনন্দের বউ। সবকিছু নীরবে সহ্য করে যেতেন রাহেলা বেগম, শুধুমাত্র একটু থাকা-খাওয়ার জন্য।
মায়ের মতো শাশুড়ির শরীরে আঘাত করতে দ্বিধা করতো না আনন্দের বউ। জানি না এটা কোনো মানুষ করতে পারে কি না? আনন্দ বউয়ের এইসব কাজে কোনো প্রতিবাদ করতো না। বরং বউয়ের পক্ষে কথা বলতো।
আঁধার কালো রাতে যখন চারপাশের পরিবেশ স্তব্ধ, তখন এই অভাগী মায়ের ঘর থেকে ভেসে আসতো করুণ আর্তনাদ। রাহেলা নীরবে চোখের পানি ফেলেন আর ভাবেন, নিজে না খেয়ে, অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে যেই ছেলেকে গড়ে তুললেন সেই ছেলে আর ছেলের বউ আজ তাঁকেই নির্যাতন করছে।
বৃদ্ধা বয়সে বাড়ির সবরকম কাজ করতেন রাহেলা বেগম। কাজ না করলে ছেলের বউ খেতে দিতো না। নিজের বাড়িতে কাজের বিনিময়ে খাবার পান তিনি, একজন মায়ের এর চেয়ে আর বড় কষ্ট কী হতে পারে? হঠাৎ এক রাতে রাহেলা বেগম শুনতে পেলেন পাশের রুমে আনন্দ আর আনন্দের বউ তাঁকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছে।
“শোনো, তোমার মাকে আমার অসহ্য লাগে, তার সাথে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।” আনন্দের বউ বেশ জোর গলায় বললো।
“তাহলে কী করবো তুমি বলো?” আনন্দ তার বউকে বললো।
” তোমার মাকে বের করে দাও বাড়ি থেকে।” আনন্দের বউ কোনো দ্বিধা না করে বলে দিলো।
“ঠিক আছে তুমি যা বলবে তা-ই হবে।” কোনো প্রতিবাদ করলো না আনন্দ।
পাশের রুম থেকে সব কথা শুনলেন রাহেলা বেগম। কলিজা ছিদ্র করে একরাশ কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে আসা চোখের পানি নীরবে গড়িয়ে পড়তে লাগলো অসহায় মায়ের চোখ দিয়ে। রাতের আঁধারেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন রাহেলা বেগম।
পরদিন সকালে আনন্দের বউ দেখলো তার শাশুড়ি কোথাও নেই, সে তখন আনন্দকে বললো, “যাক আপদ বিদায় হয়েছে মনে হয়।”
অসহ্য কষ্ট সহ্য করে, পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করা মা আজ রাস্তার মানুষ। সেই মমতাময়ী মা আজ একটু খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতেন। একজন স্কুল শিক্ষকের মা আজ ভিক্ষুক। আজ সমাজ যাকে ভিক্ষুক বলে গালি দেয় সেই মমতাময়ী মা একদিন মেধাবী ছাত্রের আদর্শ মা ছিলেন। আমাদের সমাজ এক লুকায়িত পর্দা দ্বারা আবৃত। পর্দার ওপাশে রয়েছে আলো-আঁধার। পর্দার আড়ালে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে ভালো-মন্দ অনেক ঘটনা। যার পুরোটা আমরা দেখতে পাই না। হয়তো দেখেও না দেখার অভিনয় করি। আমরা নিজেরা প্রত্যেক-ই একজন অভিনেতা।
আমাদের মিথ্যা অভিনয়গুলোর জন্য কত শত মানুষ আজ অসহায়, অবহেলিত।
সমাজের সেই লুকায়িত পর্দাটি আমাদের নিজের-ই তৈরিকৃত। রাহেলা বেগমের মতো শত শত অসহায় মা আজ নির্যাতিত হচ্ছে লুকায়িত সেই পর্দার আড়ালে।
বদলে ফেলুন নিজেকে, বদলে ফেলুন সমাজকে, বদলে ফেলুন সোনার বাংলাকে।