স্বার্থপর

স্বার্থপর

ইমন এক multinational সংস্থার বড়ো অফিসার আজ ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় আসছে প্লেনে করে।
প্লেনে উঠে সিট বেল্ট বেঁধে আলতো করে হেলান দিলো।

প্লেনে উঠে আজ হটাৎ করে সুচরিতার কথা মনে পড়ে গেলো। কলেজ এ প্রথম যে মেয়েটাকে দেখে হৃদয় নাড়া দিয়েছিলো সে ছিল সুচরিতা।হিস্ট্রি অনার্সের সুচরিতা ইমন এর ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তাই কদিন বাদেই যখন ইমন প্রপোস করেছিলো সুচরিতা প্রথমে না দিয়ে শুরু করেছিলো তারপর ধীরে ধীরে হা তে পরিণত হয়।

তারপর কলেজের ক্লাস কমায় করে একসাথে ঢাকুরিয়া লেক যাওয়া,একসাথে 8বি বাসস্ট্যান্ডে আড্ডা মারা,আবার কখনো নন্দনে সিনেমা দেখা সবই করেছে।দুজনের মনের ছিল অগাধ মিল আর দুজন দুজনকে খুব ভালো বুঝতো।
তাই দুই পরিবারের মতামত নিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল। বিয়ের প্রথম প্রথম দুজনেই চাকরি পেয়েছিল একটা বেসরকারি স্কুলে।বেশ ভালোই চলছিল জীবন একসাথে স্কুলে যাওয়া একসাথে টিফিন করে ভাত ডাল আর রুই মাছের ঝোল নিয়ে টিফিন টাইম এ বসে খাওয়া। সুচরিতা বাড়িতে এসে ইমনের পছন্দ মতো খাবার করে দিতো।বেশ ভালোই চলছিল।শুধু ছিল টাকার অভাব তাই চেষ্টা করতো কোনো বড়ো একটা চাকরির।

এক বছর পর হটাৎ করে সুচরিতা একটা বেসরকারি ব্যাংকে ভালো মাইনের চাকরি পেলো।সেখানে গিয়েই প্রচুর কাজের চাপ জগৎটা একেবারে অন্য রকম।এক পয়সা হিসেব নিকেসের ভুল হলে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।একদিন তো সুচরিতা ডেবিট ক্রেডিট এর হিসেব মেলাতে প্রায় কেঁদেই ফেলে।
ধীরে ধীরে বাড়ি হাসব্যান্ড এর টান কমতে লাগলো এই কাজের চক্করে।

বছর ঘুরতে সুচরিতা আর ইমন মিলে একটা দু কামরার ফ্লাট নিলো যাদবপুরে, ফ্লাট এর লোন মেটাত সুচরিতা,আর ইমন বাকি খরচ চালাতো।

এরপর ধীরে ধীরে দুজনের কোলে এলো একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে ঈশা।
হাসপাতাল এ যে কদিন সুচরিতা ভর্তি ছিলো সে কদিন ইমন ও হাসপাতাল থেকে এক পা নড়েনি।ছোট বেবি টাকে কোলে নিয়ে ইমন এর কি আনন্দ।পুট পুট করে চেয়ে থাকে।

দেখতে দেখতে আরো ছ মাস কেটে গেলো সুচরিতা আবার অফিস এ join করলো এবার অন্য ব্রাঞ্চ এ।
অনেকদিন কাজের অভ্যাস চলে যাওয়ায় সুচরিতা কদিনের মধ্যে ডেবিট ক্রেডিট এর হিসেব ভুল করেছে কোথা থেকে একটা দশ হাজার টাকার হিসেব মেলাতে পারছে না।

অবশেষে রাত আটটায় ম্যানেজার অর্ধেন্দু অনেক করে হিসেব মিলিয়েছে।সুচরিতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।বেরোনোর সময় ম্যানেজার কে thank you স্যার বলে বেরোতে যাবে এমন সময় ম্যানেজের বললো “যদি কিছু মাইন্ড না করেন তবে একটু কফি খাওয়া যাবে”।সুচরিতা প্রথমটায় বাড়ি ফেরার কথা বলে কাটিয়ে দিতে চাইলো কারণ সাতটার পর ইমন কে একাই বাচ্চাটাকে সামলাতে হয় বাচ্ছার আয়া চলে যায়।কিন্তু ম্যানেজার ইয়ার্কি মেরে বললো একটু কফি খেলে এমন কিছু দেরি হবে না।অগত্যা ম্যানেজার এর গাড়ি চেপে “ক্যাফে কফি ডে” (a lot can happen over coffie)তে এসে বসলো।
দুজনে দুটো হট কফি অর্ডার দিলো।
অর্ডার আসার ফাঁকে ম্যানেজার অর্ধেন্দু জিগ্যেস করলেন আপনি থাকেন কোথায়?
সুচরিতা বললো “যাদবপুরে স্যার”।

ম্যানেজার বললো “ডোন্ট কল মি স্যার এটা অফিস এর বাইরে,আপনি আমায় অর্ধেন্দু নামেই ডাকতে পারেন”
সুচরিতা বললো “ওকে স্যার”।
ম্যানেজার “আহা আবার স্যার”
সুচরিতা “সরি অর্ধেন্দু”।

এতক্ষনে কফি এসে গেছে।দুজনে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিজের নিজের সম্পর্কে বলতে লাগলো।অর্ধেন্দু অবিবাহিত এক জন যার মা বাবা অন্যত্র থাকে একা সংসার।

কফিতে চুমুক দিয়ে সুচরিতা বললো বাড়িতে তার বাচ্ছা মেয়ে আর হাসব্যান্ড নিয়ে সংসার।
কফি শেষ করে ম্যানেজার সুচরিতা কে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে গেলো।
এরম ভাবে প্রায় দিন অফিস এরপর ডিনার করে একসাথে ম্যানেজার এর সাথে বাড়ি ফিরত।
একদিন ইমন বলেই বসলো একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে হয় না মেয়েটা তোমাকে ছাড়া এতক্ষন থাকে।সুচরিতা বললো কি করবো কাজ শেষ হয় না।

আরো দিন কয়েক পর সুচরিতা রাত জেগে কারো সাথে কথা বলছিল হটাৎ করে ইমনের ঘুম ভেঙে গেলো ইমন শুনতে পেলো “প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমার পক্ষে তোমার সাথে মুম্বাই যাওয়া সম্ভব নয়”।
আরো কদিন পর একদিন দেখলো ইমন,ম্যানেজার এর গাড়ি থেকে নেমে সুচরিতা বাই বাই করছে।

ইমন বললো “তুমি কেন প্রতিদিন ম্যানেজার এর সাথে ওর গাড়িতে যাও।ওর সাথে এতোক্ষন কাটানোর কি আছে।”
সুচরিতা খানিক রেগে বললো “তা তুমি চাও আমি প্রতিদিন ঘন্টা দুয়েকের রাস্তা বাসের ধাক্কা খেয়ে যায়,নিজের তো গাড়ী কেনার মুরোদ নেই বউ একটু সুবিধা পাচ্ছে সেটাতেও জ্বলন।”
ইমন বললো “এসব কি বলছো”।

সুচরিতা “হা ঠিকিই বলছি আমার সব বান্ধবীদের হাসব্যান্ড এর রোজগারেই চলে আর আমার হোম লোন দাও সংসারের বোঝা টানো এরপর এতো কথা”

ইমন বললো “তুমি কি ভাবছো লোন দিতে পারবো না”
সুচরিতা বললো “যদি পারো তো একটা ভালো চাকরি খুঁজে দেখাও তিন বছরে কিছুই তো পারলে না”।
হটাৎ করে বাচ্চাটা কেঁদে উঠলো ইমন কোলে তুলতে গেলো সুচরিতা বললো ‘ছাড়ো ছাড়ো আর লোক দেখানো কাজ করে লাভ নেই”।

সে রাতে ইমন খাওয়া দাওয়া করলো না নিজের যোগ্যতা নিয়ে একটা প্রশ্ন মনে গজগজ করতে লাগলো।
পরদিন সকাল থেকে চাকরির জন্য আবেদন পাঠানো শুরু হলো।
মাস তিনেক ইমন আর সুচরিতার কোনো কথা নেই।

মাস তিনেক পর ইমন স্কুলে বেরোতে যাবে এমন সময় সুচরিতার একটা ফোন এলো ফোনের এপাশ থেকে সুচরিতা বললো “হা হা ডার্লিং তুমি ওই 8বি তেই এস আমাকে পিক আপ করে নিও।”
ইমন একটু পিছু নিলো সুচরিতার কাকে ও ডার্লিং বলছে।

এগিয়ে গিয়ে দেখলো সেই ম্যানেজার এর গাড়িতে সুচরিতা উঠে পড়লো।
রাতে ইমন সুচরিতা কে বললো “কি ব্যাপার আজকাল বসকে ডার্লিং বলছো বসের গাড়িতে যাওয়া আসা!”
সুচরিতা রেগে বললো “এই তুমি কি আমাকে সন্দেহ করো আমার ফোন এ আড়ি পাত তোমার লজ্জা করে না নিজের বউকে চরিত্রহীন বলতে।বেশ করি আমি বসের গাড়িতে যায় তোমার কিছু প্রবলেম আছে? আমার চাকরি টিকিয়ে রাখতে হলে এসব করতে হবে তোমার সহ্য হলে থাকো নইলে বিদেয় নাও”।

যতই হোক ইমন এর ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এতটা অবজ্ঞার কথা অন্তরে ঘা দিলো।
ইমন ও চিৎকার করে বললো “তোমার লজ্জা করে না বাড়িতে একটা বাচ্ছা মেয়েকে রেখে দিয়ে বসের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াও?”

সুচরিতা বললো “না করে না,বেশ করি,যা করি আরো করবো”,তোমার থাকতে হলে থাকো নয়তো ডিভোর্স নাও”।
ইমন বললো “হা হা ডিভোর্স ই নিতে হবে”।

দিন সাতেক পর সুচরিতা ইমন এর হাতে একটা ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে বললো “এতে সাইন করে দিও”।
ইমন পড়ে সুচরিতা কে বললো”তুমি এ কি করলে আর একবার ভেবে দেখলে না বাচ্চাটার কি হবে”
সুচরিতা বললো ” যা করেছি ভালোর জন্যই করেছি আর ওই দু বছরের বাচ্ছা আমার কাছেই থাকবে তবে তুমি চাইলে মাসে একবার করে দেখা করতে পারো বাচ্ছার সাথে”
ইমন বললো “তুমি কি ওই তোমার বস কে বিয়ে করবে”

সুচরিতা বললো “কি করবো তোমার জেনে লাভ নেই এই পেপারে sign করে আমাকে মুক্তি দাও”।
ইমন রগে পেপার এ সাইন করে পেপার টা সুচরিতার দিকে ছুড়ে মারলো”।
সুচরিতা রেগে ইমন কে ধাক্কা দিয়ে বললো “এতো তেজ কিসের বেরিয়ে যাও”

এতক্ষনে প্লেন কলকাতা বিমানবন্দরে অবতীর্ণ হবে airhostest দের announce এ ইমন বাস্তব জগতে এলো।
এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে যাদবপুর এর উদ্যেশে রওনা দিলো।

সুচরিতার সাথে ডিভোর্স এর পর মাস ছয়েক গরফা তে একটা বাড়ি ভাড়া করে ছিল তারপর ভাগ্যের চাকা তাকে টেনে নিয়ে যায় এক multinational কোম্পানির দোরগোড়ায় তার পর আজ দু বছরের পরিশ্রমে সে এক গুরুত্বপূর্ণ অফিসার।আজ নিজের দুটো গাড়ি,ভুবনেস্বরে কোম্পানির একটা ফ্লাট একটা গাড়ি তার জন্য বরাদ্দ।অফিসার অনেক সুন্দরীই বস ইমন কে হস্তগত করতে চেয়েছিল কিন্তু ইমন আর এই প্রেম জালে পড়তে চায় না।যাই হোক এখন তার জীবনের কাজ দুটো একটা অফিস আর দ্বিতীয় হলো মেয়ে ঈশা।ওই মাস দুই ছাড়া ছাড়া রোববার দেখে মেয়ের সাথে দেখা।

দেখতে দেখতে ইমন পৌঁছে গেলো সুচরিতার ফ্লাট এ বেলা দশ টায় ,এসে কলিং বেল বাজালো পাঁচ বছরের ঈশা দৌড়ে এলো বাবা….ইমন জড়িয়ে ধরলো। এক ঐশ্বরিক স্পর্শ ইশার নরম হাতের ছোয়া ইমন কে অনাবিল শান্তি দেয়। এ যেন তৃষিত মরুভূমির বুকে এক টুকরো জলাশয়।ইশার বুকে কান রাখলে যেন হৃদপিন্ড থেকে ডাক ভেসে আসে।ছোট মেয়েটার কিছুটা মুহূর্ত আনন্দে ভোরে দিতেই তো কলকাতায় আসা।সাথে সাথে কাজের মাসি বললো “দাদাবাবু mam বাড়িতে নেই আপনি ইশা কে নিয়ে যান ওই সাত টা বাজলে আবার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবেন”।
ইমন বুজতে পারলো এই কাজের মাসি সুচরিতার শেখানো বুলি আওড়াচ্ছে।তাই আর দেরি না করে ইশা কে নিয়ে ট্যাক্সি তে উঠলো।প্রথমে গেলো সাউথ সিটি মল এর দিকে।

গাড়ি তে ইমন ইশা কে বললো “কেমন আছে আমার ছোট্ট মাম?আজ আমরা কি কি করবো”?
ইশা বলল ভালো বাবা,আজ আমরা বাগলী জাম্পিং করবো,তারপর সাউথ সিটির টপ ফ্লোরে যে খেলার জায়গা আছে ওখানে খেলবো আর মজার সিনেমা দেখবো”।

ইমন বললো ঠিক আছে মামনি।আর তুমি স্কুলে কি কি শিখলে ?ইশা আদো আদো গলায় বলে “chubby chicks dimple chin rowsy lips teeth within”..
বাবা হাততালি দাও ভালো হয়েছে না?
ইমন বলে “হা মামনি আমার ইশা বেস্ট”।

আবার গল্প জুড়ে দেয় জানো বাবা “আমার বন্ধু অনিকে ওর মামমাম ওয়াটার কালার কিনে দিয়েছে ছোটা ভীম এর বুক কিনে দিয়েছে,পকেমন ডোরেমন দিয়েছে আমাকে মামমাম কিছু দেয়নি বলে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে লাগলো”।
ইমন মুচকি হেসে বললো “বাবা তোমাকে সব কিনে দেবে”।

ইশা বললো “জানো বাবা আমি না গানের লড়াই খেলায় হেরে যাই তুমি আমাকে অনেক গুলো গান বলে দেবে আমি শিখে নেবো।এখন গানের লড়াই খেলবে?”
ইমন বললো হা।

ইশা বললো ইয়া কি আনন্দ বলে ইশা গান শুরু করলো “জাঙ্গাল জাঙ্গাল পাতা চলা হে চাদ্দি পেহেনকে ফুল খিলা হে”
বাবা এবার তুমি হ দিয়ে গাও।

ইমন “হৃদয় আমার নাচের আজিকে ময়ূরের মতো নাচের…”
ইশা র দিয়ে “রাজা যাবে মৃগয়া তে”
এবার বাবা ত দিয়ে
ইমন “তুম দেনা সাথ মেরা”

গান টা গেয়েই ইমন চুপ করে গেলো এই গান টা যে কটা বছর সুচরিতার সাথে ছিল তাদের খুব আবেগের গান ছিল।আজ হয়তো সুচরিতা অন্য কারো সাথে নতুন তানে গান বেঁধেছে। ইমন চুপ হয়ে রইলো…
ইশা বললো “বাবা আমি ফাস্ট তুমি হেরে গেছো”।

ইমন নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বললো হা রে মা আমি হেরে গেছি,(হয়তো অন্তরে বললো জীবন যুদ্ধে সত্যি হেরে গেছি)
এরপর যাদবপুরে এক বাঙালি রেস্টুরেন্টে বসে দুজনে খেলো এই দোকানটায় ইমন আসে কারণ এখানের নলেন গুড়ের আইসক্রিম টা সুচরিতা খুব ভালো বাসতো আর ইশা ও নলেন গুড়ের আইসক্রিম ভালো খায়।ইশা কে ইমন আজ নিজের হাতে খায়িয়ে দিলো মনে পড়ে গেলো সুচরিতার অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে ইমন ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতো হয়তো সাথে থাকলে ইশা প্রতিদিন বাবার কাছে ছুটে আসতো বলতো” বাবা কি খাচ্ছ আমাকেও দাও”ইমন হয়তো একটু ভাত আর আলুভাজা ওর মুখে তুলে দিতো আজ সেটাই মেয়ের মুখে তুলে দিয়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছে।

খাবার পর গাড়ি চেপে ইশা আর ইমন গেলো সাউথ সিটি সেখানে একটা পুরো ছোটা ভীমের সিরিজ,ওয়াটার কালার,পকেমন এর কমিক্স,আরো টিনটিন এর বই কিনে দিলো।ইশার জন্য ভালো একটা জামাও কিনে দিলো।এরপর বাগলী জাম্পিং করে ইশা যখন হাপিয়ে গেলো বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ইমন নিশ্চিন্তে ইশার ছোট্ট চুলে বিলি কাটতে লাগলো।ইশা বললো “বাবা তুমি কেন মামামের সাথে থাকো না”।
ইমন বললো “বাবার তো অনেক কাজ তাই থাকে না”।

ইশা আবার বললো “জানো বাবা ওই যে অর্ধেন্দু আঙ্কেল আছে আমাকে একটুও ভালো বাসে না আমাকে খেলনা কিনেও দেয় না শুধু সিগারেট খায় আর মামমাম এর সাথে ঝগড়া করে।

একদিন আমি পুতুল চেয়েছিলাম বলে আমাকে বকেছিলো আমি তাও কথা শুনিনি তাই আমাকে সিগারেট এর লাল দিকটা দিয়ে হাত পুড়িয়ে দিয়েছিলো”।

ইমন আঁতকে উঠলো মনে মনে বললো এরা মানুষ না শুয়োরের বাচ্ছা এটুকু বাচ্ছাকে সিগারেটের ছেকা দেয় ভগবান তুমি এদের শাস্তি দাও।ইমন বললো মামমাম কিছু বলেনি।

ইশা বললো “মামমাম আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল”
ইমন ইশার হাতে চুমু খেয়ে ওকে আদর করেছিলো।ভেতরে ভেতরে ইমন ছিড়ে যাচ্ছিল কিন্তু কি করবে সুচরিতা তো একবার ফিরে এসে বলতে পারতো “ইমন আমার ভুল হয়ে গেছে চলো আবার নতুন করে শুরু করি।অন্তত মেয়েটার কথা ভেবেও ফিরতে পারত।”

দেখতে দেখতে দিন শেষ হয়ে এলো।এবার বাড়ি ফিরে চললো ইমন আর ইশা।
বাড়িতে ফিরে কলিং বেল বাজাতেই সুচরিতা দরজা খুললো ।যেন হাফ দরজা থেকে উঁকি দিচ্ছে ইশার খেলনা জামা আর বই ভরা ব্যাগ টা সুচরিতার হাতে ইমন ধরালো একি সুচরিতার অমন গৌর বর্ণ চিকন মুখখানা কেমন অমাবস্যার আঁধারে ঢেকে গেছে।সুচরিতা কেমন অবাক নয়নে ইমনের দিকে তাকিয়ে আছে এ যেন সেই কলেজ এর প্রথম দিনের প্রেমালু চাউনি।যেন অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু অনেক টা দূরত্বের বেড়াজালে কথাটা কণ্ঠ নালীর কোথাও ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু মুখে আসছে না।

পিছন থেকে অর্ধেন্দু এসে বললো সুচু চলো তোমার doctor এর এপয়েন্টমেন্ট আছে সুচরিতা দরজা টা পুরো খুলতেই ইমন বুজতে পারল সুচরিতা গর্ভবতী।

ইমন হয়তো অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু এক লহমায় সব কিছু ভুলে গেলো ভেতরটা তার ক্ষোভে জ্বালায় চূর্ণ বিচূর্ণ হতে লাগলো।

সুচরিতা কে শুধু একটা কথাই বললো “ইশার একটু খেয়াল রেখো আর যদি ওকে পরগাছা মনে হয় আমাকে খবর দিও আমি এসে নিয়ে যাবো”।

সুচরিতা বাধ্য মেয়ের মতো ঘাড় নাড়ালো।
হয়তো অনেক কথা বলার ছিল হয়তো অনেক ভুল শোধরানোর ছিল হয়তো ইমনের কাঁধে মাথা রেখে দু ফোটা চোখের জল ফেলার ছিল কিছুই হলো না।

ইমন চলে গেলো ইশা টাটা করতে লাগলো …
হয়তো ইশার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রেখে গেলো সুচরিতা ইমন আর সমাজের কাছে।সবাই যেন স্বার্থপর হয়ে আছে…

এক বছর পর ইমনের কাছে ফোন এলো ইশা হাসপাতাল এ ভর্তি।ইমন তড়িঘড়ি করে এলো মেয়ের কাছে এসে দেখলো মেয়ে মৃত্যু সজ্জায়।

কার্তিকের শীতের রাতে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে সাথে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট।সুচরিতা এসেছে হসপিটালে তার সদ্য কমাসের বাচ্ছাকে নিয়ে।

ইশা ভেন্টিলেশন এ আছে ইমন দূর থেকে একবার দেখলো কচি নরম মুখটাতে কেমন কালো মেঘের ছায়া।
সুচরিতা এগিয়ে এসে বললো ঠান্ডা লেগে এসব হয়েছে।ইমন এর রগে ঘেন্নায় ভেতরটা ছিড়ে যেতে লাগলো।
পরের দিন সকালে ডাক্তার খবর দিলো “ইশার অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে”।
ইমন ডাক্তারের হাত দুটো ধরে বললো ডাক্তারবাবু যেভাবেই হোক মেয়েটাকে বাঁচান।

ডাক্তার বললো “সরি কোনো মেডিসিন ওর শরীরে রেসপন্স করছে না। তাও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি”।
বেলা দুটো ডাক্তার এসে খবর দিলো ইশা মারা গেছে।সুচরিতা এক কোন তার আর অর্ধেন্দু র সন্তান কে কোলে নিয়ে বসে আছে।

ইমন ছুটে গেলো ইশার কাছে কেমন চাঁদ মুখ নিস্তেজ হয়ে আছে।আজ র বাবা বলে ডাকার কেউ নেই,আবদার করারও কেউ নেই।সব শেষ।ইমন মৃতদেহ টাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।

অর্ধেন্দু এসে সুচরিতা কে বললো যাক আপদ বিদেয় হয়েছে তুমি বাড়ি চলো।সুচরিতা বললো একবার মেয়েটাকে দেখে আসি।অর্ধেন্দু বললো চলো ওই ডেড বডি ইমন যা করার করবে তুমি বাড়ি চলো।

শত বাধা সত্ত্বেও সুচরিতা এলো ইমন আর মৃত ইশার কাছে।
এসে ইশা কে ধরে কাঁদতে লাগলো।

ইমন বললো সুচরিতা আজ শান্তি পেয়েছো মেয়েটাকে শেষ করে। শান্তি পেয়েছো অর্ধেন্দু কে বিয়ে করে।সুচরিতা কিছু না বলে চুপচাপ বাড়ি চলে গেলো।

ইমন মেয়েটাকে কোলে নিয়ে এগিয়ে চললো।সেই প্রথম জন্মানো ইশা কে যেমন কোলে নিয়েছিল আজও সেভাবেই নিয়েছে কিন্তু সেদিন পুট পুট করে বাচ্চাটা তাকাচ্ছিলো আজ চোখ বন্ধ।সেদিন হৃদয়ে বাবা হবার নতুন স্বাদ ছিল আজ আছে একরাশ হতাশা।ইমন মৃতদেহটা কোলে নিয়ে এগিয়ে চললো…

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত