” সকাল বেলা “
মা দাওনা কিছু টাকা।
আমার কাছেতো টাকা নাইরে বাপ।
দূর। তোমরা যে কি !কত করে বললাম আমারে কিছু টাকা দেও। তা যখন দিলে না । আমি স্কুলে যাই।
রাহেলার খুব খারাপ লাগে । একমাত্র ছেলে কিছু টাকা চেয়েছে কোথায় যেন খেলতে যেতে বন্ধুদের সাথে। তাও দিতে পারে নি। কি করবে রাহেলা । অভাবের সংসার তার উপর দ্রব্য মুল্যের বৃদ্ধি । তাদের মত মধ্যেবিত্ত পরিবারকে বর্তমান সমাজে চলতে গেলে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়। একদিকে ছেলের লেখা পড়ার খরচ , অন্যদিকে সংসার।
রাহেলার স্বামী আহমেদ আটার মিলে কাজ করে দীর্ঘ দিন যাবত। আটার মিলে কাজ করে যা বেতন পায় তাতে তাদের সংসার কোনমতে চলে । তার উপর ছেলের লেখা পড়ার খরচের টাকা জোগাতে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয় । ইদানিং নিয়মিত ডিউটির পর দুই ঘণ্টা করে অতিরিক্ত কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করছে। ছেলেকে নিয়ে রাহেলা এবং তার স্বামী আহমেদ দুজনের অনেক সপ্ন । ছেলেকে ডাক্তার বানাবে । তখন দু’জন সুখে থাকবে। ছেলে বাবার কষ্ট বুঝে কিন্তু মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়ে বাবার কাছে এটা সেটা চায়। রুবেল জানে তার আবদার রক্ষা করতে তার বাবার বেশ কষ্ট হয়।
স্কুলের বারান্দায় বসে বসে নিজের সংসার আর বাবার কথা ভাবছে রুবেল । এমন সময় তার বন্ধু সোহেল এসে বলল
চিন্তা করিস না দোস্ত আমি আমার বাবার কাছ থেকে বেশি করে টাকা নেব। আজকের খেলায় জিতলে স্যার বলেছে সবাইকে একশ করে টাকা পুরুস্কার দিবে ।
তাই নাকি ।
হ্যাঁ।
” দুপুর বেলা “
আহমেদ দুপুরে খাবার সময় সহকর্মী আজাদ সাহেবের কাছে কিছু টাকা ধার চাইল। আজাদ সাহেব একশ টাকা দিলেন হাসি মুখে। খাবারের পর আহমেদ রুবেলের স্কুলে গিয়ে পঞ্চাশ টাকা ছেলেকে দিয়ে আসে । আর বলে নিজের দিকে খেয়াল রাখিস। হঠাত করে আহমেদ সাহেব লক্ষ্য করলেন তার ছেলে কাঁদছে।
কি হয়েছে রুবেল , কাঁদছিস কেন
বাবা আমি আর কোনদিন টাকা চাইব না ।আমি জানি টাকা দিতে তোমার খুব কষ্ট হয়। বাবা দোয়া করো আমরা যেন জিততে পারি। জিতলে বিকালে তোমার টাকা তমায় দিয়ে দেব।
আচ্ছা সেটা বিকালে দেখা যাবে। কিছু খেয়েছিস।
না।
যা বাড়ী গিয়ে খেয়ে আয়। খালি পেটে কি জেতা যায়রে পাগল ছেলে।
খেয়েদেয়ে স্কুলের সকল ছেলের সাথে করে খেলতে চলে গেল রুবেল । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে । অনেক মানুষ খেলা দেখতে এসেছে। আন্ত স্কুল খেলা বলে কথা। রুবেল একাই দুই গোল করল। সভাপতি খুশি হয়ে মেডেলের সাথে রুবেল কে পাঁচশত তাকা বখশিশ দিলেন। রুবেলের আনন্দ কে দেখে। পুরু স্কুলের ছেলেরা খুশিতে আত্নহারা।
ছেলেরা সবাই ট্রাকে করে নিজেদের স্কুলে রওনা দিল। ট্রাক তার নিজস্ব গতিতে চলছে ছেলের দল বিজয় মিছিলে মত্ত। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা একটি মাইক্রো বাস কে সাইড দিতে গিয়ে ছেলেদের বহন করা ট্রাক রাস্তার পাশের ডোবায় পড়ে গেল নিমিষে । উল্লাসিত ছেলেদের দলের উল্লাস নিমিষে থেমে গেল । পানিতে তারা সবাই সলীল সমাধি হতে লাগল একের পর এক । কেউ রক্ষা করার নাই । ধীরে ধীরে সবাই কাদা পানিতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যে বরন করল নিসংশভাবে।
“সাঁঝের বেলা “
রুবেলের পকেটে পুরুস্কারের পাঁচশত টাকার নোট ভিজে অক্ষত অবস্থায় আছে । তবে যে এই টাকা পেল সে আর বেছে নাই। রুবেলের মা রাহেলার আহাজারিতে রাতের আকাশ ভারি হয়ে উঠল। শুধু রুবেলের মা নয় আর অনেকের কান্নার রোলে পুরো পাড়া যেন কান্নার আর শোকের নগরীতে রুপান্তরিত হল নিমিষেই । যেখানে রাতে হাসি আর আনন্দ থাকার কথা ছিল সেখানে পঞ্চাশের ও বেশী ছাত্রের লাশে পুরো এলাকা এমনকি পুরো দেশ নীরব হয়ে গেল । পাড়ার প্রায় প্রতি ঘর থেকে থেমে থেমে স্বজন দের কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। রুবেলের বাবা আহমেদ ছেলের লাশের পাশে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। আর তার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র জলের ধারা।
বিঃদ্রঃগল্পটি মিরেসরাইয়ের নির্মম দুর্ঘটনার আলোকে লেখা ।