খুশির সীমা

খুশির সীমা

এক্সকিউজ মি ভাইয়া!
মিষ্টি একটা কন্ঠ কানে ভেসে আসলো।কোনো সুন্দরী মেয়ের এতো মিষ্টি কন্ঠ হয় না। শ্যামলা গায়ের রঙের মেয়েদের কন্ঠ মিষ্টি আর দেখতে মায়াবী। কিন্তু আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি দেখতেও সুন্দরী। কিন্তু কিছুটা ঢঙ্গি বলা যেতে পারে। কারন মাথায় উচু করে হিজাব বাধা।চোখে চশমা।সেটা হয়তো ফ্যাশন।আর হিজাবে কতোগুলো ছোট ছোট ক্লিপ লাগানো। সব মিলিয়ে আধুনিক মেয়ে বলা যেতে পারে।

আমি বললাম,জ্বি বলুন।
-উইন্ডো সিট টা আমাকে দেয়া যাবে?
কিছুটা ভদ্রতা দেখাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এই মুহুর্তে আর পারলাম না।
বললাম,

কেনো দিবো?আমি আগে এসেছি।আগে এসে বসেছি।
-আমার একটা প্রব্লেম আছে।এজন্য বললাম।
-কি প্রব্লেম??
-আমি বমি করি।
-আমিও বমি করি।দিবো না এই সিট।

মেয়েটি ফুস ফুস করে নিশ্বাস নিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে তার অহংকারে লেগেছে।ঠিকই আছে। এসব মেয়েদের এমনই হওয়া দরকার।কিউট করে এসে বলবে, “ভাইয়া”

আর আমাদের সব মেনে নিতে হবে? হাহ!

মেয়েটি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো বাসে আর কোনো সিট খালি নেই।অবশেষে আমার পাশেই বসলো।
আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ভাবনায় ডুবে গেলাম।

ভাবনা বললে ভুল হবে। আসলে চিন্তা।গত ছয় মাস ধরে ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছি।চাকরি হচ্ছে না।এদিকে মা বলছে ছোট বোনটাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।লেখাপড়া করলে খরচ বেশি হবে।দুই বছর আগে বাবা মারা গেছে।তখন থেকে মা ই সব সামলাচ্ছে।বুঝতে পারছি না কি করবো।

তারপর যেটা হলো সেটার জন্য আমি আসলে প্রস্তুত ছিলাম না।পাশে বসে থাকা মেয়েটা ওয়াক ওয়াক করে আমার পায়ে বমি করে দিলো।

আমি হতভম্ব।
বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো না বলবো।শুধু বললাম,
‘এই হেলপার! গাড়ি থামাও।

সেদিন আর ইন্টারভিউ দেয়া হয়নি। ওই মেয়েটাকে যদি পাই কি যে করবো।

আমার মনের আশা পুরন হলো।মেয়েটির সাথে আবার দেখা হলো।আমি যেখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছি সেও সেখানে বসে আছে।আমাকে দেখে নিজেকে লুকাতে চেষ্টা করছে।সুযোগ টা আর হাত ছাড়া করলাম না।কাছে গিয়ে বললাম,

‘সমস্যা টা কি আপনার?

মেয়েটি আমতা আমতা করতে করতে বললো,
‘আসলে আমি সেদিনের জন্য দুঃখিত। তাছাড়া আমি আপনাকে বলছিলাম ওই সিট টা দিতে কিন্তু আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেন নি।

-তাই বলে আমার উপর ই? জানেন সেদিন আপনার জন্য ইন্টারভিউ মিস হইছে।
এসব বলতে বলতে আমার ডাক চলে আসলো। আমি ভিতরে চলে গেলাম।

আমার সেই অফিসে চাকরি হয়ে গেলো।প্রথম দিন অফিসে গিয়ে দেখলাম আমার ডেস্কের পাশেই ও বসে আছে।তার মানে ওর ও এখানে চাকরি হয়েছে।

তারপর থেকে প্রতিদিন ওর সাথে দেখা হয় কিন্তু তেমন কথা হয় না।ফাইলে দেখলাম ওর নাম বিথিকা।মাঝে মাঝেই অফিসে আসতো না।স্যার একদিন ওকে ডেকে কড়া গলায় বলে দিলো

‘এতো ছুটি দেয়া যাবে না।ছুটি দরকার হলে একবারে ছুটি নিয়ে নেন।’
একদিন অফিস শেষে রাস্তায় দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎ চোখ গেলো বিথিকার দিকে।ও রাস্তার পাশে বসে বমি করছে।আর সাথে রক্তও বের হচ্ছে। ও উঠে দাড়াতেই মাথা ঘুরে পরে গেলো।আমি দৌড়ে গেলাম ওর কাছে।গিয়ে দেখি অজ্ঞান হয়ে গেছে।তারপর একটা সিএনজি তে ওকে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে।ওর মোবাইল থেকে ওর মায়ের নাম্বারে কল দিলাম।এদিকে ডাক্তার আমাকে জানালো ওর পাকস্থলীতে ঘা হয়েছে। এজন্য কিছুক্ষন পর পর ই ওর বমি হয়।ব্যাপারে টা অনেক বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে। কতোদিন হাসপাতালে রাখতে হবে এখনো বলা যাচ্ছে না।

বিথিকার মা তখন কান্নায় ভেঙে পড়লো।আর আমার হাত টা ধরে বললো,
‘বাবা আমার মেয়েটাকে বাঁচাও।দেখার মতো ওর কেউ নেই।ওর একটা বড় ভাই আছে বিদেশে।ওর বাবা ছোটবেলায়ই মারা গেছে।আমি মহিলা মানুষ হাসপাতালের অতো কিছু বুঝিনা।তুমি আমার মেয়েটার পাশে একটু থেকো।

আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে না বলতে পারলাম না।বিথিকা আড়াই মাসের মতো হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।তখন ওর সব দেখাশোনা আমিই করেছি।প্রতিদিন একবার করে যেতাম।যখনি ভেবেছি ধুর!!যে আমার কিছু হয় না তার জন্য কেন এতো করবো।তখনি মনে পড়ে যায় বিথিকার সেই কথা টা।একদিন ও আমার হাত টা ধরে বলেছিলো,

‘ আমি বাঁচবো তো?
কথা টা আমার কানে সারাক্ষন ভাসে।ও প্রায়ই আমাকে আসতে দিতো না বলতো আমার ভয় লাগে আমাকে ছেড়ে যাবেন না।ওর বেডের পাশে ঘুমিয়ে কতো রাত পার করেছি।ওর চোখের দিকে তাকালেই অন্যরকম মায়া কাজ করতো। সারাদিন বসে থাকতে ইচ্ছে করতো ওর পাশে।আমার কষ্ট সেদিন সার্থক হয়েছে যেদিন ডাক্তার বলেছে ও এখন আশংকা মুক্ত।

ও সুস্থ হলেও আমি কেমন জানি একা হয়ে পড়লাম।ওকে খুব মনে পড়তো।একদিন ও ফোন দিয়ে দেখা করতে চাইলো।

আমরা একটা পার্কে দেখা করলাম।অনেক টা শুকিয়ে গেছে ও।চেহারার উজ্জ্বলতা টাই যেন নষ্ট হয়ে গেছে।কথার এক পর্যায় ও আমাকে বললো,

-আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন।পর হয়েও আপনের চেয়ে বেশি করেছেন।জানি না কিভাবে ধন্যবাদ দিবো।কিভাবে তার প্রতিদান দিবো।

-প্রতিদান দেয়া যেতে পারে।
-কিভাবে?
-আমাকে বিয়ে করে।
বিথিকা হা করে তাকিয়ে আছে।এই কথা টা হয়তো এখন আশা করেনি।
-কি বলছেন!? এমন রোগা একটা মেয়েকে বিয়ে করবেন?
-হ্যা।আমি তোমার মায়ায় পরে গেছি।তুমি তোমার মায়ার জালে আমাকে বন্দি করেছো।
বিথিকা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

বিথিকার সাথে আমার বিয়ে হলো।খুব সুখে কাটতে লাগলো দুজনের জীবন।ভালোবাসায় পরিপূর্ণ দু’জনের সংসার।

বিয়ের ছয়মাস পর।হঠাৎ একদিন রাতে পাশে হাত দিয়ে দেখি বিথিকা নেই।বুক টা ধক করে উঠলো।লাইট জাল্বিয়ে কোথাও খুজে পেলাম না।তারপর দেখি বাথরুমে ও বমি করছে।আমার ভয় লাগতে শুরু করলো।তারমানে কি ওর রোগ টা এখনো ভালো হয় নি?মেয়েটার কি আরো কষ্ট পাওয়ার বাকি আছে?
আমি বললাম,

কি হয়েছে তোমার?শরীর খারাপ করছে?বমির সাথে রক্ত বের হয়েছে?আমি কি ডাক্তার ডাকবো?
-আরে বাবা শান্ত হও।
-কেন শান্ত হবো।বলো আমাকে।

টেনশনে আমার শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিলো।আর ও মুছকি হেসে আমার কানে কানে এসে বললো,’আমি মা হচ্ছি গাধা!

আমি কিছুটা অবাক হলেও আমার কি তখন আর খুশির সীমা থাকে…

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত