নতুন কিছুর সৃষ্টি

নতুন কিছুর সৃষ্টি

“আঁকাবাঁকা নদী।
নদীর ধারে গড়ে ওঠা বিশাল ক্যাম্প।সে ক্যাম্পের একমাত্র পরিচালক রফি।
ক্ষমা মায়া এবং দান এই তিনটা বাদে সব ধরণের গুণ আছে রফি’র মাঝে।তবে দু-হাতে স্নাইপার চালানো তাঁর অদ্ভুত গুণ বলা চলে।”

এতটুকু পড়ে সিয়াম বইটি রেখে দিলো।

অনেক গল্প পড়েছে সে রফি নামে লোকটিকে নিয়ে।তবে এবার ইচ্ছে ছিলো লোকটির জীবন কাহিনী পড়বে।ইচ্ছে অনুযায়ী বইও কিনে এনেছে।ভাগ্যক্রমে পড়তে ভাললাগছে না।

মন চাইছে রফি’র মুখে মূল ঘটনা জানতে।
শখ পূরণ করতে কিছুক্ষণ বাদে সিয়াম অভ্রর নাম্বারে কল করলো,

– হ্যালো।
– জ্বি লিডার।
– চট্টগ্রাম যাবো।গাড়ি রেডি কর।
– হঠাৎ চট্টগ্রাম?
– রফি’র সাথে দেখা করতে।
– কোন রফি?ব্লাক স্যাডো গ্যাংয়ের বস্?
– হুম।
– ওহ্ মাই গড।আপনি কি বলছেন জানেন?ওনার সাথে দেখা করতে গেলে তো বেঁচে ফিরা মুশকিল হয়ে যাবে।
– তা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা।ওর সম্পর্কে অনেককিছু পড়া হয়ে গেছে।
– ওনায় নিয়ে লেখা বই পড়েন আপনি?চার ক্যাডারের চরিত্র দারুণ ইন্টারেস্টিং না লিডার?
– সুমিত,আকিল,জাহিদ ও রাফসান এর কথা বলছিস?
– জ্বি।সত্যি অদ্ভুত একটা গ্যাং।ওনাদের করা কাজ,পুরোটা যেন কল্পনা।
– হাহাহা।তা তো বটেই।প্রথমবার টক্কর নেওয়ার মতন কোনো দল পেয়েছি।যাত্র দারুণ রোমাঞ্চকর হতে চলেছে।
– আপনি কোনভাবে!
– হাহাহা,হুম।তোর ধারণা ঠিক।
– মরতে হবে লিডার।
– তোকে যা বলছি তাই কর।আমি তিন ঘণ্টা পর ক্যাম্পে আসছি।
– ওকে।আমি সব রেডি করছি।কিন্তু লিডার,যা করবেন ভেবে করবেন।
– ভাবা হয়ে গেছে।এখন রাখছি,বাই।

কল কেটে গেলো।
শুরু হলো সিয়ামের হাসি।ভয়ংকর সে হাসির শব্দ।
সাধারণ মানুষ এমন আতংকময় হাসি কখনো হাসতে পারে না।

ব্লাক স্যাডো গ্যাংয়ে আজ উদযাপন হচ্ছে।সুমিতের জন্মদিন উদযাপন।
পুরো ক্যাম্প জুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস।
সেই আনন্দ-উল্লাসের মাঝে আচমকা রেড লাইনে মেসেজ।আকিল মেসেজ চেক করে দেখে চারটি বাক্য লেখা।
“মরতে হলে রও,
বাঁচতে হলে পালাও।
টার্গেট করেছে এবার,
সাইকো পাগলের দল।”
আকিল মেসেজের আগা-মাথা কিছু না বুঝে জাহিদের কাছে গেলো।
– দোস্ত দেখতো,মেসেজের অর্থ কি?
– রেড লাইনের মেসেজ?
– হুম।
– তাহলে আমারে মাফ কর।বস্ আমাদের ছুটি দিছে।আজ মরে গেলেও গ্যাংয়ের কোনো কাজ করবো না।
– দোস্ত প্লিজ।খুব দরকারি একটা মেসেজ।

– হেহেহে,রেড লাইনের মেসেজ দরকারি ছাড়া ফালতু হয় কখনো!কিন্তু তুই বুঝোস না কেন,আমার ওভার লোড হয়ে গেছে।
– ওরে শালা,মদ খেয়ে.…..!
– চোপ।কেউ শুনে ফেলবে।

শেষ বাক্য শুনে আকিল হাসি আটকে রাখতে পারলো না।মাতলামো করছে আবার সবার থেকে ব্যাপারটা আড়াল করতে চাইছে।অদ্ভুত!!
তবে থেমে থাকলে চলবে না।মেসেজের অর্থ জানতে হবে।
এর জন্য সে রাফসানের খোঁজ করতে লাগলো।
সৌভাগ্যবশত কিছুক্ষণ বাদে পেয়েও গেলো।
ছাদে দোলনায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
আকিল রাফসানের শোয়া দেখে পেট বরাবর মারলো এক ঘুষি।
পরক্ষণে রাফসান লাফিয়ে উঠে চিল্লাতে লাগলো,’কে..কে..কে?’
আকিল কঠোর ভাবে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি।’

– ও,কি হইছে বল।
– একটা মেসেজের অর্থ বলে দে।
– ওহ্।তোর কপাল খারাপ দোস্ত।
– কেন?
– ওভার লোড।
– তোরা শালা একটাও মানুষ না।দু’বোতল রেড ওয়াইন দুজন মেরে দিয়েছিস?
– উঁহু!চার বোতল মেরেছি।
– মানে?

এর মধ্যে সুমিত ছাদে হাজির।
রাফসান সুমিতের দেখা পেয়ে বললো “সুমিত আসছে,ওর সাথে কথা বল।আমি ঘুমাই।আর একবার ডিস্টার্ব করলে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।মিম কত সুন্দর করে আমার গালে পাপ্পি দিচ্ছে।এই মিম ঠোঁটে একটা দাও প্লিজ।স্বামী সেবা করলে আল্লাহ্ তোমাকে বেহেশত দান করবে।এইতো আরো কয়টা দাও ঠোঁটে।”
এমন আরো কিছু আজগুবি কথা বলতে বলতে রাফসান ঘুমিয়ে গেলো।
আকিল এবার সুমিতের মুখের কাছে নাক নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “তোরও কি ওভার লোড দোস্ত?”
সুমিত মুখ সরিয়ে নিয়ে বললো “আর শালা ওভার লোড।বস্ চারজনের জন্য যে চার বোতল রেড ওয়াইন আনছিলো তা সব শেষ।জাহিদ রাফসান দু’বোতল করে মেরেছে।”

– হোয়াট?ঘুম থেকে উঠুক শালার দল।আপাতত তুই একটা হেল্প কর।
– কি হেল্প?
– রেড লাইনে আসা মেসেজের অর্থ বলে দে।
– কোথায় দেখি।

আকিল সুমিতকে মেসেজ দেখালো।
মেসেজটা সাধারণ এবং অসাধারণ দুটি ভাব প্রকাশ করে।
সুমিত নিজে মেসেজ পড়ে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
অতঃপর উপায়হীন হয়ে সে বললো “ডিভাইসটা আমার কাছে দে।আমি নেটে দেখি কোনো ক্লু পাই কি না।”

নিধী ঘুমিয়ে আছে।
রফি তিন ঘণ্টা যাবত চেষ্টা করছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরার।
আফসোস!সাহসে কুলাচ্ছে না।
এবার সে ডেকে ফেললো,’নিধী..এই নিধী।ঘুমিয়ে গেছো?’
নিধী চোখ খুলে এক ঝাড়ি,’দেখতে পাচ্ছো ঘুমাচ্ছি।তাহলে এভাবে চেঁচানোর মানে কি?মুডটা নষ্ট হয়ে গেলো।’

– আচ্ছা সরি।আমি ঘুম পাড়িয়ে দিবো?
– না।সবসময় স্পর্শ করার ধান্দা।
– তোমায় স্পর্শ না করলে কাকে করবো জান?
– একদম আলগা প্রেম দেখাবা না।
– রেগে আছো?
– না,রেগে থাকবো কেন?তুমি কিছু করছো?
– হুম।
– কি করছো?
– রাতে দেরি করে বাসায় আসছি।
– এটা কোনো ভুল হলো!চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
– তোমায় জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না।
– সাত দিন জড়িয়ে ধরতে পারবা না।

– ওরে বাবা।বাঁচবো কিভাবে?
– বাঁচবা কিভাবে মানে?
– বুঝবা না।আচ্ছা ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?
– না।
– প্লিজ।
– না।
– শেষবার ক্ষমা করে দাও।
– না।
– তুমি যা বলবা আমি তাই করবো।প্লিজ সরি।
– যা বলবো করবা?
– হুম।
– গোসল করে আসো।
– এ..এই শীতে!
– হ্যা,আমি যা বলবো তুমি তো তাই করবা।
– অন্য যে কোনো শাস্তি দেও প্লিজ।এটা একটু ইয়ে হয়ে যায়।
– না।
– গোসল করতেই হবে?
– এই মুহূর্তে।
– পানি গরম করে দিবা?
– ঠান্ডা পানি দিয়ে করতে হবে।
– যদি জমে যাই?
– জমলে জমবা।

রফি বুঝতে পারলো বউয়ের রাগ ভাঙানোর দ্বিতীয় কোন উপায় নেই।তাই সে খাট থেমে নেমে গোসল খানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
ঠিক তখন পেছন থেকে নিধীর ডাক “এই দাঁড়াও।এত পাগল কেন তুমি?”
রফি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলাম “আবার কি করলাম?”
– গোসল করতেহ হবে না।চুপচাপ পাশে এসে শক্ত করে জড়ি ধরো।জানোনা,তুমি জড়িয়ে ধরে ঘারের কাছে মুখ না রাখলে আমার ঘুম আসে না।

রফি কথা না বাড়িয়ে লাফ দিয়ে খাটে উঠে নিধী’কে জড়িয়ে ধরলো।
নিধী মনে মনে হাসছে।
প্রিয় মানুষটা একটু আধটু পাগল না হলে নয়।
অপরদিকে টুং করে মেসেজের আওয়াজ।বাম হাত দিয়ে রফি মেসেজ চেক করে দেখে,সুমিতের নম্বর থেকে পাঠানো।

স্ক্রিনে লেখা “বস্,রেড লাইনে চার বাক্যের একটা বার্তা আসছিলো।যার অর্থ কেউ বুঝতে পারছিলো না।
পরে নেটে সার্চ দিয়ে দেখলাম।

বার্তাটা ডাবল ত্রিপল গ্যাং থেকে পাঠানো।এর কোনো অর্থ আদৌ আছে কি না জানিনা।তবে ডাবল ত্রিপল গ্যাং অন্য গ্যাংয়ের ওপর হামলা করার আগে বার্তাটি প্রদান করে।”
রফি যথাস্থানে আবার মোবাইলটি রেখে নিধী’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

নদীর আছড়ে পড়া স্রোতের শব্দে রায়হান জেগে গেলো।জেগে গিয়ে কিছুটা বিরক্তি বোধ হচ্ছে।
সময় অনুযায়ী আরো তিন ঘণ্টা ঘুম বাকি আছে তাঁর।
এরমধ্যে আবার অপরিচিত গলার আওয়াজ ভেসে এলো।ভাববার বিষয়!
চারিপাশে কেমন গা ঝুমঝুমে অবস্থা।মন বলছে কিছু একটা চলছে।
ব্যাপারটা আর প্রশ্রয় না দিয়ে সাথে সাথে টর্চ হাতে বের হলো রায়হান।

বাহিরে এখনো ঘন অন্ধকার।তবে দূরে গাছের আড়ালে আলো দেখা যাচ্ছে।এরপর আচমকা লেজারের তীক্ষ্ণ লাল আলো রায়হানের বুকে এসে পড়লো।পরক্ষণে রায়হান দেরী না করে কোমর থেকে পিস্তল বের করে লেজার বরাবর শুট করলো।

এটা টার্গেট বাই টার্গেট স্টেপ নামে পরিচিত।খুব কম লোকের জানা আছে এই পরিস্থিতিতে শুট করার নিয়ম।

রায়হানের গুলির শব্দে ক্যাম্পে সবার ঘুম ভেঙে গেলো।সবাই বের হয়ে পড়লো অস্ত্র হাতে।
ভাগ্যক্রমে বাহির সম্পূর্ণ স্তব্ধ নীরব।দূরে আলোটাও নিভে গেছে।
এখন ভোর হওয়া আগ পর্যন্ত কিছু বোঝা মুশকিল।
এর মাঝে সুমিত রায়হানের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো “গুলির শব্দ পেলাম?”
রায়হান জবাবে বললো “কিছু একটা ঘটতে চলেছে।”

– ক্লিয়ার করে বলেন তো।
– ক্লিয়ার করে বলার কিছু নেই।ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।আর হ্যা,নাইট গার্ড যারা ছিলো তাঁরা সম্ভবত সব শেষ।জংগল গার্ড,ওভার ওয়ে গার্ড,ক্যাম্প গার্ড দিয়ে প্রায় ২০০ জন মারা গেছে।
– আপনি জানলেন কিভাবে?

– দূরে জংগলের যে অংশ দেখছেন সেখানে কিছুক্ষণ আগে আলো জ্বলছিলো।তাছাড়া সেখান থেকে লেজার এসে পড়েছে আমার বুকে।এবং ক্যাম্পের আশেপাশে কয়েকজনের ফিসফিস কথার আওয়াজও পেয়েছি।কথা গুলো বুঝতে পারিনি তবে ২০০ জন যে মারা গেছে এটা স্পষ্ট শুনেছি।এসব মিলিয়ে এটা প্রমাণ করে,ব্লাক স্যাডো আজ অন্যকারো টার্গেটে।

– অন্যকারো টার্গেট সেই প্রথম থেকে হয়ে আসছে।জানিনা কবে শেষ হবে এই টার্গেট টার্গেট খেলা।শালার,এক দল শেষ করি তো অন্যদল এসে বলে আমার বাপের দলরে কেন মারলি।ঠেলায় পড়ে সে দলরেও শেষ করি তো আরো এক দল এসে বলে ওটা আমার কাকার দল ছিলো।ব্যস এবার তারেও শেষ করতে হয়।তখন আবার আমাদের মাঝে একজন শত্রু হয়ে আমাদেরই ওপর হামলা করে।ওহ্ গড।আর কত?

কথা শেষ করে সুমিত নিচে তাকালো।ঠিক তখন সাইলেন্সার ব্যবহার করা পিস্তলের হালকা শব্দ।গুলি এসে লেগেছে সুমিতের বুকে।

রায়হান অবাক।
সুমিত সাথে সাথে আছড়ে পড়লো মাটির বুকে।
তারপর আরো একটা শব্দ।এবার টার্গেট ছিলো রায়হান।

কি হচ্ছে কিচ্ছু বোঝা মুশকিল।
তবে রফি’র কানে খবর চলে গেছে।
অপরদিকে ভোরের আলো হালকা উঁকি মেরেছে।
ভেতর থেকে ভেসে আসছে আটো শুটারের শব্দ।
সুমিত জানে এতে কোনো লাভ হবে না।কারণ হামলাকারীরা যথেষ্ট নিয়ম জেনে মাঠে নেমেছে।

এখন সকাল দশটা।
রফি প্রতিদিন ন্যায় আজও এই সময়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করছে।
তবে ফুরফুরা মনে নয়।
ভেতরে এক হ্রাস বিষন্নতা।

ক্যাম্পে কি হয়েছে না হয়েছে সব জানা আছে তাঁর।তবু হাত বাঁধা ছিলো।চাইলেও আসতে পারছিলোনা সে।
বউকে দেওয়া কথা অমান্য করলে যে ঘোর বিপদ।

বুকের ভেতরটা চুপিসারে জিজ্ঞাসা করছে “মাঝে মাঝে কিছু অনিয়ম হলে কি খুব বেশি বিপদে পড়তে হয়?”
উত্তর রফি’র কাছে নেই।

কিন্তু এর মাধ্যে আরো একটা প্রশ্ন ছুড়ে মারলো সিয়াম।
“এই পথে আসার গল্পটা বলবেন ভাই?”
রফি মাথা উঁচু করে সিয়ামের দিকে তাকালো।

গোলগাল চশমা পড়া কিউট একটা লোক।বয়স বোঝা মুশকিল।তবে ৩০-৪০ হবে হয়তো।
উচা-লম্বা,সু-স্বাস্থবান।এই লোককে দেখে চোখ বন্ধ করে যে কোন নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি হবে।
অপরদিকে সিয়াম জবাব না পেয়ে করুনা সমেত বললো “আমি আপনার ফ্যান।অনেক বড় ফ্যান।একপ্রকার পাগল ফ্যানও বলতে পারেন।ডাবল-ত্রিপল নামে আমার একটা গ্যাং আছে।যেটা সম্পূর্ণ আপনার স্টাইলে পরিচালনা করি।এক বইয়ে আপনার গ্যাং সম্পর্কে প্রথম গল্প পড়ে মাথায় আপনার মতন হওয়ার স্বপ্ন চেপে বসে।বইয়ের লেখক সম্ভবত আপনারই ছোটো দুই ভাই সুমিত ও রাফসান।এরপর থেকে গল্প পড়ে পড়ে কিভাবে আপনার মতন হওয়া যার এর সম্পূর্ণ ধারণা নেই।ঠিক তার কিছুদিন পর আপনার জীবন কাহিনী পড়ার ইচ্ছা জাগে।ইচ্ছা অনুযায়ী বই কিনে আনি।কিন্তু পড়ার চেয়ে আপনার মুখে শোনা বেশি ইন্টারেস্টিং লাগবে।এটা ভেবে,পরে এই ছোট্ট আয়োজন।”

রফি অবাক দৃষ্টিতে আরো একবার সিয়ামের দিকে তাকালো।তারপর পকেট থেকে 9mm বের করে ধাই ধাই পাঁচটা শুট।

শুটে মাথা থেকে শুরু করে পেট পর্যন্ত মেন পয়েন্ট গুলো উড়ে গেছে।
নিমেষে চারিপাশ শূন্য।দাঁড়িয়ে আছে রফি একা।সুমিত,রাফসান,রায়হান,নিয়ামত,জাহিদ, সহ শত শত দেহ মাটিতে পড়ে আছে।

দেহ গুলো পড়ে থাকার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে কারো থেকে কেউ কম ছিলো না।সিয়াম সত্যি অদ্ভুত একটা গ্যাং তৈরি করতে সফল হয়েছিলো।

যেখানে ব্লাক স্যাডো এবং ডাবল ত্রিপল সমান সমীকরণে মাপা চলে।
দুই দলের লোক সমান গুলিতে গুলি বিদ্ধ হয়েছে।
পার্থক্য শুধু,একদল আহত এবং একদল নিহত।

তবে আহত ও নিহতর মাত্রা এটা প্রমাণ করে “সিয়াম গল্প শুনতেই এখানে এসেছিলো।কাউকে আঘাত করা তাঁর ইচ্ছা ছিলো না।ফল স্বরূপ ওর গ্যাংয়ের লোক জান দিয়ে হলেও প্রতিটা গুলি হার্টের ওপরে করার চেষ্টা করেছে।”
নিয়ম অদ্ভুত জিনিস।কারণ,এটা কারো জীবন দেয় আবার চিরতরে কারো জীবন নেয়।

“হাসপাতালে সবাই মোটামুটি সুস্থ।
শুধু সুমিতের জীবন বিপর্যয়ে।দেহে আঘাত করা তিনটা গুলি যথেষ্ট ড্যামেজ করেছে।
অবস্থা দেখে ডাক্তার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে বেঁচেথাকার সুযোগ ৪০%।
অবশ্য রফি’র এই নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।মৃত্যুর সাথে খেলতে গেলে সবসময় বিজয় লাভ সম্ভব নয়।মাঝেমধ্যে কলিজার কিছু অংশ বিসর্জন দিতে হয়।তাছাড়া সে এযাত্রায় বেঁচে গেলেও ক্যান্সার নামক ভয়ংকর ব্যধি খুব শিঘ্রই তাকে ওপারে নিয়ে যাবে।”

বাক্যগুলো রাফসান ল্যাপটপে টাইপ করে সুমিতের মাথায় আলতো ভাবে হাত রাখলো।
– এখন কেমন লাগছে দোস্ত?
– নো ফিলিংস।
– সিগারেট খাবি?

– শালা আমি অসুস্থ।এই অবস্থায় সিগারেট খেলে যাও বাঁচার চান্স আছে তাও থাকবে না।
– জানি,এর জন্য বলে তোর প্যারা বাড়িয়ে দিলাম।এখন তুই সিগারেট খাওয়ার প্যারায় বেঁচে থাকবি।
– হারামি।একটা কথা বলবো?
– বল।

– গ্যাংয়ে ঘটে আসা সম্পূর্ণ গল্প তো আমরা দুজনে লিখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি।আমি মরে গেলেও কি গল্প গুলো লেখা চলতে থাকবে?

– জানিনা।
– আমাদের দুজনের কারণে আজ ব্লাক স্যাডো এই অবস্থানে।তাই আমার অবর্তমানে কার্যক্রম স্থগিত রাখিস না।
– চুপ,একদম চুপ।তুই বেঁচে থাকবি।আমরা একসাথে ব্লাক স্যাডো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবো।আপাতত ঘুমা।কাল হাসপাতাল থেকে নাম কাটিয়ে ক্যাম্পে যাবি।রেড ওয়াইন আছে দুই বোতল।রায়হান অর্ডার করে আনাইছে।
– আমাকে ছাড়া কিন্তু বোতল খুলবি না।
– ওকে।থাক তাহলে,আসি।

সুমিত ছলছল চোখে রাফসানের দিকে তাকিয়ে রইলো।ছেলেটা থাকলে হয়তো বোরিং সময়গুলো পাড় হতো।ভাগ্যক্রমে,ডাক্তারের কড়া নির্দেশ।বেশিক্ষণ রোগির সাথে কথা বলা যাবে না।

কিছু বন্ধুত্ব বলে দেয়,আমি সার্থক তোর মতন বন্ধু পেয়ে।

পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো।
গোলাপের তীব্র সুভাষ নাকে ভেসে আসছে।
রফি বুঝে উঠতে পারছে না,ঘটনা আসলে কি?
তাই সে ব্যাপারটা বুঝতে জোরে ডাক দিলো “নিধী,এই নিধী!কোথায় তুমি?”
তার কিছুক্ষণ বাদে কেউ একজন রফি’র পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।
– হঠাৎ এত প্রেম?
– এমনি।
– উঁহু,কারণ তো কিছু একটা আছে।
– জ্বি না।কোনো কারণ নেই।
– আজ আমাদের ম্যারিজডে?
– উঁহু।
– তোমার বার্থডে?
– না।
– আমার বার্থডে?
– না।
– এই দিনে তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো?
– নারে বাবা।
– তাহলে কি?
– লজ্জা লাগে।
– বলো।
– আমি।
– তুমি!
– আম্মু।
– সত্যি?
– জ্বি।
– জাস্ট দুই মিনিট ওয়েট।
– কেন?
– আসতেছি।

এই বলে রফি রুমে গিয়ে দরজা আটকে নিলো।
তারপর আলনা থেকে লুঙ্গি নিয়ে,সেটা ধারণ করে উড়াধুড়া ড্যান্স।
জানালা থেকে নিধী এমন অবস্থা দেখে হাসিতে কুপোকাত।

জাহিদ সকাল সকাল হাসপাতালে প্রবেশ করে হতভম্ব।
পুরো হাসপাতাল জুড়ে আতংক।
ডাক্তাররা সব থরথরিয়ে কাঁপছে।এমন অবস্থা দেখে জাহিদ এক ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করলো;
– কি হয়েছে ভাই?
– আইসিইউতে থাকা পেসেন্ট নেই।
– মানে?
– ব্লাক স্যাডো গ্যাংয়ের এক ভদ্রলোক আইসিইউতে ছিলো।তাকে এখন খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
– কি বলছেন আপনি?
– জ্বি।
– কোথায় যেতে পারে?বা শেষ কোন অবস্থায় দেখেছেন।এনি ক্লু?
– না,বাট সবুজ মাস্ক পড়া দুজন ব্যক্তিকে আইসিইউ এর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি।
– লাল রঙের ব্যসলেট ছিলো দুজনের হাতে?
– হ্যা।আর পায়ে সাদা রঙের বুট।
– ওহ্ গড।তাহলে কালার্স গ্যাংয়ের কাজ।কিন্তু ওরা এটা করতে যাবে কেন?
– আমরা কিভাবে জানবো স্যার?
– সেটাও ঠিক।আচ্ছা আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।আমি ব্লাক স্যাডোর লোক।দেখছি কি করা যায়।

এটা বলে জাহিদ রফির নাম্বারে কল করলো।
– হ্যালো বস্।
– হুম।
– কালার্স গ্যাংয়ের সাথে আপনার কোনো শত্রুতা আছে?
– না।ওদের সাথে কিসের শত্রুতা থাকবে?
– তাহলে ওরা সুমিতকে কিডন্যাপ করলো যে।
– হোয়াট?ওদের লিডার কে?
– অনিক।
– তুই গাড়ি নিয়ে ওদের ক্যাম্পের সামনে যা আমি আসতেছি।

জাহিদ কল কেটে তারাহুরো করে বেড় হলো।
চোখে ভেসে ওঠা তীব্র ক্ষোভ বুঝিয়ে দেয়,আজ সে একা যথেষ্ট।

রফি গাড়ি নিয়ে কালার্স গ্যাংয়ের ক্যাম্পের সামনে থামা মাত্র জাহিদ ক্যাম্পের ভেতর পর পর তিনটা বোম ছুড়ে মারলো।

তারপর মেশিনগান বের করে উড়াধুড়া গুলি।রফি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।বালক মানুষ মারছে না পাখি?
অপরদিকে ভেতরে হুরস্থর শুরু হয়ে গেছে।কেউ ক্যাম্প থেকে পজিশন নেওয়ার সময় পাচ্ছে না।
ভাগ্যক্রমে একপর্যায়ে জাহিদের কাছে থাকা ম্যাগাজিন ফুরিয়ে গেলো।

তখন জাহিদ গাড়ি থেকে লাঞ্চার বের করে রফি’র কাছে এগিয়ে এসে বললো “বস্,পিছে ব্যাক-আপ দিয়ে ধরেন।তিনটা বুলেট আছে।শালার বিল্ডিং আজ ধূলিসাৎ করে দিবো।”

রফি জবাব না দিয়ে পেছনে ধরলো।সামনে থেকে জাহিদ লাঞ্চার বুলেট সেট করে পাঁচ মিনিটে ধাই ধাই তিনটা ফায়ার।

মুহূর্তে বিল্ডিং পুরো ভেঙে গুড়িয়ে গেছে।
এর কিছুক্ষণ বাদে হাত উঁচু করে কয়েকজন বের হয়ে এলো।
রফি তখন জাহিদের কাঁধে হাত রেখে বললো “এবার থাম।”
জাহিদ হাফ ছেড়ে জবাব দিলো “ওকে বস্।”
ঠিক তখন অস্ত্র সেট করা দশটা গাড়ি এসে উপস্থিত হলো।
গাড়ির ভেতর থেকে নেমে এলো সুমিত,রাফসান,রায়হান,নেয়ামত,আকিল সহ আরো কয়েকজন।
– কি হইছে বস্?শুনলাম এখানে হামলা করছেন?অর্ডার দেন,ধুলাবালি গুলাও গায়েব করে ফেলি।(সুমিত)
– তুই এখানে?[বিস্মিত চোখে](জাহিদ)
– তাহলে কোথায় থাকবো?(সুমিত)
– আমারও তো একই কথা।কোথায় থাকবি?(জাহিদ)
– তোরা চুপ কর।জাহিদ,তুই কি দেখালি এটা?(রফি)
– সরি বস্।সুমিতকে কিডন্যাপ করেছে শুনে কন্ট্রোল করতে পারিনি।শালাদের সাহস কত।আমার অসুস্থ বন্ধুকে কিডন্যাপ করতে চায়।(জাহিদ)
– তুই যা করলি তাতে সুমিত কিডন্যাপ হলে এতক্ষণে বিল্ডিং চাপা পড়ে মারা যেনো।(রফি)
– ওহ্ হো,তাইতো।আমি ভুলেই গেছিলাম।[মাথা চুলকে](জাহিদ)

এর মধ্যে অনিক এগিয়ে এসে করুণ দৃষ্টিতে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো;
– অসহায়ের ওপর এরকম অত্যাচারের মানে কি ভাই?(অনিক)
– মিস্টেক হয়ে গেছে।যা ক্যাম্পে যা।(জাহিদ)
– ক্যাম্প আর আছে কোথায়?সব না ইট আর বালি।তাছাড়া ভাগ্যিস মিস্টেক ছিলো,সিরিয়াস হলে তো এতক্ষণে এখানে পদ্মা নদীর নতুন শাখা তৈরি করে ফেলতেন।(অনিক)
– আচ্ছা বাদ দে।জয়েন করবি?(সুমিত)
– কোথায়?(অনিক)
– ব্লাক স্যাডোতে?(সুমিত)
– এটা তো আমার সৌভাগ্য হবে।(অনিক)

এমন অবস্থায় রফি না হেসে পারলো না।
ছেলেগুলো বড্ড অবুঝ।আবার মাঝে মাঝে এমন কিছু করে যা বুঝবান ব্যক্তিদের হার মানিয়ে দেয়।
তবে সব কথার এক কথা,ওদের মনে বিশুদ্ধ ভালবাসা বিদ্যমান।

<সমাপ্ত>

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত