বিয়ের পর শশুরবাড়িতে এসে অভ্যাসটা বদলাতে থাকে মেয়েটা।
সকাল সকাল গরম চা এনে বিছানায় মুখের সামনে দিয়ে ‘ওঠ রে, কখন উঠে তৈরী হয়ে কলেজ যাবি বলতো মা, নে চা টা খেয়ে এবার ওঠ দিকি। কি যে করবে মেয়েটা শশুরবাড়ি গিয়ে’।
কাকডাকা ভোরে উঠে স্নান সেরে সবার জন্য ‘চা’ করে নিজেরটা খেতে গিয়ে দেখে চা জুড়িয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছে। মনে পড়ে কোনো কোনদিন মা চা দিয়ে যাবার অনেকটা পর উঠলে ঠান্ডা চা হয়ে গেলে ফের মা আবার ধোঁয়া ওঠা চা গজগজ করতে করতেও এনে দিত। সেই গজগজটাতেও যে কতটা স্নেহ
মিলেমিশে আছে সেতো মেয়েটার চেয়ে কে আর বেশি জানে।
চোখের কোলটা জলে ভিজে ওঠে।
এইভাবেই মেয়েটা ভালো থাকার চেষ্টা করে।
সত্যিই কি মেয়েটা ভালো থাকে?
মন্দ থাকা
‘দিয়ে দিন দাদা, হাজার পাঁচেক হলেই চলবে। এবারের কালীপূজোটাতে আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিদি অনেকটাই ডোনেশন দিয়েছে। তাই আপনার বাজেটটা হালকা করে দিলাম। ফালতু দেরি করাবেন না। আরোও কাজ আছে। এখানে টাইম বেকার নষ্ট হচ্ছে। ছাড়ুন ছাড়ুন, মালটা ছাড়ুন জলদি’।
গেন্জীর বড় ব্যবসায়ী শম্ভু নস্করকে পাড়ার মাস্তান টুটুল ধমকি দেয়।
অভাবের সংসারে পড়াশোনা কষ্ট করেও অনেকদূর এগিয়েছিল টুটুলের। ঢালাই কারখানার লেবারের কাজ করে বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা করে ওকে মানুষের মত মানুষ করার জন্য। কিন্তু দুর্ঘটনায় বাবার পা বাদ যায়। ছোটো বোন, মা, অসুস্থ বাবা এদের ভার নিতে পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন ধরনের কাজের চেষ্টা করে।
কিন্তু হায়, ভালো কাজ কোথাও পায় না।
পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। অসামাজিক নানান কাজ পয়সার মুখ দেখায়।
ধীরে ধীরে ওর পরিচয় হয়ে ওঠে ‘ গুন্ডা টুটুল’।
ভালোভাবে বাঁচা আর ওর হয় না। মন্দভাবেই বাঁচতে শেখে।
ভালো থাকার সংজ্ঞা বদল
মেয়েটা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে
‘চা’ করে ডাইনিং টেবিলে সবাইকে ডাকে। গরম ‘চা’
একসাথে সবার সাথে বসে খায়।
সদ্য জয়েনিং লেটারটা শশুরবাড়ির সকলকে দেখায়।
তাড়াতাড়ি যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে, অবশ্যই
নিজে খেয়ে, অফিসের জন্য রওনা হয়।
অবশ্যই সবকিছুই করবে। সবার জন্য করবে। কিন্তু
নিজের জন্যও কিছুটা সময় রাখবে।
অফিসের টাইম হলে যতটা সম্ভব ততটা কাজ সামলেই বেরোবে। পড়াশোনা শিখে তার সদ্ব্যবহার
করবে। যার যা প্রাপ্য সম্মান সেটা দিতে কার্পণ্য করবে না। কিন্তু, অযথা, অসম্মান আর সইবে না।
ছোটো থেকে বাবা মা যে কষ্ট করে মানুষ করেছে তার দাম অবশ্যই দেবে।
মাথা উঁচু করে এবার থেকে বাঁচবে।
মন্দের উল্টো পিঠ
টুটুলের মাঝে মাঝে খুব মনটা হু হু করে। রাজা, নীলু, পীযূষ, মোলু সবাই তো ওর সেই ছোটবেলার বন্ধু। ওরা সবাই তো চাকরী করছে। বিয়ে থা করে সংসার করছে।
ভালো লাগেনা আর এইসব কাজ করতে। চাইলেও তো ওর বস ওকে ছাড়বেনা।
পাপ কে বেশি করছে। ওর মনে একটাই প্রশ্ন।
পেটের দায়ে ও করছে। কিন্তু যে করাচ্ছে ওকে দিয়ে সেও কি পাপ করছে না।
রাতের আঁধারে সেদিন ওই মেয়েটির পেছনে কতগুলো বদমাশ তাড়া করেছিল তখন তো ওইই
বাঁচাল মেয়েটিকে।
যাবার সময় তো ওই মেয়েই গুন্ডা টুটুলকে ‘দাদা’ ডাকে। আবার প্রনামও তো করল।
রিকেটের রোগে ভুগে লিকলিকে পা নিয়ে বস্তির বছর বারোর দাশুকে সময় পেলেই দেখে আসা, হাতে করে বিস্কুট নাহয় কোনো খাবার নিয়ে যাওয়া
এইগুলো করার সময়ও তো ও দাশুর পরিবারের চোখে ভগবান। আর ও নিজেও মুহূর্তের জন্যও শান্তি পায় ভেবে যে ওর ভেতরের মানুষটা বেঁচে।
এখনও মন্দ ওকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারেনি।