কমলিকা তার স্বামী-মেয়েকে নিয়ে হরিদ্বারে। কমলিকা এখন মধ্যবয়স্কা। তীর্থ-তীর্থ ভাব একটা এসে গেছে মানসিকতায় সেটা এখানে পা রেখে গভীরভাবে প্রমানিতও হয়ে গেল কমলিকার মনে। হরিদ্বারে থাকার তৃতীয় দিনে একটু দূরে একটা মঠে ঘুরতে গিয়েছিল সপরিবারে, কেমন যেন চেনা চেনা একটা মানুষ,অনেক চেনা, মঠের সন্ন্যাসীর বেশে, মুখে চোখে অত্যাশ্চর্য দৃপ্তি সাথে দৃঢ়তা। একপলক তাকালো কমলিকার দিকে, তারপর আবার স্বাভাবিকভাবে যে কাজ করছিল সেই কাজে মগ্ন হয়ে গেল।
“তুই যদি আমাকে বিয়ে না করিস আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাবো” ক্যান্টিনে চায়ের গ্লাসটা চকিতে তুলে নিয়ে বললো গৌতম, সেই শুনে সারা ক্যান্টিন তো হাসিতে ফেটে পড়লো, “তুই তাই হবি আমি দেখতে যাবো” প্রত্যুত্তর দিলো কমলিকা।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইঁট জানতো দুজনের ভালোবাসা ঠিক কতটা গভীর।
মেয়েকে নিয়ে স্বামী একটু দূরে, প্রবল কৌতূহলে পা দুটো একটু একটু করে এগিয়ে গেলো রহস্যজনক মানুষটার দিকে, কিন্তু নির্বিকার সন্ন্যাসী। আর কোন কথা বলার সাহস পেলোনা কমলিকা।
সন্দিগ্ধ মন নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে অনেকদিন, অফিস যাচ্ছে, কাজ করছে সংসার সামলাচ্ছে, কিন্তু কোথায় একটা প্রশ্ন সময়ের অবকাশে উঁকি মেরে অনুশোচনার চকমকি পাথরে ধাক্কা মেরে যাচ্ছে। মনে ভাবছে এটা তো প্রত্যাঘাত নয় এ ভদ্রতার নির্মম নগ্ন প্রলেপ।
তারপর কেটে গেছে প্রায় মাস ছয়েক, কমলিকা পরিবারের সবার সাথে একটা অভিজাত রেস্তোরাঁয় সান্ধ্যভোজ করছে, পিছন থেকে একটা হাত,চমকে উঠলো কমলিকা। চেঁচিয়ে বলে উঠলো কেমন আছিস?কতদিন পর তোর সাথে দেখা! চল আমার মিসেস এর সাথে আলাপ করিয়ে দিই, তারপর আলাপ হল, গৌতম অনেক হাসিখুশি মনে গল্প করলো,নিজের কথা বললো, কিন্তু কমলিকা কেমন স্তম্ভিত হয়ে রইলো।
ফেরার পথে গাড়ির কাচটা নামিয়ে দিয়ে প্রকৃতির হাওয়া মুখে লাগলো কমলিকা, মনের দ্বর্থক ভাবনাগুলোকে রাস্তার পিছনে উড়িয়ে দুরন্ত মারুতি সুইফটের সওয়ারী হয়ে ও নিয়ন আলোকে সঙ্গী করে ফিরে আসা বাস্তবের আগামীতে।