‘‘মানুষের জীবন কিছু সুন্দর সম্পর্কের জটিল বন্ধনে আবদ্ধ। সম্পর্কগুলো পাখির মত। আমি বলি, সুখ-পাখি। স্বার্থের সামান্য টানাপড়েনে, নিজেদের সামান্য ভুলে, একটু অবহেলায় সম্পর্কের সেই সুখ পাখি মরে যায়।
আমরা কিন্তু সেই সুখ-পাখিগুলোর মরদেহ ফেলে দিতে পারিনা। আজীবন সেই মৃত সম্পর্কগুলোর শবদেহ বয়ে বেড়াই ক্লান্তিকর বোঝার মত। আমরা নিজের হাতে তৈরী করি আমাদের দুঃখের বোঝা। তারপর সেই দুঃখ নিয়ে কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখি। কিংবা দুঃখময় গানে বুঁদ হয়ে থাকি। দুঃখ নিয়ে এমন বিলাসিতা করার ক্ষমতা মনে হয় একমাত্র মানুষেরই আছে’’
বেঁচে থাকার রসদ জোগানোর হাজারো তাগিদের কোন একটির দরুন সেদিন চিত্রা আর্ট গ্যালারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কানে আসল আমার নাম ধরে কেউ চিৎকার করছে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে চেনা কোন মুখ চোখে পড়লনা। ভুল শুনেছি ভেবে মুখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও থমকে গেলাম। একপলকের জন্য মনে হল ঐ ভিড়ের মাঝে খুব আপন কোন মুখ যেন নজরে এসেছে। এমন কোন প্রিয় মুখ যাকে মন অনুধাবন করতে পারছে কিন্তু চোখ ঠিক ঠাহর করতে পারছেনা। স্মৃতির পাতা হাতড়ে অনেক প্রিয় মুখের আদলের সাথে সামনের জন-ভিড়ের মুখগুলোর কোন একটিকে মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই করতেই একজন সামনে এসে দাঁড়াল। এবার চিনতে পারলাম। প্রথম দেখায় চিনতে না পারার কারন অসঙ্গত নয়। কতদিন পর দেখলাম তাকে? নিজের অজান্তেই হিসেব কষতে শুরু করেছি। দশ,বার না-না পনের বছর। ঠিক পনের বছর পর দেখলাম তাকে। আমার অতি প্রিয় মেহেদী ভাই। আমার শৈশবের নায়ক, আমার কৈশোরের আইডল। কিন্তু আমার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি কি সত্যিই মেহেদী ভাই? নাকি তার প্রেতাত্মা। তাকে দেখাচ্ছিল ঠিক একটা কাকতাড়ুয়ার মত। প্রতিনিয়ত জগত সংসারের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে করে বিধ্বস্ত কোন মানুষের মত তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। আমি অবাক এবং অভিভুত হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমার জ্ঞানকোষ থেকে তখন হারিয়ে গেছে সকল চেনা অচেনা শব্দ, থমকে গেছে সময়। সম্বিত ফিরে পেলাম মেহেদী ভাইয়ের কথা শুনে।
– কীরে ক্যাবলার মত হাঁ করে আছিস ক্যান? চিনতে পারিস নাই না। এখন অনেকেই আমাকে চিনতে পারেনা, তোর আর দোষ কী?
‘‘চিনতে পারিস নাই না’’ কথাটা মেহেদী ভাই এমনভাবে বললেন যে খচ করে বুকে লাগল। বুঝলাম অনেক অভিমান আর কষ্ট নিয়ে তিনি কথাগুলো বললেন। আমার মুখ দিয়ে কথা সরছিলনা। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ কেন যেন ভরা রাস্তাতেই তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গেলাম। তিনি আঁতকে উঠে দু পা পিছিয়ে গেলেন। তারপর জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। অনেক পাঠকই হয়ত বিরক্ত হবেন আবেগের এহেন বাড়াবাড়ি দেখে। হয়ত বলবেন ‘এমন হয়না। এ নেহাতই গল্পকারের এক গল্প ফাঁদার প্রয়াস।’ তাই এ বেলা মেহেদী ভাই সম্পর্কে দু’চার কথা বলে রাখি, তাতে করে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে মেহেদী ভাই আমার আবেগের ঠিক কোন সুরে বাঁধা রয়েছেন।
আমার জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা খুব অসুস্থ হয়ে পরেন। সেসময় সদ্য-ভূমিষ্ঠ আমার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আমার বড় চাচী (যাকে আমি ‘‘বড়’মা’’ বলে ডাকতাম।) আমার এই বড় চাচীর ছোট ছেলে মেহেদী ভাই। আমার শৈশবের প্রায় পুরোটায় কেটেছে বড়’মার কাছে। সেই কারনেই আমার সবসময়ের সঙ্গী, খেলার সাথী ছিলেন এই মেহেদী ভাই। আমি তার একজন অন্ধ ভক্ত’ও ছিলাম বটে। আর তার ভক্ত হব নাই বা কেন? তিনি যে শুধু আমাকে সারাগ্রাম ঘুরে দেখাতেন তা-ই নয় সেই সাথে তিনি আমাকে শেখাতেন অদ্ভুত সব জিনিস। কীভাবে সূর্য দেখে সময় বোঝা যায়, আকাশে কোন রঙের মেঘ থাকলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কিংবা কোন গাছে কোন পাখির বাসা থাকার সম্ভাবনা কত, বছরের কোন সময় কোন পাখির বাসায় ডিম আর কোন পাখির বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা পাওয়া যাবে, কিংবা খেলতে গিয়ে হাত-পা ছড়ে গেলে কোন ঘাসের রস লাগাতে হয়, কোন মাছের জন্য বড়শিতে কোন টোপ দিতে হবে কিংবা কোন বাঁশ দিয়ে ভালো বাঁশি বানানো যায় ইত্যাদি হাজারো রকমের তথ্য পেতাম তার কাছে যার সবগুলো ঠিক প্রকাশ্যে বলার মত নয়। সময়ের সাথে সাথে যেমন অ্যান্টিক জিনিসের দাম বাড়তে থাকে তেমনি যতই দিন যাচ্ছে মেহেদী ভাইয়ের সাথে কাটানো সেই সুখের সময়গুলো আমার কাছে ততই মুল্যবান হয়ে উঠছে। সেই ছোটবেলায় আমার মনে হত পৃথিবীতে এমন কোন জিনিস নাই যা মেহেদী ভাই জানেনা, এমন কোন কাজ নাই যা মেহেদী ভাই পারেনা। সেইসময় আমাকে কেউ যখন প্রশ্ন করত “বাবু, বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও?” আমি গম্ভীর হয়ে বলতাম “মেহেদী ভাইয়ের মত হতে চাই।”
সেদিনের সেই মেহেদী ভাই আর আমার সামনে দাঁড়ানো আজকের মেহেদী ভাইয়ের মধ্যে বিস্তর তফাৎ। সেদিনের মেহেদী ভাই ছিলেন গ্রামের সকলের প্রিয় ডানপিটে ছেলে আর আজ তিনি সকলের চক্ষুশূল। পাছে কোন বিপাকে পরতে হয় সেই ভয়ে সবাই তাকে সম্ভাব্য সব উপায়ে এড়িয়ে চলতে চায়। সোজা কথায় আজ তিনি সকলের মাঝে থেকেও একরকম নির্বাসিত। এই নির্বাসনের জন্য সবাই তাকেই দায়ী করে। কথাটা একেবারে মিথ্যেও নয়। হাইস্কুলে উঠার পরপরই আমি গ্রাম ছাড়ি। তারপর সঙ্গত-অসঙ্গত নানান কারনে তার সাথে আমার যোগাযোগ কমে যায়। একটা সময় মেহেদী ভাই এতটাই বখে যায় যে এমনকি আমার বাড়ি থেকেও হাল্কা একটা নিষেধাজ্ঞা জারি হয় যেন আমি তার সাথে কম মেলামেশা করি। আমার এখন খুব লজ্জা হয় এই ভেবে যে তার বখে যাওয়ার কারনের সবটুকু জেনেও শুধু “লোকে কী ভাববে” এমন একটা ঘৃন্য অজুহাতে সেসময় আমি আমার অনেক কাছের একজন মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম। সান্ত্বনা এটুকুই যে সেসময় আমার যা বয়স তাতে হয়ত তার কাছে থেকেও আমি তার বখে যাওয়া রোধ করতে পারতাম না। দুঃখ এটাই যে যারা তা পারত তারাও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আপনজনদের এই অবহেলাই হয়ত তাকে ঠেলে দিয়েছিল আরও গভীর অন্ধকারে।
মেহেদী ভাইয়ের জীবনের অন্ধকার গল্পের শুরুটা হয় আমার বড়’মা মারা যাওয়ার পর থেকে। আমি গ্রাম থেকে চলে আসার এক সপ্তাহের মাথায় বড়’মা মারা যান। মেহেদী ভাই তখন সবে এস, এস, সি পরীক্ষা দিয়েছেন। এস, এস, সি তে তিনি অনেক ভালো রেজাল্ট করেছিলেন। মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছিলেন। হয়ত তার জীবনটা অনেক সুন্দর আর গোছানো হলেও হতে পারত যদিনা বড়’মা মারা যেতেন, যদিনা বড়’মা মারা যাওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় বড় চাচা দ্বিতীয় বিয়ে করতেন। মেহেদী ভাইয়ের বখে যাওয়ার পিছনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে তার বিমাতা। আরও একজন মানুষ ছিল যাকে বলা যায় মেহেদী ভাইয়ের বখে যাওয়ার প্রত্যক্ষ কারন। অনেক আগে থেকেই কাজল আপুর সাথে মেহেদী ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কেউ না জানুক আমি জানি বিমাতার নানারকম মানসিক অত্যাচার আর বড় চাচার নিদারুণ অবহেলার আঘাতে জর্জরিত মানুষটা কাজল আপুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে। যেমন করে কোন পরগাছা, বড় গাছকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য রসদ খোঁজে। কিন্তু বিধাতার নিষ্ঠুর বিধানে মেহেদী ভাইয়ের জন্য কোন রসদ বরাদ্দ ছিলনা। কী কারনে জানিনা কাজল আপু মেহেদী ভাইয়ের সাথে সম্পর্কের ইতি টানেন। মাত্র ছয় মাসে একেবারে বদলে গেলেন তিনি। সম্ভাব্য সবরকমের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লেন। এস, এস, সি তে থার্ড স্ট্যান্ড করা ছেলেটা এইচ, এস, সি তে ফেল করল। সর্বনাশের ষোলকলা পুরন করলেন রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে। এমন একটা রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা-তলে গিয়ে দাঁড়ালেন, যে দলটাকে লোকে শুধু ঘৃণা ই করেনা ভয় ও করে বটে। মূলত ছাত্র শিবিরে যোগ দেওয়ার কারনেই তাকে মোটামুটি সবাই এড়িয়ে চলতে শুরু করে। আর আমি অবাক হয়ে ভাবতাম এই ছাত্র শিবির কে ঘৃণা করতে শিখেছিলাম যার কাছ থেকে সেই মেহেদি ভাই কেন সেই ছাত্র শিবিরেই যোগ দিলেন। হিসেবটা আমি কখনই মেলাতে পারিনি। যদিও পরে তিনি শিবিরের রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং সেজন্য তাকে নানান হাঙ্গামায় পড়তে হয়েছিল। এমনকি তার জীবনের উপরও হুমকি এসেছিল, সে কথা থাক। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় তিনি কোনমতে এইচ এস সি পাশ করে ভর্তি হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করার আগেই কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে বসলেন। অর্থাৎ ছাত্রজীবনের ইতি টেনে সংসার জীবনে পদার্পন করলেন। আমার বড় চাচার দ্বিতীয় স্ত্রী এমন মোক্ষম অজুহাতের অপেক্ষাতেই ছিলেন। বাড়িতে না জানিয়ে বিয়ে করার অপরাধে সেই মহিলা বড় চাচাকে তার সমস্ত সম্পদ এবং সম্পত্তি থেকে মেহেদি ভাইকে ত্যাজ্য করতে বাধ্য করেন। লোকমুখে শুনেছি মেহেদী ভাই এরপর বহুবার গ্রামে গেলেও কখনো তাদের বাড়িতে পা রাখেননি। মেহেদী ভাইয়ের দাম্পত্য জীবনও খুব একটা সুখের হয়নি। বিয়ের চার বছরের মাথায় তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ভাবী চলে যান তার বাবার বাড়ি। আর ফিরে আসেননি। অবশ্য তাকেও দোষ দেওয়া যায়না। কারন পরিবারের প্রতি মেহেদী ভাইয়ের যতটা উদাসীনতা ছিল, স্ত্রী-কন্যার ভরনপোষনের মত অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ততটা ছিলনা বা নেই।যতদূর জানি মেহেদী ভাই বা ভাবী কেউই দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। এমনকি কাগজ-কলমে তাদের ডিভোর্স ও হয়নি তবে তারা আর কখনো মুখোমুখি দাঁড়াননি। মেহেদী ভাইকে তার মেয়ের সাথেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়না বলেই জানি। সব থেকেও না থাকার এই যন্ত্রনা বোধহয় একেবারে না থাকার চেয়েও বেশি পীড়াদায়ক।
আমার এই এক বদভ্যাস, অতীতের কথা বলতে শুরু করলে থামতে ভুলে যাই। অতীতের কথা আর না বাড়িয়ে এবার বরং বর্তমান ফেরা যাক। ঠিক এই জায়গাটায় মেহেদী ভাইয়ের সঙ্গে এভাবে দেখা হবে তা আমার স্বপ্নেও ভাবিনি। “এখানে কেন?’’ প্রশ্নটা করতেই তিনি একটু হাসলেন। লক্ষ্য করলাম অনেক কিছু বদলে গেলেও তার হাসিটা একদম বদলায়নি। সেই আগের মতই ভুবন ভুলানো হাসি। কিছু কিছু জিনিস মনে হয় কোনদিনই বদলায়না। একইরকম থেকে যায়। তার কাছ থেকে যা জানতে পারলাম তার সারমর্ম হল চিত্রা আর্ট গ্যালারিতে তার পরিচিত এক চিত্রশিল্পীর প্রদর্শনী চলছে। তিনিও তার একটা ছবি দিয়েছিলেন প্রদর্শনের জন্য। মজার ব্যাপার হল দর্শক ভোটে সেই ছবিটাই গ্যালারীর এ বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি নির্বাচিত হয়েছে। তাই গ্যালারী কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকেছে একটা স্মারক দেওয়ার জন্য। আমি একটু অবাক হলাম। বহুমুখী প্রতিভাধর মেহেদী ভাই যেমন ভালো বাঁশি বাজান, গান করেন তেমন ভালো ছবিও যে আঁকেন তা আমি জানি। কিন্তু তাই বলে যে মানুষটার এমন হতচ্ছাড়া চেহারা, যার জামা-কাপড় দেখলে মনে হয় গত পাঁচবছর ধরে এই একই শার্ট-প্যান্ট পরেই বোধহয় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ,সেই মানুষটার আঁকা একটা ছবি চিত্রার মত নামীদামী আর্টগ্যালারীর বর্ষসেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে তা ভাবতে কেমন যেন লাগে। কারন ব্যাক্তিগত কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জানি আমাদের দেশে কাজের মান দেখে নয় মানুষের তথাকথিত সামাজিক অবস্থান দেখে তার দাম বিচার করা হয়। “আগে দর্শনধারি পরে গুন বিচারি” প্রবাদটা এদেশের মানুষ আক্ষরিক অর্থে নিয়েছে। তারপরও মেহেদী ভাইয়ের আঁকা ছবি বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছে, তারমানে ছবিটা নিশ্চয়ই অসাধারণ। আমি তার সাথে গেলাম ছবিটা দেখতে। ছবিটার নাম “দুঃখ বিলাস”। ছবিতে একজন মানুষ একগাদা মরা পাখি ঘাড়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতগুলো পাখির ভারে লোকটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এমনিতে খুব সাধারণ একটা ছবি। কিন্তু রঙের ব্যবহার এতটাই সুন্দর হয়েছে যে লোকটার মুখে যন্ত্রনার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেন লোকটা এখনই বলে উঠবে ‘উঃ আর পারছিনা’। আর পাখিগুলোও এমন বাস্তব করে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দেখলেই বোঝা যায় সেগুলো মৃত। ছবির নিচে কয়েক ছত্রে যে কথাগুলো লেখা ছিল তা পড়লে ছবিটাকে আরও বেশি অসাধারণ আর অর্থবহ মনে হয়। সেখানে লেখা ছিল,
‘‘মানুষের জীবন কিছু সুন্দর সম্পর্কের জটিল বন্ধনে আবদ্ধ। সম্পর্কগুলো পাখির মত। আমি বলি, সুখ-পাখি। স্বার্থের সামান্য টানাপড়েনে, নিজেদের সামান্য ভুলে, একটু অবহেলায় সম্পর্কের সেই সুখ পাখি মরে যায়।
আমরা কিন্তু সেই সুখ-পাখিগুলোর মরদেহ ফেলে দিতে পারিনা। আজীবন সেই মৃত সম্পর্কগুলোর শবদেহ বয়ে বেড়াই ক্লান্তিকর বোঝার মত। আমরা নিজের হাতে তৈরী করি আমাদের দুঃখের বোঝা।
তারপর সেই দুঃখ নিয়ে কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখি। কিংবা দুঃখময় গানে বুঁদ হয়ে থাকি।
দুঃখ নিয়ে এমন বিলাসিতা করার ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই আছে’’।
লেখাটা পড়তে পড়তে আমার চোখে জল চলে আসে। আমরা কেন আমাদের সুন্দর সম্পর্কগুলো এভাবে নষ্ট করি?? একটা সুন্দর সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে আমাদের এত কেন অনীহা????………
আচ্ছা,হৃদয়ের কতখানি গভীর থেকে কতটুকু ভালোবাসা দিলে একটা মৃত সম্পর্ক পুনুরুজ্জীবিত হতে পারে??